সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

CC12 লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কোম্পানির শাসনে ভারতে পুলিশ ব্যবস্থার বিকাশ | Indian Police under the Company Rule

কোম্পানির শাসনে ভারতে পুলিশ ব্যবস্থার বিকাশ  ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম স্তম্ভ ছিল পুলিশ বিভাগ। পুলিশের প্রাথমিক কাজ ছিল ইংরেজ অধিকৃত অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা তথা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা যে কোন ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনকে প্রতিহত করা। প্রাথমিক ব্যবস্থা ও হেস্টিংস-এর সংস্কার ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার পায়। তখন মুঘল পুলিশ ব্যবস্থা ফৌজদারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রতিটি সরকার বা জেলা তাদের অধীনে থাকত। কোতোয়ালরা থাকতেন শহরগুলি দেখভালের দায়িত্বে। গ্রামের চৌকিদারদের নিয়ন্ত্রণ করতেন জমিদাররা। মুর্শিদাবাদের নায়েব নাজিম রেজা খাঁর তদারকিতে এই পুরনো ব্যবস্থাই বেশ কিছুদিন কোম্পানি চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৭৭০ এর দুর্ভিক্ষের পর আইনশৃঙ্খলাজনিত অবনতির প্রেক্ষাপটে কোম্পানি সরকার পুলিশ বিভাগীয় প্রশাসনকে ইউরোপীয় তদারকির অধীনে আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ইতি মধ্যে দ্বৈত শাসনের অবসান হয়। ১৭৮১ পর্যন্ত এই পুরানো ফৌজদারী ব্যবস্থায়ই চলেছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস তাতে সামান্য কিছু সংস্কার এনেছিলেন। তিনি ফৌজদারদের সরিয়ে তাদের জায়গায...

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani's Declaration

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani Declaration নিষ্ঠুর হাতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে দমন করার পর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারতে তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করে এই প্রক্রিয়ারই অনিবার্য পরিণতি ছিল ১৮৫৮ সালের পয়লা নভেম্বরের রাজকীয় ঘোষণা, যা মহারানীর ঘোষণা নামে পরিচিত। কোম্পনীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে মহারানী ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং। কিন্তু ১৮৫৮-এর আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল কে ভাইসরয়-এ পরিণত করা হয়। লর্ড ক্যানিং হলেন ভারতের প্রথম ভাইসরয়। ব্রিটিশ সম্রাট বা সম্রাজ্ঞীর নামে ভারত সচিব ভারতবর্ষকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন করতে থাকলেন। ভারত সচিব শাসনতান্ত্রিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য গঠিত হলো ১৫ জনের সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল। এবার থেকে ভারত সচিব ও ভাইসরয়ের পারস্পরিক রসায়নের উপর ভারতের শাসন নির্ভর করতে থাকল। এই ঘোষণাপত্রে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় কতগুলি নতুন নীতি ও আদর্শের কথা ঘোষণা করে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়। সেগুলি হল-- ১) ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোন ব্যাপারেই সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে ...

কর্নওয়ালিস কোড | Cornwallis Code

Cornwallis Code / কর্নওয়ালিস কোড/কর্নওয়ালিসের বিচারবিভাগীয় সংস্কার ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন এলাকা দখলের পর কোন ধরনের প্রশাসন যন্ত্র গড়ে তুলবে তাই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্রথমদিকে ক্লাইভ সরাসরি ব্রিটিশ কর্মচারীদের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জুড়তে চাননি। তিনি দেশীয় কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনাকে সঠিক বলে মনে করতেন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস দেশীয় এবং ইউরোপীয় শাসকদের মিলিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু কর্নওয়ালিস উপরোক্ত দুই পরিকল্পনাকে বাতিল করে সম্পূর্ণ ইউরোপীয় রীতিতে এবং কেবল ইউরোপীয় কর্মচারীদের দ্বারাই শাসন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিলেন। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি একটি শাসন সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রস্তুত করেন, যা 'কর্নওয়ালিস কোড' নামে পরিচিত। কর্নওয়ালিস কোড-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি যুক্তি ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত হয়। তিনি আরো দেখান বিচার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণের জন্যই উৎপা...

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব | Nawab Mir Zafar

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব মুর্শিদাবাদের দরবারে সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধানতম মুখ ছিলেন মীরজাফর। মীরজাফর ছিলেন সিরাজেরই মির বকশি। সিরাজ এই ষড়যন্ত্রতে মীরজাফরের যুক্ত থাকার কথা জানতে পেরেও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকেই পলাশীর যুদ্ধের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেন। শেষমেষ মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং পূর্বপরিকল্পনামাফিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীরা মীরজাফরকে বাংলার মসনদে বসান(১৭৫৭)। মীরজাফর সিংহাসন লাভের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্লাইভকে এবং প্রতিষ্ঠানগতভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন। ক্লাইভ একাই নিয়েছিলেন প্রায় ২০ লক্ষ এর উপরে টাকা। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানি ও অন্যান্য ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নিয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এছাড়া কোম্পানি লাভ করে কলকাতা সংলগ্ন চব্বিশটি পরগনার জমিদারি, যার আয় ছিল প্রায় ৮৮০ বর্গমাইল বছরের। শুধু অর্থ প্রদান নয় বিভিন্নভাবে মীরজাফর ইংরেজ কোম্পানির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। একদিকে রাজকোষের সংকট অন্যদিকে পরাধীনতা, উভয় সমস্যা মীরজাফরকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই প্রেক্ষা...

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত | Roytwari Settlement

 রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর থেকে কোম্পানী সরকার ভারতের অন্যান্য এলাকায় এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে এবং বম্বে প্রেসিডেন্সিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসারের ক্ষেত্রে কতগুলি সমস্যা সামনে আসে, যার ফলস্বরূপ ওই দুই প্রেসিডেন্সিতে নতুন এক ভূমি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়, যা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে প্রথমে (উনিশ শতকের প্রথম দিকে) স্থানীয় পলিগারদের জমিদার বলে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আর যেখানে পলিগারদের পাওয়া যায়নি সেখানে কয়েকটি গ্রামের এক একটি খামার গঠন করে সর্বোচ্চ নিলাম দাতাকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই কোম্পানি সরকার উপলব্ধি করে যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমি থেকে আয় বৃদ্ধির আর সম্ভাবনা থাকে না। দ্বিতীয়ত, প্রভাবশালী ও ক্ষমতালোভি পলিগারদের দমন করা দরকার,  কারণ এরা বারবার বিদ্রোহ করে। এর চেয়ে ছোট ছোট কৃষক ভূস্বামীদের বশীভূত রাখা সহজ।  তৃতীয়ত, ডেভিড রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব এই সময় ব্রিটিশ প্রশাসকদের একাংশকে প্রভাবিত করেছিল। তার...

সাওতাল বিদ্রোহ | Santal Rebellion

  সাওতাল বিদ্রোহ  উপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী গণ সংগ্রামে উপজাতিদের একটি গৌরবময় ভূমিকা ছিল। উপজাতি বিদ্রোহ গুলির মধ্যে ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর বিদ্রোহের থেকে অনেক বেশি জঙ্গি ও হিংস্র রূপ ধারণ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল সাঁওতালদের উপজাতীয় সামাজিক সংহতি রক্ষা এবং বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিবাদে আঞ্চলিক চেতনার সংগ্রামী বহিঃপ্রকাশ। সাঁওতালরা স্বভাবের দিক থেকে ছিল পরিশ্রমী ও শান্ত প্রকৃতির। তাদেরই প্রচেষ্টায় সাঁওতাল পরগনা এলাকা বাসযোগ্য ও উর্বর হয়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলকে তারা নাম দিয়েছিল 'দামিন-ই- কোহ'। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বহিরাগতরা এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে এবং তাদের অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হন সাঁওতালরা। সাঁওতালরা বহিরাগতদের 'দিকু' বলত। এই 'দিকু' বলতে ইংরেজ এবং বহিরাগত বণিক ও মহাজনদেরকে বোঝানো হত। প্রথমে আসা যাক মহাজনি শোষণের কথায়। মহাজনেরা সাঁওতালদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের টাকা ঋণ দিতেন এবং অসদুপায় অবলম্বন করে তাদের জমি-জামা দখল করে নিতেন। ঐতিহাসিক কালিকিংকর দত্ত দেখিয়েছেন, সামান্য পর...

CC12 CU HONS Question Paper 2021

Question Papers   2021  HISTORY  —  HONOURS  Paper  :  CC12  Full  Marks  :  65   Candidates  are  required  to  give  their  answers  in  their  own  words as  far  as  practicable. 1. Answer  the  following  questions : 1×15  (a) Name  the  Nawab  of  Bengal  who  shifted  his  capital  to  Monghyr.  (b) In  which  year  was  the  Treaty  of  Seringapatam  signed?  (c) Who  were  the  signatories  of  the  Treaty  of  Amritsar?  (d) In  which  year  was  the  Pitt’s  India  Act  passed?  (e) Mention  the  name  of  one  administrator  who  supported  the  cause  of  Utilitarianism.  (f) Who  ...

বাংলায় ফরাজি আন্দোলন | Farazi Movement in Bengal

বাংলায় ফরাজি আন্দোলন  'ফরাজ' শব্দটি থেকে ফরাজি শব্দের উৎপত্তি। এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ -এর নির্দেশ। যারা আল্লাহের নির্দেশ পালন করেন তারা আক্ষরিক অর্থে ফরাজি। 19 শতকে ব্রিটিশ সরকার এবং তার জমিদারি ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে একাধিক কৃষক বিদ্রোহ বাংলার মাটিতে সংগঠিত হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ফরাজি বিদ্রোহ। ইসলাম ধর্মকে কুসংস্কার মুক্ত করে মুসলমান সম্প্রদায়কে আল্লাহ নির্দেশিত পথে পরিচালত করার জন্য প্রথম ফরাজি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। ফরাজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন হাজি শরিয়ত উল্লাহ, যিনি দুদুমিঞা নামে বেশি পরিচিত। হজ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের করে (1820) তিনি ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন। ফরাজিরা জমিদারি শোষণের হাত থেকে মুক্তির পথ ইসলামের মধ্যেই খুঁজেছিল। ইসলাম মতে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আল্লাহ। ইসলামের প্রাথমিক কলেমার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া কোন মালিক নেই। সম্ভবত এই যুক্তিতেই ফরাজীরা জমির ওপর জমিদার বা অন্য কোনো প্রভুর মালিকানাকে অস্বীকার করলো। তারা ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে দার উল হরব ...

রাজা রামমোহন রায় এবং সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ। Rammohan and Satidah Movement

 রাজা রামমোহন রায় ও সতীদাহ আন্দোলন 19 শতকে বঙ্গীয় নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তাকে 'ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহনের জন্ম হলেও প্রাচ্য দেশীয় এবং পশ্চিমী জ্ঞান -বিজ্ঞানের উপর গভীর অধ্যায়নের পর তিনি সনাতন ভারতীয় সমাজের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার কর্ম প্রচেষ্টা ছিল বহুমাত্রিক। একদিক থেকে তিনি যেমন হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা (মূর্তি পূজা), পুরোহিততন্ত্র এবং বহুঈশ্বরবাদের কঠোর সমালোচনা করে উপনিষদীয় একেশ্বরবাদ প্রতিষ্টায় সচেষ্ট হন।অন্যদিকে সতীদাহ এবং অন্যান্য সামাজিক কূ- প্রথার বিরুদ্ধে তিনি খড়্গহস্ত। মৃত স্বামীর চিতায় স্ত্রীর আত্মাহুতি দেওয়ান নাম হল সতীদাহ ও সহমরণ। এইভাবে একজন নারীর সতীত্ব রক্ষা হয় এবং সতীত্ব প্রমাণিত হয়। মহাভারতের মাদ্রি সহমৃতা হয়েছিলেন। সতীদাহ কোনো আবশ্যিক কর্তব্য ছিল না। বিষয়টি ছিল ঐচ্ছিক। কিন্তু কালের প্রভাবে এর সাথে বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থ যুক্ত হয়ে সতীদাহ সনাতন হিন্দু সমাজে একটি নিয়মিত আচারে পরিণত হয়। সতীদাহ একটি পারিবারিক সম্মান রক্ষারও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মধ্যযুগের বহু শ...

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি | Subsidiary Alliance

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি  ভারতে সম্রাজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে একাধিক কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (1798)। লর্ড ওয়েলেসলি প্রবর্তিত এই নীতির কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল; যেমন 1) যে সমস্ত দেশীয় রাজ্য অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হবে সেই সমস্ত রাজ্যকে ব্রিটিশ কোম্পানি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দিক থেকে নিরাপত্তা প্রদান করবে। 2) পরিবর্তে ওই রাজ্যে একদল ব্রিটিশ সৈন্য মতায়েন থাকবে, যার খরচ ওই রাজ্য কে বহন করতে হবে বা খরচের জন্য রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হবে। 3) কোম্পানির অনুমতি ছাড়া ওই রাজ্য কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বা মিত্রতা করতে পারবে না অর্থাৎ বৈদেশিক নীতি কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। 4) ওই রাজ্যে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট থাকবেন। 5) ওই রাজ্য থেকে ইংরেজ ব্যতীত সকল ইউরোপীয়কে তাড়াতে হবে।  উপরূক্ত শর্তগুলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে ওয়েলেসলি প্রবর্তিত অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির সার্বভৌমত্ব হরণের একটি কৌশল। এই চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষর করেছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম (1798)। ওয়...

স্বত্ববিলোপ নীতি | Subsidiary Alliance

স্বত্ববিলোপ নীতি | Subsidiary Alliance লর্ড ডালহৌসি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের শেষ উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধি। ডালহৌসি সাম্রাজ্য বিস্তারের সবচেয়ে ফলপ্রসূ যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন তা হল স্বত্ববিলোপ নীতি। আসলে লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে যে রাজ্যগুলিকে ক্লীবত্বের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিলেন সেই রাজ্যগুলিকে পুরোপুরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করাই ছিল এই নীতির উদ্দেশ্য। স্বত্ববিলোপ নীতিতে বলা হয়েছিল যে, যে সমস্ত কোম্পানি আশ্রিত রাজ্য বা কোম্পানির করদ রাজ্যের রাজাদের পুত্রসন্তান থাকবে না তারা কোম্পানির অনুমতি ব্যতীত দত্তক নিতে পারবে না। কোম্পানির সৃষ্ট রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে অনুমতির কোন প্রশ্নই নেই। তাদের রাজ্য এক্ষেত্রে সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ডালহৌসি সাতারা (1848), যোৎপুর ও সম্বলপুর (1849), বঘোত ও উদয়পুর (1852), ঝাঁসি (1853) এবং নাগপুর(1854) কোম্পানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই নীতি প্রয়োগ করে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এর দত্তকপুত্র নানা সাহেবের পেনশন বন্ধ করা হয়েছিল। ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্...

Short-Question Answer Plassy and Buxar

Short-Question Answer (Plassy and Buxar) ◆ পলাশীর যুদ্ধের সময় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর কে ছিলেন? রবার্ট ক্লাইভ ◆ পলাশীর যুদ্ধের তারিখটি উল্লেখ করো? 1757, 23 জুন ◆ আলিনগরের সন্ধি কবে কাদের মধ্যে হয়? 1757, ফেব্রুয়ারি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা গভর্নর রবার্ট ক্লাইভ এবং বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে। ◆ কোন জায়গার নাম আলিনগর রাখা হয়েছিল? কলকাতার ◆ অন্ধকূপ হত্যার বিবরণ কে দিয়েছিলেন? ব্রিটিশ শল্যচিকিৎসক হলওয়েল ◆ পলাশীর ষড়যন্ত্র-এ যুক্ত একজন ব্যাংকারের নাম লেখ? জগৎ শেঠ ◆ মীর জাফর কে ছিলেন? নবাব সিরাজের মীরবক্সী, পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম খলনায়ক ◆ পলাশীর যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন কোন দুই সেনাপতি? মীর মদন ও মোহন লাল ◆ পলাশীর যুদ্ধকে কোন ঐতিহাসিক ' আধুনিক যুগের সূচনা ' বলে উল্লেখ করেছেন? আচার্য যদুনাথ সরকার ◆ দস্তক কি? দর্শক হলো বিনাশুল্কে বাণিজ্য ছাড়পত্র, যা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে বছরে পেয়েছিলেন। শর্ত ছিল, বছরে 3 হাজার টাকা দিলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা বিহা...

বক্সারের যুদ্ধ: প্রেক্ষাপট, কারণ ও গুরুত্ব | Battle of Buxar: Background & Importance

বক্সারের যুদ্ধ: প্রেক্ষাপট, কারন ও গুরুত্ব  পলাশীর যুদ্ধে সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে বাংলা নবাব করেছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মীরজাফর এর সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তখন তারা মীর জাফরের জামাতা মীর কাসিমের সাথে গোপন চুক্তি করে তাকে বাংলার মসনদে বসান(১৭৫৯)। বিনা যুদ্ধে এহেন রাজা বদল এর ঘটনা বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব নামে পরিচিত। মসনদে অধিষ্ঠিত হয়ে মীর কাসেম চুক্তিমতো ইংরেজদের সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দেন। মেদিনীপুর, বর্ধমান ও চট্টগ্রামের জমিদারি, নগদ দশ লক্ষ টাকা এবং উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের 29 লক্ষ টাকা উপঢৌকন দিয়ে দেন। এরপর তিনি রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দেন। অবাধ্য কর্মচারী বিহারের দেওয়ান রাম নারায়নকে পদচ্যুত করে হত্যা করেন। রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে বিহারের মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন। সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য সেনাবাহিনীকে ইউরোপীয় প্রথায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেন। সমরু, মার্কার ও জেন্টিল নামে তিন ইউরোপীয় সেনাপতি কে নিয়ে আসা হয়। মুঙ্গেরে একটি কামান ও বন্দুকের কারখানাও খোলেন। জগত সেঠ ও তার মতো অসৎ ব্যাংকারদের নতুন ব্যবস্...

ওয়াহাবি বিদ্রোহ ও তার চরিত্র | Wahabi Movement and it's Charecter

ওয়াহাবি বিদ্রোহ ও তার চরিত্র ওয়াহাবি আদর্শের প্রকৃত নাম 'তরিকা ই মহম্মদিয়া' অর্থাৎ মহম্মদের আদর্শিত পথ। আরব দেশে আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের মধ্যে যে অ- ইসলামিক রীতিনীতি প্রচলিত ছিল অর্থাৎ 'বিদ-আত' তা দূরীকরণের জন্য যে শুদ্ধিকরণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাই তরিকা ই মুহাম্মদিয়া নামে পরিচিত। যেহেতু আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল তাই এই আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন নামেও পরিচিত। ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা ভারতবর্ষে হয় শাহ ওয়ালীউল্লাহ এর হাত ধরে। কিন্তু বিস্তার লাভ করে সৈয়দ আহমেদ বারেলির নেতৃত্বে। বঙ্গদেশে তিতুমীরের নেতৃত্বে ওয়াহাবি আন্দোলন একটি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ নিয়েছিল। সৈয়দ আহমেদ বারেলির নেতৃত্বে সিন্ধু এলাকায় যে ধর্মীয় আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তাতে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক চিন্তার ছাপ ছিল। একদিকে তারা শির্ক ও বিদআতের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করত এবং মোহাম্মদের নির্দেশিত পথে চলার পরামর্শ দিত। অন্যদিকে তিনি ইংরেজ শাসিত ভারতকে দার উল হারব শত্রু দেশ হিসাবে অভিহিত করেন এবং মোহাম্মদের অনুগামীদের ভারতকে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান ক...

ব্রিটিশ শক্তির সম্প্রসারণ প্রতিরোধে মাইসোরের অবদান | Hydar Ali and Tipu Sulatan

ব্রিটিশ শক্তির সম্প্রসারণ প্রতিরোধে মাইসোরের অবদান ওয়েদর বংশীয় রাজাদের ক্ষমতাচ‍্যুত করে হায়দার আলীর 1761 খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের ক্ষমতা দখল করেন। 1764 এর মধ্যে হায়দার আলী পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি দখল করে মহীশূরকে একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করেন। মহীশুরের অমিত সম্পদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাদ্রাজ কুটিকে প্রলুব্ধ করেছিল। রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কালো মাটিতে প্রচুর তুলা চাষ হতো। পশ্চিম দিকেও মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর। প্রচুর দক্ষ কারিগর এবং আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রচুর্য মহীশুরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল। ফরাসিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা মাদ্রাজ কুঠির উষ্মার অন্যতম কারণও ছিল। তার দরবারে একাধিক ফরাসি অফিসারদের যাতায়াত ছিল। ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হায়দার ফরাসিদের নানাভাবে সাহায্য করেছিল। তবে এর পিছনে হায়দারের মনে ইংরেজ বিরোধী কোন মনোভাব ছিল না। ছিল ফরাসিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ ফরাসিরা মহীশুরের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সময় হায়দারকে সাহায্য করেছিল। হায়দার ইংরেজ মিত্র আর্কটের নবাবের শত্রুদের নানাভাবে সাহায্য করে ব্রিটিশের আরও বিরাগভাজন হন। মাহফুজ খানকে আশ্রয় দেন, চাঁদা সাহেবের পুত্রকে চাকরি দেন। এছাড়া...

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ: হিতবাদী আদর্শ

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ: হিতবাদী আদর্শ আঠারো শতকের শেষদিকে ইংরেজদের মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তারের বিষয়টি বেশি করে প্রাধান্য পেতে থাকে এবং এই পর্বে তারা এশিয়া ও আফ্রিকাতে তারা সাম্রাজ্য বিস্তার ঘটিয়েছিল। একই সঙ্গে এই সময়ে ব্রিটিশদের দেশানুরাগ ক্রমশ জেগে ওঠে, যা তাদের ভিতর সাম্রাজ্যিক অধিকারের গর্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা গড়ে তুলেছিল। গোঁড়ামির অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মননশীল পরিবেশে প্রাচ্যের লোকেদের সামনা সামনি ব্রিটিশরা নিজেদের আধুনিক সভ্য হিসাবে দাবী করতে থাকে। এই প্রচেষ্টা উনিশ শতকে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনাকে যথার্থতা দান করেছিল। এজন্যই তারা ভারতে একাধিক সমাজ সংস্কারমূলক কাজে হাত দিয়েছিল। সুতরাং রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে বিচার শক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ভারতবর্ষের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ। সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শের বিভিন্ন ধারার ভিতরে উপযোগবাদী ভাবাদর্শ বেশ প্রভাবশালী ছিল। উপযোগবাদের প্রবক্তা জেরেমি বেন্থাম। তিনি প্রচার করেন যে মানব সভ্যতার আদর্শই হল মানুষের মঙ্গল সাধন করা। তিনি বলতেন যে, যথোচিত আইন ও জ্ঞানদীপ্ত শাসনই পরিবর্তন ঘটার সব...

1857 এর বিদ্রোহের চরিত্র

1857 এর বিদ্রোহের চরিত্র 1857-র বিদ্রোহ ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাসে এক জলবিভাজিকা স্বরূপ। পূর্ববর্তী বিদ্রোহ গুলির তুলনায় আকার আয়তনে এই বিদ্রোহ ছিল ব্যাপকতর। বিদ্রোহের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে সন্দেহ নেই কিন্তু এর প্রকৃত চরিত্র উদঘাটন করতে গিয়ে প্রায় বিদ্রোহের সমসাময়িক কাল থেকেই বিতর্কের সূচনা হয়েছে। বিতর্কের তিনটি দিক 1. এই বিদ্রোহ কেবল সিপাহী বিদ্রোহ না গণবিদ্রোহ? 2. এই বিদ্রোহ কি সামন্ত শ্রেণীর প্রতিক্রিয়া? 3. এই বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলা যায় কিনা? সমসাময়িক ইংরেজ চার্লস রেইকস তাঁর Notes on the Revolt in North Western Province of India গ্রন্থে 1857 এর বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সমসাময়িক বেশ কিছু ভারতীয় একই রকম মত পোষণ করেছেন। কিশোরী চাঁদ মিত্র এই বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের ছিটেফোটাও লক্ষ্য করতে পারেননি শম্ভুচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় লেখাতেও একই রকম কথা উঠে এসেছে। একথা ঠিক যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ভারতে ব্রিটিশ আর্মির ভারতীয় সৈনিকদের দ্বারা। তবে পরবর্তীকালে কৃষক কারিগর এবং সাধারণ মানুষ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছ...

বাংলায় অর্থনৈতিক নিষ্ক্রমণ (1757-1857)

বাংলায় অর্থনৈতিক নিষ্ক্রমণ (1757-1857) বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনের অনিবার্য পরিণতি ছিল সম্পদ নিষ্কাশন। 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে মিরোজাফরকে নবাব করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার মসনদের উপর পরোক্ষ কর্তৃত্ব কায়েম করেছিল। রাজনৈতিক প্রভাবের সুবিধা নিয়ে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা নানা অসৎ উপায় প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছিল এবং সেগুলি স্বদেশে চালান করেছিল। বাংলা থেকে এইভাবে একমুখী সম্পদ নিষ্কাশনের ঘটনাকে ঐতিহাসিকরা 'পলাশীর লুণ্ঠন' বলেও উল্লেখ করেছেন। সম্পদ লুণ্ঠন মূলত দুটি ধারায় চলেছিল: 1. কোম্পানি অনুসৃত আর্থিক ও বাণিজ্যিক নীতি এবং 2. কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর আগে এদেশ থেকে পণ্য ক্রয় করার জন্য ইংল্যান্ড থেকে বুলিয়ন নিয়ে আসত। কিন্তু পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর 1765 খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানির অধিকার হাতে আসার ফলে এদেশ থেকে পণ্য কেনার জন্য আর বুলিয়ন আনার প্রয়োজন হত না। বাংলার রাজস্বের টাকায় পণ্য কেনা শুরু হয়। এমনকি চীনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত...

Deindustrialization debate | অবশিল্পায়ন বিতর্ক

অবশিল্পায়ন বিতর্ক Global contribution in World GDP অবশিল্পায়ন বলতে সব্যসাচী ভট্টাচার্য বুঝিয়েছেন, যদি দেশের মানুষ শিল্পকর্ম ছেড়ে চাষাবাদের জীবিকা অর্জন শুরু করে অর্থাৎ জাতীয় আয়ে কৃষিজ অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অবশিল্পায়ন বলে। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম ফলশ্রুতি ছিল অবশিল্পায়ন। যদিও ঔপনিবেশিক ঐতিহাসিকগণ অবশিল্পায়ন তত্ত্ব মানতে চান না। মুঘল যুগ থেকে কুটির শিল্পে ভারত বিশ্বে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছিল। বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া। ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল। তার নেগেটিভ প্রভাব পড়েছিল ভারতে। শিল্প বিপ্লব এবং ঔপনিবেশিক শাসন নীতির যৌথ আঘাতে ভারতে কুটির শিল্পের অবক্ষয় সূচিত হয়। অনেক ঐতিহাসিক অবশ্য অবশিল্পায়নের পশ্চাতে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব বা ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেন না। তাদের মতে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, যেমন বর্গী আক্রমণ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ প্রভৃতি ঘটনা কুটির শিল্পের অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়েছিল। ডি. আর. গ্যাডগিল মনে করেন, আঠারো উনিশ শতকে দেশীয় রাজাদের ক্ষমতা হারানোর ফলে তাদে...

1770 Bengal Famine | ছিয়াত্তরের মন্বন্তর

1770 Bengal Famine | ছিয়াত্তরের মন্বন্তর 18 শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা হল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ইতিপূর্বে যতগুলি দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তা এক ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। বাংলা সাল ১১৭৬ বঙ্গাব্দে এই ঘটনা ঘটেছিল বলে একে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলা হয়। মন্বন্তরের প্রধান কারণ হলো খাদ্যভাব। খাদ্যভাবের ব্যাপারটি ছিল এরকম যে, চালের অস্বাভাবিক দামের জন্য তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। মাঝে মাঝে বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য একেবারে উধাও হয়ে যেত। দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস গ্রাম ও শহর উভয়কেই আক্রান্ত করেছিল। বঙ্কিমের আনন্দেমঠে দুর্ভিক্ষ কবলিত গ্রামের ছবি আমরা পাই। এক ব্রিটিশ রেসিডেন্টের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, জীবন্ত মানুষ মৃত মানুষের মাংস খেতে বাধ্য হয়েছিল। খাদ্যভাবে সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মুদ্রাভাব। বাংলার বাজার থেকে রুপার মুদ্রা সিক্কা কমে যাওয়ায় লেনদেন প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। এই খাদ্যভাব ও অর্থনৈতিক সংকটের পশ্চাতে কে দায়ী ছিল তা অনুসন্ধানের জন্য কোম্পানির নির্দেশকরা চেষ্টা দেখিয়েছিলেন। দুর্নীতি ও খাজনার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে রেজা খাঁকে তার নায়ে...