সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

GE2 লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মৌর্য অর্থনীতি | Maurya Economy

মৌর্য অর্থনীতি | Maurya Economy মৌর্যরা যে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল তার জন্য দরকার ছিল ব্যাপক হারে সম্পদ সংগ্রহ করা। এজন্য মৌর্য যুগের অর্থনীতির অন্যতম চরিত্র ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। মৌর্য যুগের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির পরিচয় আমরা পাব কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, সমসাময়িক গ্রিক বিবরণী এবং অশোকের অনুশাসনগুলি থেকে। কৃষি অর্থনীতি গ্রিক বিবরণী থেকে জানা যায়, মৌর্য যুগের উৎপন্ন ফসলের নানান বৈচিত্র ছিল। প্রধান ফসল ছিল ধান। ধান ছাড়াও গম, জোয়ার, বাজরা এবং আখ চাষের কথা জানা যায়। জনসংখ্যার বেশিরভাগই ছিল কৃষিজীবী। কৃষির উপর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল এক প্রকার উচ্চপদস্থ কর্মচারীর হাতে, যিনি অর্থশাস্ত্র-এ সীতাধ্যক্ষ নামে পরিচিত ছিলেন। সীতা জমি ছিল আসলে রাজার খাসজমি। তবে সীতাধ্যক্ষ কেবল সীতা জমিতেই নয়, সাম্রাজ্যের অন্যান্য জমিতেও উৎপাদনের তদারকি করতেন। অর্থশাস্ত্রে সীতা জমির উৎপাদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই প্রকার জমিতে দু'রকম কৃষি শ্রমিক নিয়োগ করা হত; একদল নিজস্ব উপকরণ দিয়ে চাষ করত, আরেকদল কেবল দৈহিক পরিশ্রম দিত। তাই প্রথম দল উৎপাদনের ১/২ অংশ এবং দ্বিতীয় দল ১/৪...

আদিমধ্য যুগে সমুদ্র বাণিজ্য | Overseas Trade in Early Medieval India

আদিমধ্য যুগে সমুদ্র বাণিজ্য রামশরণ শর্মা ও তার অনুগামীগন মনে করেন যে, গুপ্ত যুগের শেষ দিকে রোম-ভারত বাণিজ্যের অবনতিজনিত কারণে খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় অর্থনীতিতে সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে যায়। তিনি দেখিয়েছেন পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ক্রমশ স্বর্ণমুদ্রার মান নিম্নগামী হয়। উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজবংশে নামাঙ্কিত কোনো স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায় নি। দক্ষিণ ভারতেও সাতবাহনদের পতনের পর থেকে মুদ্রার ব্যবহার কমে আসে। মুদ্রা ব্যবহারের যেটুকু প্রমান পাওয়া গেছে তা বেশিরভাগই তামার মুদ্রা, যা দিয়ে বহির্বাণিজ্য হয় না। তবে সপ্তম শতাব্দীর পর থেকে বাণিজ্যের  পুনরায় অগ্রগতি ঘটতে থাকে বলে তিনি মনে করেন। চতুর্থ থেকে সপ্তম শতকে ভারতের বহির্বাণিজ্য কতটা সজীব ছিল তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অষ্টম শতক থেকে সচল সমুদ্র বাণিজ্য সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। রোম ভারত বাণিজ্য অবনতি ঘটলেও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ফলে সমুদ্র বাণিজ্য কিছুটা চাঙ্গা হয়। ভারতের পশ্চিম উপকূলে পারস্য উপসাগরের মধ্য দিয়ে আরব সাগরীয় বাণিজ্যের অংশ নিত বাইজানটাইন বণিক ও ইরানের সাসানীয় বণিকেরা। এই দুই দেশের ব...

হর্ষবর্ধন এর রাজনৈতিক অবদান | Political Contributions of Harsha Vardhana

হর্ষবর্ধন এর রাজনৈতিক অবদান গুপ্ত পরবর্তী উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হর্ষবর্ধন ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি রাজা হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন এবং নিজ প্রতিভাবলে উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। দক্ষিণ ভারতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী চালুক্য রাজ পুলকেশী তাঁকে 'সকলোত্তরপথনাথ' বলে অভিহিত করেছিলেন।  হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের ইতিহাস জানা যায় তাঁর সভাকবি বানভট্টের হর্ষচরিত, হিউ এন সাং এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত, বাঁশঘেরা লেখ, চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল লিপি প্রভৃতি উপাদান থেকে। হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজবংশের সন্তান ছিলেন । গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক এবং মালব রাজ দেবগুপ্তের যৌথ বাহিনী কনৌজ আক্রমণ করেন। তখন কনৌজের শাসক ছিলে মৌখরি রাজ গ্রহবর্মণ, যার স্ত্রী ছিলেন থানেশ্বর রাজ রাজ্যবর্ধনের (হর্ষের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা) ভগিনী রাজ্যশ্রী। এই অবস্থায় ভগিনীপতির রাজ্য রক্ষার্থে রাজ্যবর্ধন শশাঙ্ক ও দেবগুপ্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কিন্তু শশাঙ্কের হাতে থানেশ্বরের রাজা রাজ্যবর্ধনের হত্যা হয়।  শশাঙ্কের হাতে নিঃসন্তান গ্রহবর্মনের মৃত্যু এবং ভগিনী রাজ্যশ্রী ...

Samudragupta | সমুদ্র গুপ্তের রাজনৈতিক অবদান

সমুদ্র গুপ্তের রাজনৈতিক অবদান  কুষাণদের পতনের ৫০ বছর বা  তার অল্প কিছু পরে উত্তর ভারতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে গুপ্তদের উত্থান ঘটে। প্রথম গুপ্ত রাজা শ্রীগুপ্ত। তবে প্রথম শক্তিশালী গুপ্ত সম্রাট হলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্ত। আর যে  সম্রাটের সময় গুপ্ত সাম্রাজ্য বিস্তৃত রূপ ধারণ করেছিল তিনি হলেন সমুদ্রগুপ্ত। সমগ্র উত্তর ভারতে সমুদ্রগুপ্ত তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং দক্ষিণ ভারতের পূর্ব উপকূলে, এমনকি উপমহাদেশের বাইরেও তার প্রভাব বিস্তৃত হয়। সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ভারত আভিযান এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্তের রাজনৈতিক কৃতিত্বের বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও এরান(মধ্যপ্রদেশ) লেখ এবং বেশ কিছু মুদ্রা সমুদ্র গুপ্ত সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। এলাহাবাদ প্রশস্তির সপ্তম স্তবকে এবং একাদশ স্তবকে সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ভারত জয়ের বিবরণ আছে। তিনি উত্তর ভারতের নয়জন রাজাকে পরাজিত করেন। এরা হলেন রুদ্রদেব (বিদিশার রাজা), মতিল (বুলন্দ রাজা ), নাগ দত্ত (দত্ত নামধারী উত্তরবঙ্গীয় রাজা), চন্দ্রবর্মন (পুষ্করণা  অঞ্চলের রাজা), গণপতিনাগ (গঙ্গা যমুনা দোয়াব অঞ্চলের শাসক), নাগস...

Guild | Early Medieval India | আদি মধ্যযুগে গিল্ড

আদি মধ্যযুগে গিল্ড  শিল্পী ও কারিগরদের সংগঠন কে গিল্ড  বলা হয়। ভারতে এগুলিকে শ্রেণি বা সংঘ বলা হত। সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতে শ্রেণী বা সংঘ গুলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গুপ্ত যুগ থেকে ভারতে আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল তার প্রভাব গিল্ড গুলির উপরেও পড়েছিল। তাই আদি মধ্যযুগের গিল্ড গুলির চরিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছিল। আদি মধ্যযুগের গিল্ডের গুরুত্ব কিছুটা কমে ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। লালন গোপাল মনে করেন যে, গিল্ড এই সময়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে মেনে নিয়েছিল। তাই যৌথ স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদার দেখিয়েছিলেন যে, কর ফাঁকি, জুয়া খেলা ও বারাঙ্গনার উপস্থিতি ঘটলে রাজা গিল্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন-- এরকম আগে দেখা যায়নি। 12-13 শতকের সাহিত্যে শ্রেণীকরণের উল্লেখ আছে। শ্রেণিকরণ হলো প্রশাসনিক দপ্তর যা গিল্ডের তত্ত্বাবধান করত। বৃহৎ ধর্ম ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ শ্রেণীকে সংকর জাতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এগুলিকে শাস্ত্রকাররা ভালো চোখে দেখেননি। কুম্ভকার, তাঁতি, স্বর্ণকার, রজক প্রভৃতি হলো শুদ্ধ জাতি। চর্মকার, তেলি, ইক্ষু প্রেরণকারী, রঙ্গকার, কাসারি প্র...

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক অবদান | Political Contributions of Chandragupta II

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক অবদান সমুদ্রগুপ্তের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ৩৭৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। অনেকেই মনে করেন যে, সমুদ্রগুপ্তের ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী ছিলেন রামগুপ্ত। আসলে এই ধারণাটির উদ্ভব হয়েছে বিশাখদত্তের দেবীচন্দ্রগুপ্তম   নাটক থেকে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে রামগুপ্ত শক  রাজার হাতে পরাজিত ও নিহত হলে তার ভাই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কৌশলে শক  শিবিরে ঢুকে শক রাজাকে হত্যা করে তাঁর বৌদি ধ্রুব দেবীর  পানি গ্রহণ করেন।  কিন্তু দীনেশচন্দ্র সরকার উপরোক্ত ধারণার অসারতা প্রমাণ করেছেন মথুরা স্তম্ভলেখর আলোকে। তাছাড়া রামগুপ্তের  মুদ্রাগুলি কোনো মতেই ষষ্ঠ শতকের আগের নয়। তাই রামগুপ্ত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সমসাময়িক ছিলেন না এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তই ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের অব্যবহিত উত্তরাধিকারী। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল পশ্চিম ভারতের ক্ষমতাসীন শক ক্ষত্রপদের উৎখাত। শক ক্ষত্রপ চষ্টন  গুজরাট, কাথিয়াবাড় এবং উজ্জয়িনী  এলাকায় রাজত্ব করছিলেন। মুদ্রাগত সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ৪১০-৪১১ ...

স্কন্দগুপ্তের রাজনৈতিক কৃতিত্ব | Skandagupta: The Last Powerful Gupta Ruler

স্কন্দগুপ্তের রাজনৈতিক কৃতিত্ব গুপ্ত রাজবংশের শেষ শক্তিশালী শাসক ছিলেন স্কন্দগুপ্ত , যার সময় গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন অন্তত অবিকৃত ছিল।  জুনাগড়, ইন্দোর ও ভিতারি সহ মোট 5টি  লেখ এবং কিছু মুদ্রা স্কন্দগুপ্ত সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। প্রথম কুমার গুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্ত; তবে তাঁর সিংহাসন আরোহন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । জুনাগড় লেখতে গুপ্ত সম্রাট হিসাবে কুমারগুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্তের নাম পাওয়া যায়; অন্যদিকে বিহার লেখতে কুমার গুপ্তের পুত্র ও উত্তরাধিকারী হিসেবে নাম রয়েছে পুরুগুপ্তের। ভিতারি লেখতেও অনুরূপ বিবরণ রয়েছে; কিন্তু সেখানে স্কন্দগুপ্তের নাম নেই। প্রথম কুমারগুপ্তর শাসনের অবসান এবং স্কন্দগুপ্তর শাসনের সূচনা সন তারিখ একই (136 গুপ্তাব্দ )। তাই মনে করা হয় স্কন্দগুপ্তই প্রথম কুমারগুপ্তের পরবর্তী শাসক। বতীন্দ্রনাথ মুখার্জীর মতে,  পুরুগুপ্ত  স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী শাসক; কারণ পুরু গুপ্তের মুদ্রা 144 গ্রেন তৈলরীতির, যা স্কন্দগুপ্ত সূচনা করেছিলেন। অন্যদিকে রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, ভাতৃবিরোধে জয়লাভের মাধ্যমে স্কন্দগুপ্ত সিংহাসন দখল করেন। অনুমান করা যায় যে, কুমা...

গুপ্তযুগে কি স্বর্ণযুগ | Was the Gupta Period a Golden Age?

ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বিতর্ক   পঞ্চদশ শতকীয় ইউরোপে রেনেসাঁর যুগে নবজাগরণের পণ্ডিতগন ইউরোপে স্বর্ণযুগের সন্ধানে রত হয়েছিলেন। মধ্যযুগের উত্তরাধিকারের কথা প্রায় বিস্মৃত হয়ে তারা প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলেন। মধ্যবর্তী শতকগুলি অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের আখ্যা লাভ করেছিল। জ্ঞান চর্চা ও জীবনচর্চায় ধ্রুপদী সংস্কৃতিকে অনুসরণ করা হয়েছিল। ১৮ শতকে ভারততত্ত্ব আলোচনা করতে গিয়ে প্রথম যুগের প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদগণ প্রাচীন ভারতের এমন এক সংস্কৃতির সন্ধান লাভ করেছিলেন, যার মাহাত্ম্য ইউরোপীয় ধ্রুপদী ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনীয়। এই সংস্কৃতি হল গুপ্ত যুগীয় সংস্কৃতি। গুপ্ত যুগকে ‘স্বর্ণযুগ’ বলে অভিহিত করা হল। 330 খ্রিস্টাব্দ থেকে 550 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় কালে ভারতের বৃহৎ অঞ্চলে গুপ্ত বংশীয় শাসকেরা রাজত্ব করেছিলেন। গুপ্তদের  রাজত্বকালে ভাষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল। এই সমস্ত উৎকর্ষতার দিকে তাকিয়ে পণ্ডিতরা এই যুগকে স্বর্ণযুগের আখ্যা দিয়েছেন। ভিন্সেন্ট স্মিথ, সমুদ্রগুপ্তকে ভারতের নেপোলিয়ন বলেছিলেন,-- গু...

গুপ্তযুগে কারিগরি উৎপাদন

Please visit our  Homepage and Subscribe us. অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ কারিগরি উৎপাদন। গুপ্তযুগে কৃষিকাজের পাশাপাশি কারিগরি উৎপাদন অব্যাহত ছিল। সমকালীন সাহিত্য, লেখমলা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান থেকে এবিষয়ে জানা যায়। দিল্লির লৌহস্তম্ভ গুপ্ত যুগে কারিগরি শিল্পের তালিকা পাওয়া যাবে অমরসিংহের অমরকোশে। আলোচ্য পর্বে ধাতুর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছিল এবং এক্ষেত্রে লোহার কারিগর বা কামাররা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। লোহার ব্যবহার ও লৌহ শিল্পের উৎকর্ষতার সবচেয়ে বড় নজির হল দিল্লির কুতুবমিনার এর কাছে অবস্থিত বিখ্যাত লৌহস্তম্ভটি; চতুর্থ-পঞ্চম শতকে তৈরি লৌহস্তম্ভটিতে এখনো পর্যন্ত মরচের চিহ্নমাত্র নেই। বাকাটক  লেখতে 'লোহানগর' নামে একটি জায়গার নাম আছে, যেটি কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতে, কামারদের গ্রাম। তিনি 'কংসকারক' এবং 'সুবর্ণকারক' নামে দুটি গ্রামের নাম দেখিয়েছেন যেগুলি অবশ্যই কাসারি ও সোনার কারিগরদের গ্রাম। মাটির পাত্র ছিল অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কুম্ভকারদের অস্তিত্বের প্রমাণ কেবল লেখমালায় নয়, রাজঘাট, অহিছত্র প্রভৃতি প্রত্নক্ষেত্র থেকে মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। আরেকটি অত্যাব...

কৈবর্ত বিদ্রোহ | Kaivarta Rebellion

কৈবর্ত বিদ্রোহ দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্রভূমিতে এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী দিব্যর নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয় যাতে দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন এবং  বরেন্দ্রভূমি দিব্যর শাসনে চলে যায়। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় এছাড়া কুমারপালের কমৌলি তাম্রশাসন, মদনপালের মনহলি তাম্রশাসন এবং ভোজবর্মার বেলোয়া তাম্রশাসন উল্লেখযোগ্য। রামচরিত থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় মহীপালের সময় 14 জন সামন্তরাজা মিলিতভাবে বিদ্রোহ করলে যুদ্ধে মহিপাল পরাস্ত ও নিহত হন। যুদ্ধের প্রথমদিকে দিব্য রাজার পক্ষেই ছিলেন। রাজার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী দেখে তিনি বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন। সন্ধ্যাকর নন্দী তাই দিব্যকে দস্যু ও উপাধি ব্রতী বলেছেন এবং তার এই বিস্বাসঘাতকতাকে অপবিত্র ধর্মবিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন। কৈবর্ত বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। অধ্যাপক রামশরণ শর্মা কৈবর্তদের কৃষক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে কৈবর্ত বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের দৃষ্টান্ত। রামচরিতের পান্ডুলিপির আবিষ্কর্তা অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, কৈবর্তরা মহীপালে...

দেবপালের রাজনৈতিক অবদান।

Please visit our  Homepage and Subscribe us. বাংলাকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপনের যে স্বপ্ন শশাঙ্ক দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হয়েছিল পাল রাজাদের শাসন কালে। পালবংশের দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক ধর্মপাল ও দেবপাল। দেবপাল (৮১০-৪৭ খ্রি:) ছিলেন ধর্মপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে বসেন এবং তাঁর রাজত্বকালে পাল সাম্রাজ্যের সীমা বহুদূর প্রসারিত হয়। পরমেশ্বর, পরমভট্টারক ও মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি প্রচলিত সম্রাটসুলভ উপাধি তিনি গ্রহণ করতেন। নারায়ণ পালের বাদাল প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, মন্ত্রী দর্ভপানির কূটনীতির সাহায্যে দেবপাল হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত এবং পূর্ব সাগর থেকে পশ্চিম সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের শাসকদের কর প্রদানে বাধ্য করেছিলেন। আবার মন্ত্রী কেদার মিশ্রের বুদ্ধিবলে হুন, উৎকল, দ্রাবিড়, গুর্জর প্রতিহারদের দর্প ক্ষুন্ন করে সমুদ্র মেখলা রাজ্যটি ভোগ করেছিলেন। তাঁর হস্তিবাহিনী বিন্ধ্যারন্যে গিয়েছিল এবং অশ্বারোহী বাহিনী কম্বোজ। পর্যন্ত গিয়েছিল। মুঙ্গের লেখ থেকে জানা যায়, দেবপাল এক 'দ্রাবিড়নাথ'কে পরাজিত করেছিলেন। অনেকেই মনে করেন এই দ্রাবিড়নাথ...

গুপ্তযুগের অর্থনীতি | Gupta Economy

গুপ্ত অর্থনীতি গুপ্ত রাজাদের শাসনকাল ৩১৯-৩২০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ৫৫০ বা ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। গুপ্তদের সময়ে দক্ষিণ ভারতে বাকাটক ও কদম্ব রাজারা রাজত্ব করত। তাই গুপ্ত যুগ বলতে আমরা চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ষষ্ঠ শতকের সমাপ্তি পর্যন্ত ধরে নেই। গুপ্ত যুগে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল সেদিকে নজর রেখে অনেক ঐতিহাসিক গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেছেন গুপ্ত যুগের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ ছিল সুস্থিত অর্থনীতি। কৃষি অর্থনীতি  গুপ্ত অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অগ্রহার ব্যবস্থা। অগ্রহার হল ধর্মস্থান বা পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভূমিদান প্রথা। এই ভূমিদান গুপ্তদের আগে থেকে চালু ছিল। কিন্তু আলোচ্য পর্বে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।  দান করার ক্ষেত্রে গুপ্তদের তুলনায় বাকাটকরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। অগ্রহার ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলনের ফলে জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার ঘটেছিল এবং গোষ্ঠী মালিকানা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছিল। একইসাথে এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি লাভবান হয়েছিল। একটি ধর্মীয় ভূস্বামী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। রামশরণ শর্মা ও ...