সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঘলদের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা | Mughal Provincial Administration

 মুঘলদের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা 


ভারতে মুঘল শাসন ব্যবস্থার অন্যতম প্রাধান অঙ্গ ছিল প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য মোগল শাসকরা সমগ্র সাম্রাজ্যকে কতগুলি সুবা বা প্রদেশে বিভক্ত করতেন। আকবরের সময় সুবার সংখ্যা ছিল ১৫। জাহাঙ্গীর এর সময় সুবার সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ১৭; শাহজাহানের সময় ২২ এবং পরবর্তীকালে  কান্দাহার হস্তচ্যুত হলে সেই সংখ্যা ২১-এ এসে দাঁড়ায়। ঔরঙ্গজেবের সময়েও এই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। প্রত্যেকটি সুবা কতগুলি সরকার এবং প্রত্যেকটি সরকার কতগুলি পরগনায় বিভক্ত থাকত। শাসন ব্যবস্থার প্রতিটি এককে উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস মোগল শাসকরা চালাতেন। প্রদেশগুলির সাথে কেন্দ্রের যোগাযোগ ছিল সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। প্রতিটি প্রদেশের রাজধানী থাকত, যেখান থেকে প্রাদেশিক শাসন পরিচালিত হত এবং কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হত।


প্রত্যেকটি সুবার শাসন ছিল কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ। সুবার সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন সুবাদার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। প্রাদেশিক ব্যবস্থায় তাকে সাহায্য করার জন্য অনেক কর্মচারীও ছিল। মুঘল যুগে সাধারণত সুবাদার পদটি রাজপুত্র বা সম্রাটের অত্যন্ত কাছের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা পেতেন।


পদমর্যাদায় সুবাদারের পরেই ছিলেন দেওয়ান। তাকে কেন্দ্রের উজিরের নির্দেশ মত চলতে হত। তিনি কেন্দ্রীয় দেওয়ান এর কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন। প্রাদেশিক দেওয়ান এর কাজ ছিল প্রদেশের রাজস্ব আদায় করা এবং কৃষকদের তাকাভি নামক যে কৃষি ঋণ দেওয়া হত তা আদায় করা। দেওয়ানকে সাহায্য করতেন সুবাদার। তবে সুবাদার দেওয়ানের অর্থনৈতিক ক্ষমতা হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না।


সুবার প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা দুটি পৃথক ব্যক্তির হাতে দেওয়া হয়েছিল বোধহয় এই কারণেই যে, সুবাদাররা কেন্দ্রের থেকে দূরে থাকায় তাদের পক্ষে সম্রাটের প্রতি আনুগত্য হারানোর সম্ভাবনা থাকত। এরকম যাতে না হয় তার জন্যই সম্ভবত মুঘল শাসকেরা সুবাদারদের সার্বভৌম ক্ষমতা দিতে রাজি ছিলেন না। দেওয়ান পদ সৃষ্টি করে সুবাদারদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলত। ওই একই কারণে বোধহয় সুবাদার ও দেওয়ানকে প্রায়শই বদলি করা হত।


প্রতিটি প্রদেশ ছিল একাধিক সরকারে বিভক্ত। প্রতিটি সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন ফৌজদার। তিনি সুবাদারদের সাহায্য করতেন। সুবাদার তাকে নিযুক্ত করতেন বা পদচ্যুত করার ক্ষমতা রাখতেন। সরকারের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাই ছিল তার প্রধান কাজ। পরগনার শাসক ছিলেন সিকদার। পরগনার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল তার প্রধান কাজ।


প্রদেশের অন্যতম কর্মচারী ছিলেন সদর, যিনি কেন্দ্রীয় সদর-উস-সুদুর দ্বারা নিযুক্ত হতেন। ধর্মীয় ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার জন্য যে সমস্ত নিস্কর জমি বন্টিত হত সেগুলি দেখাশোনা করার দায়িত্ব তিনি পালন করতেন। কাজী ও মির-আদিল তার অধীনে কাজ করতেন।


প্রদেশের সামরিক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মির-বক্সি নামক কর্মচারী। তিনি কেন্দ্র কর্র্তৃক নিযুক্ত হতেন। মনসবদারদের বেতন, জায়গির, ঘোড়া ও সেনার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করতেন তিনি। এমনকি তিনি প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিযুক্ত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে রাজনৈতিক খবরাখবর সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠাতেন।


প্রাদেশিক দেওয়ানের অধীনে প্রতিটি সরকারে ছিল অমিল নামক কর্মচারী। তিনি সরকারের রাজস্ব আদাযয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। অকর্ষিত জমি নতুন করে কৃষিকাজের আওতায় নিয়ে আসা, কৃষির উন্নতি সাধন কর্‌ জমির জরিপ করা ইত্যাদি ছিল তার অন্যতম কাজ। এছাড়াও জনসাধারণের পরিস্থিতি তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে লিপিবদ্ধ করে তা মাসিক বিবরণ হিসাবে সদরে পেশ করতেন।


মুঘল শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল কোতোয়াল। আবুল ফজল কোতোয়ালের কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মুঘল প্রশাসনে শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছিল কোতোয়ালের ওপর। তাছাড়াও দুর্গগুলি তারা রক্ষা করতেন। নগরে কোন গোলমাল দেখা দিলে তা তিনি দমন করতেন। তার অধীনে পুলিশ ও সেনাদল থাকত, রাত্রে প্রহরীর ব্যবস্থা করতেন, গুপ্তচর নিয়োগ করে নাগরিকদের আয়-ব্যয়ের খোঁজখবর রাখতেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতীদাহ বন্ধ করা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ত। বাজারদর নিয়ন্ত্রণের কাজও তিনি করতেন। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করতেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে মুঘল আমলে নগরগুলিতে কোনো অশান্তির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই বলাই যায় কোতোয়াল তার দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সক্ষম হয়েছিলেন। ইউরোপীয় বিবরণীগুলিতেও এর সমর্থন মেলে।


কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের কাজ করতেন ওয়াকি-নভিশ নামক কর্মচারী। তিনি প্রদেশের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে দরবারে প্রেরণ করতেন। মুঘল কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকার– কেউই গ্রাম্য জীবনে হস্তক্ষেপ করতেন না। গ্রামগুলি ছিল স্বয়ংশাসিত। তবে গ্রামের মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে সেখানে শাসকেরা হস্তক্ষেপ করতেন।


মুঘল প্রশাসনে কেন্দ্র-সুবা সম্পর্কের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে মুঘল সম্রাটগন সর্বদাই প্রাদেশিক সরকারকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। দীর্ঘদিন একই স্থানে কাজ করার ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তার জন্য প্রাদেশিক কর্মচারীদের দু-তিন বছর অন্তর বদলি করার রীতি চালু ছিল। প্রাদেশিক শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ও অনুসন্ধানের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা করা ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সংবাদপ্রেরক অফিসাররা প্রদেশের ঘটনাবলী নিয়মিত জানাতেন। কর্মচারীদের সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আসলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হত, এমনকি সংবাদ প্রেরক সংবাদ পাঠাতে ব্যর্থ হলেও তাকে চরম শাস্তি দেওয়া হত। মুঘল সম্রাটগন প্রত্যেকেই প্রদেশ পরিভ্রমণ করে পরিস্থিতি সরেজমিনে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন। জনসাধারণ ব্যক্তিগতভাবে সম্রাটের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারতেন। সম্রাট সেই অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা যে নিতেন সে নজিরও পাওয়া গেছে। ডাক চৌকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে কোন প্রদেশে থেকে যেকোন সংবাদ রাজধানী পৌঁছে দেবার ব্যাবস্থা ছিল।


তবে সন্দেহ করা হয় যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের কার্যকলাপ সম্বন্ধে সুদূর দিল্লি থেকে কতটা অবহিত হতে পারতেন! কারণ সেই যুগের রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত। দ্বিতীয়ত, সুবাদারদের হাতে শাস্তি পাবার ভয় উপেক্ষা করে জনসাধারণ বা সংবাদপ্রেরক কতটা সুবাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারতেন। তাই কর্মচারীরা অসদুপায় অবলম্বন করলে জনসাধারণের অশেষ ক্লেশের কারণ হত। তবে দেখা যায় সুবাদারদের বদলি করার নীতি ওরঙ্গজেব পর্যন্ত বহাল ছিল এবং অনেক সুবাদার শাস্তিও পেয়েছিলেন।


জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যোগ্যতার মানদণ্ডে নিযুক্তি ছিল রাজকীয় পরিষেবার প্রধান শর্ত। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন শাহজাহান ঔরঙ্গজেবের সময়ে এই নীতি লঙ্ঘিত হয়েছিল। বেছে বেছে মুসলমানদের নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সতীশচন্দ্র, আতাহার আলী প্রমুখ ঐতিহাসিকদের গবেষণায় দেখা গেছে যে যোগ্যতাই ছিল আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত সকলের রাজত্বকালে নিয়োগের মাপকাঠি। তারা আরো দেখিয়েছেন ঔরঙ্গজেবের সময় হিন্দুদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে দক্ষিণা মারাঠাদের। এমনকি তারই আমলে জয়সিংহ ও যশোবন্ত সিংহকে ৭০০০/৭০০০ র‍্যাঙ্কের মনসব দেওয়া হয়েছিল।


পরিশেষে বলা যায়, মুঘল প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা যে জনকল্যাণমূলক ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এই ব্যবস্থার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করত সম্রাটের ব্যক্তিগত যোগ্যতার ওপরে। যতদিন সিংহাসনে শক্তিশালী সম্রাটরা অধিষ্ঠিত ছিলেন ততদিন কর্মচারীদের অসৎ হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। যখন থেকেই দুর্বল শাসকদের শাসন শুরু হয় তখন থেকেই রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক দিকটি ক্রমশ অস্তমিত হতে থাকে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...