সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা । Revenue Settlement of Murshid Quali Khan

 মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা


মুর্শিদকুলি খান  বাংলার দিওয়ান রূপে নিযুক্ত হওয়ার পর, দেখেন বাংলার তখন রাজস্ব বলতে বোঝাত বাণিজ্যিক শুল্ক। কারণ বাংলার সমস্ত অঞ্চল আমলা ও অভিজাতদের মধ্যে বন্টিত ছিল, তাই বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য মুর্শিদকুলি প্রথম বাংলার যাবতীয় অঞ্চলকে খালিসাতে রূপান্তরিত করেছিলেন।‌ সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে কিছু ব্যক্তিকে ইজারা দানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই নতুন ইজারাদারদের বলা হত মাল-জামিন। তাই এই ব্যবস্থা মাল- জামিনি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ঐতিহ্যগত জমিনদার পরিবারগুলির অধিকাংশকেই মালজামিনি এর অধীনে থাকতে হয়।

মুর্শিদকুলির রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলায় এক নতুন অভিজাত শ্রেণীর বিকাশ ঘটে। মুর্শিদকুলির রাজস্ব বন্দোবস্তের কাজে সর্বাধিক সহায়তা করেছিলেন রাজশাহীর ব্রাহ্মণ রঘুনন্দন। মুর্শিদকুলি কঠোরভাবে রাজস্ব প্রশাসন চালনা করা এক নজির সৃষ্টি করেছিলেন। মুর্শিদকুলি রাজস্ব আদায়ের জন্য সরকারি ব্যয় হ্রাস করে, সেই খরচ রাজস্ব প্রদানকারী দের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন।

রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মুর্শিদকুলি সমগ্র সুবাকে তেরোটি চাকলায় বিভক্ত করেছিলেন, প্রতিটি চাকলা জায়গীর দের  মধ্যে বন্টিত হয়েছিল। জায়গীর এর অতিরিক্ত খালিশা অঞ্চলকে 25 টি ভাগে বিভক্ত করে তা ইজারায় বণ্টিত করা হয়েছিল।মুর্শিদকুলি রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের ব্যাপারে দক্ষতা প্রদর্শন এবং নিয়মিত হারে দিল্লিতে রাজস্ব পাঠানোর কারণে সুবার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করে তুলেছিলেন।

মুর্শিদকুলির রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশির ভাগ ঐতিহাসিক একমত যে, মুর্শিদকুলি রাজস্ব ব্যবস্থার অপর নাম ছিল নিপীড়ন। সালিমুল্লাহ লিখেছেন রাজস্ব বকেয়া রাখার শাস্তি ছিল মারাত্মক,রাজস্ব হার বৃদ্ধি ও আদায়ের জন্য অত্যাচারের কারণে বাংলার জমিদার শ্রেণী সম্রাটের কাছে অভিযোগ ও জানিয়েছিলেন। সালিমুল্লাহ বলেছেন মুর্শিদকুলি জমিদারদের কার্যত গৃহবন্দি করে সরকারি আমিলদের হাতে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সর্বোপরি বলা চলে বাংলার যে বিপুল সম্পদ বিদেশী বণিকদের আকৃষ্ট করেছিল তা জমা হতে শুরু করেছিল মুর্শিদকুলির শাসন কাল থেকেই।

 Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...