সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

NSOU লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শ্রমিক আন্দোলনে ইতিহাস চর্চার ধারা

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস চর্চার বিভিন্ন ধারা  ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মূলত বিদেশী পু৺জির অনুপ্রবেশ এবং প্রধানত উপনিবেশিক উদ্যোগে বাগিচা, খনি, চটকল, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, বস্ত্র শিল্প এবং ইস্পাত ও রেল এর মত নতুন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার পরে, ভারতের সর্বপ্রথম স্পষ্টত এক নতুন সামাজিক শ্রেণী হিসেবে শিল্প শ্রমিকদের আবির্ভাব ঘটে। যদিও কৃষি প্রধান ভারতবর্ষে মোট জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যাগতভাবে শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ঘটনাচক্রে ভারতবর্ষে এই শিল্প শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব সেই সময়ে শুরু হয়, যে সময়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।  গোড়ার দিকে শ্রমিক ও তাদের আন্দোলনের মূল ধারা ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে তেমনভাবে আকর্ষণ করেনি। কারণ তারা শ্রেণী-সম্প্রদায় নির্বিশেষে ভারতীয়দের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁদের মতে রাজনীতিবিদরা অনেক সময়ই শ্রমিকদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এবং তাদের নিজেদের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল না। ফলে ঐতিহাসিকগণ, জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে তেমন শ্রদ্ধা পোষণ করতেন না।  উপনিবে...

উডের ডেসপ্যাচ

উডের ডেসপ্যাচ সম্পর্কে আলোচনা কর ১৮ শতকের ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। ১৮ শতকের  শেষ দিকে বিভিন্ন কারণে এই দেশে ইংরেজি শিক্ষা চালুর দাবি উঠেছিল। এদেশের কোন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, যখন ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট-এ জনশিক্ষা বিস্তারের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়। প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের মধ্যে শেষ পর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীদের জয় হয়। বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ১৯ শে জুলাই  ভারতের শিক্ষা সম্পর্কে যে প্রতিবেদন পেশ করে তাকে উডের নির্দেশনামা বা Wood's Despatch বলা হয়। উডের ডেসপ্যাচ সংক্রান্ত নির্দেশে ইংরেজি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার উন্নতি ও মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষা ইংরেজি এবং উচ্চ স্তরে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেন। তিনি প্রত্যেক প্রদেশে শিক্ষাবিভাগ গঠন এবং শিক্ষা আধিকারিক নিয়োগ করতে বলেন। উড বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত স্কুলগুলিকে সরকারি অনুদান দিতে বলেন এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারি তাদারকি ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে ব...

কলকাতা ও তার আশেপাশের গণিকা পল্লী

কলকাতা ও তার আশেপাশের গণিকা পল্লী সম্পর্কে আলোচনা কর? ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলার শাসনভার গ্রহণের পর নতুন বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক উপনিবেশিক আর্থসামাজিক বিন্যাসের সাথে সাযুজ্য রেখে বাংলায় গণিকাবৃত্তিরও প্রবর্তন ঘটে। উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে গনিকা বৃত্তির সংগঠনের প্রসারণ এবং খরিদ্দারদের বিভিন্ন বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কলকাতার বাইরে বাংলার মফঃস্বল শহরগুলি তেও পর্যাপ্ত গণিকালয়ের অভ্যুদ্বয় দেখা যায়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় চার লক্ষ জনসাধারণ ১২,৪১৯ জন গণিকাকে পালন করেছিল। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা ৩০ হাজারে এসে দাঁড়ায়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ব্যঙ্গ রচয়িতা কালীপ্রসন্ন সিংহ তার রচনায় অলস ধনী পুরুষদের জীবনযাত্রা ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন যে এই সমস্ত ধনী ব্যক্তিদের জন্য কলকাতা একটি গণিকালয়ে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক লোকালয়ে কমপক্ষে দশটি করে গনিকালয় থাকত। প্রতিবছর গণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলে গণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংগঠনের পরিবর্তন ঘটেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতাব...

গনিকা ও বাবুর সম্পর্ক

গনিকা ও বাবুর সম্পর্ক আলোচনা কর। ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলার শাসনভার গ্রহণের পর নতুন বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক উপনিবেশিক আর্থসামাজিক বিন্যাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলায় গণিকাবৃত্তিরও প্রবর্তন ঘটে। উপনিবেশিক প্রশাসন ইউরোপীয় ও ভারতীয় সৈনিকদের জন্য ভারতীয় গণিকা নিযুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। সৈনিকদের স্থায়ী বাসস্থান সংশ্লিষ্ট বাজার ও নির্দিষ্ট স্থানে গণিকাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা "চাকলা" নামে পরিচিত ছিল। এই বেশ্যারা সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল ১. গোরা চাকলা ২. লাল কুর্তা চাকলা এবং ৩. কালা চাকলা। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে কলকাতায় একশ্রেণীর ভু৺ইফোড়  ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যারা ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্তাদের দালালি করে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করেছিল। এদের উচ্চ স্তরে ছিলেন বেনিয়ান, দেওয়ান এবং সর্বনিম্নে মোশাহেব শ্রেণী। এরাই উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতার গনিকাবৃত্তির প্রথম প্রজন্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সমসাময়িক হাস্যরসাত্মক নাটক, প্রেমপত্র ইত্যাদিতে এদের এবং এদের সঙ্গী গণিকাদের উল্লেখ আছে। এ যুগের প্রথম প্রজন্মের বাবুরা ...

বাংলা থিয়েটারে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি

বাংলা থিয়েটারে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির অবদান আলোচনা কর। প্রাচীনকাল থেকেই নাটকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগিতার দিক সমাজে স্বীকৃত হয়ে এসেছে। প্রথমত নাটক হল উন্নত সংস্কৃতির প্রচারক তথা চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম। দ্বিতীয়ত, জনশিক্ষা বা লোক শিক্ষার অন্যতম বাহন হল নাটক। ধরে নেওয়া হয় ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্রই হল প্রাচীন ভারতের বা বৈদিক যুগে নাট্যচর্চার প্রধান অবলম্বন ও সূচনা। প্রাচীন ভারতে নাট্যশাস্ত্র পঞ্চম বেদ নামে সংস্কৃত সাহিত্যে পরিচিত হয়ে ওঠে। নাট্যবেত্তাগণ বলেন, প্রাচীন সংস্কৃত নাটকের ভিত্তি হল ঋকবেদের বাণী, সামবেদের গীতি, যজুর্বেদের অভিনয় এবং অথর্ববেদের অনুভূতি ও রস। এভাবেই গড়ে উঠেছিল সংলাপ সঙ্গীত ও অভিনয়ে সমৃদ্ধ এবং রসপূর্ণ। কালিদাস পূর্ব যুগের দুজন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার রূপে মহাকবি ভাস এবং অশ্বঘোষের নাম পাওয়া যায় সেই হিসেবে ভারতবর্ষের নাট্যচর্চের কাল দুই সহস্র বছরের অধিক। বাংলার নাট্যচর্চার জন্ম বলা চলে, দ্বাদশ শতকে জয়দেবের গীতগোবিন্দ, চতুর্দশ শতকে বডু চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকেই। তবে ১৬ শতকের শ্রীচৈতন্যের নিত্যগীত সংলাপ প্রকৃতি থেকে যে কৃষ্ণ যাত্রা সূচনা তাকেই অনেকে বাংলার আদ...

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতিতে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতিতে  খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা আলোচনা কর? ঐতিহ্যিক দিক থেকে শিক্ষার অর্থ ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ। হিন্দুদের মধ্যে পুরোহিত শ্রেণির অন্তর্গত ব্রাহ্মণরা ধর্মশাস্ত্রের সকল শাখা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করত। অপরদিকে দুই জাত, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগন ততটা কঠোরভাবে পাঠ গ্রহণ না করলেও ব্যবহারিক দক্ষতার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন। শূদ্র এবং নারী ধর্মশাস্ত্র পাঠ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। উচ্চ শ্রেণীর কিছু পরিবারে কিছু নারী পৌরাণিক সাহিত্য পাঠ করতে শেখেন। মুসলিম নারীরা কোরান শিক্ষা করবেন আশা করা হত। কিন্তু উচ্চ শ্রেণীর মুসলিম পরিবার তাদের কোনো কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে ধর্ম সম্বন্ধে তারা যে শিক্ষা পেত তার গৃহ বা পরিবারের কাছ থেকে  অথবা গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে।  উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা ছিল একেবারেই নগন্য।‌  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেরানী ও অনুবাদকের প্রয়োজনে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার সূত্রপাত ঘটায়। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তরুণ ভারতীয়দের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সহকারী পদের জন্য উপযুক্ত করে তোলা...

ঔপনিবেশিক ভারতের শ্রমিক সরবরাহের উৎস কি?

ঔপনিবেশিক ভারতের শ্রমিক সরবরাহের উৎস উনবিংশ শতাব্দীর শেষআর্ধ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অন্তবর্তীকালীন সময়ে ভারতবর্ষে এক নতুন সামাজিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। এই শ্রেণী শিল্পের নিযুক্ত শ্রমিক শ্রেণী নামে ভারতের ইতিহাসে পরিচিত। ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  ভারতে ব্রিটিশ শাসনে উপনিবেশিক স্বার্থ পূরণ করার জন্য প্রাচীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে গড়ে উঠেছিল আধুনিক শিল্প এবং পাশ্চাত্য অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা। এবং তা হয়েছিল অত্যন্ত ধীরগতিতে ও বাধাগ্রস্থ পথে। সামন্ততন্ত্রের অবসানের পর ইউরোপে যেভাবে আধুনিক ধনতন্ত্র ও শিল্প ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার থেকে ভারতে ধণতন্ত্র ও আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠার পথ ছিল ভিন্নতর। অবশ্যই মনে রাখার প্রয়োজন এ দেশে শিল্প ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল উপনিবেশিক শাসন ও শোষণের মধ্য দিয়ে।  ভারতে আধুনিক শিল্পের উদ্ভব ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা হলো রেলপথের প্রতিষ্ঠা। এর সূত্র ধরে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ ভারতের প্রধান প্...

বাংলা থিয়েটারে শিশির কুমার ভাদুডি

বাংলা থিয়েটারে শিশির কুমার ভাদুডির অবদান গিরিশ ঘোষের মৃত্যুর পর পরবর্তী দশক বাংলা থিয়েটারের পক্ষে অন্ধকার একটা সময়। নিরাপদ রাস্তায় চলতে গিয়ে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহস হারিয়েছিল থিয়েটার। ফলে যে উত্তেজনা এবং আবেগ এর চালিকাশক্তি ছিল তারই পুনঃব্যবহারে ভাঁরাল খালি হয়ে গেল। গিরিশ ঘোষ এর মৃত্যুর পরে সমস্যাগুলি প্রকট হতে লাগলো। থিয়েটার পাল্টাইনি, কিন্তু থিয়েটারের দর্শক ততদিনে পাল্টে গেছে। নাট্য ব্যক্তিত্বরা যখন একে একে মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে থাকলেন অথবা নতুন ভাবনাচিন্তার ক্ষমতা হারালেন। তখন এমনকি নিতান্তই সাধারণ দর্শকের কাছেও এই থিয়েটারের একঘেয়েমি প্রকট হতে লাগলো। অমরেন্দ্রনাথ, অমৃত মিত্র, অমৃতলাল বসু, পূর্ব যুগের নটগোষ্ঠী তখন রঙ্গমঞ্চ থেকে অবসর নিয়েছে। রঙ্গমঞ্চের হস্তান্তর হচ্ছিল ঘন ঘন এবং অনেক বেশি টাকায়। পুরানো বেঙ্গল থিয়েটার পরপর মালিকানা ও নাম বদলায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মালিকের নামে নামাঙ্কিত হয়ে এটি মনোমোহন থিয়েটার নামে উদ্বোধন হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের পর এটি হাতে নেন শিশির ভাদুড়ি। তিনি বিংশ শতাব্দীর থিয়েটারে বিবর্তনের ধারা এনেছিলেন। শিশির ভাদুড়ি ছিলেন আধুনিক বাংলা নাট্...

বাংলা থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা থিয়েটার এবং বাংলা নাট্যসাহিত্যের নিঃসঙ্গ পথিক। সময়ের দিক থেকে তাঁর স্থান নির্দেশ করা দুরূহ। তেমনি আবার তার থিয়েটার শৈলীর গায়ে কোন প্রচলিত সংজ্ঞার লেভেল এঁটে দেওয়া অসম্ভব। দীর্ঘ সময় জুড়ে তিনি নাটক রচনা করেছিলেন। উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, নাট্যশরীর গঠন, ভাষা এবং ভঙ্গিতে এদের মধ্যে দেখা যায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্য। বস্তুত তাদের মধ্যে কয়েকটি আবার নাটকের পরিচিত সংজ্ঞাকেও অতিক্রম করে যায়। তিনি প্রচলিত ধারা থেকে আলাদা। তাঁর নাট্যরচনা ও থিয়েটারের ধারণা গড়ে তুলেছিল এক স্বতন্ত্রের ঐতিহ্য। রবীন্দ্রনাথ প্রথম মঞ্চাভিনয় করেন ১৮৭৭ সালের এক পারিবারিক অভিনয়ে তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা একটি নাটকে। তাঁর প্রথম প্রকাশ্য অভিনয় অবশ্য ঘটে ' বাল্মিকী প্রতিভা ' নাটকে। তাঁর নিজের রচিত এই সাংগীতিক নাটকটি রামায়ণ রচয়িতা মহাকবির জীবন সংক্রান্ত ঘটনাবলী নিয়ে রচিত। যে সমস্ত আমন্ত্রিত দর্শকূল অভিনয় দেখেন তাদের মধ্যে ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ২১। এর পর থেকে দীর...

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ | Vietnam War

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ | Vietnam War দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ একাধারে উপনিবেশবাদ ও নয়াউপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে গনসংগ্রামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং এশিয়ার মাটিতে ঠান্ডা লড়াইয়ের উৎকট বহিপ্রকাশ। ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামের দুটি পর্ব - প্রথমটি ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম (১৯৪৫-৫৪) এবং দ্বিতীয়টি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম (১৯৫৪-৭৫)। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে শেষপর্যন্ত ভিয়েতনামের জনগনের জয় হয়েছিল এবং স্বাধীন সমাজতন্ত্রী ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম আত্মপ্রকাশ করেছিল।  ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রথম পর্ব  ভিয়েতনাম সহ অন্নাম, টংকিং ও কোচিন চীন তথা সমগ্র ইন্দোচীনের উপর ফরাসি উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাময়িক ভাবে ইন্দোচীন জাপানের অধীনে চলে যায়। বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর ফ্রান্স পুনরায় মার্কিন চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইন্দোচীনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যত হয়। এদিকে বামপন্থী নেতা হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বে প্রবল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চ...

কিউবা-মার্কিন সম্পর্ক| | Cuba-USA Relationship

কিউবা-মার্কিন সম্পর্ক| | Cuba-USA Relationship ফালজেন্সিও বাতিস্তা দ্বিতীয়বার কিউবায় ক্ষমতা আরোহন করে (১৯৫২) স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিমধ্যে ফিদেল কাস্ত্রো ও তার ভাই রাউল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে প্রতিবাদী আন্দোলন কিউবায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাস্ত্রো ভাতৃদ্বয় কিউবায় বেশ জনসমর্থন লাভ করেন। মার্কিন প্রশাসনও বাতিস্তার স্বৈরশাসনে বিরক্ত হয়ে ওঠে। এমন সময় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফিদেল কাস্ত্রো বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবায় ক্ষমতা দখল করেন। প্রথমদিকে কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক মোটামুটি ভালই ছিল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে ফিদেল কাস্ত্রো কিউবায় আধুনিকীকরণের জন্য যে একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল সেগুলি মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছিল। একই সাথে সোভিয়েত তথা কমিউনিস্ট দুনিয়ার সঙ্গে কাস্ত্রোর সংসর্গ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর ফলে মার্কিন এর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল এবং একটা সময় তা সংঘর্ষের রূপ পরিগ্রহ করেছিল। ফিদেল ক্ষমতায় এসে প্রথম দিকে মার্কিন বিরোধিতার পরিচয় দেননি। বাতিস্তার অপশাসন মার্কিনকে ফিডেলের প্রতি সুহৃদ করেছিল। ফিদেলকে মার্কিন সরকার একজন সংস্কারপন্থী শাসক হিসেবেই দেখেছিল। ১৯৫৯ খ...

SAARC

 SAARC  ১৯৮০ দশকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তোলার সর্বপ্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন তদানীন্তন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই পরিকল্পনার ফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে সার্ক অর্থাৎ South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC)। ১৮৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে সার্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। বর্তমানে যে সাতটি দেশ সার্কের অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা।  সার্কের সনদে এই সংগঠনের যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছিল সেগুলি হল ১) দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। ২) এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ৩) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা। ৪) পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে একে অন্যের সমস্যা উপলব্ধি করা। ৫) অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা স্থাপন করা।  ৬) অন্যা...

ASEAN

 ASEAN দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন। এশিয়া মহাদেশে গড়ে ওঠা এরকম একটি আঞ্চলিক সংগঠন হলো আসিয়ান। ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি রাষ্ট্র থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর মিলিত হয় এবং নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে আসিয়ান (ASEAN) গড়ে তোলে। পরবর্তীকালে আসিয়ানে যথাক্রমে যোগদান করে ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া। বর্তমানে আসিয়ানের মোট সদস্য সংখ্যা দশ এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরে এর স্থায়ী সচিবালায় অবস্থিত। ১১৯৬৭ সালের ব্যাংকক ঘোষনায় আসিয়ানের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা উদ্দেশ্যে আসিয়ান কাজ করবে। এছাড়া এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে ও নিজেকে নিয়োজিত করবে। ১৯৭৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আসিয়ান সম্মেলনে এই সংগঠনের মৌলিক নীতিগুলি ঘোষিত হয়। মৌলিক নীতিগুলি হ...

আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (IMF)

আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (IMF) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে যে অর্থনৈতিক অবক্ষয়, অনিশ্চয়তা ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাকে আরো জটিল ও ভয়াবহ করে তুলল। পরবর্তী ইউরোপের অর্থনৈতিক চেহারা কেমন হবে, কিভাবে আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে নতুন বিশ্ব, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি কোন পথে চলবে, এর চালিকাশক্তিই বা কে হবে-- এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করলেন তৎকালীন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হেনরি মর্গানথো। সম্মেলন বসল ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটন উডসের মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে। সারা বিশ্বের ৪৪টি দেশের ৭০০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেন এবং সম্মেলনের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার প্রতিষ্ঠিত হলো। ১৯৪৭ সালের ১লা মার্চ থেকে এই সংস্থা তার কাজ শুরু করলো। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের একাধিক ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল:  ১) আর্থিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ২) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলির সর্বাধিক কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটে। ৩) সদস্য রাষ্...

ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন | Women's Suffrage Movement in India

নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন নারী এবং রাজনীতি এই বিষয় দুটি আধুনিক ভারতের নারীবাদী সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল। নারীর ভোটাধিকারের দাবি হলো তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী নারীর ভোট অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কেবল হিন্দু সমাজের নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয়, এটি ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা যা ভারতীয় পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক মুক্তিকে দৃঢ় করেছে। বিংশ শতাব্দীর ভারতে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি কেবল ভোটাধিকারের দাবি একমাত্র বিষয় ছিল না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। নারী শিক্ষা ও তাঁর সীমিত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। হিন্দু সমাজের অন্যতম কু-প্রথা ছিল বাল্যবিবাহ।  এছাড়াও বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ,পর্দাপ্রথা ,বিবাহ বিচ্ছেদ বা পুনবিবাহের অধিকারহীনতা-- এইসব কুপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এর পরিণতি ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হরি বিলাস সারদার বিল পাশ হওয়া, যাতে ব...

উপনিবেশিক ভারতের খেলা ও জাতীয়তাবাদ

উপনিবেশিক ভারতের খেলা ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্ক খেলাধুলো আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও সংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চায় বা ইতিহাস চিন্তায় খেলাধুলো কোনদিনও গভীর ও গৌরবের স্থান পায়নি। উপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতে ও খেলা বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। ১৯ ও ২০ শতকের ভারতের খেলার সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, কূটনীতি, বাণিজ্যিকতা বিভিন্ন খেলার বিবর্তনের ইতিহাসে প্রতিফলিত আছে। ভারতবর্ষে খেলাধুলার সামাজিক ইতিহাস আশ্রয়ী গবেষনার ঐতিহ্য বেশি দিনের নয়। যেখানে পশ্চিমী বিশ্বে অতীত ও বর্তমানের জনজীবনে খেলার গুরুত্ব গত ৩ দশকে প্রথাগত সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেখানে এদেশে ভারতীয় সমাজে খেলা ভূমিকা নিয়ে গবেষণা এ যাবৎ খুবই সীমিত। আর যেটুকু বা লেখালিখি হয়েছে বা গবেষণা হয়েছে তা মূলত ক্রিকেট ও ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। পরাধীন ভারতে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি বা চরিত্র, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আন্দোলনের সীমারেখায় যে শুধু ...

উপনিবেশিক ভারতে খেলা ও সাম্প্রদায়িকতা

উপনিবেশিক ভারতে খেলা ও সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক খেলাধুলো আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও সংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চায় বা ইতিহাস চিন্তায় খেলাধুলো কোনোদিন গভীর ও গৌরবের স্থান পায়নি। উপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে তথা দক্ষিণ এশিয়ায় খেলা বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে। ১৯ ও ২০ শতকের ভারতে খেলার সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, দেশভাগ, শরণার্থী সমস্যা, কূটনীতি, বাণিজ্যিকতা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় গুলি খেলার বিবর্তনের ইতিহাসে প্রতিফলিত আছে। উপনিবেশিক ভারতে খেলার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক ফুটবল, ক্রিকেট দুই খেলার সামাজিক ইতিহাসের মধ্যে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। ফুটবলের ক্ষেত্রে দেখি ১৯৩০- ৪০ এর দশকের বাঙালির জাতীয়তাবাদী ক্রীড়াসত্তায় সাম্প্রদায়িকতার মত এক লক্ষণ এক অবাঞ্ছিত বিভাজন সৃষ্টি করে যা তৎকালীন সম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে হিংসা রূপ ধারণ করেছিল। কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে কেন্দ্র করে ক্রিড়া ক্ষেত্রে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের সূচনা হয় ১৮৮৭ সালে। তবে মহামেড...

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতি

 স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতি ঐতিহ্যিক দিক থেকে শিক্ষার অর্থ ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ। হিন্দুদের মধ্যে পুরোহিত শ্রেনীর অন্তর্গত ব্রাহ্মণরা ধর্মশাস্ত্রের সকল শাখা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করত। অপরদিকে দুই বর্ণ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগন ততটা কঠোরভাবে পাট গ্রহণ না করলেও ব্যবহারিক দক্ষতার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন। শূদ্র এবং নারী ধর্ম শাস্ত্র পাঠ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে কিছু নারী পৌরাণিক সাহিত্য পাঠ করতে শেখেন। মুসলিম নারীরা কোরান শিক্ষা করবেন আশা করা হত, কিন্তু উচ্চ শ্রেণীর মুসলিম পরিবার তাদের কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে ধর্ম সম্বন্ধে তারা যে শিক্ষা পেত তার গৃহ বা পরিবারে কাছ থেকে  অথবা গৃহ শিক্ষকের কাছ থেকে।  উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম।‌  স্ত্রী শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল খ্রিস্টান মিশনারিরা। তবে তাঁরা   প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিতা ভারতীয় মহিলাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ব্যাপারে বেশি মনোনিবেশ করে। মিস কুককে চার্চ মিশনারি সোসাইটি সম্ভ্রান্ত বংশের হিন্দু বালিকাদের জন্য ৩০টি বিদ্যা...

প্রাচীন বালার বিভিন্ন বিভাগসমূহ

প্রাচীন বালার বিভিন্ন বিভাগসমূহ প্রাচীন যুগে বাংলা কোনো একক ও অখণ্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এই ছোট ছোট অঞ্চলগুলোতে শাসক থাকতেন, যারা তাদের মতো করে অঞ্চলগুলো শাসন করতেন। সেই সময়ের বাংলার এই অঞ্চলগুলোকেই সমষ্টিগতভাবে জনপদ বলা হয়। প্রাচীন বাংলার জনপদ: প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকায় প্রাচীন বাংলার জনপদ কোথায় বা কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল এমন অনেক কিছুই সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবুও চার শতক থেকে গুপ্ত, গুপ্ত পরবর্তী যুগ, পাল, সেন এসব আমলের শিলালিপি ও সাহিত্য গ্রন্থগুলোতে প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাচীনকালের যে ঐতিহাসিক উপাদানগুলো পাওয়া যায় সেগুলো থেকে প্রাচীন বাংলার জনপদ এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর কয়েকটি সম্পর্কে দেখে নেয়া যাক। গৌড় পাণিনির গ্রন্থে সর্বপ্রথম গৌড় জনপদটির উল্লেখ পাওয়া যায়। গৌড় জনপদটি সুপরিচিত একটি জনপদ হলেও এর নামকরণের কারণ কিংবা কোন কোন অঞ্চল নিয়ে এটি গঠিত ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে হর্ষবর্ধন এর কিছু শিলালিপি থেকে এটুকু জানা যায় যে, গৌড়দেশ সমু...