সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

MedievalEurope লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ক্যারোলিঞ্জিয় রেনেসাঁ | The Carolingian Renaissance

ক্যারোলিঞ্জিয় রেনেসাঁ  ক্যারোলিঞ্জিয় যুগের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার  ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। এই অগ্রগতিকে চিহ্নিত করতে অনেক ঐতিহাসিক মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁ বা নবজাগৃতি হিসাবে অভিহিত করেছেন। বস্তুত বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে ধ্রুপদী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল প্রাচীন কালে গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্য চর্চাকে কেন্দ্র করে। এরপর বর্বর জাতিগুলির আক্রমণে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয় (৪৭৬ খ্রিঃ) এবং এর ফলে ধ্রুপদী সংস্কৃতির চর্চা সাময়িকভাবে হয়ে যায়। ফ্রাঙ্ক সম্রাট শার্লামেনের সময় থেকে আবার শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প কলা তথা স্থাপত্য-ভাস্কর্য এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে পুনরায় জাগরণ দেখা দেয়। এই পুনর্জাগরণকেই ক্যারোলিঞ্জিয় রেনেসাঁ বলে। পঞ্চম শতকে ইতালীয় রেনেসাঁর সঙ্গে ক্যারোলিঞ্জিও রেনেসাঁর কিছু মৌলিক পার্থক্য ছিল। নবম শতকের পুনর্জাগরণ ছিল মূলত খ্রিস্ট ধর্ম এবং খ্রিস্টান যাজক সম্প্রদায়কেন্দ্রিক। স্বাভাবিকভাবে হেলেনিক সংস্কৃতি সম্পর্কে এই নবজাগরণে অনীহা ছিল। পোপ প্রথম গ্রেগ্রিরর সময় থেকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে অখ্রিস্টিয় ধ্রুপদী সাহ...

পিরেন থিসিস | Pirenne's Thesis on Medieval Europe

মধ্যযুগের ইউরোপের উপর পিরেনের তত্ত্ব মধ্যযুগে খ্রীষ্টান জগৎ, ইসলামীয় সাম্রাজ্য এবং ক্যারােলিঞ্জিয় রাজ্যের বিকাশের উপর আরবদের সম্প্রসারণের প্রভাব সম্পর্কে বেলজিয়ান ঐতিহাসিক হেনরী পিরেনের অভিমত ঐতিহাসিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ‘Medieval Cities' নামক গ্রন্থে পিরেন-এর মতবা প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর ‘ Muhammad And Charlemagne গ্রন্থে তার সিদ্ধান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান দ্বারা সমর্থিত হয়। তার বক্তব্য ইউরােপীয় পণ্ডিত সমাজকে বিস্মিত করেছিল। হেনরী পিরোনাের মূল বক্তব্য হল খ্ৰীষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে বর্বর জাতির আক্রমণে পশ্চিম ইউরােপের ভূমধ্যসাগর কেন্দ্রিক যে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়নি, তা সপ্তম শতকে ইসলামর শক্তির অসামান্য বিস্তারে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। পরােক্ষভাবে ইসলামই ছিল ফ্রাঙ্করাজ শার্লামেনের সম্রাটের মর্যাদায় ভূষিত হবার মূল কারণ। পিরেন প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইউরােপের মধ্যে ভেদরেখাকে কৃত্রিম ও অবান্তর বলে মনে করতেন। তাঁর পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকরা ৪৭৬ খ্ৰীষ্টাব্দে রােমান সাম্রাজ্যের পতনকে প্রাচীন ইউরােপের ইতিহাসের ছেদ চিহ্ন বলে মনে করতেন। পিরেন এই মত মেন নেননি। তাঁর মতে, বর্বর আক্রমণের ফলে...

মধ্যযুগে ইউরোপে নগরের উত্থানের কারণ | Rise of Urban Centers in Medieval Europe

মধ্যযুগে ইউরোপে নগরের উত্থানের কারণ পঞ্চম থেকে নবম শতক পর্যন্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে যে নতুন গতিশীলতা এসেছিল তারই অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল দ্বাদশ শতকীয় নগরায়ন। সামন্ততন্ত্রের যুগেই সামন্ততন্ত্রের বিপরীতমুখী প্রবৃত্তিগুলি আত্মপ্রকাশ করেছিল। এরমধ্যে প্রধানতম হল ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্ভব, বণিক শ্রেণীর আবির্ভাব এবং নগরায়ন। সমগ্র দ্বাদশ শতক জুড়ে নগরের সংখ্যা অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেক পন্ডিত মনে করেন এই সময়ে কোন নতুন নগরের পত্তন হয়নি বরং রোম সাম্রাজ্যের নগরগুলি দশম শতক থেকে আবার পুন‌ঃর্জীবিত হয়ে উঠেছিল। লন্ডন এবং প্যারিসের কথা এই ধরনের নগরায়নের উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। কিন্তু এই চিত্র সার্বিক নয়। ইতালির বহু শহর এই সময় শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের সুবাদে গড়ে উঠেছিল।  মধ্যযুগের নগরগুলির উৎপত্তির প্রধান কারণ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের অভাবনীয় অগ্রগতি। হেনরি পিরেন লিখেছেন মধ্যযুগে শহরের বিকাশ রোম সাম্রাজ্যের যুগ থেকে শুরু হয়েছিল। ক্যারোলিঞ্জীয় যুগে এই ধারা ব্যাহত হয়েছিল। বর্বর জার্মানরা রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটালেও তারা শহর ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেনি। তাই পুরানো শহরগুলি তার অস...

খলিফার সময়ে ইসলামের সাথে ইহুদি ও খ্রিস্টানের সম্পর্ক | The Relationship between Jews and Christians with Islam during the Caliphate

খলিফার সময়ে ইসলামের সাথে ইহুদি ও খ্রিস্টানের সম্পর্ক  হজরত মুহাম্মদের (৬৩২ খ্রিস্টাব্দে) মৃত্যুর পর তার আরব সাম্রাজ্যের শাসনভার এসে পড়ে খলিফার হাতে। প্রথম খলিফার নাম ছিল হজরত আবু বকর। খ্রিষ্টান ও ইহুদিরা ইসলামিক রাষ্ট্রে জিম্মি হিসাবে পরিচিত। তবে মহম্মদের শাসনে জিম্মিদের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার রক্ষা, তাঁদের জীবন-সম্পত্তির যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে শাস্তিবিধানের নিয়ম চালু হয়েছিল। এর ফলে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে প্রথম দিকে ইসলামের কোন সংঘাত ছিল না। মদিনার ইহুদীদের অনেকেই মুহম্মদের সাথে প্রতারণামূলক আচরন করেছিলেন মক্কার কোরায়েশদের সাথে যোগদান করে মহম্মদ ও ইসলাম বিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাই মদিনার ইহুদীদের সাথে মহম্মদের জীবাদ্দশায়ই ইসলামের বিরোধ শুরু হয়েছিল এবং খলিফাদের শাসনে তা অব্যহত ছিল। কিন্তু মহম্মদের সাথে খ্রিষ্টানদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু খলিফাদের রাজত্বকালে খ্রিস্টানদের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। খলিফাদের নেতৃত্বে ইসলামিক সাম্রাজ্যের যে সম্প্রসারণের সূচনা হয়েছিল তার ফলে খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুসলমা...

ক্রুসেডের ফলাফল | Outcomes of the Crusades

 ক্রুসেডের ফলাফল ইউরোপীয় জনজীবনে ক্রুসেডের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী। ঐতিহাসিক মেয়ার তাই ধর্মযুদ্ধকে সভ্যতার ইতিহাসের মহান নির্দেশক বলে অভিহিত করেছেন। ক্রুসেডের প্রভাবে মঠগুলির সম্পত্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেকেই সন্ন্যাসীদের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য তাদের সম্পত্তি মঠগুলিতে দান করতেন। অনেক ধর্মযোদ্ধা অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসে মঠের আশ্রয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের জাগতিক সম্পত্তি মঠগুলিকে দান করেছিলেন। অনেকে আবার ধর্মযুদ্ধে যাওয়ার আগে খুব কম দামে তাদের সম্পত্তি মঠগুলিতে বিক্রি করে দিয়েছিল। এভাবে মঠগুলি তাদের সম্পত্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল।  ধর্মযুদ্ধ শক্তিশালী রাজতন্ত্র গঠনকে ত্বরান্বিত করেছিল। যে সমস্ত অভিজাত ধর্মযুদ্ধে যোগদান করেছিল এবং সেখান থেকে ফিরে আসতে পারিনি তাদের সম্পত্তি রাজা উত্তরাধিকারীর অভাবে হস্তগত করেছিল। এর ফলে অভিজাত্যের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তাদের সামগ্রিক সামাজিক প্রভাব কমে এসেছিল, যা পক্ষান্তরে রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছিল।  সমাজ জীবনে ক্রুসেড গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। ক্রুসেডের সুযোগে বহু ক্রীতদাস ম্যানর থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছ...

ক্রুসেডের কারণ ও প্রেক্ষাপট | Causes and Background of the Crusades

 ক্রুসেডের কারণ ও প্রেক্ষাপট ১০৯৫ খিস্টাব্দে পোপ আরবান ফ্রান্সের ক্লেরমন্ত শহরে আহুত ধর্মসভায় মুসলমানদের হাত থেকে পবিত্র জেরুজালেম নগরী উদ্ধারের জন্য ধর্মযুদ্ধের প্রস্তাব রাখেন। এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর থেকে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা হয়, যা আগামী ২০০ বছর ধরে চলতে থাকে। এই যুদ্ধ ক্রুসেড নামে পরিচিত। পোপের অনুগামী ধর্মযোদ্ধারা বুকে ক্রুশ চিহ্ন নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করত এবং যুদ্ধের পতাকাতেও এই চিহ্ন ব্যবহার করা হত। তাই এই ধর্মযুদ্ধকে ক্রুসেড বলা হয়। ক্রুসেডের পটভূমি আলোচনা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ফিলিপ হিত্তি বলেছেন যে চার্চের ক্রুশ, সৈনিকদের তরবারি এবং বণিকদের অর্থভাণ্ডার মিলিত হয়ে ক্রুসেডের জন্ম দিয়েছিল। জেরুজালেম যীশুখ্রীষ্টের জন্মস্থান এবং একই সাথে মুহম্মদের মিরাজ গমনের স্থান। তাই জেরুজালেম উভয় ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হত। একই সাথে ইহুদীদের পয়গম্বর মোজেস এবং দাউদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান হওয়ায় ইহুদিদের কাছেও এটি পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য হত। সপ্তম শতকে আরব মুসলিমরা জেরুজালেম অধিকার করে। কিন্তু প্রথমদিকে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সাথে এই নিয়ে কোন সংঘাত হ...

মধ্যযুগের ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার পটভূমি | The Background of the Rise of Universities in Medieval Europe

মধ্যযুগের ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে পটভূমি   ১০ম থেকে ১৩তম শতক ইউরপের ইতিহাসে এক প্রগতির পর্ব। বানিজ্যিক বিকাশের হাত ধরে ইউরোপে নগরায়ন আরম্ভ হয়। এবং নগরায়নের নবীনতম অঙ্গ হিসাবে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। মুলত দ্বাদশ শতকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অত্মপ্রকাশ ঘটলেও এর সূচনাকে একেবারে ক্যরোলিঞ্জিয় যুগ পর্যন্ত টেনে দেওয়া যায়। ক্যারোলিঞ্জিয় যুগ থেকে প্রগতিশীল বৌদ্ধিক বিকাশের একটি ধারা আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই সময়েই শার্লামেন আখেনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন। তাই বলা যায় ক্যরোলিঞ্জিয় সময় থেকেই জ্ঞানের প্রসারের ছত্রছায়া তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার মত মৌলিক চেতনা সেই সময় ছিল না।  একাদশ দ্বাদশ শতকে ইউরোপীয় সমাজ তিন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। প্রথমত, চার্চের কুসংস্কার এবং তার কর্তৃত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিপরীত চিন্তা ধারা, দ্বিতীয়ত, একটি বৌদ্ধিক উন্নয়নের আবির্ভাব, যা দ্বাদশ শতকীয় রেনেসাঁ নামে পরিচিত, তৃতীয়ত, বাণিজ্যিক জোয়ার। এই সবগুলির সমন্বয়ে একটা নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যা একটা নতুন প্রতিষ্ঠান, তথা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রয়োজন সৃষ্টি করে...

গথিক স্থাপত্য রীতি | Gothic Style of Architecture

গথিক স্থাপত্য রীতি  মধ্যযুগের ইউরোপের স্থাপত্য বলতে মূলত গির্জা স্থাপত্যকে বোঝায়। প্রথমদিকে যে গির্জাগুলি তৈরি হত সেগুলি মূলত কাঠের তৈরি। নবম ও দশম শতকের অরাজক পরিস্থিতিতে সেগুলি ধ্বংস হয়ে যায়। একাদশ শতকে ক্লুনি সংস্কার আন্দোলনের সময় পুনরায় চার্চ নির্মাণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ে মূলত রোমান রীতিতে চার্চ নির্মিত হত। রোমান রীতির বড় সমস্যা ছিল সূক্ষ্মতার অভাব। দেওয়াল গুলি এত মোটা হত যে জানালা কাটা যেত না। তাই চার্চে আলোর অভাব পরিলক্ষিত হত। রোমান রীতির এই সমস্যাগুলি দূর হয়েছিল গথিক রীতির বিকাশের ফলে। গথিক রীতির মূল কেন্দ্র ছিল উত্তর ফ্রান্স। দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গথিক রীতির আবির্ভাব হয় এবং ত্রয়োদশ শতকে এই রীতি তার উৎকর্ষের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়। পঞ্চদশ শতকের শেষ এবং ষোড়শ শতকের সূচনাকাল পর্যন্ত তার চাহিদা বজায় রাখতে পেরেছিল। গথিক রীতি মানে গথদের রীতি এমনটা নয়। আসলে পরাজিত ইতালীয়রা প্রচলিত নিয়মের বিরোধী সবকিছুকে 'গথিক' বলে উপহাস করত। তাই এই নতুন রীতি  গথিক রীতি নামে পরিচিত হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে গথিক রীতি ছিল একটি মিশ্র শিল্পরীতি। এই রীতির প্রধান ব...

ম্যানর ব্যবস্থার স্বরূপ | Manorialism

ম্যানর ব্যবস্থার স্বরূপ  উৎপাদন ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার জন্য সমাজের নিচুস্তরে প্রভূ ও অধীনস্থ প্রজার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে যে প্রাচীনতর ও দীর্ঘায়ু প্রতিষ্ঠান ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে স্বাভাবিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তা 'ম্যানর' নামে পরিচিত। ম্যানারগুলিকে ফ্রান্সে অবশ্য সেঁইন্যারি (Seigneurie) বলা হত। মার্ক ব্লকের ভাষায়, ম্যানর ছিল প্রধানত এস্টেট, যার সীমানার মধ্যে বাস করতেন লর্ডের প্রজারা। আর লর্ড বা ভূস্বামীর জমিতে প্রজা কর্তৃক উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ভাগীদার হাওয়াই ছিল লর্ডের কর্তৃত্ব প্রয়োগের মূল লক্ষ্য। অধীনস্থ প্রজার উপরে ভূস্বামীর অধিকারের মাত্রা ও ব্যাপকতার বিচারে ম্যানর গুলিকে সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্থানীয় বিভাগ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সাধারণত আকারে বিশাল এবং স্বনির্ভর এই প্রতিষ্ঠান ইউরোপের সর্বত্র একইভাবে বা একই সময়ে গড়ে ওঠেনি। কোথাও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণরূপে ম্যানর নিয়ন্ত্রিত, কোথাও অসংখ্য ছোট ছোট ক্ষেত মালিক বিচ্ছিন্নভাবে কৃষিকাজ সম্পন্ন করতেন। জার্মানি ও ইংল্যান্ডের বহু আগেই ফ্রান্স ও ইতালিতে কয়েকটি এলাকায় ম্যানর ব্যবস্থার বিকা...

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি | Nature of Feudalism

সামন্ততন্ত্রের প্রকৃতি নবম ও দশম শতকে ইউরোপে কেন্দ্রীয় শাসন ভেঙে পড়লে ভূমিনির্ভর অভিজাত ও সরকারি কর্মচারীরা রাজতন্ত্রের বদলে এক ধরনের বিকল্প রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলে যার নাম সামন্ত প্রথা। ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভাঙনের মধ্য দিয়ে সামন্ত ব্যবস্থার উৎপত্তি হয় এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার পূনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার অবসান হয়। মোটামুটি ৮০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই ব্যবস্থা ইউরোপে স্থায়ী ছিল। ইংরাজিতে Feudalism শব্দের বাংলা অনুবাদ হল সামন্ততন্ত্র। 'ফিউড' কথার অর্থ জমি। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে জমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি ব্যবস্থা। সামন্ততন্ত্র মূলত একটি সরকারি ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীয় প্রশাসন থাকে না, ভুস্বামীদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত থাকে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ধনী অভিজাতরা অধীনস্থদের রক্ষার দায়িত্ব নিত এবং বিনিময়ে অধীনস্থ ব্যাক্তি প্রভুকে সেবা ও সীমাহীন আনুগত্য দিত। প্রভু ও অধীনস্থের এই সম্পর্কই ছিল সামন্ত ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। মার্ক ব্লখ মনে করেন ভ্যাস...