সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

PG লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শ্রমিক আন্দোলনে ইতিহাস চর্চার ধারা

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস চর্চার বিভিন্ন ধারা  ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মূলত বিদেশী পু৺জির অনুপ্রবেশ এবং প্রধানত উপনিবেশিক উদ্যোগে বাগিচা, খনি, চটকল, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, বস্ত্র শিল্প এবং ইস্পাত ও রেল এর মত নতুন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার পরে, ভারতের সর্বপ্রথম স্পষ্টত এক নতুন সামাজিক শ্রেণী হিসেবে শিল্প শ্রমিকদের আবির্ভাব ঘটে। যদিও কৃষি প্রধান ভারতবর্ষে মোট জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যাগতভাবে শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ঘটনাচক্রে ভারতবর্ষে এই শিল্প শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব সেই সময়ে শুরু হয়, যে সময়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।  গোড়ার দিকে শ্রমিক ও তাদের আন্দোলনের মূল ধারা ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে তেমনভাবে আকর্ষণ করেনি। কারণ তারা শ্রেণী-সম্প্রদায় নির্বিশেষে ভারতীয়দের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁদের মতে রাজনীতিবিদরা অনেক সময়ই শ্রমিকদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এবং তাদের নিজেদের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল না। ফলে ঐতিহাসিকগণ, জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে তেমন শ্রদ্ধা পোষণ করতেন না।  উপনিবে...

উডের ডেসপ্যাচ

উডের ডেসপ্যাচ সম্পর্কে আলোচনা কর ১৮ শতকের ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। ১৮ শতকের  শেষ দিকে বিভিন্ন কারণে এই দেশে ইংরেজি শিক্ষা চালুর দাবি উঠেছিল। এদেশের কোন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, যখন ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট-এ জনশিক্ষা বিস্তারের জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়। প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের মধ্যে শেষ পর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীদের জয় হয়। বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ১৯ শে জুলাই  ভারতের শিক্ষা সম্পর্কে যে প্রতিবেদন পেশ করে তাকে উডের নির্দেশনামা বা Wood's Despatch বলা হয়। উডের ডেসপ্যাচ সংক্রান্ত নির্দেশে ইংরেজি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার উন্নতি ও মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষা ইংরেজি এবং উচ্চ স্তরে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেন। তিনি প্রত্যেক প্রদেশে শিক্ষাবিভাগ গঠন এবং শিক্ষা আধিকারিক নিয়োগ করতে বলেন। উড বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত স্কুলগুলিকে সরকারি অনুদান দিতে বলেন এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারি তাদারকি ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে ব...

কলকাতা ও তার আশেপাশের গণিকা পল্লী

কলকাতা ও তার আশেপাশের গণিকা পল্লী সম্পর্কে আলোচনা কর? ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলার শাসনভার গ্রহণের পর নতুন বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক উপনিবেশিক আর্থসামাজিক বিন্যাসের সাথে সাযুজ্য রেখে বাংলায় গণিকাবৃত্তিরও প্রবর্তন ঘটে। উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে গনিকা বৃত্তির সংগঠনের প্রসারণ এবং খরিদ্দারদের বিভিন্ন বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কলকাতার বাইরে বাংলার মফঃস্বল শহরগুলি তেও পর্যাপ্ত গণিকালয়ের অভ্যুদ্বয় দেখা যায়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় চার লক্ষ জনসাধারণ ১২,৪১৯ জন গণিকাকে পালন করেছিল। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা ৩০ হাজারে এসে দাঁড়ায়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ব্যঙ্গ রচয়িতা কালীপ্রসন্ন সিংহ তার রচনায় অলস ধনী পুরুষদের জীবনযাত্রা ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন যে এই সমস্ত ধনী ব্যক্তিদের জন্য কলকাতা একটি গণিকালয়ে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক লোকালয়ে কমপক্ষে দশটি করে গনিকালয় থাকত। প্রতিবছর গণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত। কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলে গণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংগঠনের পরিবর্তন ঘটেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতাব...

গনিকা ও বাবুর সম্পর্ক

গনিকা ও বাবুর সম্পর্ক আলোচনা কর। ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলার শাসনভার গ্রহণের পর নতুন বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক উপনিবেশিক আর্থসামাজিক বিন্যাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলায় গণিকাবৃত্তিরও প্রবর্তন ঘটে। উপনিবেশিক প্রশাসন ইউরোপীয় ও ভারতীয় সৈনিকদের জন্য ভারতীয় গণিকা নিযুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। সৈনিকদের স্থায়ী বাসস্থান সংশ্লিষ্ট বাজার ও নির্দিষ্ট স্থানে গণিকাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারা "চাকলা" নামে পরিচিত ছিল। এই বেশ্যারা সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল ১. গোরা চাকলা ২. লাল কুর্তা চাকলা এবং ৩. কালা চাকলা। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে কলকাতায় একশ্রেণীর ভু৺ইফোড়  ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যারা ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্তাদের দালালি করে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করেছিল। এদের উচ্চ স্তরে ছিলেন বেনিয়ান, দেওয়ান এবং সর্বনিম্নে মোশাহেব শ্রেণী। এরাই উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতার গনিকাবৃত্তির প্রথম প্রজন্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সমসাময়িক হাস্যরসাত্মক নাটক, প্রেমপত্র ইত্যাদিতে এদের এবং এদের সঙ্গী গণিকাদের উল্লেখ আছে। এ যুগের প্রথম প্রজন্মের বাবুরা ...

বাংলা থিয়েটারে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি

বাংলা থিয়েটারে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির অবদান আলোচনা কর। প্রাচীনকাল থেকেই নাটকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগিতার দিক সমাজে স্বীকৃত হয়ে এসেছে। প্রথমত নাটক হল উন্নত সংস্কৃতির প্রচারক তথা চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম। দ্বিতীয়ত, জনশিক্ষা বা লোক শিক্ষার অন্যতম বাহন হল নাটক। ধরে নেওয়া হয় ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্রই হল প্রাচীন ভারতের বা বৈদিক যুগে নাট্যচর্চার প্রধান অবলম্বন ও সূচনা। প্রাচীন ভারতে নাট্যশাস্ত্র পঞ্চম বেদ নামে সংস্কৃত সাহিত্যে পরিচিত হয়ে ওঠে। নাট্যবেত্তাগণ বলেন, প্রাচীন সংস্কৃত নাটকের ভিত্তি হল ঋকবেদের বাণী, সামবেদের গীতি, যজুর্বেদের অভিনয় এবং অথর্ববেদের অনুভূতি ও রস। এভাবেই গড়ে উঠেছিল সংলাপ সঙ্গীত ও অভিনয়ে সমৃদ্ধ এবং রসপূর্ণ। কালিদাস পূর্ব যুগের দুজন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার রূপে মহাকবি ভাস এবং অশ্বঘোষের নাম পাওয়া যায় সেই হিসেবে ভারতবর্ষের নাট্যচর্চের কাল দুই সহস্র বছরের অধিক। বাংলার নাট্যচর্চার জন্ম বলা চলে, দ্বাদশ শতকে জয়দেবের গীতগোবিন্দ, চতুর্দশ শতকে বডু চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকেই। তবে ১৬ শতকের শ্রীচৈতন্যের নিত্যগীত সংলাপ প্রকৃতি থেকে যে কৃষ্ণ যাত্রা সূচনা তাকেই অনেকে বাংলার আদ...

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতিতে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা

স্ত্রী শিক্ষার অগ্রগতিতে  খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা আলোচনা কর? ঐতিহ্যিক দিক থেকে শিক্ষার অর্থ ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ। হিন্দুদের মধ্যে পুরোহিত শ্রেণির অন্তর্গত ব্রাহ্মণরা ধর্মশাস্ত্রের সকল শাখা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করত। অপরদিকে দুই জাত, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগন ততটা কঠোরভাবে পাঠ গ্রহণ না করলেও ব্যবহারিক দক্ষতার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন। শূদ্র এবং নারী ধর্মশাস্ত্র পাঠ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। উচ্চ শ্রেণীর কিছু পরিবারে কিছু নারী পৌরাণিক সাহিত্য পাঠ করতে শেখেন। মুসলিম নারীরা কোরান শিক্ষা করবেন আশা করা হত। কিন্তু উচ্চ শ্রেণীর মুসলিম পরিবার তাদের কোনো কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। ফলে ধর্ম সম্বন্ধে তারা যে শিক্ষা পেত তার গৃহ বা পরিবারের কাছ থেকে  অথবা গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে।  উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা ছিল একেবারেই নগন্য।‌  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেরানী ও অনুবাদকের প্রয়োজনে ভারতে ইংরেজি শিক্ষার সূত্রপাত ঘটায়। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তরুণ ভারতীয়দের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সহকারী পদের জন্য উপযুক্ত করে তোলা...

ঔপনিবেশিক ভারতের শ্রমিক সরবরাহের উৎস কি?

ঔপনিবেশিক ভারতের শ্রমিক সরবরাহের উৎস উনবিংশ শতাব্দীর শেষআর্ধ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অন্তবর্তীকালীন সময়ে ভারতবর্ষে এক নতুন সামাজিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। এই শ্রেণী শিল্পের নিযুক্ত শ্রমিক শ্রেণী নামে ভারতের ইতিহাসে পরিচিত। ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  ভারতে ব্রিটিশ শাসনে উপনিবেশিক স্বার্থ পূরণ করার জন্য প্রাচীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে গড়ে উঠেছিল আধুনিক শিল্প এবং পাশ্চাত্য অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা। এবং তা হয়েছিল অত্যন্ত ধীরগতিতে ও বাধাগ্রস্থ পথে। সামন্ততন্ত্রের অবসানের পর ইউরোপে যেভাবে আধুনিক ধনতন্ত্র ও শিল্প ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার থেকে ভারতে ধণতন্ত্র ও আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠার পথ ছিল ভিন্নতর। অবশ্যই মনে রাখার প্রয়োজন এ দেশে শিল্প ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল উপনিবেশিক শাসন ও শোষণের মধ্য দিয়ে।  ভারতে আধুনিক শিল্পের উদ্ভব ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা হলো রেলপথের প্রতিষ্ঠা। এর সূত্র ধরে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ ভারতের প্রধান প্...

ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন | Women's Suffrage Movement in India

নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন নারী এবং রাজনীতি এই বিষয় দুটি আধুনিক ভারতের নারীবাদী সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল। নারীর ভোটাধিকারের দাবি হলো তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী নারীর ভোট অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কেবল হিন্দু সমাজের নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয়, এটি ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা যা ভারতীয় পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক মুক্তিকে দৃঢ় করেছে। বিংশ শতাব্দীর ভারতে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি কেবল ভোটাধিকারের দাবি একমাত্র বিষয় ছিল না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। নারী শিক্ষা ও তাঁর সীমিত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। হিন্দু সমাজের অন্যতম কু-প্রথা ছিল বাল্যবিবাহ।  এছাড়াও বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ,পর্দাপ্রথা ,বিবাহ বিচ্ছেদ বা পুনবিবাহের অধিকারহীনতা-- এইসব কুপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এর পরিণতি ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হরি বিলাস সারদার বিল পাশ হওয়া, যাতে ব...