সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শাহজাহানের রাজত্বকাল | Shahajahan's Reign

 

মুঘল যুগে শাহজাহানের রাজত্বকাল


শাহজাহানের রাজত্বকালে (১৬২৮-১৬৫৮) মুঘল সাম্রাজ্য তার গৌরবের শীর্ষে পৌঁছায়। তাঁর রাজত্বকাল মুঘলদের ইতিহাসে 'স্বর্ণযুগ' নামেই খ্যাত। তার সময়ে ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্য সমগ্র ভারতবর্ষে সম্প্রসারিত হয়, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্টিত হয় এবং শিল্প-সাহিত্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। তবে উন্নতির আড়ালে পতন ও অবক্ষয়ের চিহ্নগুলিও ফুটে ওঠে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।


শাহজাহানের রাজত্বকাল যে ভারত ইতিহাসে সমৃদ্ধি ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করেছিল, তা বিভিন্ন ঐতিহাসিক সাক্ষ্যে সমর্থিত। 'লুব-উৎ-তওরিখ' গ্রন্থের লেখক দেখিয়েছেন শাহজাহানের গৃহীত শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলি ছিল প্রজা কল্যাণকামী এবং দক্ষ শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি প্রশাসনিক কাজে কোনো গাফিলতি সহ্য করতেন না। প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রাখতেন। তাঁর সময়ে আইন-শৃঙ্খলা যথেষ্ট মজবুত ছিল। জনগণের যাতায়াতের এবং সম্পত্তির পূর্ণ নিরাপত্তা ছিল। সম্রাট 'ঝরোকা দর্শন ' এর মাধ্যমে জনগণের সামনে আসতেন এবং জনগণ তার কাছে সুবিচার চাইতে  পারতেন। তবে মনে করা হয়, খুব কম লোকই এরকম সম্রাটের কাছে সরাসরি সুবিচার চাওয়ার সাহস দেখাতে পারতেন। কিন্তু যে কোনো অভিযোগ এলেই সম্রাট তাকে কঠোর হাতে শাস্তি প্রদান করতেন এরকম নজির আছে। 


শাহজাহানের রাজত্বকালে  সমগ্র ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয়। তিনি বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা রাজ্য দুটিকে সাম্রাজ্যের আওতায় আনেন। আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকেও দমন করতে সমর্থ হন।


শাহজাহানের শাসনকালের শান্তি বিরাজ করত বলে সাম্রাজ্যের এবং সাম্রাজ্যের প্রজাবৃন্দের শ্রী ও সমৃদ্ধি আসে– একথা কাফি খান, আব্দুল হামিদ লাহোরি  প্রমুখ সমসাময়িক  এবং আধুনিক ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড ও এলাফিনস্টোন– সকলেই স্বীকার করেছেন। তার রাজত্বকালে মুঘল রাজকোষ পূর্ণ ছিল। দাক্ষিণাত্য সুবায় রাজপুত্র ঔরঙ্গজেব টোডরমলের রাজস্ব ব্যবস্থা প্রয়োগ করে মুঘল রাজকোষে অভূতপূর্ব অর্থ প্রেরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করায় অন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যে অভাবনীয় উন্নতি হয়। সুরাট বহির্বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৬৩০ থেকে ৩২ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হলেও দশ বছরের মধ্যে তার বাণিজ্য সমৃদ্ধি আবার ফিরে আসে। এই সময়েই  ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় এবং ইউরোপের সাথে বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রাজকোষ সমৃদ্ধ হয়। কৃষি ও কৃষকের অভাবনীয় প্রগতি তার রাজত্বকালেই  সম্ভব হয়। আব্দুল হামিদ লাহোরীর মতে শাহজাহান কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য যেমন সেচ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, তেমনই আবার রায়তদের  স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। বর্নিয়ে তৎকালীন ভারতের কৃষি সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তার রাজত্বকালে কোন বৈদেশিক অভিযান হয়নি। কোনো বড় ধরনের বিদ্রোহ বা অসন্তোষ হয়নি। ফলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল।


আর অন্য কিছুতে না হলেও স্থাপত্যশিল্পে শাহজাহানের রাজত্বকালকে 'স্বর্ণযুগ' না বলে থাকা যায় না। সৌন্দর্যপিয়াসী শাহজাহান ছিলেন স্থাপত্য শিল্পের উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক। তার শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লাল বেলে পাথরের বদলে সাদা মার্বেল পাথরের ব্যবহার। তার আমলে স্থাপত্যকীর্তিগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য তাজমহল, যা আজও পৃথিবীর বিস্ময়। এছাড়াও মতি মসজিদ, জামা মসজিদ, দিওয়ান-ই খাস, দিওয়ান-ই-আম, খাসমহল, শিসমহল, শাহজানাবাদ শহর, লালকেল্লা প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। স্থাপত্যের ইতিহাসে এরকম নির্মাণ আর কখনও হয়নি বা এর কল্পনাও করা হয়নি। এই সব কীর্তি  যেমন ভারতে স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠত্বকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছে তেমনই এগুলি মুঘল ভারতের সমৃদ্ধির বার্তা বহন করে।


শাহজাহান সাহিত্য, চিত্রকলা ও সঙ্গীতের প্রতিও যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন। তার রাজসভায় সুন্দর দাস, চিন্তামণি, কবিন্দ্র আচার্য, সাইদল গিলানি, আব্দুল তালিব কালিম প্রমূখ কবির সমাবেশ ঘটে। তার রাজত্বকালে হিন্দি ও ফারসি উভয় ভাষাই সমান্তরালভাবে বিকাশ লাভ করে। লাল খাঁ, কবি জগন্নাথ প্রমূখ ছিলেন তার রাজসভার  উল্লেখযোগ্য সঙ্গীতকার।


সম্রাটের রাজকীয় বিলাস এবং দরবারী জাঁকজমক বিশ্ববাসীর সামনে ভারতীয় সম্রাটের মর্যাদাকে বহুল পরিমানে বৃদ্ধি করেছিল। স্বর্ণনির্মিত ও রত্নখচিত মযূর সিংহাসন এবং কোহিনুর মনি সহ মুকুটের ব্যবহার তাঁর দরবারের ছিল প্রধান আকর্ষণীয়।


শাহজাহানের রাজত্বকালকে স্বর্ণযুগ বলা যায় কি না তা নিয়ে রয়েছে। সমসাময়িক ঐতিহাসিক কাফি খাঁ, আব্দুল হামিদ লাহোরি এবং বহু আধুনিক ঐতিহাসিক তার রাজত্বকালকে 'স্বর্ণযুগ' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে কিছু ইউরোপীয় ঐতিহাসিক যেমন, ডঃ ভিনসেন্ট স্মিথ প্রমুখকরা এই মতের সাথে সহমত পোষন করেননি। তারা শাহজাহানের রাজত্বকালের অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের আড়ালে এক চরম দৈন্যের ছাপ লক্ষ্য করেছেন। ১৬৩০ এর দাক্ষিণাত্য, গুজরাট ও খান্দেশে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তাতে সম্রাট জনগণের দুর্গতি লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করেননি বলে উল্লেখ করেছেন ভিনসেন্ট স্মিথ। কিন্তু ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সম্রাট গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যের মনসবদারদের নির্দেশ দেন তাঁরা যেন জনসাধারণের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন, লঙ্গরখানা খুলে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেন। তিনি ঐ দুই রাজ্যের ৭০ লক্ষ টাকার রাজস্ব মুকুব করে দেন। তাছাড়া সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিদিন জনসাধারণকে অর্থ সাহায্যেরও ব্যবস্থা করেন। এবং দেখা যায় যে দুর্ভিক্ষের পর ১০ বছরের মধ্যে গুজরাট আবার তার (বাণিজ্যিক) গৌরব ফিরে পায়।


শাহজাহানের সময় ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত কান্দাহার পুনর্দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং মধ্য এশিয়ায় বালখ ও বদাকশান অভিযানও ব্যর্থ হয়। এই দুটি অভিযানে প্রচুর অর্থ ও লোকক্ষয় হয়েছিল। উলসি হেগ মনে করেন কান্দাহার অভিযানের ব্যর্থতা মুঘলদের রাজতান্ত্রিক শক্তির নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। এই ব্যর্থতা বোধহয় মুঘল রাজকোষকে ততটা প্রভাবিত করতে পারেনি, কারণ কান্দাহার যুদ্ধে ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা খরচ করার পরও শাহজাহান শাহজানাবাদ শহরটি নির্মাণ করেন।


কেমব্রিজ ঐতিহাসিক জন বিচার্ডস এবং ভারতীয় ঐতিহাসিক শ্রীরাম শর্মা ও যদুনাথ সরকার শাহজাহানকে হিন্দু বিদ্বেষী এবং ধর্মগোড়া মুসলিম হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তাঁরা শাহজাহানের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সরকারি চাকুরি প্রদান বন্ধ, মন্দির ধ্বংস, চার্চ ধ্বংস প্রভৃতির অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে সতীশচন্দ্র, আতাহার আলী প্রমূখ আলীগড় ঐতিহাসিক দেখিয়েছেন শাহজাহানের আমলে আকবরের পরধর্মসহিষ্ণুতার নীতি বজায় ছিল। কারণ মন্দির ধ্বংস বা চার্চ ধ্বংস হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে, কোন ধর্মনৈতিক প্রেরণায় নয়। তার আমলে কোনো সময় জিজিয়ার পুনঃপ্রবর্তন হয়নি। তার আমলে হিন্দু মনসবদারদের সংখ্যা ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে  হয় ১৬ শতাংশ। তিনি শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে অ-ইসলামীয় রীতিকে বিদায় দেননি। তিনি বহু হিন্দু পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন। সিংহাসন আরোহণের পর কিছু মুসলমান রীতি প্রবর্তিত হয়েছিল বটে। তবে তার কারণ ছিল সমকালীন দেশব্যাপী মৌলবাদী উত্তেজনাকে প্রশমিত করা। তাই ডক্টর আর. পি. ত্রিপাঠীও মনে করেন শাহজাহানের রাজত্বকালকে কোনোও অর্থেই ধর্মীয় নির্যাতন, গোঁড়ামি বা অসহিষ্ণুতার কাল বলা যায় না।


স্যার টমাস রো, বার্নিয়ে, টেরি প্রমুখ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগন শাহজাহানকে 'স্বভাব নিষ্ঠুর' বলে অভিহিত করেছেন। সিংহাসন দখলে তার নিষ্ঠুরতা মধ্যযুগীয় রীতিতে বৈধ। সেযুগে এমনই হত। তবে প্রজাশাসনের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রকার নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায় না।


পরিশেষে বলা যায় শাহজাহানের শাসনকালকে সামগ্রিক ভাবে 'স্বর্ণযুগ' বলা যায় না। পৃথিবীতে কোনো যুগই সার্বিক স্বর্ণযুগ নয়। বিশ্বের কোন শাসকের শাসনকালের ক্ষেত্রে এই ভাবনা প্রযোজ্য নয়। তবে শিল্পকলার অগ্রগতি এবং সর্বাধিক মানুষের সমৃদ্ধি বিধান যদি শাসকের সাফল্যের মানদন্ড হয় তাহলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শাহজাহানের রাজত্বকাল ভারত ইতিহাসে মুঘল শাসনের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দিনগুলিরই নিদর্শন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ