সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নাদির শাহের ভারত আক্রমণ | Nadir Shah's Invasion

 

নাদির শাহের ভারত আক্রমণের কারন কি মূলত অর্থনৈতিক? এই আক্রমণের রাজনৈতিক ফল কি হয়েছিল? 


মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহ এর শাসনকালে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। প্রচুর ধনরত্ন লুন্ঠন করেন এবং বেশ কিছু এলাকা তিনি দখল করেন। তাঁর আক্রমণের পিছনে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকলেও তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে ভারত আক্রমণের উৎসাহিত করেছিল। যাইহোক নাদির শাহের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে মুঘল সামরিক শক্তি ব্যর্থ হয় এবং সাম্রাজ্যের উপরে এই পরাজয় ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে।


পারস্য সাফাবিদ বংশীয়দের শাসনে আফগানদের দ্বারা আক্রান্ত হলে নাদির কুলি নামক এক দক্ষ সেনাপতি তার সামরিক কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে পারস্য থেকে আফগানদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন এবং তিনি সাম্রাজ্যে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি সাফাবিদ শাসকগোষ্ঠীকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজেকে পারস্যের 'শাহ' ঘোষণা করেন। নাদির শাহ অটোমান তুর্কিদেরও পারস্য থেকে বিতাড়িত করতে  সক্ষম হন। কিন্তু তুর্কিদের সঙ্গে অনবরত লড়াই চালিয়ে যেতে গেলে যে বিশাল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল সেই পরিমান অর্থের মজুত সেই মুহূর্তে সাম্রাজ্যে ছিল না। তার কাছে অর্থসংগ্রহের সবচেয়ে সহজলভ্য এবং অপরিমিত ভান্ডার বিবেচিত হয়েছিল ভারতবর্ষ। ভারতবর্ষের ধন সম্পদের প্রাচুর্য বরাবরই ছিল। তবে মুঘলদের শাসনে সম্পদ যে বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল তার খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। মুঘল শাসকদের আড়ম্বর ও জাকজমকপূর্ণ শাসনই ছিল তার দ্যোতক।


অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও যে একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নাদির শাহকে ভারতবর্ষ আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তার দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসনে দরবারী অভিজাতদের মধ্যে দলীয় রাজনীতি এবং স্বার্থপরতার জন্য মুঘল সাম্রাজ্য একেবারেই অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছিল। তার ওপর জায়গিরদারী সংকট ও কৃষি সংকট তৎকালীন সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে তুলেছিল। সাম্রাজ্যের দু’শো বছরের গৌরব ও মর্যাদাহানির সংবাদ সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছিল। উপরন্তু সেই সুপ্রাচীন কাল ধরে যে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ধরে বারংবার বিদেশি আক্রমণের একটা ধারাবাহিকতা চলে আসছিল সেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রেও ওরঙ্গজেব পরবর্তী শাসকগণ অবহেলা প্রদর্শন করেছিলেন। ইতিপূর্বেই কান্দাহার হস্তচ্যুত হয়েছিল এবং পারস্যের হস্তগত হয়েছিল। কাবুলের প্রাদেশিক শাসনকর্তা নাসির খান সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রে খানিকটা উৎসাহ দেখালেও কেন্দ্রীয় শাসকগণ কোনও গুরুত্ব দেননি। এই পরিস্থিতিতে  মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে নাদির শাহের ভারত আক্রমণ কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না।


নাদির শাহর ভারত আক্রমণের একটি তাৎক্ষণিক কারণও ছিল। ১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে নাদির কান্দাহার আক্রমণ করে স্থানীয় বিদ্রোহী আফগান উপজাতি গুলিকে বিতাড়িত করেছিলেন। ওই বিদ্রোহীরা কাবুলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। নাদির শাহ এই ঘটনার প্রতিবাদে কাবুলে দূত প্রেরণ করেছিলেন, কিন্তু এক বছর ধরে তার কোন উত্তর পাননি। কারণ দূত মুঘল দরবারে আরাম বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছিলেন। যদিও সম্রাট তার উত্তর অনেক আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন। নাদির শাহ উত্তর না পেয়ে ক্রুদ্ধ হন এবং ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। অধ্যাপক সতীশচন্দ্র কিন্তু মনে করেন এই ঘটনা ছিল নাদির শাহের কাছে একটি অজুহাতমাত্র। আসল কারণ ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। অনেকেই মনে করেন যে মুঘল শাসক গোষ্ঠীর একটি অংশ নাদির শাহকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে নিজাম উল মুল্ক চীন কুলিচ খান এবং সাদাত খান এর দিকে তারা সন্দেহের তীর তুলেছেন। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিশ্চিত ভাবে প্রমান করা যায়নি।


১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে নাদির শাহ উত্তর পশ্চিম সীমানা আক্রমণ করে গজনী, কবুল ও পাঞ্জাব দখল করেন এবং দিল্লির অভিমুখে যাত্রা করেন। কর্নাল এর যুদ্ধে সম্রাট মুহম্মদ শাহকে পরাজিত করে তিনি ৫৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করেন এবং দিল্লিতে অনুপ্রবেশ করেন। দিল্লির দেওয়ান-ই-খাস এ অবস্থানকালে 'নাদির এর মৃত্যু হয়েছে' এই সংবাদ রটে যায় এবং দিল্লিবাসীরা নাদিরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিরক্ত হয়ে নাদির শাহর সেনাদল দিল্লি তছনছ করে। দিল্লিবাসীর নিকট নাদির ৭০ কোটি টাকা আদায় করেন এবং ময়ূর সিংহাসন ও কোহিনুর মনি সহ বহু মূল্যবান আসবাবপত্র এবং রাজভান্ডারের বহুমূল্যবান দ্রব্যসমূহ লুট করে ভারত ত্যাগ করেন। মুহম্মদ শাহ'র সাথে চুক্তি অনুযায়ী তিনি পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু ও কাবুল লাভ করেন।


নাদির শাহের ভারত অভিযানের লুন্ঠন মূলক প্রকৃতির দিকে নজর রেখে একথা বলাই যায় যে তার ভারত আক্রমণের আসল কারণ ছিল অর্থনৈতিক। তবে তখন মুঘল শাসন যদি দুর্বল না হত তাহলে হয়তো নাদিরের আক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হত না। ভারতে অপরিমিত ঐশ্বর্যর কথা সুপ্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর সর্বত্র প্রচারিত ছিল। কিন্তু বিদেশি আক্রমণ তখনই হয়েছে যখন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে। কখনোই তা শক্তিশালী শাসনকে উপেক্ষা করতে পারেনি, অন্তত মুঘল শাসন যতদিন শক্তিশালী ছিল ততদিন তো নয়ই।


যাই হোক নাদির শাহের আক্রমণের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। একদিকে যেমন সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তেমনি রাজনৈতিক মেরুদন্ডও ভেঙ্গে গেছিল। নাদিরের লুন্ঠনের ফলে প্রচুর সম্পদ দেশের বাইরে চলে যায়। ফলে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য সম্রাটের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থভান্ডার আর রইল না। সম্রাটের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল। উত্তর ভারতের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে দিল্লির মর্যাদাহানি ঘটল। অভিজাতদের আর্থিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জায়গীর লাভের জন্য হানাহানির তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেল। কৃষকদের ওপর থেকে কর আদায়ের প্রবণতাও বাড়তে থাকল। বলাবাহুল্য রাজস্ব আদায় সামরিক অভিযানের রুপ ধারণ করল, যার ফলে কৃষকরা বিপর্যস্ত হল, বহু গ্রাম বিনষ্ট হল।


নাদির শাহের ভারত আক্রমণের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মুঘলদের পরাজয়, নাদির শাহের দিল্লি দখল, ময়ূর সিংহাসন ও কোহিনুর মনি হস্তচ্যুত হওয়া এবং সর্বোপরি নাদিরের ভুঁইফোড় পুত্রের সাথে সম্রাট মোহাম্মদ শাহের কন্যার বিবাহ মুঘল সম্রাট ও সাম্রাজ্যে চূড়ান্ত অবমাননা ঘটালো। মুঘলদের দুর্বলতা ও অন্তঃসারশূন্যতা পশ্চিম ভারতের মারাঠা এবং উপকূলগুলি থেকে বাণিজ্য সম্প্রসারণকারী ইউরোপীয় ভাগ্যান্বেষীদের সামনে উদঘাটিত হল। এই দুর্বল পরিস্থিতিকে বিদেশীরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে থাকল। তারা ভারতে তাদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিস্তারে সচেষ্ট হল। ভারতীয় উদীয়মান শক্তি বিশেষত মারাঠা উপলব্ধি করল যে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে তাই আরো একটি বিদেশী আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজিরাও মোগল সাম্রাজ্যের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল সম্রাটের ছত্রছায়ায় এবং মারাঠাদের নেতৃত্বে ভারতীয় রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে একটি রাষ্ট্রজোট গঠন করা।


নাদির শাহের আক্রমণের প্রভাব মুঘল দরবারে বিভিন্ন দলের উপরও পড়েছিল। প্রবীণ নেতাদের মধ্যে সাদাত খান ও খান-ই-দৌরানের মৃত্যু হয়েছিল। সম্রাটের প্রতি আস্থা হারিয়ে নিজাম উল মুল্ক দাক্ষিণাত্য গমন করলে মুঘল সাম্রাজ্যের দরবারী সংকট আরও তীব্রতর হয়েছিল। তিনি মারাঠাদের সঙ্গে সমঝোতা করে নিজ ক্ষমতা বিস্তৃত করাতে মনোনিবেশ করেছিলেন। এসময় সফদরজং ও আমির খাঁ মুঘল সম্রাটের অনুগ্রহভাজন হলেন। সম্রাটের দুর্বলতার সুযোগে উজিরৎ পদ নিয়ে আবার লড়াই শুরু হলো।


নাদির শাহের আক্রমণে ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সমস্যা গুলি তীব্রতর হয়ে উঠলেও তার আক্রমণের ফলে ভারতে দ্রুত চালিত বন্দুক ও উন্নততর হালকা কামান ব্যবহারের প্রচলন শুরু হল। নাদির শাহের ভারত আক্রমণ সাম্রাজ্যের ভাগ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছিল তা সন্দেহের বিষয়। কারণ গভীরতর সমস্যাসমূহের আবর্তে, যেগুলির কোনো সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব ছিল না– এই সাম্রাজ্য ধ্বংসের দিকেই এগোচ্ছিল। পরিশেষে বলা যায় নাদির শাহের আক্রমনকে হয়তো মোগল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করা যায়। তবে এই আক্রমণের ফলে দীর্ঘদিনের মুঘল পারস্য সম্পর্কের অবসান ঘটে এবং ঐসব দেশ থেকে ভাগ্যাণ্বেষীদের ভারতে আগমন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে বসবাসকারী তুরানি ও ইরানিরা ভারতীয় মূল স্রোতে বিলীন হয়ে যায়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ