Cornwallis Code / কর্নওয়ালিস কোড/কর্নওয়ালিসের বিচারবিভাগীয় সংস্কার
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন এলাকা দখলের পর কোন ধরনের প্রশাসন যন্ত্র গড়ে তুলবে তাই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্রথমদিকে ক্লাইভ সরাসরি ব্রিটিশ কর্মচারীদের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জুড়তে চাননি। তিনি দেশীয় কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনাকে সঠিক বলে মনে করতেন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস দেশীয় এবং ইউরোপীয় শাসকদের মিলিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু কর্নওয়ালিস উপরোক্ত দুই পরিকল্পনাকে বাতিল করে সম্পূর্ণ ইউরোপীয় রীতিতে এবং কেবল ইউরোপীয় কর্মচারীদের দ্বারাই শাসন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিলেন। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি একটি শাসন সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রস্তুত করেন, যা 'কর্নওয়ালিস কোড' নামে পরিচিত।
কর্নওয়ালিস কোড-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি যুক্তি ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত হয়। তিনি আরো দেখান বিচার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণের জন্যই উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সরকার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং কেবল দেশবাসীকে ন্যায় বিচার দেওয়া নয় ব্রিটিশ উপনিবেশের স্বার্থ রক্ষা করাও কর্নওয়ালিস কোডের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
কর্নওয়ালিস কোড ঘোষিত হয় ১৭৯৩ সালের ১লা মে। এর ৪৮ টি রেগুলেশন ছিল, যেখানে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, বিচারকের কর্তব্য ও ক্ষমতার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কর্নওয়ালিস কোড অনুসারে দেওয়ানী বিচারকে রাজস্ব আদায়ে থেকে আলাদা করা হয়। নতুন ব্যবস্থায় নিচু থেকে উচু তলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের আদালত ছিল। প্রথমে ছিল জেলার দেওয়ানি আদালত। তারপর ছিল চারটি প্রাদেশিক আদালত: কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা ও পাটনা। এর উপর থাকত সদর দেওয়ানী আদালত। এটি ছিল আসলে আপিল আদালত। সবকটি আদালতের প্রধান ছিলেন ইউরোপীয়। তবে এদেশীয় কমিশনার নিয়োগেরও ব্যবস্থা ছিল।
ফৌজদারি আদালতটিকে চেলে সাজানো হয়; কারণ বিচার বিভাগের মত প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব একজন ভারতীয়র উপস্থিতি ইংরেজরা রেখে দিতে চাইনি। এতদিন ধরে নায়েব নাজিম রেজা খাঁ ফৌজদারি আদালত গুলির দায়িত্বে ছিলেন। এবার সদর নিজামত আদালতটিকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়। এই দায়িত্বে ছিলেন গভর্নর জেনারেল ও তার কাউন্সিল। জেলার ফৌজদারি আদালত তুলে দিয়ে কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা ও পাটনায় চারটি ভ্রাম্যমান আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের ব্রিটিশ প্রজাদের বিচার হত কলকাতার সুপ্রিম কোর্টে। বস্তুত কর্নওয়ালিস সমগ্র বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা থেকে ভারতীয়দের বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
বিচারব্যবস্থার সাম্য ও বিশ্বস্ততা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় স্বাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমান সাক্ষীর সমমর্যাদা স্বীকৃত হয়। সাক্ষী হিসেবে মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ন্যায্য বিচারের স্বার্থে হিন্দু ও মুসলমান আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। হত্যাকাণ্ড সরকারবিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বেত্রদণ্ড, অঙ্গছেদ প্রভৃতি অমানবিক দন্ডদান নিষিদ্ধ করা হয়।
পাশ্চাত্যের তত্ত্ব ও আইনবিধিকে প্রাচ্যের প্রয়োগ করে কর্নওয়ালিসের যে সুফল পাওয়ার আশা করেছিলেন তা সঠিক ছিল না। তাই পরের বছর থেকেই বারবার সংশোধনী আনতে আনতে হয়েছিল। ১৮৩৩ সালে মাত্র ৭৮ টি আইন কার্যকরী ছিল। এই ব্যাপক সংশোধন ও সংযোজন এর ফলে কর্নওয়ালিস কোড-এর প্রকৃত চরিত্র লোপ পেয়েছিল।
Thank you sir
উত্তরমুছুন