ASEAN
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন। এশিয়া মহাদেশে গড়ে ওঠা এরকম একটি আঞ্চলিক সংগঠন হলো আসিয়ান। ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি রাষ্ট্র থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর মিলিত হয় এবং নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে আসিয়ান (ASEAN) গড়ে তোলে। পরবর্তীকালে আসিয়ানে যথাক্রমে যোগদান করে ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া। বর্তমানে আসিয়ানের মোট সদস্য সংখ্যা দশ এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরে এর স্থায়ী সচিবালায় অবস্থিত।
১১৯৬৭ সালের ব্যাংকক ঘোষনায় আসিয়ানের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা উদ্দেশ্যে আসিয়ান কাজ করবে। এছাড়া এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে ও নিজেকে নিয়োজিত করবে। ১৯৭৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত প্রথম আসিয়ান সম্মেলনে এই সংগঠনের মৌলিক নীতিগুলি ঘোষিত হয়। মৌলিক নীতিগুলি হল:
১) সকল সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বকীয়তার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা।
২) কোন প্রকার বাহ্যিক হস্তক্ষেপ ও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সদস্য রাষ্ট্রগুলির স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার স্বীকৃত হবে।
৩) কোন সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
৪) বিবাদ ও মতপার্থক্যের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা।
৫) যুদ্ধের হুমকি এবং শক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
এবং
৬) সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কার্যকরী সহযোগিতা গড়ে তোলা।
বর্তমানে আসিয়ান একটি অত্যন্ত সফল আঞ্চলিক সংগঠন রূপে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই সাফল্যের পশ্চাতে রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এক্ষেত্রে ব্রুনেই, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। আবার ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের অর্থনীতিও উন্নয়নের পথে। এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির পিছনে আন্ত-আসিয়ান বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে অন্ত: আসিয়ান বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সামগ্রিক বাণিজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ। ১৯৯২ সালে আসিয়ান এর সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ASEAN Free Trade Area গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল পুরো আসিয়ান অঞ্চলকে একটি উৎপাদন ইউনিট রূপে চিহ্নিত করে। AFTA গঠনের ফলে এই বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে (২০০৪) ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
আসিয়ানের চমকপ্রদ সাফল্য উন্নত দেশ সহ অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রকে আগ্রহী করেছে আশিয়ান এর সঙ্গে সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে। কমিউনিস্ট চীন প্রথমদিকে আসিয়ানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্ধিহান থাকলেও পরবর্তীকালে আসিয়ানের সঙ্গে সহযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ভারতও আসিয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা রক্ষা করে চলেছে। এছাড়া মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও ভারত ও আসিয়ান যৌথভাবে কাজ করছে। শুধু অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কাম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধ বা ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক সংকট মীমাংসার ক্ষেত্রে আসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক কথায় এশিয়া মহাদেশে একটি সক্রিয় ও সফল আঞ্চলিক সংগঠন রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে আসিয়ান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন