সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি | Sahjahan's Foreign Policy in Central Asia

 শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতি

ট্রান্স অক্সিয়ানা ছিল মুঘলদের পূর্বপুরুষের বাসভূমি। বাবর থাকে শুরু করে জাহাঙ্গীর পর্যন্ত প্রত্যেক মুঘল শাসকই তৈমুরের রাজধানী সমরখন্দ পুনরুদ্ধারের আশা পোষন করতেন। বাবর ও হুমায়ূন চেষ্টা করেও নিস্ফল হয়েছিলেন। শাহজাহান তার পূর্বপুরুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সচেষ্ট হন। 

শাহা জাহানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বালখ ও বদাকসান দখল করা। কারণ এই দুই প্রদেশ দখল করলে সমরখন্দ দখলের রাস্তা উন্মুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত উত্তর পশ্চিম সীমান্তে উজবেগ জাতির আক্রমণকে প্রতিহত করে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। সুতরাং শাহজাহানের মধ্য এশিয়া অভিযানের পশ্চাদে যে কেবল আবেগ কার্যকর ছিল তা নয়, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্যও ছিল।

১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে অক্ষু নদীর তীরে বুখারা রাজ্যের রাজা নজর মহম্মদ খান যখন পুত্র আব্দুল আজিজের সঙ্গে এক যুদ্ধে লিপ্ত হলেন সেই সুযোগে শাহজাহান যুবরাজ মুরাদ ও আলী মর্দানের নেতৃত্বে একটি বিরাট বাহিনী প্রেরণ করলেন। মুঘল সেনাবাহিনী খুব সহজে বালখ ও বাদকসান অধিকৃত করে নজর মহম্মদ খান পারস্যে পলায়ন করেন। যদিও এই দুই রাজ্য দীর্ঘকাল মুঘল অধিকারে রাখা সম্ভব হয় নি। মুরাদ বাল্খ-এর জলবায়ু তে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পিতার অনুমতি না নিয়ে সাম্রাজ্যে ফিরত চলে আসেন। অতপর যুবরাজ আওরঙ্গজেব ও সদুল্লা খানকে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছিল। নজর মহম্মদ খান পারস্য থেকে ফিরে এসেছিলেন। এবং উজবেগেরা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুঘল বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। উজবেগদের গেরিলা যুদ্ধের কাছে ঔরঙ্গজেবের মত প্রতিভাবান সামরিক নেতৃত্বও ব্যর্থ হয়। জানা যায় যে যুবরাজ দারা আওরঙ্গজেবের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন বলে এক্ষেত্রে আওরঙ্গজেবের পরাজয় কামনায় চক্রান্তও করেছিলেন। যাইহোক শেষপর্যন্ত মুঘলরা ভারতে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হয়। 

 শাহ জাহানের মধ্য এশিয়া নীতির ব্যর্থতা সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়ে ছিল। দুই বছর ধরে চলা এই অভিযানে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রচুর লোক ক্ষয় হয়। প্রায় পাঁচ লক্ষ্য টাকার খাদ্য শস্য পরিত্যাগ করে আসতে হয়। কিন্তু এক ইঞ্চিও জমি দখল করা সম্ভব হয় নি। কেবল অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি নয়, ঔরঙ্গজেবের মত প্রতিভাসম্পন্ন একজন সামরিক নেতার পরাজয় মুঘলদের সামরিক শক্তিতে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ফলে একদিকে মারাঠারা মাথা তোলার সাহস পেয়ে যায়। অন্য দিকে কান্দাহার মুঘলদের হস্তচ্যুত হয়ে যায়। পারস্য মুঘলদের নিরাপত্তার দিক থেকে বিপদ জনক হয়ে ওঠে। সর্বোপরি মধ্য এশিয়া অভিযানের ব্যর্থতা মুঘলদের মর্যাদাকে বিনষ্ট করে। এইখান থেকেই মুঘল সামরিক শক্তির অবক্ষয় দৃশ্যমান হতে থাকে। 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক