সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঘল স্থাপত্যকলায় শাহ জাহানের অবদান | Mughal Architecture under Shah Jahan

মুঘল স্থাপত্যকলায় শাহ জাহানের অবদান | Mughal Architecture under Shah Jahan

ভারতবর্ষের স্থাপত্যকলার ইতিহাসে শাহ জাহানের রাজত্বকাল স্বর্ণযুগ। মুঘল আমলে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে যেমন চিত্রকলার চরম বিকাশ ঘটেছিল তেমন শাহাজাহানের রাজত্বকালে মুঘল স্থাপত্য শিল্প উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল। তাঁর পূর্বপুরুষ মহান আকবরের সময় থেকে মুঘল স্থাপত্যের জয় যাত্রা শুরু হয়েছিল, কিন্তু জাহাঙ্গীর চিত্রশিল্পে অত্যধিক নজর দেওয়ায় স্থাপত্য নির্মাণ অবহেলিত হয়েছিল। শাহ জাহান আবার নতুন উদ্যমে স্থাপত্য নির্মাণ শুরু করেন। পূর্বসূরিদের অনুসৃত নির্মাণশৈলী থেকে সরে এসে এক নতুন আঙ্গিকে নির্মাণকার্য শুরু হয়।

শাহ জাহানের প্রথম জীবনের নির্মাণগুলি সবই আগ্রা দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত। আগ্রা দুর্গের ভিতরে তিনি দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, মতি মসজিদ, শিসমহল, মুসম্মান বারজ নির্মাণ করেন। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির কাছে শাহজাহানাবাদ নামে প্রাসাদ-দূর্গ সহ শহর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই নির্মাণ কাজ চলে। আগ্রা দুর্গের অনুকরণে এখানে লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত হয় লালকেল্লা। এই দুর্গের দুটি প্রবেশ পথ-- পশ্চিম দিকের মধ্যস্থিত প্রবেশপথটি লাহোর গেট এবং দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথটি দিল্লি গেট নামে পরিচিত। দুর্গের ভিতরে নির্মিত হয়েছে আগ্রা দুর্গের অনুকরণে দেওয়ান-ই-আম ও দেওয়ান-ই-খাস। দেওয়ান-ই-আমের মধ্যস্থলে ছিল সম্রাটের ময়ূর সিংহাসন। এখানে বসলে সম্রাটকে যেকোনো স্থান থেকে দেখা যেত এবং শোনা যেত, এমনকি খুব আস্তে কথা বললেও। দেওয়ান-ই-খাসের ছাদ ছিল রুপোর পাত দিয়ে মোড়া। এর থাম ও গম্বুজের অলঙ্করণ এবং পাথরের সাথে সোনা রুপার কাজ বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়েছেন। এছাড়াও দুর্গের ভিতরে ছিল শিসমহল ও রংমহল। এর পর ছিল দিল্লির জামি মসজিদ, মতি মসজিদ এবং নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সমাধি। 

শাহ জাহানের জীবনের শ্রেষ্ঠ অবদান হল তাজমহল, শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এ এক অনবদ্য সৃষ্টি। তাজমহল হল তাঁর পত্নী মমতাজের কবরের উপর নির্মিত স্মৃতিসৌধ। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে মমতাজের মৃত্যুর পর তিনি এর নির্মাণ শুরু করেন। ঠিক কত বছর সময় লেগেছিল তা নিয়ে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। লাহোরি বলেছেন ১২ বছর সময় লেগেছিল আর ট্যভারনিয়ের মতে ২২ বছর সময় লেগেছিল। পারস্যের সিরাজের বাসিন্দা ওস্তাদ ইসা এর নক্সা তৈরি করেন এবং দেশীয় কারিগরদের আক্লান্ত প্রচেষ্টায় নির্মিত হয় রাজস্থানি মাকরানা মার্বেলের তৈরি সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম আশ্চর্য এই নয়নাভিরাম সমাধি সৌধ।  

ধিক্যশাহ জহানের স্থাপত্য চিন্তায় বৈভব ও আড়ম্বরের আ লক্ষনীয়, যেখানে আকবর প্রাধান্য দিতেন আভিজাত্য অথচ মজবুতির দিকে। আড়ম্বর ও শৌখিনতার জন্য শাহ জাহানের নির্মাণে পারসিক প্রভাব অধিক লক্ষ্যনীয়। তবে ইন্দো-পারসিক শিল্প রীতির মুল শিকড় থেকে শাহ জাহান কোথাও বিচ্যুত হন নি। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ