বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব
মুর্শিদাবাদের দরবারে সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধানতম মুখ ছিলেন মীরজাফর। মীরজাফর ছিলেন সিরাজেরই মির বকশি। সিরাজ এই ষড়যন্ত্রতে মীরজাফরের যুক্ত থাকার কথা জানতে পেরেও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকেই পলাশীর যুদ্ধের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেন। শেষমেষ মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং পূর্বপরিকল্পনামাফিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীরা মীরজাফরকে বাংলার মসনদে বসান(১৭৫৭)।
মীরজাফর সিংহাসন লাভের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্লাইভকে এবং প্রতিষ্ঠানগতভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন। ক্লাইভ একাই নিয়েছিলেন প্রায় ২০ লক্ষ এর উপরে টাকা। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানি ও অন্যান্য ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নিয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এছাড়া কোম্পানি লাভ করে কলকাতা সংলগ্ন চব্বিশটি পরগনার জমিদারি, যার আয় ছিল প্রায় ৮৮০ বর্গমাইল বছরের। শুধু অর্থ প্রদান নয় বিভিন্নভাবে মীরজাফর ইংরেজ কোম্পানির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
একদিকে রাজকোষের সংকট অন্যদিকে পরাধীনতা, উভয় সমস্যা মীরজাফরকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি কোষাগারের আয় বৃদ্ধি, বিরোধী কর্মচারী ও আত্মীয়দের ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ইংরেজদের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে ক্লাইভের কাছে বর্ধমান ও নদীয়া জেলা ফেরত চান। কিন্তু ক্লাইভ এর পরিবর্তে চট্টগ্রাম ও সিলেট দাবি করেন। মীরজাফর তা স্বীকার করলেন না। ফলে কোম্পানির সঙ্গে মীরজাফরের সম্পর্ক তিক্ত হতে থাকল। এই সময় মীরজাফর গোপনে ওলন্দাজদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন বলে জানা যায়। ক্লাইভের কাছে সেই খবর পৌঁছে যায় এবং ইংরেজ কোম্পানি বিদারার যুদ্ধে (১৭৫৯) ওলন্দাজদের শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে। ওলন্দাজদের পরাজয়ের পর ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার জামাতা মীরকাসিমকে বাংলার মসনদে বসানো হয়। এই ধরনের সিংহাসন চ্যুতির ঘটনা বিনা যুদ্ধেই সংঘটিত হয়েছিল বলে এই ঘটনাকে বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব বলা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন