সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাচীন বালার বিভিন্ন বিভাগসমূহ

প্রাচীন বালার বিভিন্ন বিভাগসমূহ

প্রাচীন যুগে বাংলা কোনো একক ও অখণ্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এই ছোট ছোট অঞ্চলগুলোতে শাসক থাকতেন, যারা তাদের মতো করে অঞ্চলগুলো শাসন করতেন। সেই সময়ের বাংলার এই অঞ্চলগুলোকেই সমষ্টিগতভাবে জনপদ বলা হয়।

প্রাচীন বাংলার জনপদ:

প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকায় প্রাচীন বাংলার জনপদ কোথায় বা কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল এমন অনেক কিছুই সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবুও চার শতক থেকে গুপ্ত, গুপ্ত পরবর্তী যুগ, পাল, সেন এসব আমলের শিলালিপি ও সাহিত্য গ্রন্থগুলোতে প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাচীনকালের যে ঐতিহাসিক উপাদানগুলো পাওয়া যায় সেগুলো থেকে প্রাচীন বাংলার জনপদ এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়।

প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর কয়েকটি সম্পর্কে দেখে নেয়া যাক।

গৌড়

পাণিনির গ্রন্থে সর্বপ্রথম গৌড় জনপদটির উল্লেখ পাওয়া যায়। গৌড় জনপদটি সুপরিচিত একটি জনপদ হলেও এর নামকরণের কারণ কিংবা কোন কোন অঞ্চল নিয়ে এটি গঠিত ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে হর্ষবর্ধন এর কিছু শিলালিপি থেকে এটুকু জানা যায় যে, গৌড়দেশ সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি কোথাও ছিল।

পাল রাজাদের আমলে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গৌড়দেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময়ে গৌড়ের নাম-ডাকও সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু পাল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে আসলে গৌড়ের সীমানা ছোট হয়ে যায়। আধুনিক মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশকে গৌড়ের সীমানা হিসেবে মনে করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ ছিল গৌড়ের রাজা শশাংকের রাজধানী। মুসলমান যুগের শুরুতে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকে গৌড় নামে অভিহিত করা হলেও পরবর্তীতে গৌড় বলতে সমগ্র বাংলাকে বুঝাত।

বঙ্গ:

অত্যন্ত প্রাচীন একটি জনপদ হচ্ছে এই বঙ্গ। বঙ্গ জনপদটি বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গড়ে উঠেছিল। ধারণা করা হয় ‘বং’ নামের একটি জাতির বসবাস এই জনপদটির নামকরণের পেছনে কাজ করেছে। গঙ্গা ও ভাগিরথীর মাঝের অঞ্চলকে বঙ্গ বলা হতো।

বঙ্গ বেশ বড় হলেও পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের আমলে এটি ছোট হয়ে আসে। পাল বংশের শেষ দিকে বঙ্গ জনপদ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের একটি উত্তর বঙ্গ ও আরেকটি দক্ষিণ বঙ্গ হিসেবে পরিচিত হয়। দক্ষিণের বদ্বীপ অঞ্চল দক্ষিণ বঙ্গের সীমা আর পদ্মা উত্তর বঙ্গের সীমা ছিল। বৃহত্তর বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিছু অংশ নিয়ে বঙ্গ গঠিত হয়েছিল।

তবে প্রাচীন বঙ্গদেশের সীমা ছিল - উত্তরে হিমালয় পর্বত, নেপাল, ভুটান ও সিকিম রাজ্য; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে জৈন্তাপাহাড়, ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম শৈলশ্রেণী; পশ্চিমে সাঁওতাল পরগনা, ছোটনাগপুর, কেওঞ্জর-ময়ূরভঞ্জের শৈলময় অরণ্যভূমি; উত্তর-পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের উপত্যকা এবং উত্তর-পশ্চিমে বিহারের দ্বারভাঙ্গা পর্যন্ত ভাগীরথী নদীর সমান্তরাল রেখা। 

সংস্কৃত ভাষায় রচিত হিন্দুশাস্ত্রের অন্যতম প্রধান মহাকাব্য মহাভারতে যে কয়টি রাজ্যকে ভারতবর্ষ বা প্রাচীন ভারতের নিকটবর্তী রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তার মাঝে বঙ্গ একটি। অর্জুন ১২ বছরের তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে বঙ্গদেশের সকল পবিত্র স্থানে এসেছিলেন। এছাড়া মহাভারতে যুধিষ্ঠির, ভীম ও আরও অনেকের বঙ্গ অভিযানের কথা উল্লেখ রয়েছে।

আবার ড. মুহম্মদ হান্নান এর ‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থে অনুযায়ী ‘হযরত নূহ (আঃ) এর সময়ের মহাপ্লাবনের পর বেঁচে যাওয়া চল্লিশ জোড়া নর-নারীকে বংশবিস্তার ও বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়েছিল। নূহ (আঃ) এর পৌত্র ‘হিন্দ’ এর নামানুসারে ‘হিন্দুস্তান’ এবং প্রপৌত্র ‘বঙ্গ; এর নামানুসারে ‘বঙ্গদেশ’ নামকরণ করা হয়েছিল। আর এই বঙ্গ থেকেই আমাদের আজকের এই বাঙালি জাতির উৎপত্তি হয়।’

পুন্ড্র:

বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পুন্ড্র জনপদ ছিল প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। এটিই ছিল বাংলার সর্বপ্রাচীন জনপদ। ‘পুন্ড্র’ নামের জাতি এই জনপদ গড়ে তুলেছিল। পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর ছিল প্রাচীন পুন্ড্রের রাজধানী। পরবর্তীকালে এর নাম মহাস্থানগড় হয়।

মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্ত্বা হারায়। পরবর্তীতে সমৃদ্ধি বাড়লে এই পুন্ড্র - পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়। পুণ্ড্রবর্ধন নামের উৎপত্তি ‘পৌন্দ্রিক’ শব্দ থেকে যার অর্থ আখ বা চিনি। পুন্ড্রবর্ধন তখন রাজমহল ও গঙ্গা-ভাগীরথী থেকে শুরু করে করতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তরবঙ্গ জুড়েই বিস্তৃত ছিল। সেন আমলে এই পুণ্ড্রবর্ধনের দক্ষিণতম সীমা পদ্মা পেড়িয়ে বর্তমান চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা ও ঢাকা-বরিশালের সমুদ্র তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুন্ড্রই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ।

বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুণ্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের বিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার বর্ণনা করেন। শোনা যায়, তিনি মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রাচীন পুণ্ড্রনগরে প্রবেশ করার সময় সে কালের বিশাল ও প্রাচীন করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটি বিশাল আকৃতির মাছের পিঠে চড়ে। এ জন্য তার নামের শেষে উল্লেখ করা হয় ‘মাহীসওয়ার’ বা ‘ মাছের পিঠে আরোহণকারী’। তবে অনেকে বলেন, মাহীসওয়ার নদী পার হয়েছিলেন ঠিকই তবে তা মাছের পিঠে চড়ে নয়। বরং মাছের আকৃতিতে তৈরি করা নৌকার পিঠে চড়ে।

পুন্ড্রনগরে একটিমাত্র প্রাচীন মসজিদ পাওয়া গেছে যা মোগল সম্রাট ফাররুক শিয়ারের রাজত্বকালে ১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করা। ব্রিটিশ শাসনামলে এই মাজার থেকেই ফকির বিদ্রোহের কর্মসূচি পরিচালিত হত। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মাজারটি ঘিরে বিশাল এক মেলার আয়োজন হয়।

বরেন্দ্র:

বরেন্দ্র পুণ্ড্রবর্ধন জনপদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। মৌর্য ও গুপ্ত আমলে প্রাদেশিক শাসনকর্তার কেন্দ্র পুন্ড্রনগরের অবস্থানও ছিল বরেন্দ্র এলাকায়। এই নামে সমগ্র এলাকা পরিচালিত হত। একারণে একে জনপদ বলা না গেলেও প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একে জনপদের মর্যাদা দেয়া হয়।

পাল রাজারা উত্তরবঙ্গকে তাদের পিতৃভূমি বলে মনে করত। সে কারণে এর নামকরণ করা হয় বারিন্দ্রী। বরেন্দ্র শব্দের উৎপত্তি এই বারিন্দ্রী থেকেই। রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিমাংশ, রংপুরের সামান্য এলাকা বাদে উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত অঞ্চলে বরেন্দ্রভূমি গড়ে ওঠে। বর্তমানে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরের লালমাটি সমৃদ্ধ অঞ্চল বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত।

 সমতট:

সমতট ছিল বঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি নতুন রাজ্য। আর্দ্র এই নিম্ন ভূমিটিকে অনেকে বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম মনে করলেও অনেকে আবার মনে করেন, নোয়াখালী ও কুমিল্লা নিয়ে সমতট গঠিত হয়েছিল। বর্তমান ত্রিপুরা জেলা সমতটের অন্যতম অংশ ছিল। সমতট জনপদের পশ্চিম সীমা চব্বিশ পরগনার খাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গঙ্গা ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকে বলা হত সমতট। কুমিল্লা জেলার বড় কামতা সমতট রাজ্যের রাজধানী ছিল।

রাঢ়:

বাংলার আরেকটি প্রাচীন জনপদ হচ্ছে রাঢ়। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীর থেকে গঙ্গা নদীর দক্ষিণাঞ্চল রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। অজয় নদী রাঢ় অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। এই জনপদের দক্ষিণে মেদেনীপুর জেলায় তাম্রলিপি ও দণ্ডভুক্তি নামে দুইটি ছোট বিভাগ ছিল। আর এই তাম্রলিপি সেই সময়ের বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র ও নৌবন্দরও ছিল।

হরিকেল:

হরিকেল জনপদটির সম্পর্কে জানতে পারা যায় সপ্তম শতকের লেখকদের কাছ থেকে। চীনা ভ্রমণকারী ইৎসিং এর মতে পূর্ব ভারতের শেষ সীমায় হরিকেল ছিল। তবে কিছু কিছু লেখায় হরিকেলের মাঝে বর্তমান চট্টগ্রামের অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। ধরে নেয়া হয় যে, পূর্বে সিলেট থেকে চট্টগ্রামের অংশবিশেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল হরিকেল জনপদটি। সপ্তম ও অষ্টম শতক থেকে দশম ও একাদশ শতক পর্যন্ত হরিকেল স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল। পূর্ব বাংলার চন্দ্র রাজবংশের রাজা ত্রৈলোক্যচন্দ্রের চন্দ্রদ্বীপ অধিকারের পর থেকে হরিকেলকে বঙ্গের অংশ হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে।

তাম্রলিপ্ত:

তাম্রলিপ্ত জনপদটি হরিকেল জনপদের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। সমুদ্র উপকূলবর্তী এই জনপদটি ছিল নৌ চলাচলের জন্য উত্তম। সেকারণেই তাম্রলিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এ বন্দরটি রূপনারায়ণ নদ ও হুগলীর মিলনস্থল থেকে বারো মাইল দূরে রূপনারায়ণের তীরে অবস্থিত ছিল।

চন্দ্রদ্বীপ:

বংলার প্রাচীন ইতিহাসে চন্দ্রদ্বীপ নামের একটি ক্ষুদ্র জনপদের অস্তিত্বও পাওয়া যায়। বর্তমান বরিশাল জেলা ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূ-খণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এই জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।

এভাবে অতি প্রাচীনকাল থেকে ছয়-সাত শতক পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। সপ্তম শতকের শুরুর দিকে গৌড়রাজ শশাংক মুর্শিদাবাদ থেকে উত্তর উড়িষ্যা পর্যন্ত সমস্ত এলাকাকে একত্র করেন। এরপর বাংলাকে গৌড়, বঙ্গ ও পুণ্ড্রবর্ধন - এই তিনটি জনপদে বিভক্ত করা হয়। বাকি জনপদগুলো পরবর্তীতে এই তিনটি জনপদের মাঝে বিলীন হয়ে যায়।  প্রাচীন ইতিহাসে বাংলার এই জনপদগুলো থেকে আমরা বাংলার তখনকার সীমারেখা, রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য কিংবা সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি। প্রাচীন বাংলার তখনকার এই জনপদগুলোর মাঝে কোনো রাজনৈতিক ঐক্য না থাকলেও আমাদের আজকের এই বাংলা কিংবা বাংলাদেশ এর সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর ধ্বংসাবশেষ এর উপর দাঁড়িয়ে। তখনকার আর এখনকার বাংলার মাঝে অনেক পার্থক্য থাকলেও বাঙালি হিসেবে আমাদের শেকড় সম্পর্কে জানাটা আমাদের জন্য এক গুরুদায়িত্ব।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...