সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন | Women's Suffrage Movement in India

নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন

নারী এবং রাজনীতি এই বিষয় দুটি আধুনিক ভারতের নারীবাদী সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল। নারীর ভোটাধিকারের দাবি হলো তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী নারীর ভোট অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কেবল হিন্দু সমাজের নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয়, এটি ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা যা ভারতীয় পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক মুক্তিকে দৃঢ় করেছে। বিংশ শতাব্দীর ভারতে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি কেবল ভোটাধিকারের দাবি একমাত্র বিষয় ছিল না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।

নারী শিক্ষা ও তাঁর সীমিত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। হিন্দু সমাজের অন্যতম কু-প্রথা ছিল বাল্যবিবাহ।  এছাড়াও বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ,পর্দাপ্রথা ,বিবাহ বিচ্ছেদ বা পুনবিবাহের অধিকারহীনতা-- এইসব কুপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এর পরিণতি ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হরি বিলাস সারদার বিল পাশ হওয়া, যাতে বিবাহের ন্যূনতম বয়স  বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়।

উপনিবেশিক ভারতের নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় ছিল গান্ধীজীর আইন অমান্য আন্দোলনে নারী অংশগ্রহণ। জাতীয়বাদী আন্দোলনের পর্বে  ভারতীয় নারীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় রাজনৈতিক বিষয় হল ভোটদানের অধিকার। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নারীর সর্বভারতীয় সংগঠন Women's Indian Association, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে স্বর্ণকুমারী দেবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত The Ladies Association, Women's Indian Association এর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নারীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনের প্রকৃত সূত্রপাত হয়েছিল। এছাড়াও ছিল ১৯২ খ্রিস্টাব্দে লেডি টাটা ও অন্যান্যদের দ্বারা গঠিত National Conference of Women in India, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত All India Women's Conference উনবিংশ শতাব্দীর সমাজ সংস্কার আন্দোলনে প্রায় প্রত্যক্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিল।

কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ভারতের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ একটি বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে শুরু করে নারীর ভোটাধিকার সম্পর্কিত দাবি জাতীয় রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে। নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের উৎস ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট মন্টেগুর পরিদর্শনের মধ্যে নিহিত ছিল। ভারতে কয়েকজন ব্রিটিশ মহিলা যেমন অ্যানি বেসান্ত ,মর্গারেট কাজিনস, ডরোথি টিনা এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেন। মর্গারেট কাজিনস যিনি পূর্বে ইংল্যান্ডের নারীর ভোট অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন, তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮ জন ভারতীয় ও ইউরোপীয় মহিলাদের এক প্রতিনিধি দল সরোজিনী নাইডু নেতৃত্বে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই ডিসেম্বর মন্টেগুর নিকটে যান। তাদের দাবি ছিল নতুন সংবিধানে পুরুষের মতোই নারীর ভোট অধিকার দান এবং স্ত্রীশিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে আরো সুযোগ সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে।

The Women's Indian Association নারীর ভোটাধিকার বিষয়টির ওপর তীব্রভাবে জোর দিয়েছিল। বোম্বাইতে ৮০০ জন শিক্ষিত মহিলার দাবি পত্র এবং ভারতীয় নারীর ভোট অধিকারের সমর্থনে বক্তব্য পেশ করা হয়েছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্গারেট কাজিন্স এর নেতৃত্বে ভোটাধিকারের দাবিতে যে প্রতিনিধি দল গঠিত হয়েছিল সেটিতে সরোজিনী নাইডু, হীরাবাই টাটা, লেডি অবলা বোস, শ্রীমতী নেহেরু, শ্রীমতি চন্দ্রশেখর আয়ার এবং আরো অনেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এভাবে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। নারীর ভোটাধিকারের সমর্থনে মতামত সত্ত্বেও লর্ড সভা ও কমন্স সভার যৌথ সিলেক্ট কমিটি নারীর ভোট অধিকারকে সমর্থন করেনি এবং সাউথ বরো কমিটি, যারা ভোটাধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল। তারাও এই প্রস্তাবটিকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বাতিল করে দেয়। সাউথ বরো কমিটির রিপোর্ট-এ বলা হয়, যে সমাজে পর্দা প্রথা প্রচলিত এবং স্ত্রী শিক্ষার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধি নিষেধ প্রচলিত রয়েছে, সেখানে নারীর ভোটাধিকার একটি অকাল পরিণত ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে।

লন্ডনে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সরোজিনী নাইডু, অ্যানি বেসান্ত প্রমুখের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির সামনে গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া বিল সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপিত করতে যান এবং Women's Freedom League and Womens International League ব্রিটিশ মহিলা সংগঠন গুলির কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রথম নারীর ভোটাধিকার দান করে। ১৯২১ থেকে ১৯২৯ এর মধ্যে ভারতের সকল প্রদেশই আইনসভায় নারীর ভোটাধিকারের বিষয়ে প্রস্তাব পাস করা হয়। ভোটাধিকার লাভের ক্ষেত্রে ভারতীয় মহিলাদের দুটি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। প্রথম বাধা ছিল প্রদেশিক কাউন্সিল গুলির মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়টি অতিক্রম করেছিল আর দুঃসাধ্য। কারণ এটি ছিল সম্পত্তিগত যোগ্যতা।

নারীর ভোট অধিকার আন্দোলন দুটি বিশেষ পর্যায়ের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছিল ।প্রথমটি ছিল উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য মহিলা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য বিখ্যাত মহিলাদের উদ্যোগে এবং দ্বিতীয় পর্যায়টি ছিল জাতীয়তাবাদের আহবানে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোট অধিকারের দাবিতে। প্রথম পর্যায়ের দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মূল আইনসভায় ভোটদানের অধিকার এবং মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব। দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয়েছিল সাইমন কমিশনের নিযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে। এ পর্যায়ে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনে দুটি পৃথক বিষয়ের প্রতি উদ্যম লক্ষ্য করা যায়। একটি হল সমান অধিকার এবং প্রাপ্ত বয়সের ভোটাধিকারের দাবি, অপরটি হল নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে Women's Education Conference-এ শ্রীমতি কাজিনস এর নেতৃত্বে আইনসভার প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় আইনসভায় মহিলাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্তত দুজন মহিলার মনোনয়ন করতে হবে। বোম্বাইয়ের শ্রীমতি সরলা দেবী মেহতা এ প্রস্তাব সমর্থন করেন।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে All India Women's Conference সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে যোগদান করে, যখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতের জন্য একটি নতুন সংবিধানের জন্য আলোচনা শুরু হয়। সরোজিনী নাইডুর সভাপতিত্বে আটজনের মহিলার একটি প্রতিনিধি দল দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে Franchise কমিটির কাছে একটি দাবি পত্র পেশ করার প্রস্তুতি নেয়, যাতে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোট অধিকার এবং মিশ্র সাধারণ নির্বাচন সংরক্ষণে নারীর দাবি থাকে।

সরকার প্রদেশিক আইনসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ২.৫% আসন সংরক্ষণ করে। মহিলা সংগঠনগুলি এবার নারী ঐক্যের পাশে দাঁড়ায় এবং তাঁরা সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা বিষয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠে; কারণ এর মধ্যে হিন্দু মুসলমান মহিলাদের বিভক্ত করার বীজ নিহিত ছিল। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার নীতির সমর্থক গোষ্ঠীগুলি শহরাঞ্চলে ২১ বছরের সকল পুরুষ ও নারীর ভোট অধিকারের দাবি করে ।অপরদিকে Statutory Commission মহিলা ভোটারদের অনুপাত ১ঃ২ মনোনীত করে। Lothian Committee 1:4.5 এবং শ্বেতপত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জনসংখ্যার মাত্র ১৪% ভোটাধিকারের অনুমোদন করে এবং নারী ও পুরুষ ভোটারদের অনুপাত ১ঃ৭ স্থির করে।

এটা স্পষ্ট যে ব্রিটিশ সরকার অনেক যুক্তি মেনে নেয়, যদিও ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আইনে সাক্ষরতাগত যোগ্যতার কথা বলা হয়, তা সত্ত্বেও স্ত্রীগত যোগ্যতায় প্রস্তাবিত নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রধান নীতি থেকে যায়। মহিলাদের জন্য ৪১ টি আসন নির্দিষ্টকরণ জাতীয়তাবাদী ভোটাধিকার গোষ্ঠীকে নিরাশ করে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ প্রদেশিক আইনসভাগুলিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এতে পুরুষ ও নারীর ভোটদাতার সংখ্যা নিশ্চিত ভাবে বেড়েছিল এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ৪৩ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ৯ শতাংশ ভোটাধিকার প্রাপ্ত হয়।

মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার থেকে শুরু করে সরকার নারীর ভোটাধিকার প্রসঙ্গে বহু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এবং মুদালিয়ার কমিটি, স্টাটুটারী  কমিশন রিপোর্ট, লতিয়ান কমিটি রিপোর্ট ,শ্বেতপত্র প্রকৃতি প্রকাশ করেছেন কিন্তু কোনোটিই সমানাধিকার গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। প্রধান আইনে ও যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনে যদিও নারীর ভোটাধিকারকে মেনে নেওয়া হয়েছিল, জাতীয়তাবাদীদের মূল স্রোতের দাবি এবং জাতীয়তাবাদী ভোটাধিকার আন্দোলনে যারা নারী ও পুরুষ সমান ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন তাদের দাবি  1947 পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...