সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

CC7 লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা বা নায়ক ব্যবস্থা অথবা নয়ঙ্কারা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর?

 বিজয়নগর রাজ্যের সামরিক ব্যবস্থা ও ভূমিদান রীতির সাথে বিশেষভাবে জড়িত ছিল নায়ক বা নয়ঙ্কারা প্রথা। ‌ সংস্কৃত সাহিত্য 'নায়ক' অর্থে নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। কিন্তু বিজয়নগরের নায়ক প্রথা কিছুটা স্বতন্ত্র। নায়কদের অধিকার কর্তব্য, নায়ক প্রথার প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায়ের মতে বিজয়নগরের নায়করা স্থানীয় নেতৃবর্গের থেকে স্বাধীন। বিজয় নগরের বিভিন্ন শিলালেখতে "অমরয়ঙ্কর" শব্দটি পাওয়া যায়। এখানে 'অমর' শব্দের অর্থ সৈন্যধাক্ষ, "নায়ক" অর্থে নেতা এবং 'কর' বলতে সরকারি কাজকে বোঝানো হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নায়ক প্রথার বৈশিষ্ট্য গুলো অনুধাবন করা যায়। অধ্যাপক নীলকন্ঠ শাস্ত্রী বলেন বিজয়নগর একটি 'যোদ্ধা রাজ্য' বা 'war state' এবং এই সাম্রাজ্যের গঠন তার সামরিক প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে। তার মতে বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল অসংখ্য সামরিক নেতার মিলিত প্রয়াসের ফল। টি. ভি. মহালিঙ্গম বলেছেন বিজয় নগরের অভ্যন্তরীণ সংগঠনের প্রধান ভিত্তি ছিল নয়নঙ্কারা ব্যবস্থা। এই প্রথা অনুযায়ী রাজা নায়কদের ...

বিদেশি পরিব্রাজকদের রচনায় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আর্থ সামাজিক জীবনের কি ছবি পাওয়া যায়?

  বিজয়নগর সাম্রাজ্য সুলতানি আমলে দাক্ষিণাত্যের একটি স্বাধীন সাম্রাজ্য। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটক বিজয়নগর রাজ্যে এসেছিলেন। এদের লেখায় বিজয়নগরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চালচিত্রের ছবি ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে এসব বিদেশি বিবরণ গুলি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। 1420 খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় পর্যটক নিকোলো কন্টি বিজয়নগর পরিভ্রমণ করেন। তিনি লিখেছেন বিজয়নগর শহরটি 60 মাইল পরিধি ছিল। পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত প্রাচীর বেষ্টিত ছিল। শহরে অস্ত্র ধারণ করার মতো 90 হাজার লোক ছিল। এবং রাজা ছিলেন ভারতের অন্য যেকোনো নরপতির থেকে শক্তিশালী। পারসিক দূত আবদুর রাজ্জাক লিখেছেন ধনি, দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক অধিবাসী অলংকার পড়তেন (রত্ন খচিত)। পায়েস নামক পর্তুগিজ পর্যটক বিজয়নগরের বৈভবের কথা বলেছেন। বিজয়নগরের নরপতির অগণিত ধন রত্ন সৈন্য ও হাতি ছিল। তিনি বহিঃবাণিজ্যের উন্নতির কথা ও বলেছেন। প্রচুর উৎপাদন ও দ্রব্যমূল্য কম একথাও বলেছেন। বারবারোসা বিজয়নগরকে এক জনসমৃদ্ধ শহর এবং হীরে, মুক্তা, সিল্ক, কর্পূর, মৃগনাভি, চন্দন কাঠ প্রভৃতি পণ্য দ্রব্যের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং ...

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের চরিত্র | Nature of Sultanate State

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র কি ধর্মাশ্রয়ী/ ধরমনিরপেক্ষ/ জনকল্যানকামী? প্রায় ৩০০ বছর ধরে স্থায়ী দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুব‌‌উদ্দিন আইবকের সিংহাসন আরোহণ থেকে দিল্লি সুলতানি শাসনের সূচনা। তারপর থেকে দিল্লির রাজশক্তির আদর্শ বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। দিল্লি সুলতানির রাজশক্তির তত্ত্ব বিষয়ে তিনটি দিক উঠে এসেছে। প্রথমত, দিল্লির সুলতানি ধর্মাশ্রয়ী না ধর্মনিরপেক্ষ, দ্বিতীয়ত, জনকল্যাণমুখী, নাকি কেবল স্বৈরাচারী, তৃতীয়ত, সার্বভৌম না খলিফা শাহীর অংশবিশেষ। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই বিষয়গুলি একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে এদের আলাদাভাবে আলোচোনা করা যায় না। ডঃ শ্রীবাস্তব, ডঃ ঈশ্বরীপ্রসাদ, শ্রীরাম শর্মা প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ধর্মাশ্রয়ী বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সমকালীন ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনি সুলতানি শাসনকে জাহান্দারী বা পার্থিব বলে উল্লেখ করেছেন। আধুনিক ঐতিহাসিক  কুরেশীও সুলতানি রাষ্ট্রকে‌ ধর্মাশ্রয়ী আখ্যা দিতে নারাজ।  সুলতান শব্দটির অর্থ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। এখানেই সুলতানি শাসনের স...

দিল্লির সুলতানরা কিভাবে খলিফার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন।

সুলতান ও খলিফার সম্পর্ক  সুলতানি যুগে সুলতান ও খলিফার সঙ্গে সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খলিফা হলেন বিশ্বাসীদের নেতা। যিনি মুসলমানদের সভা জামায়াতের কাছে দায়বদ্ধ। তিনি ইসলামী দুনিয়ার শাসক আবার ইমাম অর্থাৎ বিধানদাতা। সুলতান বলতে কোরআনে সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী কে বোঝায়। কিন্তু মিশরে এর অর্থ প্রাদেশিক শাসক। ভারতের সুলতানরা খলিফার অনুমোদন নিতেন। তিনি যেমন খলিফার মুসলিম দুনিয়ার একটি প্রদেশের শাসনকর্তা তেমনি ভারত ভূমির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। যা আবার ইসলামে বৈধ নয়।  ইলতুৎমিস থেকে দিল্লির প্রায় সব সুলতানই খলিফার অনুমোদন নিয়েছেন অর্থাৎ মতাদর্শগত দিক থেকে সুলতানি রাজ্য ছিল খলিফা সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ। যদিও চার খলিফার যুগের পরে খলিফা তন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সুলতানদের নিজেদের খলিফার প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করার পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে, প্রথমত ইসলামী বিশ্বের মান্যতা প্রাপ্তি, দ্বিতীয়তঃ নিজ রাজ্যে উলেমা সহ বিশ্বাসীদের কাছে নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা, তৃতীয়ত ইসলামী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে পরস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত থাকা। ইলতুৎমিসের খলিফা আল মুস্তানসির ...

দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য সুলতান ও অভিজাতদের সম্পর্ক আলোচনা করো।

 দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রাথমিক পর্বে অভিজাত শ্রেণীর স্থান ছিল ঠিক সুলতানের পরেই। অভিজাতরা ছিল সুলতানের সবথেকে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন।সুলতানি শাসন ব্যবস্থায় অভিজাত সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য ভাবে অংশগ্রহণ করত। অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তুর্কি উমরা গন‌ই ছিল অধিক সংখ্যক। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দ্বারা এই অভিজাত শ্রেণী গঠিত ছিল বলে তাদের মধ্যে কোন এক জাতীয় ভাব-ধারা গড়ে ওঠেনি। অভিজাতদের মধ্যে খান খেতাব ধারিরাই ছিল সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তবে প্রাথমিক পর্বে সুলতান ও অভিজাতরা একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলস্বরূপ দিল্লি সুলতানি যুগে অভিজাত বনাম রাজতন্ত্রের দীর্ঘদিন সংগ্রাম চলেছিল।   কুতুব উদ্দিন এর মৃত্যুর পর দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারত। কিন্তু দিল্লির শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অভিজাত সম্প্রদায় ইলতুৎমিসকে মনোনীত করে দিকে যেমন দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যের ভাগ্য ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছিলেন অপরদিকে তেমনি নিজেদের মর্যাদার অভাবনীয় রূপে বৃদ্ধি করেছিলেন। ইলতুৎমিস সিংহাসন আরোহন করে অভিজাতদের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। অভিজাতগণ এই মর্যাদা অটুট রাখার উদ্দেশ...

ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

 ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য নীতি তুর্কিরা বাগদাদ- পারস্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গজনি হয়ে ভারতের ভূমিতে বহন করে এনেছিল। ওই সময় বাগদাদ পারস্য সংস্কৃতি ছিল উৎকর্ষের চরম শিখরে। এই তুর্কিরাই ভারতের দিল্লির সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তুর্কিরা যখন ভারতে আসে তখন শাসন শিল্প ও স্থাপত্য সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা নিয়েই আসে। ভারতীয় উচ্চ মানের সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্যের সঙ্গে তুর্কি জাতির শিল্প স্থাপত্যের উচ্চ ধারণার সংমিশ্রণে ভারতে এক নতুন স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটে যাকে আমরা ইন্দো ইসলামিক বা ইন্দো পারসিক অথবা ইন্দো সেরাসেনিক স্থাপত্য রীতি বলি। এছাড়াও মঙ্গলদের আক্রমণে সেলজুক তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙে গেলে বহু তুর্কি ভারতে আশ্রয় নেন। শুধু পন্ডিত ও সংস্কৃতিবান লোক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কারিগররাও ভারতে এসেছিল যার ফলে সেলজুক শিল্প-সংস্কৃতি ভারতের প্রবেশ করে। যার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যায় মুঘল যুগের স্থাপত্য রীতিতে। ত্রয়োদশ শতাব্দি থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে এই শিল্প রীতি কে পাঁচটা ভাগে ভাগ করা যায় যুগ ও শৈলী অনুযায়ী।  প্রথমত- 1246 সাল পর্যন্ত দ্...

ওয়াজদারি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

সুলতানি আমলে ইক্তা ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের বিবর্তনের মধ্যেই ওয়াজদারি ব্যবস্থার অনুপ্রবেশ ঘটে। ইলতুৎমিস প্রথম ইক্তা ব্যবস্থা কে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে প্রবর্তন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীনকাল থেকে যে সামন্ত প্রথা চলে আসছিল তা বিলুপ্ত করা এবং কেন্দ্রীয় শাসনের সঙ্গে দূরবর্তী অঞ্চলের যোগসূত্র স্থাপন করা। বলবন ও আলাউদ্দিন খলজি ইকতার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ইক্তা ব্যবস্থায় তেমন পরিবর্তন ঘটাননি। আবার মোহাম্মদ বিন তুঘলক ইক্তাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু ফিরোজ শাহ তুঘলক ইক্তা ব্যবস্থাকে অকার্যকারি করে তোলেন। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ইক্তার উপর ইজারাদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর ফলে ইক্তার মৌল বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু রাজস্ব আদায়কারী ইজারাদারদের সৈন্য ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হতো না। ইজারাদার শর্ত অনুযায়ী সুলতানের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু আমিরের সেনারা তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য অন্যায় ভাবে চাপ সৃষ্টি করত। কারণ আমিররা সেনা পোষণ দায়িত্ব ছিলেন। এমনকি তথ্যে পাওয়া যায় অনেক ইজারাদার সুলতানের কাছে আমিরের ...

বাহমনি রাজ্যের চরম হিতৈষী হিসাবে মাহমুদ গাওয়ানের ভূমিকা আলোচনা কর।

মাহমুদ গাওয়ান মাহমুদ গাওয়ান ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম তীক্ষ্ণবুদ্ধির সম্পন্ন দূরদর্শী রাজনৈতিক। তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন ইরানের এক গ্রামের অধিবাসী। ৪৫ বছর বয়সে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে আসেন এবং সুলতান দ্বিতীয় আলাউদ্দিন এই পরদেশীর গুনে আকৃষ্ট হয়ে তাকে রাজসভায় আমির পদে অভিষিক্ত করেন। সুলতান হুমায়ুন গাওয়ানকে Malik-ut-Tajjar উপাধিতে ভূষিত করেন। খাজা মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের তিনজন সুলতানের অধীনে কাজ করেন এবং তৃতীয় মুহাম্মদ এর রাজত্বকালে তিনি রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি শাসনকার্যে ও সমর ক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রজাদের প্রীতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন কিন্তু কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।  ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হুমায়ূনের মৃত্যু হলে তার পুত্র নিজাম শাহ মাত্র ৮ বছর বয়সের সিংহাসন আরোহন করেন। এই নিজাম শাহের অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন মাহমুদ গাওয়ান। যখন অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন বাহমনী রাজ্যের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। রুশ ভ্র...

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর

 ইলিয়াস শাহী বংশের পতনের পর হাবসি শাসন ছিল বঙ্গদেশের এক অন্ধকারময় যুগ। বঙ্গদেশের জনসাধারণ এই হাবসি শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিজামুদ্দিনের মতে মোজাফফর শাহের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান উজির সৈয়দ হুসেন বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ হুসেন মোজাফফর কে হত্যা করে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা । আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কুশাসন থেকে বঙ্গদেশ কে মুক্ত করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করেছেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি হাবসি প্রাসাদ রক্ষী সেনাদলের ক্ষমতা সংকুচিত করে এবং তাদের বঙ্গদেশ থেকে বিতাড়িত করে, মুঘল ও আফগানদের উচ্চ পদে নিয়োগ করেন। পুরাতন আমলের কর্মচারীদের বরখাস্ত করে, তিনি সদর দপ্তরে নতুন ও নিজের অনুগত লোকদের নিয়োগ করে। দেশের সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা কঠোর হাতে দমন করেন। বহু ধন সম্পত্তি উদ্ধার করে। ফিরিস্তার মতে তখন ধনী ব্যক্তিরা উৎসবে সোনার থালা ব্যবহার করতেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এরকম প্রায় ১৩০০ সোনার থালা উদ্ধার করেন। তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় সমগ্র উত্তর ভারতে ব...

বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর।

 সুলতানি যুগ ধরে বঙ্গদেশ প্রায় স্বাধীন বা আধা স্বাধীন রাজ্য বলা চলে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বক্তিয়ার খলজির দ্বারা বঙ্গদেশ তুর্কি অধিকারে আসলেও পরবর্তী বছরগুলিতে কখনোই দিল্লির সুলতানি শাসন বাংলার উপর সম্পূর্ণ অধিপত্য বিস্তার করতে পারিনি। সাময়িকভাবে বাংলার শাসকগণ দিল্লির অধীনতা স্বীকার করত, আবার দিল্লির আক্রমণের গরম কেটে গেলেই বিদ্রোহ করতো। সুতরাং আর যাই হোক বাংলাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল সুলতানি যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মোহাম্মদ বিন তুঘলক এর রাজত্বকালের শেষ দিকে অরাজকতা ও বিদ্রোহের সুযোগে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় স্বাধীন ইলিয়াস শাহী শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে। এই রাজবংশের আরো দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক হলেন সিকান্দার শাহ ও গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ। যদিও পরবর্তী ইলিয়াসাহি শাসকদের হটিয়ে দিনাজ পুরের রাজা গণেশ ও তার পুত্ররা কিছুকালের জন্য শাসন করেছিল কিন্তু ইলিয়াস শাহ এর বংশধরেরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।  আলাউদ্দিন আলিশাহ কে সিংহাসন চুত্য করে ইলিয়াস শাহ ক্ষমতায় আসেন তিনি বঙ্গদেশের রাজনৈতিক সংহতি স্থাপন করেন এবং বাংলার বাইরে ও বিজয়াভিযানকে সম্প্রসারিত করেন। তিনি ত্রিহূত...

আলাউদ্দিন খলজি কৃষি সংস্কার সমূহ আলোচনা কর।

  আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থায় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার অর্থনৈতিক সংস্কার সমূহ। আলাউদ্দিনই দিল্লির সার্বভৌম সুলতানদের মধ্যে প্রথম যিনি একই সাথে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ এবং মঙ্গল আক্রমণ এবং ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের মোকাবেলা চালিয়ে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বভাবত এজন্য এক বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করতে হয়েছিল। যাদের ব্যয়বহুদ ব্যয় বাবদ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল বলা হয় এজন্যই আলাউদ্দিন অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজে হাত লাগান। তার প্রধান দুটি পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব সংস্কার ও বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। আলাউদ্দিন‌ই হলো প্রথম সুলতান যিনি রাজস্ব সংস্কারের কাজে হাত দেন। তার রাজস্ব সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমকালীন ও পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক তার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে রাজকোষ পূর্ণ করা। এর সাথে একটি রাজনৈতিক স্বার্থও ছিল অভিজাত, জমিদার, খুৎ মুকাদ্দাম দের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দিয়ে আলাউদ্দিন বিদ্রোহের সম্ভাবনা নির্মূল করতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল হিন্দু তাই হিন্দুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বারনি ব...

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন |

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন সুলতানি শাসনে তাদের এলাকার মধ্যে জমিকে শাসন ব্যবস্থার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করেছিল একটি খালিসা অর্থাৎ সরাসরি সুলতানের অধীনে এবং সেখান থেকে সুলতানের নিজস্ব আমলারা নির্ধারিত কর সংগ্রহ করে সুলতানের রাজকোষে জমা করে। অন্যটি হলো ইকতা, যা কোনো এক অভিজাতের অধীনে থাকত, যাকে বলা হয় মুকতি। কৃষি উৎবৃত্ত আরোহন ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে তা জন্য বন্টনের জন্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর কোন ক্ষতি না করে যে সরকারি যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তারই একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হল ইকতা। ইকতা হল ভূমি রাজস্বের বন্দোবস্ত। দ্বাদশ শতকের একজন রাষ্ট্রনেতা আদর্শ ইকতা ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে- ইকতার মালিক মুকতি, তারাই অধীনস্থ কৃষক বা রায়তদের কাছ থেকে নির্ধারিত মাল বা ভূমি রাজস্ব আদায় করবেন। কৃষকের উপর তার কোন অধিকার নেই। কৃষকরা খাজনা দিলে তার ও তাদের পরিবার, তাদের জমি বা অন্যান্য সম্পত্তির উপর মুকতির আর কোন অধিকার নেই। এরপরও মুকতিরা যদি জোর খাটায় কৃষকরা রাজদরবারে অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুলতান তার ইক্তা অধিগ্রহণ করতে পারে, তাকে শাস্তি দিতে পারেন অর্থাৎ মুকতি হলেন সুলতান নিয়োজিত আমলা মাত্র এব...

বিজয়নগর এবং বাহমনীর মধ্যে সংঘাত কি ধর্মীয়? | Was the Conflict Between Vijayanagar and Bahmani a Religious One?

বিজয়নগর এবং বাহমনীর মধ্যে সংঘাত কি ধর্মীয়?  সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এই দুটি প্রক্রিয়া যখন একই সাথে এগোচ্ছে তখন দক্ষিণ ভারতে দুটি পরস্পর বিদ্যমান শক্তি বিজয়নগর ও বাহমনী উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। প্রায় দুই শতধিক বছর জুড়ে এই দুটি সাম্রাজ্যের বিবাদকে অনেক ঐতিহাসিক ধর্মনৈতিক চরিত্র দান করার চেষ্টা করেছেন। কারণ বাহমনী ছিল মুসলিম শাসিত আর বিজয়নগর ছিল হিন্দু শাসিত। কিন্তু আধুনিক ইতিহাস ধর্মীয় কারনের তুলনায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তুঘলক বংশের পতনের পর দক্ষিণ ভারতে প্রায় একই সময়ে বাহমনী ও বিজয়নগর এই দুই সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। আলাউদ্দিন বহমান শাহ প্রথমটির প্রতিষ্ঠাতা, যার রাজধানী ছিল গুলবর্গা এবং পরে বিদর। দ্বিতীয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছিল হরিহর ও বুক্কা, যার রাজধানী ছিল তুঙ্গাভদ্রা তীরস্ত বিজয়নগর শহর। বিজয়নগর ও বাহামনির সংঘাত নির্বিচ্ছিন্ন ছিল না, মাঝে মাঝে শান্তি স্থাপিত হত। তবে বিরোধের মীমাংসা হত না।  কিংবদন্তি অনুসারে হরিহর ও বুক্কা কাম্পিলি রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলকের কম্পিলি অভিযানে তারা ধ...

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তার য্যেষ্ঠ পুত্র জৌনা খান মহম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসন আরোহন করেন। পিতার মত মহম্মদ বিন তুঘলকও সৈনিক হিসেবে জীবন আরম্ভ করেছিলেন এবং সৈনিক হিসেবে অল্প বয়সেই যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন। বলা হয়, মহাম্মদ বিন তুঘলকের সাহায্য ছাড়া গিয়াস উদ্দিনের সিংহাসন দখল এত মসৃণ হত না। মধ্যযুগের নরপতিদের মধ্যে মহাম্মদ বিন তুঘলক যে সবচেয়ে সুদক্ষ ও মৌলিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন সে কথা ঈসামি, ইবন বতুতা, জিয়াউদ্দিন বারনীর মত সমকালীন মৌলবাদী লেখকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের মতে তর্কবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, অংকশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনে তার অসাধারণ জ্ঞান ছিল। পারসিক বিখ্যাত কবিতা সমূহ তার কণ্ঠস্থ ছিল। এমনকি চিকিৎসা বিদ্যাও তার অজানা ছিল না।  মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক ধ্যানধারণা বিচার করতে গেলে আমাদের তার ধর্মনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে বিচার করতে হবে। মধ্যযুগের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে মহম্মদ বিন তুঘলকের ধর্মনৈতিক ধ্যানধারণা আমাদের পরবর্তীকালে মহান মুঘল সম্রাট আকবরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি ধর্মপ্...

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি | Welfare Policies of Firoz Shah Tughlaq

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি  ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের সামরিক অভিযানের সময় মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু হলে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য এক চরম দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। নেতৃত্বহীন সেনাবাহিনী চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সময় অভিজতগণ সমন্বিতভাবে গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের ছোট ভাই রজবের ৪৬ বছর বয়স্ক পুত্র ফিরোজ শাহ তুঘলককে সিংহাসনে বসান। তার দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজত্বকাল দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল আকবরের পূর্ব পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান অধিকার করেছে। প্রধানত জনকল্যাণ ও প্রজাবর্গের উন্নতির জন্য তিনি যা করেছিলেন, দিল্লির কোনো সুলতানই জনসাধারণের এরকম সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিতে সক্ষম হননি। আফিক তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে বলেছেন যে জনসাধারণের ঘরবাড়ি, শস্য, সম্পদ, ঘোড়া, আসবাবপত্র ও প্রত্যেক বাড়ি স্বর্ণ ও রৌপ্যে পরিপূর্ণ ছিল এবং প্রত্যেকে সুখ শান্তিতে বাস করত। সিংহাসন আরোহন করেই তার প্রধান লক্ষ্য হয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা। স্বভাবতই তিনি কতকগুলি গুরু...