সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

Akbar লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান | Mughal Miniature Paintings in Akbar's Time

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান  ভারতীয় শিল্পকলায় মুঘল শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা তরবারির পাশাপাশি কালি, কলম ও ছবিকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাদের কালজয়ী সৃষ্টিগুলি কেবল স্থাপত্য নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিল না। চিত্রশিল্পেও ভারত মুঘল আমলে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছিল। মুঘল চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আকবরের রাজত্বকালে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কালে তা বিকাশের শীর্ষে পৌঁছে গেছিলো। আকবরের পূর্বপুরুষ বাবর ও হুমায়ূন চিত্রশিল্পে স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারেননি। তবে তাঁরা যথেষ্ট সৌন্দর্য পিপাসু ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুঘলদের সৌন্দর্য পিপাসা আকবরের মধ্যেও বহমান ছিল। হুমায়ুন পারস্য থেকে মীর সৈয়দ আলী ও আবদুস সামাদকে কাবুলে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিলেন। আকবর এই আবদুস সামাদের নেতৃত্বে একটি কলাভবন নির্মান করেছিলেন। তাঁর সময়ে আঁকা ছবিগুলির বিষবস্তু যেমন ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিকৃতি, তেমনি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের প্রতিকৃতি আঁকার চলনও ছিল। তাঁর দরবারে চিত্রকরদের মধ্যে বসাওয়ান ছিলেন প্রতিকৃতি অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। আবুল ফজলের লেখা থেকে জানা যায় পটভূমি চিত্রণ ও মুখাবয়বের রেখাঙ্কন, রঙে...

দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ব | Second Battle of Panipath: 1556

 দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ব ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবর যখন সিংহাসনে বসেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তিনি পঞ্জাবের সামান্য অংশের নাম মাত্র শাসক ছিলেন। সিংহাসন আরোহনের পর যাদের হাতে তার উৎপাটিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে শক্তি শালী হলেন আদিল শাহের সেনাপতি হিমু। হিমু অসামান্য সামরিক যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আগ্রা ও দিল্লি দখল করে বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। এই প্রেক্ষিতে আকবর তার উপদেষ্টাদের কাবুলে ফিরবার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে হিমুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ- র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বৈরাম খাঁ- র যোগ্য সেনাপতিত্বে তুলনামূলক ভাবে কম সৈন্য সম্পন্ন মুঘল বাহিনী হিমুর বিরাট বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। হিমুর বহু যুদ্ধউপকরন এবং হাতি মুঘলদের হস্তগত হয়। বৈরাম খাঁ বন্দী হিমুর মাথা কেটে ( শিরচ্ছেদ ) করে হত্যা করে। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আফগানদের ভারতে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ট...

আকবরের গুজরাট অভিযান | Akbar Gujrat Conquest

 আকবরের গুজরাট অভিযান  বৈরাম খাঁর অভিভাবত্বকালেই আকবরের রাজ্য বিস্তারের সূচনা হয়েছিল। বৈরাম খাঁ- র ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে পদচ্যুতির পর আকবরের প্রথম সামরিক অভিযান পরিচালিত হয় মালব রাজ্যের বিরুদ্ধে । মালব ও রাজস্থান অধিকার করার পর আকবর পশ্চিম সমুদ্র উপকূলে তার আধিপত্য সম্প্রসারণে উৎসাহিত হন। তিনি ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট অভিযান করেন। গুজরাট ছিল শষ্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ শালী প্রদেশ। সুলতানী যুগ থেকেই বস্ত্র শিল্পে গুজরাটের সুনাম ছিল। গুজরাটের উপকূল ভাগে কয়েকটি গুরুতবপূর্ণ বন্দর ছিল। তাই গুজরাটের প্রতি মুঘলদের দৃষ্টি অনেক আগে থেকেই ছিল। হুমায়ুনও গুজরাট অভিযান করে ছিলেন। আকবরের গুজরাট অভিযানের পশ্চাতে নিম্ন লিখিত কারণ গুলি উল্লেখ করা যায়ঃ i) বিদ্রোহী মির্জারা গুজরাটে আশ্রয় নিয়েছিল। ii) গুজরাট ছিল সমুদ্রপথে বহিঃ দেশের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। iii) পর্তুগিজদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখার জন্য গুজরাট অধিকার করার দরকার ছিল। iv) সর্বোপরি গুজরাটের আর্থিক সমৃদ্ধি ও বাণিজ্যঘাঁটিগুলি আকবরকে গুজরাট দখলে উৎসাহিত করে ছিল। সুলতান মুজাফফর শাহের শাসনকালে গুজরাটে অভ্যন্তরীণ গোলমাল চলছিল। এমনকি ...

আকবর ও অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক | Akbar and the Mughal Nobility

 আকবর ও অভিজাতদের মধ্যে সম্পর্ক   মুঘল শাসনের প্রধান স্তম্ভ ছিল অভিজাত সম্প্রদায়। বাবর বা হুমায়ূনের সময়ে অভিজাত সম্প্রদায়ের কোনো সঠিক সংগঠন ছিল না। আকবরই ছিলেন প্রথম মুঘল শাসক যিনি অভিজাতদের সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে আকবর যে অভিজাত সমাজকে পেয়েছিলেন তা প্রধানত ইরানি ও তুরানি এই দুই জাতি গোষ্ঠীর আমীরদের নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে তুরানীদের আধিপত্য বেশি ছিল বলে মুঘল অভিজাত সম্প্রদায় ছিল মূলত তুরানী বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বৈরাম খাঁ, মির্জা নিজাত ও মির্জা হাসান ছাড়া অন্যান্য ইরানি আমিরগণ ছিলেন প্রভাব প্রতিপত্তিহীন। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে তাদের বিশেষ ভূমিকা থাকত না । বৈরাম খাঁ- র মৃত্যুর পর থেকে আকবরের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারগুলি অধিকতর কার্যকর হতে শুরু হয়। ১৫৬০-৭৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দুটি স্থানীয় গোষ্ঠী রাজপুত ও ভারতীয় মুসলমানরা মুঘল অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। এর ফলে অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয় এবং মুঘল প্রশাসনে তুরানি চরিত্র  ও চুগতাই পরম্পরার অবনমন ঘটে। ১৫৭৫-৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অভিজাত সংগঠনের উপর করা সাম্প্রতিক ...

আকবরের স্থাপত্য কীর্তি | Mughal Architecture under Akbar

আকবরের স্থাপত্য কীর্তি মুঘল সম্রাটরা ছিলেন একান্তভাবে শিল্পমনস্ক। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতবর্ষে এক অভূতপূর্ব শিল্প সমন্বয় সাধনের সূচনা হয়েছিল। মুঘল স্থাপত্য শিল্পের গৌরবময় যুগের সূত্রপাত হয়েছিল আকবরের হাত ধরে। আকবরের পূর্বে বাবর ও হুমায়ুন যে শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না এমনটা নয়। তবে তাদের সময় নানান রাজনৈতিক সংকটের জন্য সম্ভবত তারা এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি করতে পারেননি। যাইহোক আকবর স্থাপত্য নির্মাণে চরম অনুরাগ দেখিয়েছিলেন। পারস্য ও বাগদাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গজনী হয়ে তুর্কি শাসকরা ভারতের মাটিতে যে ধারা বহন করে এনেছিলেন সেই ধারা আকবরের প্রচেষ্টাতেই প্রথম ভারতীয় জাতীয় ধারায় রূপান্তরিত হয়ে উৎকর্ষ লাভ করে। দেশীয় ও বিদেশী ধারার সংমিশ্রণে যে অভিনব শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে তাকে ইন্দো-পারসিক শিল্পরীতি বলে অভিহিত করাই শ্রেয়। আকবর আগ্রা, লাহোর ও এলাহবাদে তিনটি বিরাট দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। আগ্রা দুর্গের ভিতর প্রায় ৫০০ টি লাল বেলেপাথরের অট্টালিকা নির্মিত হয়েছিল। এই অট্টালিকা গুলির মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। আজও পর্যন্ত যেগুলি ঠিকই আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আকবরীমহল ও জাহাঙ্গীর...

আকবরের দাক্ষিণাত্য অভিযান | Deccan Policy of Akbar

আকবরের দাক্ষিণাত্য অভিযান  পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর থেকে মুঘলদের আত্মরক্ষার যুদ্ধ আর করতে হয়নি। এবার থেকে মুঘলরা সম্রাজ্য সম্প্রসারনের দিকে নজর দেয়। মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে সাম্রাজ্যের সর্বাধিক সম্প্রসারণ ঘটেছিল। প্রথমে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকা দখলের পর দক্ষিণ ভারতের দিকে তিনি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি পর্তুগীজদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণ করাও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দক্ষিণ ভারতে চারটি স্বাধীন রাজ্যের উপস্থিতি ছিল- আহম্মদনগর, বিজাপুর, খান্দেশ ও গোলকুণ্ডা। বাহমনী রাজ্যের পতনের পর তার বুকের উপর এই চারটি রাজ্যের উৎপত্তি হয়েছিল। এই চারটি রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনী বিজয়নগর রাজ্যকে তালিকোটার যুদ্ধে (১৫৬৫ খৃ:) ধ্বংস করেছিল। এই চারটি রাজ্যকে আকবর তার অধীনতা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য দূত প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু খান্দেশ ছাড়া কোন রাজ্যেই মুঘলদের অধীনে আসতে রাজী হয় নি। তাই আকবর দাক্ষিণাত্য অভিযানের জন্য মনস্থির করেন। আহাম্মদনগরের নাবালক সুলতান বাহাদুরকে বন্দি করে আমির গোষ্ঠীর চক্রান্তে আহম্মদ নামক এক যুবক নিজেকে সুলতান বলে ঘোষণা করে। কিন্তু প্রাক্তন সুলতান হুসেন শ...