সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

Mughal India লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মুঘলদের পতন সংক্রান্ত ব্যখ্যা | Historical Debate on the Fall of Mughal Empire

মুঘলদের পতন  ১৫২৬ খ্রিঃ পানিপথের যুদ্ধে বাবরের জয়লাভের মাধ্যমে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের যাত্রা শুরু হয় এবং মহান আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্য তার ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়। সপ্তদশ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শহর দিল্লি সমগ্র পূর্ব গোলার্ধের ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হত। কিন্তু ১৭০৭ খ্রিঃ মহান ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এই সাম্রাজ্যের ক্রমিক অবক্ষয়ের সূচনা হয় এবং আগামী ৫০ বছরের মধ্যে এর পড়ন্ত অবস্থার লক্ষনগুলি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে সাম্রাজ্যের সামরিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। মারাঠারা সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে লুঠপাঠ চালাতে থাকে। পরপর দুটি বিদেশি অক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতা, পারস্যের নাদির শাহের আক্রমণ (১৭৩৮-৩৯) এবং আহম্মদ শাহ আবদালির নেতৃত্ব আফগান আক্রমণ (১৭৫৬-৫৭) মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতাপ ও মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে।   মুঘলদের পতনের কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে একসময় ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকাকে বড় করে দেখা হত। মনে করা হত দুর্বল উত্তরাধিকারী, যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত নীতি ইত্যাদি কারনে সাম্রাজ্যের অবনতি ঘটে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ইতিহাস চর্চায় স...

মুঘল স্থাপত্যকলায় শাহ জাহানের অবদান | Mughal Architecture under Shah Jahan

মুঘল স্থাপত্যকলায় শাহ জাহানের অবদান | Mughal Architecture under Shah Jahan ভারতবর্ষের স্থাপত্যকলার ইতিহাসে শাহ জাহানের রাজত্বকাল স্বর্ণযুগ। মুঘল আমলে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে যেমন চিত্রকলার চরম বিকাশ ঘটেছিল তেমন শাহাজাহানের রাজত্বকালে মুঘল স্থাপত্য শিল্প উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল। তাঁর পূর্বপুরুষ মহান আকবরের সময় থেকে মুঘল স্থাপত্যের জয় যাত্রা শুরু হয়েছিল, কিন্তু জাহাঙ্গীর চিত্রশিল্পে অত্যধিক নজর দেওয়ায় স্থাপত্য নির্মাণ অবহেলিত হয়েছিল। শাহ জাহান আবার নতুন উদ্যমে স্থাপত্য নির্মাণ শুরু করেন। পূর্বসূরিদের অনুসৃত নির্মাণশৈলী থেকে সরে এসে এক নতুন আঙ্গিকে নির্মাণকার্য শুরু হয়। শাহ জাহানের প্রথম জীবনের নির্মাণগুলি সবই আগ্রা দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত। আগ্রা দুর্গের ভিতরে তিনি দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, মতি মসজিদ, শিসমহল, মুসম্মান বারজ নির্মাণ করেন। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির কাছে শাহজাহানাবাদ নামে প্রাসাদ-দূর্গ সহ শহর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই নির্মাণ কাজ চলে। আগ্রা দুর্গের অনুকরণে এখানে লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত হয় লালকেল্লা। এই দুর্গের দুটি প্রবেশ পথ-- পশ্চিম দিক...

ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের রচনা | François Bernier

ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের রচনা | François Bernier আকবরের রাজত্বকাল থেকেই মুঘল দরবারের সঙ্গে ইউরোপীয়দের যোগাযোগের সূচনা হয়। শাহজাহানের দরবারে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ইউরোপীয় পর্যটকের আগমন হয়েছিল। এরা হলেন ট্যাভার্নিয়ে, পিটার মান্ড্‌ মানুচি এবং বার্নিয়ে। বার্নিয়ে ছিলেন একজন ফরাসি চিকিৎসক। শাহজাহানের রাজত্বকালের শেষ দিকে, ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাধিকারী দ্বন্দ্বের সময় তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এদেশে ছিলেন। তার লেখা বিতর্কিত গ্রন্থটি হল The War of Succession of 1658 . এই গ্রন্থটি একসময় নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হলেও আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যান্য ইউরোপীয় পর্যটকদের মত বার্নিয়েও তাঁর স্বদেশের সাথে ভারতের তুলনা করতে গিয়ে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবমুল্যায়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন ভারতে কোনো রাষ্ট্র নেই। এখানে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে প্রবল দ্বন্দ্ব চলে। জ্যেষ্ঠ পুত্রের উত্তরাধিকার স্বীকৃত থাকলে এমন হত না। আসলে বার্নিয়ে যখন ভারতে এসেছিলেন তখন শাহাজাহানের পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব চলছিল...

মুঘল চিত্রকলায় জাহাঙ্গিরের অবদান | Mughal Miniature Paintings in Jahangir's Time

মুঘল চিত্রকলায় জাহাঙ্গিরের অবদান মুঘল চিত্রকলাকে বলা হয় ইন্দো-পারসিক চিত্রকলা। হুমায়নের হাত ধরে প্রথম এই ইন্দো-পারসিক চিত্রকলার সূচনা হয় এবং আকবরের রাজত্বকালে তা বিকশিত হয়। কিন্তু জাহাঙ্গিরের রাজত্বকাল ছিল মুঘল চিত্রকলার স্বর্ণযুগ। জাহাঙ্গির ছিলেন অসম্ভব প্রকৃতিপ্রেমিক। নিসর্গ প্রকৃতির টানে তিনি ১৯ বার কাশ্মীর গিয়েছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় অঙ্কিত চিত্রকলায় তাই প্রাকৃতিক দৃশ্য সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তবে পশুপাখির চিত্র, বিশিষ্ঠ ব্যক্তির অবয়ব বা রাজনৈতিক ঘটনাবলী একেবারে বাদ যায় নি।  জাহাঙ্গিরের দরবারের প্রধান শিল্পী ছিলেন হিরাটের আগা রিজা। ইনি প্রখ্যাত চিত্রকর আবু-ই-হাসানের পুত্র। তাঁর দরবারের অন্যান্য চিত্রকরদের মধ্যে ছিলেন ফারুক বেগ, আব্দুস সামাদ, মহম্মদ নাদির, মহম্মদ মুরাদ, উস্তাদ মনসুর, মনোহর, বিষণ দাস, গোবর্ধন, আবুল হাসান, বিচিত্র প্রমুখ। এদের মধ্যে উস্তাদ মনসুরের কথা উল্লেখ করতেই হয়। ইনি পশুপাখির একেবারে জীবন্ত চিত্র এঁকে দিতে পারতেন। তাঁর আঁকা সাইবেরিয়ান সারস একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। কলকাতা মিউজিয়ামে এটি সংরক্ষিত আছে। রঙের ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন আবুল হাসান। প্রতিকৃতি অঙ্কনে...

নাদির শাহের ভারত আক্রমণ | Nadir Shah's Invasion

  নাদির শাহের ভারত আক্রমণের কারন কি মূলত অর্থনৈতিক? এই আক্রমণের রাজনৈতিক ফল কি হয়েছিল?  মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহ এর শাসনকালে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। প্রচুর ধনরত্ন লুন্ঠন করেন এবং বেশ কিছু এলাকা তিনি দখল করেন। তাঁর আক্রমণের পিছনে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকলেও তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে ভারত আক্রমণের উৎসাহিত করেছিল। যাইহোক নাদির শাহের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে মুঘল সামরিক শক্তি ব্যর্থ হয় এবং সাম্রাজ্যের উপরে এই পরাজয় ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে। পারস্য সাফাবিদ বংশীয়দের শাসনে আফগানদের দ্বারা আক্রান্ত হলে নাদির কুলি নামক এক দক্ষ সেনাপতি তার সামরিক কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে পারস্য থেকে আফগানদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন এবং তিনি সাম্রাজ্যে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি সাফাবিদ শাসকগোষ্ঠীকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজেকে পারস্যের 'শাহ' ঘোষণা করেন। নাদির শাহ অটোমান তুর্কিদেরও পারস্য থেকে বিতাড়িত করতে  সক্ষম হন। কিন্তু তুর্কিদের সঙ্গে অনবরত লড়াই চালিয়ে যেতে গেলে যে বিশাল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল সেই পরিমান অর্থের মজুত সেই মুহূর্তে...

শাহজাহানের রাজত্বকাল | Shahajahan's Reign

  মুঘল যুগে শাহজাহানের রাজত্বকাল শাহজাহানের রাজত্বকালে (১৬২৮-১৬৫৮) মুঘল সাম্রাজ্য তার গৌরবের শীর্ষে পৌঁছায়। তাঁর রাজত্বকাল মুঘলদের ইতিহাসে 'স্বর্ণযুগ' নামেই খ্যাত। তার সময়ে ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্য সমগ্র ভারতবর্ষে সম্প্রসারিত হয়, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্টিত হয় এবং শিল্প-সাহিত্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। তবে উন্নতির আড়ালে পতন ও অবক্ষয়ের চিহ্নগুলিও ফুটে ওঠে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। শাহজাহানের রাজত্বকাল যে ভারত ইতিহাসে সমৃদ্ধি ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করেছিল, তা বিভিন্ন ঐতিহাসিক সাক্ষ্যে সমর্থিত। 'লুব-উৎ-তওরিখ' গ্রন্থের লেখক দেখিয়েছেন শাহজাহানের গৃহীত শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি ছিল প্রজা কল্যাণকামী এবং দক্ষ শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি প্রশাসনিক কাজে কোনো গাফিলতি সহ্য করতেন না। প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রাখতেন। তাঁর সময়ে আইন-শৃঙ্খলা যথেষ্ট মজবুত ছিল। জনগণের যাতায়াতের এবং সম্পত্তির পূর্ণ নিরাপত্তা ছিল। সম্রাট 'ঝরোকা দর্শন ' এর মাধ্যমে জনগণের সামনে আসতেন এবং জনগণ তার কাছে সুবিচার চাইতে  পারতেন। তবে মনে করা হয়, খুব কম লোকই এরকম সম্রাটের কাছ...

মুঘলদের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা | Mughal Provincial Administration

  মুঘলদের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা  ভারতে মুঘল শাসন ব্যবস্থার অন্যতম প্রাধান অঙ্গ ছিল প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য মোগল শাসকরা সমগ্র সাম্রাজ্যকে কতগুলি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করতেন। আকবরের সময় সুবার সংখ্যা ছিল ১৫। জাহাঙ্গীর এর সময় সুবার সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ১৭; শাহজাহানের সময় ২২ এবং পরবর্তীকালে  কান্দাহার হস্তচ্যুত হলে সেই সংখ্যা ২১-এ এসে দাঁড়ায়। ঔরঙ্গজেবের সময়েও এই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। প্রত্যেকটি সুবা কতগুলি সরকার এবং প্রত্যেকটি সরকার কতগুলি পরগনায় বিভক্ত থাকত। শাসন ব্যবস্থার প্রতিটি এককে উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস মোগল শাসকরা চালাতেন। প্রদেশগুলির সাথে কেন্দ্রের যোগাযোগ ছিল সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। প্রতিটি প্রদেশের রাজধানী থাকত, যেখান থেকে প্রাদেশিক শাসন পরিচালিত হত এবং কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হত। প্রত্যেকটি সুবার শাসন ছিল কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ। সুবার সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন সুবাদার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। প্রাদেশিক ব্যবস্থায় তাকে সাহায্য করার জন্য ...

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের গুরুত্ব | Jahangir's Reign

  ভারতের ইতিহাসে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের গুরুত্ব মহান সম্রাট আকবরের পুত্র এবং তার পরবর্তী মুঘল শাসক ছিলেন জাহাঙ্গীর। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যু হলে জ্যেষ্ঠ পুত্র সেলিম ৩৬ বছর বয়সে আগ্রা দুর্গে নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে মুঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। আকবরের রাজত্বকালের অগ্রগতির সঙ্গে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালকে তুলনা করা যায় না ঠিকই, কিন্তু মুঘলদের যে ঐতিহ্য-- ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংস্কৃতিমনস্কতা-- তা থেকে জাহাঙ্গীর এক ইঞ্চিও সরে আসেননি। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল পুত্র খসরুর বিদ্রোহ (১৬০৭)। আকবরের মৃত্যুর পর সভাসদদের অনেকেই সেলিমের পরিবর্তে আকবরের পৌত্র খসরুকে সিংহাসনের উপযুক্ত মনে করেছিলেন। সুতরাং খসরুর যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও ছিল। মানসিংহ, আজিজ কোকা, শিখ গুরু অর্জুন খসরুর পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খসরুর বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যুবরাজ খুররমের হাতে খসরুর মৃত্যু হয়েছিল। যে ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীরকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটি হল নুরজাহানের সঙ্গে তার বিবাহ। পারসিক কন্যা নুরজাহান জাহাঙ্গীরের দরবারে অগ্রমহিষীর মর্যাদাও প...

ভারতের ইতিহাসে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের গুরুত্ব | Jahangir

ভারতের ইতিহাসে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের গুরুত্ব মহান সম্রাট আকবরের পুত্র এবং তার পরবর্তী মুঘল শাসক ছিলেন জাহাঙ্গীর। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যু হলে জ্যেষ্ঠ পুত্র সেলিম ৩৬ বছর বয়সে আগ্রা দুর্গে নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে মুঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। আকবরের রাজত্বকালের অগ্রগতির সঙ্গে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালকে তুলনা করা যায় না ঠিকই, কিন্তু মুঘলদের যে ঐতিহ্য-- ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংস্কৃতিমনস্কতা-- তা থেকে জাহাঙ্গীর এক ইঞ্চিও সরে আসেননি। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল পুত্র খসরুর বিদ্রোহ (১৬০৭)। আকবরের মৃত্যুর পর সভাসদদের অনেকেই সেলিমের পরিবর্তে আকবরের পৌত্র খসরুকে সিংহাসনের উপযুক্ত মনে করেছিলেন। সুতরাং খসরুর যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও ছিল। মানসিংহ, আজিজ কোকা, শিখ গুরু অর্জুন খসরুর পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খসরুর বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যুবরাজ খুররমের হাতে খসরুর মৃত্যু হয়েছিল। যে ঘটনার জন্য জাহাঙ্গীরকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটি হল নুরজাহানের সঙ্গে তার বিবাহ। পারসিক কন্যা নুরজাহান জাহাঙ্গীরের দরবারে অগ্রমহিষীর মর্যাদাও পেয়েছিল...

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিনাত্য নীতি | Decan Policy of Aurangazeb

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিনাত্য নীতি ঔরঙ্গজেব তাঁর শাসনের প্রথম দিকে বেশিরভাগ সময় উত্তর ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য দক্ষিণ ভারতের দিকে বিশেষ নজর দিতে পারেননি। এই অবসরে দক্ষিণ ভারতে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের দুটি স্বাধীন রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এই সুযোগে মারাঠা জাতি শিবাজীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং মুঘল বিরোধিতার নজির স্থাপন করেছিল। ইতিমধ্যে শাহজাদা আকবর বিদ্রোহ করেছিলেন এবং শিবাজীর পুত্র শম্ভূজীর দরবারে গিয়ে আশ্রয় নেন। এই পরিস্থিতিতে আওরঙ্গজেব মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে; প্রথমত বিজাপুর ও গোলকুণ্ডাকে সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা এবং নবউত্থিত মরাঠা শক্তির বিলোপসাধনের জন্য দাক্ষিণাত্য অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট স্বয়ং দাক্ষিণাত্য আসেন।আহম্মদনগর থেকে অভিযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা হয়। ইতিমধ্যে শিবাজীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু শম্ভূজীর নেতৃত্বে মারাঠারা তখনও বেশ শক্তিশালী। পরপর চারটি অভিযানে আওরঙ্গজেব মারাঠাদের কতগুলি দুর্গ দখল ছাড়া কিছুই করতে পারিনি বা শাহজাদা আকবরকেও ধরা যায়নি। ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে শম্ভূজী ঔরঙ্গজেব...

মুঘল ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা | Mughal Banking System

মুঘল ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা মুঘল যুগে ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল কৃষি। কিন্তু কারিগরি উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আলোচ্য পর্বে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছিল। অভ্যন্তরীণ এবং সামুদ্রিক বাণিজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। কারিগরি উৎপাদন ও বাণিজ্যের ওপর ভর করে দ্রুতগতিতে নগরায়ন হয়েছিল। বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক হয়ে উঠেছিল এই যুগের উন্নত ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ব্যাংকারদের উপস্থিতি ছিল। 'শরফ' নামে পরিচিত এক প্রকার ব্যাংকাররা কৃষক এবং কারিগরদের ঋণ দিতেন। অনেক সময় বণিকরা কৃষকদের ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য ঋণ প্রদান করতেন। রাষ্ট্রের তরফ থেকে কৃষকরা 'তাকাভি' নামক এক প্রকার ঋণ পেত। ট্যাভার্নিয়ের রচনা থেকে জানা যায় প্রতিটি গ্রামে একজন করে মহাজন থাকতেন যারা এই ঋণ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন।  ব্যাংক এবং বীমা ব্যবস্থা পরিচালিত হত 'শরফ'দের মাধ্যমে। লেটার অফ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এরা দূরে টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা করতেন। ট্যাভার্নিয়ের রচনা থেকে জানা যায় এরা এক্সচেঞ্জ এর ক্ষেত্রে বাটা আদায় করতেন। পুরাতন মুদ্রাকে নতুন মুদ্রায় বদলে দিলেও এরা বাটা আদায় কর...

মুঘল- শিখ সম্পর্ক | Mughal-Sikh Relation

মুঘল- শিখ সম্পর্ক শিখ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গুরু নানক। পঞ্চদশ শতকে তারই হাত ধরে একটি পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে শিখদের আবির্ভাব ঘটে। এই ধর্মের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল কুসংস্কার ও জাতিভেদের বিরোধিতা করা এবং ধর্মের দরজা হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত করা।        শিখদের প্রথম গুরু ছিলেন নানক। নানকের মৃত্যুর পর গুরু পদে অধিষ্ঠিত হন গুরু অঙ্গদ। গুরু অঙ্গদ থেকে গুরু অর্জুন পর্যন্ত মুঘলদের সঙ্গে শিখদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। গুরু রামদাসের সময় মুঘল সম্রাট আকবর পাঁচ বিঘা জমি দান করেছিলেন, সেখানে অমৃতসর নামে একটি পুকুর খনন করে পুকুর সংলগ্ন এলাকায় হরিমন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ক্রমশ এই মন্দির এবং অমৃতসর হয়ে ওঠেছিল শিখ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক উপাসনার কেন্দ্র। গুরু রামদাসের অনুরোধে আকবর পাঞ্জাবে এক বছরের রাজস্বও মুকুব করে দিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের পারিবারিক দ্বন্দ্বে গুরু অর্জুনের নাক গলানোর ফলে মুঘলদের সঙ্গে শিখদের  এতদিন যে শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক ছিল তাতে ফাটল ধরে। জাহাঙ্গীরের পুত্র খসরু বিদ্রোহ করলে গুরু অর্জুন তাকে সহযোগিতা ও আশ্রয় প্রদান ...

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা । Revenue Settlement of Murshid Quali Khan

 মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা মুর্শিদকুলি খান  বাংলার দিওয়ান রূপে নিযুক্ত হওয়ার পর, দেখেন বাংলার তখন রাজস্ব বলতে বোঝাত বাণিজ্যিক শুল্ক। কারণ বাংলার সমস্ত অঞ্চল আমলা ও অভিজাতদের মধ্যে বন্টিত ছিল, তাই বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য মুর্শিদকুলি প্রথম বাংলার যাবতীয় অঞ্চলকে খালিসাতে রূপান্তরিত করেছিলেন।‌ সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে কিছু ব্যক্তিকে ইজারা দানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই নতুন ইজারাদারদের বলা হত মাল-জামিন। তাই এই ব্যবস্থা মাল- জামিনি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ঐতিহ্যগত জমিনদার পরিবারগুলির অধিকাংশকেই মালজামিনি এর অধীনে থাকতে হয়। মুর্শিদকুলির রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলায় এক নতুন অভিজাত শ্রেণীর বিকাশ ঘটে। মুর্শিদকুলির রাজস্ব বন্দোবস্তের কাজে সর্বাধিক সহায়তা করেছিলেন রাজশাহীর ব্রাহ্মণ রঘুনন্দন। মুর্শিদকুলি কঠোরভাবে রাজস্ব প্রশাসন চালনা করা এক নজির সৃষ্টি করেছিলেন। মুর্শিদকুলি রাজস্ব আদায়ের জন্য সরকারি ব্যয় হ্রাস করে, সেই খরচ রাজস্ব প্রদানকারী দের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মুর্শিদকুলি সমগ্র সুবাকে তেরোটি চাকলায় বিভক্ত করেছ...

মুঘল যুগে কৃষি প্রযুক্তি | Technology in Mughal Agriculture

মুঘল যুগে কৃষি প্রযুক্তি বর্তমানের মতো মুঘল আমলেও ভারত ছিল কৃষিনির্ভর দেশ। ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষের কৃষির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মুঘল যুগে কৃষির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সেচব্যবস্থা ও  প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য।  আবুল ফজল , মানুচি,  সুজন রাই ভান্ডারী প্রমুখের রচনা থেকে সেই যুগে প্রচলিত কৃষি প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। ভারতীয় লাঙ্গল ইউরোপীয়দের কাছে অজানা ছিল। ফ্রায়ার লিখেছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাঙলে লোহার বদলে কাঠের ফলা ব্যবহার করা হত, কারণ লোহা ছিল দুর্লভ এবং মাটি ছিল নরম। তবে ইরফান হাবিবের মতে তা একমাত্র উপকূলবর্তী অঞ্চলেই সম্ভব ছিল, কারণ দেশের অভ্যন্তরে শক্ত মাটিতে লোহা অপরিহার্য ছিল।তিনি আরও দেখিয়েছেন, সে সময়ে ভারতে লোহার দর ১৯৯৪ এর দরের তিন গুণের বেশি ছিল না। বীজ রুয়ে চাষ ভারতের পুরনো রীতি। তুহফাত- ই- পাঞ্জাব গ্রন্থে বলা হয়েছে, মাটি ৮ মাস ধরে চষে ইক্ষু চাষের উপযোগী করতে হত। একে আথমাস বলা হত। নোল টেনে মাটি সমান করতে সোহাগা প্রযুক্তির ব্যবহার হত। দুটি বলদের কাঁধের জোয়াল থেকে দুটি দড়ি এসে একটি তক্তার দু'পাশে যুক্ত হত। হালিক এই তক্তায় দাঁড়িয়ে বলদ...

ঔরঙ্গজেবের ধর্ম নীতি | Religious Policy of Aurangajeeb

 ঔরঙ্গজেবের ধর্ম নীতি মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ব্যক্তিজীবনে একজন ধার্মিক সুন্নি মুসলমান ছিলেন। দিনে পাঁচবার নামাজ থেকে শুরু করে রমজান পালন এবং অন্যান্য যাবতীয় ইসলামিক রীতি রেওয়াজ মেনে চলতেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জীবনে শাসক হিসাবে তিনি কতটা ধর্মীয় গোঁড়ামি দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন তা বিতর্কের বিষয়। বিতর্কের এক দিকে রয়েছেন পণ্ডিত শ্রী রাম শর্মা, যিনি তাঁর "The Religious Policy of the Mughal Emperors" গ্রন্থে ঔরঙ্গজেবকে একজন হিন্দু বিরোধী গোঁড়া মুসলমান শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে অধ্যাপক আতাহার আলী এবং অন্যান্য আধুনিক ঐতিহাসিকগণ অধ্যাপক শ্রীরাম শর্মার বক্তব্যের খন্ডন করেছেন।  ঔরঙ্গজেবের ধর্মনীতি সংক্রান্ত বিতর্কের মুলত তিনটি দিকঃ রাজপুত ও হিন্দুদের দমন; মন্দির ধ্বংস এবং জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন। ইউরোপীয় পর্যটকদের বিবরণীর উপর নির্ভর করে অধ্যাপক শ্রীরাম শর্মা, ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে একাধিক হিন্দু বিদ্বেষমুলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন ঔরঙ্গজেব শিখদের বিরুদ্ধে ঢালাও গণহত্যার হুকুম দিয়েছিলেন। এই তথ্যের উৎস হিসাবে মাসীর-ই- আলমঙ্গীরি-র (পৃ- ১৪১) উল্লেখ করেছেন। ক...

শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব | War of Succession: Aurangajeb, Dara, Murad and Suja

শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব ১৬৫৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ বছর বয়সে শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁর চার পুত্রের মধ্যে চরম সংঘর্ষ শুরু হয়। মুঘল দরবারে সিংহাসন নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব নতুন নয়। উদাহরণস্বরূপ আকবরের বিরুদ্ধে সেলিমের বিদ্রোহ, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাহানের বিদ্রোহ। তবে অন্য সমস্ত দরবারি অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বকে ছাপিয়ে গেছে যে ঘটনা সেটি হল শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব।   শাহজাহানের চার পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন দারাশিকো। দারা শাহজাহানের খুব প্রিয় ছিলেন। পাঞ্জাব, মুলতান ও এলাহাবাদের দায়িত্বে থাকলেও দারা পিতার কাছে থেকেই প্রতিনিধি মারফত শাসন চালাতেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দারা অনভিজ্ঞ ছিল। কিন্তু জ্ঞান এবং শিক্ষাদীক্ষায় তিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ। কিন্তু সিংহাসন লাভের অভিলাসও তার ছিল। শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন সুজা। তিনি দীর্ঘদিন বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন। কোনো গোঁড়ামি বা ভন্ডামি তার ছিল না। কিন্তু তার নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তৃতীয় পূত্র ঔরঙ্গজেব। তিনি একাধারে সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন, কূটনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন,...

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান | Mughal Miniature Paintings in Akbar's Time

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান  ভারতীয় শিল্পকলায় মুঘল শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা তরবারির পাশাপাশি কালি, কলম ও ছবিকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাদের কালজয়ী সৃষ্টিগুলি কেবল স্থাপত্য নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিল না। চিত্রশিল্পেও ভারত মুঘল আমলে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছিল। মুঘল চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আকবরের রাজত্বকালে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কালে তা বিকাশের শীর্ষে পৌঁছে গেছিলো। আকবরের পূর্বপুরুষ বাবর ও হুমায়ূন চিত্রশিল্পে স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারেননি। তবে তাঁরা যথেষ্ট সৌন্দর্য পিপাসু ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুঘলদের সৌন্দর্য পিপাসা আকবরের মধ্যেও বহমান ছিল। হুমায়ুন পারস্য থেকে মীর সৈয়দ আলী ও আবদুস সামাদকে কাবুলে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিলেন। আকবর এই আবদুস সামাদের নেতৃত্বে একটি কলাভবন নির্মান করেছিলেন। তাঁর সময়ে আঁকা ছবিগুলির বিষবস্তু যেমন ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিকৃতি, তেমনি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের প্রতিকৃতি আঁকার চলনও ছিল। তাঁর দরবারে চিত্রকরদের মধ্যে বসাওয়ান ছিলেন প্রতিকৃতি অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। আবুল ফজলের লেখা থেকে জানা যায় পটভূমি চিত্রণ ও মুখাবয়বের রেখাঙ্কন, রঙে...

শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি | Sahjahan's Foreign Policy in Central Asia

 শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি ট্রান্স অক্সিয়ানা ছিল মুঘলদের পূর্বপুরুষের বাসভূমি। বাবর থাকে শুরু করে জাহাঙ্গীর পর্যন্ত প্রত্যেক মুঘল শাসকই তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ পুনরুদ্ধারের আশা পোষন করতেন। বাবর ও হুমায়ূন চেষ্টা করেও নিস্ফল হয়েছিলেন। শাহজাহান তার পূর্বপুরুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সচেষ্ট হন।  শাহা জাহানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বালখ ও বদাকসান দখল করা। কারণ এই দুই প্রদেশ দখল করলে সমরখন্দ দখলের রাস্তা উন্মুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত উত্তর পশ্চিম সীমান্তে উজবেগ জাতির আক্রমণকে প্রতিহত করে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। সুতরাং শাহজাহানের মধ্য এশিয়া অভিযানের পশ্চাদে যে কেবল আবেগ কার্যকর ছিল তা নয়, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্যও ছিল। ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে অক্ষু নদীর তীরে বুখারা রাজ্যের রাজা নজর মহম্মদ খান যখন পুত্র আব্দুল আজিজের সঙ্গে এক যুদ্ধে লিপ্ত হলেন সেই সুযোগে শাহজাহান যুবরাজ মুরাদ ও আলী মর্দানের নেতৃত্বে একটি বিরাট বাহিনী প্রেরণ করলেন। মুঘল সেনাবাহিনী খুব সহজে বালখ ও বাদকসান অধিকৃত করে নজর মহম্মদ খান পারস্যে পলায়ন করেন। যদিও এই দুই রাজ্য দীর্ঘকাল মুঘল ...