সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পাঞ্জাবের অর্থনীতিতে গম উৎপাদনের গুরুত্ব | Importance of Wheat in Punjab Economy during Coloneal Period

 পাঞ্জাবের অর্থনীতিতে গম উৎপাদনের গুরুত্ব

কৃষির বাণিজ্যিকিকরণ কেবল তুলা ও পাটের মত তন্তু শষ্যের ক্ষেত্রে হয়েছিল এমনটা নয়, ভারতের অন্যতম প্রধান দানাশষ্য গমও ব্রিটিশ বণিকদের রপ্তানির তালিকায় এসেছিল। পাঞ্জাবে গম উৎপাদন ও তাকে ঘিরে ব্যবসা রমরমা ছিল। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গম উৎপাদন এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ব্রিটিশ কৃষি বিজ্ঞানীরা পাঞ্জাবকে দেখে ভারতের ভবিষ্যৎ খাদ্য ভান্ডার বলে আখ্যা দেন। ফলে পাঞ্জাব হয়ে ওঠে ভারতের মূল গম উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারী অঞ্চল।

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাঞ্জাব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গম রপ্তানি করতে থাকে। এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ সুয়েজ খাল উন্মুক্ত করা হয়েছিল বলে এবং রপ্তানিকর গ্রাস করা হয়েছিল বলে। তবে ইংল্যান্ডই হয়ে উঠেছিল গমের মূল আমদানিকারক দেশ। পাঞ্জাবের গম পাউরুটি তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নত মানের ছিল। ব্রিটিশ মালিকানাধীন কেক ও অন্যান্য বেকারি প্রস্তুতকারকরা ভারতের গম কে পছন্দ করত। পাঞ্জাবের গম তার উন্নতমানের জন্য শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের বাজারে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল।

পাঞ্জাবে গম উৎপাদন উত্থান-পতনের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী। ১৮৭৫ ৭৬ সালে গমের উৎপাদন ও রপ্তানি কিছুটা হ্রাস পায়; ফলে গমের মূল্য হ্রাস পায়। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলিতে ভালো ফলন হয় এবং ভালো ব্যবসা হয়।  কিন্তু ১৮৭৭ সালের শেষ দিকে রপ্তানির হ্রাস পায় কারন বসন্ত কালে ফলন কম হয় এবং গমের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ১৮৮১-৮২ সালকে পাঞ্জাবের গম ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা হতে পারে। এই সময় ভারত থেকে ১৯৮৬৩৫২০ cwt পরিমাণ গম বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল, যার মধ্যে পাঞ্জাবের গম ছিল ২২৬২৪২৫ cwt. ১৮৮৭-৮৮ সালে আবার গম ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। এর কারণও ছিল ফলন ভালো না হওয়া। যদিও পরবর্তীকালে আবার ফলন ভালো হয় এবং গম বাণিজ্যিক শষ্যের রূপ নেয়। পাঞ্জাব থেকে গম রপ্তানি এর পরেও বিভিন্ন সময় ধাক্কা খেয়েছিল; যেমন ১৮৯৬-৯৭ সালে পাঞ্জাবে দুর্ভিক্ষের কারণে গমের উৎপাদন হ্রাস এবং মূল্য বৃদ্ধি পায়। এই সংকট গম রপ্তানীকে সাময়িক ভাবে প্রভাবিত করেছিল। সরকার এই সংকটের মধ্যেও গম রপ্তানি করে চলেছিল। জনগনের বারংবার আবেদন সত্ত্বেও সরকার রপ্তানি বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেয় নি। এর ফলে দরিদ্র্য মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। 

যাইহোক গম উৎপাদনে পাঞ্জাব আজও ভারতে প্রথম স্থানাধীকারি। স্বাধীনতার আগেও তাই ছিল। পাঞ্জাবের অর্থনীতিতে তাই গমের গুরুত্ব অপরিসীম। আজও লোক পাঞ্জাবকে গম দিয়ে চেনে। তবে এই অগ্রগতির পশ্চাদে ব্রিটিশ বাণিজ্য নীতির আবদান কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...