সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ | Vietnam War

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ | Vietnam War

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ একাধারে উপনিবেশবাদ ও নয়াউপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে গনসংগ্রামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং এশিয়ার মাটিতে ঠান্ডা লড়াইয়ের উৎকট বহিপ্রকাশ। ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামের দুটি পর্ব - প্রথমটি ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম (১৯৪৫-৫৪) এবং দ্বিতীয়টি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম (১৯৫৪-৭৫)। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে শেষপর্যন্ত ভিয়েতনামের জনগনের জয় হয়েছিল এবং স্বাধীন সমাজতন্ত্রী ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম আত্মপ্রকাশ করেছিল। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রথম পর্ব 

ভিয়েতনাম সহ অন্নাম, টংকিং ও কোচিন চীন তথা সমগ্র ইন্দোচীনের উপর ফরাসি উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাময়িক ভাবে ইন্দোচীন জাপানের অধীনে চলে যায়। বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর ফ্রান্স পুনরায় মার্কিন চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইন্দোচীনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্যত হয়। এদিকে বামপন্থী নেতা হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বে প্রবল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি জাপানি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লীগ ফর দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্স ইন ভিয়েতনাম বা ভিয়েতমিন গঠন করেছিলেন। ভিয়েতমিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট এবং অ-কমিউনিস্ট জনগণ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল। একই সাথে ভিয়েতমিন সমগ্র দেশে কমিউনিস্ট আদর্শের দ্রুত প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনাম থেকে জাপানি সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ২রা সেপ্টেম্বর হো-চি-মিন ভিয়েতনামকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হ্যানয়ে অস্থায়ী গণতান্ত্রিক সরকারের ঘোষণা হয়।

ইন্দোচীন থেকে ফরাসি সরকারের উপনিবেশিক সাম্রাজ্য গুটিয়ে নেবার ইচ্ছা থাকলেও ব্রিটেন ও মার্কিনের মতো পশ্চিমী শক্তিগুলির চাপে পড়ে তারা তা করতে পারেনি। মার্কিন মদতে ফ্রান্স তার ঔপনিবেশ রক্ষার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় হো-চি-মিনের নেতৃত্বাধীন ভিয়েতমিন বাহিনী হ্যানয়ে অবস্থানরত ফরাসি বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন। ফ্রান্সও হাইফং এ নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে প্রচুর অসামরিক মানুষকে হত্যা করে। ভিয়েতমিন বাহিনী এর পাল্টা জবাবে হ্যানয় আক্রমণ করে এবং ৪০ জন ফরাসিকে হত্যা করে এবং ২০০ জনকে অপহরণ করে। ফলে ভিয়েতমিন ও ফরাসি বাহনীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের সূচনা হয় এবং উভয়ের মধ্যে আলাপ আলোচনা রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

ফরাসি বাহিনীর কাছে ভিয়েতমিন বাহিনী অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। শহরাঞ্চলে ফরাসিদের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকলেও গ্রামাঞ্চল পুরোপুরি ভিয়েতনদের হাতে চলে যায়। এদিকে মার্কিন ও ফ্রান্সের সমর্থনে ভিয়েতনামে বাও-দাই এর নেতৃত্বে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁবেদার সরকার গঠিত হয়। যদিও এই সরকারের কোন জনসমর্থন ছিল না। ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারকে প্রত্যক্ষভাবে মদত দিতে থাকে। কিন্তু অঢেল সাহায্য সত্বেও ফরাসি প্রতিরোধ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। চীন নেতৃত্বও ভিয়েতমিনকে সাহায্য করতে থাকে। ফলে ফ্রান্সের অবস্থানের অবনতি হয়। ভিয়েতমিন চোরাগোপ্তা আক্রমণের কাছে ফরাসি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত ১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু-র যুদ্ধে ভিয়েতমিন বাহিনীর হাতে ফরাসী ঔপনিবেশিক বাহিনীর পরাজয় হয়। ফরাসী সেনাপ্রধান জেনারেল গিয়াপ আত্মসমর্পণ করেন। এইভাবে প্রথম পর্বের সমাপ্তি হয়।

জেনেভা চুক্তি

দিয়েন - বিয়েন - ফু এর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবনির্বাচিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট মেন্ডেস, যিনি যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন, দ্রুত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইন্দোচীন সমস্যার সমাধানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই প্রেক্ষিতে ২০ জুলাই, ১৯৫৪-এ জেনেভায় আহূত এক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্তগুলি নিম্নরূপ:-

(১) ১৭⁰ অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হবে। উত্তর ভিয়েতনামে থাকবে হো - চি - মিন এর ভিয়েতমিন বাহিনীর কর্তৃত্ব। সেখানে হো- র নেতৃত্বে ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। দক্ষিণ ভিয়েতনামে আপাতত ফরাসি বাহিনী থাকবে। সেখানে ন  দিন দিয়েম এর নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

(২) ভবিষ্যতে ৬ মাসের মধ্যে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে ফ্রান্স সেনা প্রত্যাহার করবেন।

(৩) লাওস ও কম্বোডিয়া থেকে ফরাসী সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে সেখানে পূর্বতন রাজবংশীয় শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।

(৪) দু'বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দুই ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হবে।

জেনেভা সম্মেলন ভিয়েতনামে ঔপনিবেশিকতার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়েছিল ঠিকই, ভিয়েতনাম সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি। দুই ভিয়েতনামের মধ্যে বৈরিতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামকে মদত দিতে থাকে। এমনকি সরাসরি দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষ অবলম্বন করে মার্কিন সেনা উত্তর ভিয়েতনামের উপর আঘাত হানতে থাকে। গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে আমেরিকা ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরে আসে। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম যুদ্ধ তথা ভিয়েতকং বনাম আমেরিকা যুদ্ধ শুরু হয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব 

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে দিয়েম প্রশাসন জানিয়ে দিল যে সাধারণ নির্বাচন আহ্বানে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই; কারন জেনেভা চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেন নি। এই পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম ভূখণ্ড থেকে কমিউনিস্ট দমনের জন্য মার্কিন প্রশাসন দিয়েম প্রশাসনকে অর্থ ও সৈন্য সাহায্যের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি করে দিল। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন জোট SEATO গঠিত হল. মার্কিন পদক্ষেপগুলি হো-চি-মিনকে ক্ষিপ্ত করেছিল। দক্ষিণ ভিয়েতনামে আগে থেকে অবস্থানরত ভিয়েতমিন গেরিলা যোদ্ধারা দিয়েম প্রশাসনের বিরুদ্ধে চোরাগুপ্তা আক্রমণ শুরু করে। ভূমি সংস্কার নিয়ে কৃষকরা উত্তাল হয়ে ওঠে। অত্যধিক মার্কিন প্রীতির কারণে বুদ্ধিজীবিরাও দিয়েমের বিরুদ্ধে চলে যায়। এই সময় দিয়েম এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তর ভিয়েতনামে খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তখন দক্ষিণ ভিয়েতনামের সব কটি রাজনৈতিক দল দিয়েম বিরোধী  আন্দোলনের ডাক দেয়। মার্কিন মদতপুষ্ট দিয়েম প্রশাসনের পতন ঘটানোর জন্য দক্ষিণ ভিয়েতনামের ভিয়েতমিন ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদী সংগঠন গুলি, একত্রে মিলিত হয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (NLF)  বা ভিয়েতকং গঠন করে। হো চি মিন এবং কমিউনিস্ট চীন এই সংগঠনকে সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিদ্রোহের মুখে পড়ে দিয়েমের মৃত্যু হয়। তারপর একাধিক সামরিক অফিসারের হাতে দক্ষিণ ভিয়েতনাম শাসিত হতে থাকে। ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী লাওসেও তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে মার্কিনের পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন সেনা অবতরণ করানো হয় এবং মার্কিন বিমান বাহিনী আকাশ পথে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ শুরু করে। ফলে যুদ্ধ ক্রমশ উত্তর ভিয়েতনাম বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে পরিণত হয়। ভিয়েতকং ও ভিয়েতমিন বাহিনীর প্রধান অস্ত্র ছিল তাদের গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতি। ভিয়েতনামের পাহাড়-নদী-জঙ্গল এক্ষেত্রে সুবিধাজনক হয়েছিল যা মার্কিন বাহিনীর কাছে অসুবিধাজনক ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের ভিয়েতনামে এই অতি সক্রিয়তার নীতি তাকে ঘরে-বাইরে নিন্দিত করেছিল।

এদিকে তীব্র মার্কিন তৎপরতা সত্বেও ভিয়েতকং কে বাগে আনা যায়নি। বিশাল সেনাসমৃদ্ধ মার্কিন বাহিনী ভিয়েতকং ও উত্তর ভিয়েতনামি যৌথ বাহিনীর কাছে নাস্তানাবুদ হয়। যৌথ ভিয়েতনামি বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন সহ ৪৪ টি শহরের উপর আক্রমণ চালায় এবং ১৯৬৮ সালের মধ্যে সমগ্র ভিয়েতনামের ৮০ শতাংশ এলাকার উপর আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন পূর্ব প্রেসিডেন্ট জনসনের অনুসৃত নীতি ত্যাগ করে ভিয়েতনামীকরণ নীতি গ্রহণ করেন। বলা হয়, আমেরিকা এখন থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষার জন্য ভিয়েতনামি সরকারি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে এবং একই সাথে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামের উপরে বোমাবর্ষণের মাত্রা তীব্র বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত মার্কিন পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের সম্মেলনে যুদ্ধ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং ভিয়েতনাম থেকে সমস্ত মার্কিন সামরিক বাহিনী ও উপদেষ্টাদের সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষিত হয়। সাধারণ নির্বাচনের লক্ষ্যে Coucil of National Conciliation গঠন করা হয়।

প্যারিসের চুক্তি মার্কিন পশ্চাদপসারণ ঘটালেও রাতারাতি শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নি। ১৯৭৩ এর শেষ দিক থেকে ১৯৭৪ সাল জুড়ে লড়াই চলতে থাকে। ১৯৭৫ এর এপ্রিলে উত্তর ভিয়েতনাম ও ভিয়েতকং বাহিনী একত্রে সায়গন দখল করে এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের সামরিক অধ্যক্ষ ভ্যান মিন যুগ্ম বাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন। এভাবে ভিয়েতনাম বিদেশি প্রভাবমুক্ত ঐক্যবদ্ধ হল এবং সেখানে হো চি মিনের নেত্রিত্বাধীন স্বাধীন বামপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হল।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক