সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ModernIndia লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ঔপনিবেশিক ভারতে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন | Women's Suffrage Movement in India

নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন নারী এবং রাজনীতি এই বিষয় দুটি আধুনিক ভারতের নারীবাদী সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফল। নারীর ভোটাধিকারের দাবি হলো তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী নারীর ভোট অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, কেবল হিন্দু সমাজের নারীর পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয়, এটি ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা যা ভারতীয় পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক মুক্তিকে দৃঢ় করেছে। বিংশ শতাব্দীর ভারতে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি কেবল ভোটাধিকারের দাবি একমাত্র বিষয় ছিল না, স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশ্লেষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। নারী শিক্ষা ও তাঁর সীমিত সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। হিন্দু সমাজের অন্যতম কু-প্রথা ছিল বাল্যবিবাহ।  এছাড়াও বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ,পর্দাপ্রথা ,বিবাহ বিচ্ছেদ বা পুনবিবাহের অধিকারহীনতা-- এইসব কুপ্রথা গুলি হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এর পরিণতি ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হরি বিলাস সারদার বিল পাশ হওয়া, যাতে ব...

পাঞ্জাবের অর্থনীতিতে গম উৎপাদনের গুরুত্ব | Importance of Wheat in Punjab Economy during Coloneal Period

 পাঞ্জাবের অর্থনীতিতে গম উৎপাদনের গুরুত্ব কৃষির বাণিজ্যিকিকরণ কেবল তুলা ও পাটের মত তন্তু শষ্যের ক্ষেত্রে হয়েছিল এমনটা নয়, ভারতের অন্যতম প্রধান দানাশষ্য গমও ব্রিটিশ বণিকদের রপ্তানির তালিকায় এসেছিল। পাঞ্জাবে গম উৎপাদন ও তাকে ঘিরে ব্যবসা রমরমা ছিল। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গম উৎপাদন এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ব্রিটিশ কৃষি বিজ্ঞানীরা পাঞ্জাবকে দেখে ভারতের ভবিষ্যৎ খাদ্য ভান্ডার বলে আখ্যা দেন। ফলে পাঞ্জাব হয়ে ওঠে ভারতের মূল গম উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারী অঞ্চল। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাঞ্জাব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গম রপ্তানি করতে থাকে। এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ সুয়েজ খাল উন্মুক্ত করা হয়েছিল বলে এবং রপ্তানিকর গ্রাস করা হয়েছিল বলে। তবে ইংল্যান্ডই হয়ে উঠেছিল গমের মূল আমদানিকারক দেশ। পাঞ্জাবের গম পাউরুটি তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত মানের ছিল। ব্রিটিশ মালিকানাধীন কেক ও অন্যান্য বেকারি প্রস্তুতকারকরা ভারতের গম কে পছন্দ করত। পাঞ্জাবের গম তার উন্নতমানের জন্য শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের বাজারে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল। পাঞ্জাবে গম উৎপাদন উত্থান-পতনের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী। ১৮৭৫ ৭৬ সালে গমের উৎপাদন ও রপ্ত...

বাংলায় বাণিজ্যিক কৃষি হিসাবে পাট চাষ | Jute Cultivation as a Cash Crop

 বাংলায় বাণিজ্যিক কৃষি হিসাবে পাট চাষ  অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বপ্রথম নীল, পাট, তুলা এবং তৈলবীজ জাতীয় ভারতীয় কৃষিজ পণ্যাদির যে প্রচুর সম্ভাবনা আছে তা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এই সময়ে ইংল্যান্ডে শিল্পোন্নতির ফলে এবং সেদেশে ভারতীয় শিল্পজাত পণ্যের আমদানির উপর আরোপিত সংরক্ষণমূলক নিয়ন্ত্রণবিধির চাপে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য নতুন নতুন কৃষিজ পণ্যের সম্ভাবনার দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য হয়। এভাবেই শুরু হয় ভারতে কৃষির বাণিজ্যিকিকরণ। ইতিপূর্বে ভারতের চাষিরা যেখানে ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, মশলা প্রভৃতি খ্যাদ্যপণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিত সেখানে এখন অতি দ্রুত গুরুত্ব পেতে থাকে পাট, তুলা, নীল প্রভৃতি বাণিজ্যিক শষ্য, যা মূলত ইংল্যান্ডের শিল্পউৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। ১৮৫০ এর দশকে দেশের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলসমূহ রেলপথ দ্বারা সংযুক্ত হলে এবং সামুদ্রিক পরিবহনের উন্নতির ফলে ভারী সামগ্রীসমূহ বিদেশে প্রেরণ সহজতর হলে ভারতের কৃষিজ পণ্যের রপ্তানীর আয়তন আরও দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। ১৮৩৩ এর পর বাণিজ্যিক সংস্থা হিসাবে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যকলাপ বন্ধ ...

দাক্ষিনাত্য বিদ্রোহ | Deccan Uprising

 দাক্ষিনাত্য বিদ্রোহ উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ভারতে যেসব কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ১৮৭৫ এর দাক্ষিণাত্য বিদ্রোহ তার মধ্যে অন্যতম। মহারাষ্ট্রের এই কৃষক অসন্তোষের পশ্চাতে ছিল ঔপনিবেশিক সরকার প্রবর্তিত রাওতওয়ারি ব্যবস্থা এবং মহাজনি শোষণ। রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় রাজস্বের হার ছিল যথেষ্ট উঁচু। এই ব্যবস্থায় সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করত। রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন গ্রামের প্যাটেল বা মোড়লরা। খরা প্রবন মহারাষ্ট্রে প্রায়ই উৎপাদনে ঘাটতি হত এবং এর ফলে কৃষকরা সরকারের খাজনার দাবি মেটাতে পারত না। তখন তারা মাড়োয়ারি মহাজন সাউকার এবং গুজরাটি মহাজন বনি 'র দ্বারস্ত হত। সাধারন কৃষকদের কুনবি বলা হত। সাউকার ও বনি' রা কুনবি দের জমি দেনার দায়ে গ্রাস করে নিতে সর্বদাই উৎসাহী থাকত। তবে অনেক পন্ডিত দাক্ষিণাত্য বিদ্রোহের পশ্চাতে এই মহাজনি শোষণকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁদের মতে, N. Charlesworth তাঁর Myth of Deccan Riots  গ্রন্থে দেখিয়েছেন কৃষজমির কেবল ৫% মহাজনেদের হস্তগত হয়েছিল। আর এদের মধ্যে স্থানীয় মহাজনই বেশি ছিলেন। কিন্তু কৃষকরা বহিরাগত কৃষকদের আক্রমণের মুলত টার্গেট করেছিল। তিন...

মোপলা বিদ্রোহ | Malabar Rebellion

 মোপলা বিদ্রোহ | Malabar Rebellion উনিশ শতকের কৃষক বিদ্রোহগুলির মধ্যে অন্যতম হল মালাবার অঞ্চলের মোপলা বিদ্রোহ (১৮৪৯-৫২)। মোপলারা আরব ব্যবসায়ীদের উত্তরপুরুষ। মালাবার উপকূলে আগত আরব ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দেশে ফিরে না গিয়ে স্থানীয় নায়ার ও তিয়ার মহিলাদের সঙ্গে বিবাহ করে মালাবার এলাকাতেই থেকে যায় এবং কৃষিকাজকে পেশা হিসাবে বেছে নেয়। স্থানীয় দাস জাতি ছিল চেরুমা। ১৮৪৩ সালে দাস প্রথা অবলুপ্তি আইন পাশ হলে চেরুমা-রা মুক্তি পায় কিন্তু সমাজ তাদের ঠাঁই দেয় নি। ফলে এঁরা ইসলাম গ্রহণ করে। এভাবে মোপলারা সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। এরা বেশিরভাগই ছিল ভূমিহীন কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী বা জেলে। ১৭৯২ সালে মালাবার ব্রিটিশ অধিকারে আসে এবং মালাবার এলাকায় নতুন ভূমি ব্যবস্থা চালু হয়, যাতে স্থানীয় হিন্দু জেন্মিরা জমির মালিক হিসাবে পরিগনিত হন এবং কৃষক ও কনমদার (ভূমিস্বত্ব ভোগ দখলকারী) দের জমি থেকে উৎখাত করার অধিকার পেয়ে যান। এতদিন জেনমি, কনমদার ও কৃষকের  মধ্যে উৎপন্ন সমান সমান ভাগাভাগি হত। এই নতুন ব্যবস্থা মোপলা কৃষকদের চুড়ান্ত প্রতিকূলে যায় এবং এই শ্রেনীর মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। উচ্চ কর হার এবং আইন বহির্ভূত কর আদায়, পুল...

TISCO | টাটা আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানি

  TISCO | টাটা আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানি আধুনিক ভারতে যে সকল আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল লৌহ ইস্পাত শিল্প তার মধ্যে অন্যতম। রেলপথ ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশের ফলে ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। ১৮৭৫ খ্রিঃ বরাকরে বেঙ্গল আয়রন এণ্ড স্টিল কোম্পানি (BISCO) তৈরি হয়েছিল। ১৯০৩ সালে এই কোম্পানি ইস্পাত নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ভারতের ইস্পাত শিল্পের ইতিহাস মুলত টাটা আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানির (TISCO) ইতিহাস। TISCO গড়ে ওঠার ইতিহাসে তিনজন ব্যক্তির নাম অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন জামশেদজি টাটা, তাঁর পুত্র দোরাবজি টাটা এবং ভূতত্ত্ববিদ প্রেমনাথ বসু। ১৯০৩-৪ সালে প্রেমনাথ বসু ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ এলাকায় আকরিক লোহার খনি আবিস্কার করেন। এই এলাকা ছিল বাংলার কয়লা খনি গুলির খুব কাছে অবস্থিত। এর পর জামশেদপুরকে বেছে নেওয়া হয় ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার জন্য। TISCO গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভারতের ঔপনিবেশিক সরকারের গুরুত্ব কম নয়। ১৯০৫ সালে ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প দপ্তর সরকারি রেলের তরফে টাটাদের সাথে এক দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে। ঠিক হয় যে আগামী ১০ বছরে রেল কোম্পানী টাটাদের কাছ থেকে ২০,...

Great Calcutta Killing | Jinnah's Direct Action Day | প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস |

Great Calcutta Killing | Jinnah's Direct Action Day | গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং | জিন্নাহ্'র প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস  (English Virsion) The Direct Action Day, also known as the Great Calcutta Killing, was an extremely violent incident in the history of Bengal, specifically in Calcutta (now Kolkata), during the pre-independence era of India. It was a consequence of the divide-and-rule policy introduced throughout India after the suppression of the 1857 Rebellion by the British rulers. The development of communal politics in India, fueled by the Muslim League, Arya Samaj, Hindu Mahasabha, and the R.S.S. led to the intensification of the struggle for India's independence along communal lines. Under the leadership of the Muslim League, the demand for the creation of a separate state, Pakistan, gained momentum. Mohammad Ali Jinnah, the leader of the Muslim League, advocated for the formation of Pakistan, which included Bengal also. However, only 48.3% of the population in Bengal was ...

কোম্পানির শাসনে ভারতে পুলিশ ব্যবস্থার বিকাশ | Indian Police under the Company Rule

কোম্পানির শাসনে ভারতে পুলিশ ব্যবস্থার বিকাশ  ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম স্তম্ভ ছিল পুলিশ বিভাগ। পুলিশের প্রাথমিক কাজ ছিল ইংরেজ অধিকৃত অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা তথা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা যে কোন ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনকে প্রতিহত করা। প্রাথমিক ব্যবস্থা ও হেস্টিংস-এর সংস্কার ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার পায়। তখন মুঘল পুলিশ ব্যবস্থা ফৌজদারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রতিটি সরকার বা জেলা তাদের অধীনে থাকত। কোতোয়ালরা থাকতেন শহরগুলি দেখভালের দায়িত্বে। গ্রামের চৌকিদারদের নিয়ন্ত্রণ করতেন জমিদাররা। মুর্শিদাবাদের নায়েব নাজিম রেজা খাঁর তদারকিতে এই পুরনো ব্যবস্থাই বেশ কিছুদিন কোম্পানি চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৭৭০ এর দুর্ভিক্ষের পর আইনশৃঙ্খলাজনিত অবনতির প্রেক্ষাপটে কোম্পানি সরকার পুলিশ বিভাগীয় প্রশাসনকে ইউরোপীয় তদারকির অধীনে আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ইতি মধ্যে দ্বৈত শাসনের অবসান হয়। ১৭৮১ পর্যন্ত এই পুরানো ফৌজদারী ব্যবস্থায়ই চলেছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস তাতে সামান্য কিছু সংস্কার এনেছিলেন। তিনি ফৌজদারদের সরিয়ে তাদের জায়গায...

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাবালটার্ন ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Subaltern Historiography

  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাবালটার্ন ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Subaltern Historiography স্বাধীন ভারতের বেশকিছু ঐতিহাসিক যারা মার্কসীয় তত্ত্বকে সরাসরি গ্রহণ না করলেও মার্কসীয় বিশ্লেষণ পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে জড়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। সমাজ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এরা ইতালির কমিউনিস্ট নেতা এন্টানিও গ্রামশিকে অনুসরণ করেছেন। ভারতীয় সমাজের যে মানব গোষ্ঠী গতানুগতিক ইতিহাস চিন্তার পর্দায় প্রতিফলিত হয়নি তারাই এই নতুন ধারার ইতিহাস চর্চার প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই নতুন ধারার ইতিহাস চর্চার নাম হল ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’ বা Subaltern Studies । নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় মূল ধারার রাজনৈতিক ইতিহাসের চেয়ে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবনের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং  আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার কথা। বিংশ শতকের আট-এর দশকে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার সূচনা হয় অধ্যাপক রনজিৎ গুহ সম্পাদিত 'সাবালটার্ন স্টাডিজ' প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। অধ্যাপক গুহ জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন উপনিবেশিক ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদের উত্থানের ইতিহাসকে শুধুমাত্র বুদ...

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Marxist Historiography

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Marxist Historiography ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে শ্রেণী চরিত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন মার্কসীয় পণ্ডিতগণ। এ প্রসঙ্গে প্রথম যার নাম উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। কমিনটার্ন-এ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে এন এম গোল্ডবার্গ, রজনীপাম দত্ত, এ আর দেশাই প্রমুখের রচনায় ভারতের জাতীয়তাবাদের মার্কসীয় বিশ্লেষণ লক্ষ্য করা গেছে। এম. এন. রায় দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন: 'India in Transition' ও 'What do we want', যেখানে তিনি গান্ধীবাদকে প্রতিক্রিয়ার তীব্রতম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর মতে, গান্ধীজী ভূস্বামী এবং পুঁজিপতিদের স্বার্থে জনগণের বিপ্লবী শক্তি ও চেতনাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। রায়ের মতে ভারতীয় পুঁজিবাদ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল সুতরাং ভারতীয় পুঁজিপতিদের পক্ষে যথার্থ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করে একটি বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি করা ছিল প্রায় অসম্ভব।  এন. এম. গোল্ডবার্গ মনে করেন ভারতের পুঁজিপতি শ্...

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Nationalist Historiography

  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Nationalist Historiography ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করে যাঁরা জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার সূচনা করলেন তাঁরা হলেন দাদাভাই নওরজি এবং রমেশ চন্দ্র দত্ত। দাদা ভাই নৌরোজির রচিত Poverty and Unbritish Rule in India এবং রমেশ চন্দ্র দত্ত রচিত Economic History of India গ্রন্থ দুটি উপনিবেশিক অর্থনীতির সমালোচনা করে ভারতের সম্পদ নিষ্কাশন ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় এর উপর একটি জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে আরো অনেকেই যেমন পট্টভি সীতারামাইয়া, তারাচাঁদ, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, আর এস মেহরোত্রা প্রমূখ পণ্ডিত জাতীয়তাবাদী রচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা ভারতে জাতি গঠনের প্ৰক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করতেন প্রধানত জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের শ্রেষ্ঠত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। তারা মনে করতেন, জাতীয় চেতনাই এখানে মুখ্য, বাকি সব চেতনা (জাতিগত, সম্প্রদায়গত, শ্রেণীগত) তার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে। উপনিবেশিক শাসনের প্রতি মূলগত অনীহা থেকেই এই ধরনের চেতনার জন্ম হয়। ভারতবর্ষের প্রাচীন পরম্পর...

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ : কেমব্রিজ ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Cambridge Historiography

কেমব্রিজ ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Cambridge Historiography এ বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একমত যে, ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে আধুনিক অর্থে কোন ভারতীয় রাজনৈতিক জাতির অস্তিত্ব ছিল না। এরকম কোনও ধারণা অবচেতনভাবে ভারতবর্ষের সভ্যতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল কি না এবং কালক্রমে তার উদ্ভব ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে অতীত এবং বর্তমানের জাতীয়তাবাদী নেতা এবং ঐতিহাসিকরা বিতর্কের জড়িয়ে থাকেন। তবে একটা ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই যে,  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং ১৯৪৭ সালে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে যার জয় সূচিত হয়েছিল । এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ছিল 'উপনিবেশিকজাত আধুনিকতা প্রসূত'। উপনিবেশিক পক্ষের বক্তব্য ছিল, তারা উপনিবেশকে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্ধকার থেকে তুলে এনে আধুনিক স্তরে উন্নীত করবে। আবার উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের পক্ষেও পশ্চাদদামিতা দূর করে এ কথা প্রমাণ করে দেখানোর খানিকটা দায়ী ছিল যে আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তারাও একত্রিত হয়ে শাসন কাজ পরিচালনা করার যোগ্য। কাজেই  জাতীয়তাবাদের দুটো ধাপ: প্রথমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং তারপর আত্...

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাম্রাজ্যবাদী ও নব্য ঐতিহ্যবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Colonial Historiography

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাম্রাজ্যবাদী ও নব্য ঐতিহ্যবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Colonial Historiography ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বলতে কি বোঝায়? এ বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একমত যে, ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে আধুনিক অর্থে কোন ভারতীয় রাজনৈতিক জাতির অস্তিত্ব ছিল না। এরকম কোনও ধারণা অবচেতনভাবে ভারতবর্ষের সভ্যতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল কি না এবং কালক্রমে তার উদ্ভব ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে অতীত এবং বর্তমানের জাতীয়তাবাদী নেতা এবং ঐতিহাসিকরা বিতর্কের জড়িয়ে থাকেন। তবে একটা ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই যে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং ১৯৪৭ সালে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে যার জয় সূচিত হয়েছিল । এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ছিল 'উপনিবেশিকজাত আধুনিকতা প্রসূত'। উপনিবেশিক পক্ষের বক্তব্য ছিল, তারা উপনিবেশকে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্ধকার থেকে তুলে এনে আধুনিক স্তরে উন্নীত করবে। আবার উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের পক্ষেও পশ্চাদদামিতা দূর করে এ কথা প্রমাণ করে দেখানোর খানিকটা দায়ী ছিল যে আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তারাও একত্রিত হয়ে শাসন কাজ পরিচালনা করার যোগ্য। কা...

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani's Declaration

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani Declaration নিষ্ঠুর হাতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে দমন করার পর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারতে তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করে এই প্রক্রিয়ারই অনিবার্য পরিণতি ছিল ১৮৫৮ সালের পয়লা নভেম্বরের রাজকীয় ঘোষণা, যা মহারানীর ঘোষণা নামে পরিচিত। কোম্পনীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে মহারানী ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং। কিন্তু ১৮৫৮-এর আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল কে ভাইসরয়-এ পরিণত করা হয়। লর্ড ক্যানিং হলেন ভারতের প্রথম ভাইসরয়। ব্রিটিশ সম্রাট বা সম্রাজ্ঞীর নামে ভারত সচিব ভারতবর্ষকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন করতে থাকলেন। ভারত সচিব শাসনতান্ত্রিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য গঠিত হলো ১৫ জনের সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল। এবার থেকে ভারত সচিব ও ভাইসরয়ের পারস্পরিক রসায়নের উপর ভারতের শাসন নির্ভর করতে থাকল। এই ঘোষণাপত্রে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় কতগুলি নতুন নীতি ও আদর্শের কথা ঘোষণা করে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়। সেগুলি হল-- ১) ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোন ব্যাপারেই সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে ...

পাবনা বিদ্রোহ | Pabna Rebellion

 পাবনা বিদ্রোহ | Pabna Rebellion ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহাকুমাতে এক জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এই বিদ্রোহ পাবনা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। একসময় সিরাজগঞ্জ ছিল নাটোরের রাজ পরিবারের জমিদারির অধীনে। কিন্তু রাজস্ব সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ১৮৬০ এর দশকে এই জমিদারি নিলামে ওঠে এবং মুৎসুদ্দি শ্রেণীর হাতে চলে যায়। সিরাজগঞ্জ মহাকুমার শাসক পি. নোলান তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, সিরাজগঞ্জের জমিদাররা ছিলেন অত্যধিক সক্রিয় ও উদ্যমশীল। চাষবাসের উন্নতির কাজে এরা কোনরূপ সক্রিয়তা দেখাত না; কিন্তু অসঙ্গত ও অবৈধ উপায়ে কৃষকদের শোষণ ও জমিচ্যুত করার কাজে তারা ছিল সুকৌশলী। বিভিন্ন অবৈধ কর বা আবওয়াব, যেমন পার্বণী, তীর্থ কর, সেলামি, ডাক খরচা, বিবাহ খরচা, নজরানা ইত্যাদি আদায় করত। এমনকি জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রেও এরা কৃষকদের ঠকিয়েছিল। যে নল ব্যবহার করে তারা নাটোরের জমিদারের কাছ থেকে সিরাজগঞ্জের জমিদারি কিনেছিল তার মাপ ছিল ২৩ থেকে পৌনে ২৪ ইঞ্চি। কিন্তু কৃষকদের বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে যে নল ব্যবহার করা হয়েছিল তার মাপ ছিল মাত্র ১৮ ইঞ্চি। অর্থাৎ কৃষকের জমি কমে গেল কিন্তু খাজনার চাপ...

কর্নওয়ালিস কোড | Cornwallis Code

Cornwallis Code / কর্নওয়ালিস কোড/কর্নওয়ালিসের বিচারবিভাগীয় সংস্কার ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন এলাকা দখলের পর কোন ধরনের প্রশাসন যন্ত্র গড়ে তুলবে তাই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্রথমদিকে ক্লাইভ সরাসরি ব্রিটিশ কর্মচারীদের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জুড়তে চাননি। তিনি দেশীয় কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনাকে সঠিক বলে মনে করতেন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস দেশীয় এবং ইউরোপীয় শাসকদের মিলিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু কর্নওয়ালিস উপরোক্ত দুই পরিকল্পনাকে বাতিল করে সম্পূর্ণ ইউরোপীয় রীতিতে এবং কেবল ইউরোপীয় কর্মচারীদের দ্বারাই শাসন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিলেন। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি একটি শাসন সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রস্তুত করেন, যা 'কর্নওয়ালিস কোড' নামে পরিচিত। কর্নওয়ালিস কোড-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি যুক্তি ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত হয়। তিনি আরো দেখান বিচার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণের জন্যই উৎপা...

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব | Nawab Mir Zafar

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব মুর্শিদাবাদের দরবারে সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধানতম মুখ ছিলেন মীরজাফর। মীরজাফর ছিলেন সিরাজেরই মির বকশি। সিরাজ এই ষড়যন্ত্রতে মীরজাফরের যুক্ত থাকার কথা জানতে পেরেও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকেই পলাশীর যুদ্ধের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেন। শেষমেষ মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং পূর্বপরিকল্পনামাফিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীরা মীরজাফরকে বাংলার মসনদে বসান(১৭৫৭)। মীরজাফর সিংহাসন লাভের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্লাইভকে এবং প্রতিষ্ঠানগতভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন। ক্লাইভ একাই নিয়েছিলেন প্রায় ২০ লক্ষ এর উপরে টাকা। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানি ও অন্যান্য ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নিয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এছাড়া কোম্পানি লাভ করে কলকাতা সংলগ্ন চব্বিশটি পরগনার জমিদারি, যার আয় ছিল প্রায় ৮৮০ বর্গমাইল বছরের। শুধু অর্থ প্রদান নয় বিভিন্নভাবে মীরজাফর ইংরেজ কোম্পানির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। একদিকে রাজকোষের সংকট অন্যদিকে পরাধীনতা, উভয় সমস্যা মীরজাফরকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই প্রেক্ষা...

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত | Roytwari Settlement

 রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর থেকে কোম্পানী সরকার ভারতের অন্যান্য এলাকায় এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে এবং বম্বে প্রেসিডেন্সিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসারের ক্ষেত্রে কতগুলি সমস্যা সামনে আসে, যার ফলস্বরূপ ওই দুই প্রেসিডেন্সিতে নতুন এক ভূমি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়, যা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে প্রথমে (উনিশ শতকের প্রথম দিকে) স্থানীয় পলিগারদের জমিদার বলে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আর যেখানে পলিগারদের পাওয়া যায়নি সেখানে কয়েকটি গ্রামের এক একটি খামার গঠন করে সর্বোচ্চ নিলাম দাতাকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই কোম্পানি সরকার উপলব্ধি করে যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমি থেকে আয় বৃদ্ধির আর সম্ভাবনা থাকে না। দ্বিতীয়ত, প্রভাবশালী ও ক্ষমতালোভি পলিগারদের দমন করা দরকার,  কারণ এরা বারবার বিদ্রোহ করে। এর চেয়ে ছোট ছোট কৃষক ভূস্বামীদের বশীভূত রাখা সহজ।  তৃতীয়ত, ডেভিড রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব এই সময় ব্রিটিশ প্রশাসকদের একাংশকে প্রভাবিত করেছিল। তার...

সাওতাল বিদ্রোহ | Santal Rebellion

  সাওতাল বিদ্রোহ  উপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী গণ সংগ্রামে উপজাতিদের একটি গৌরবময় ভূমিকা ছিল। উপজাতি বিদ্রোহ গুলির মধ্যে ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর বিদ্রোহের থেকে অনেক বেশি জঙ্গি ও হিংস্র রূপ ধারণ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল সাঁওতালদের উপজাতীয় সামাজিক সংহতি রক্ষা এবং বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিবাদে আঞ্চলিক চেতনার সংগ্রামী বহিঃপ্রকাশ। সাঁওতালরা স্বভাবের দিক থেকে ছিল পরিশ্রমী ও শান্ত প্রকৃতির। তাদেরই প্রচেষ্টায় সাঁওতাল পরগনা এলাকা বাসযোগ্য ও উর্বর হয়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলকে তারা নাম দিয়েছিল 'দামিন-ই- কোহ'। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বহিরাগতরা এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে এবং তাদের অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হন সাঁওতালরা। সাঁওতালরা বহিরাগতদের 'দিকু' বলত। এই 'দিকু' বলতে ইংরেজ এবং বহিরাগত বণিক ও মহাজনদেরকে বোঝানো হত। প্রথমে আসা যাক মহাজনি শোষণের কথায়। মহাজনেরা সাঁওতালদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের টাকা ঋণ দিতেন এবং অসদুপায় অবলম্বন করে তাদের জমি-জামা দখল করে নিতেন। ঐতিহাসিক কালিকিংকর দত্ত দেখিয়েছেন, সামান্য পর...

ভারতের উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত | Impact of World War-- I in India

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত ভারতের উপর কিভাবে পড়েছিল?   ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বিরুদ্ধে বৃটেনের যুদ্ধ ঘোষণার ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। বৃটেনের উপনিবেশে হিসাবে ভারত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবং খানিকটা অজান্তেই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারতের বহু মানুষ ও সম্পদকে এই যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ভারতের উপর যুদ্ধজনিত চাপের অনেকাংশই পড়ে, যার প্রতিফল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়। ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের অধিকাংশ ব্রিটিশদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা করেন, যুদ্ধান্তে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার আশায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেশবাসীকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ফেলে দেয়। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথে সামরিক খরচ বেড়ে যায়। ফলে যুদ্ধ বাবদ ঋণ প্রচুর পরিমানে বেড়ে যায়। ফলে কর আদায়ের বেড়ে যায়। ভূমিরাজস্ব স্থিরীকৃত হয়ে গিয়েছিল বলেই ব্যবসা ও শিল্পের উপর পরোক্ষ কর বাড়ি দেওয়া হয়। এই করের বোঝা শেষ পর্যন্ত পড়ে সাধারণ মানুষের উপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে। অংশত পরোক্ষ কর, অংশত পরিবহন ও অন্যান্য আর্থিক অচলাবস্থার কারণে ভয়ংকর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেখা দেয়। ১৯১৮-১৯ ও ১৯২০-২১ সালে দু...