সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান | Mughal Miniature Paintings in Akbar's Time

মুঘল চিত্রকলায় আকবরের অবদান 


ভারতীয় শিল্পকলায় মুঘল শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা তরবারির পাশাপাশি কালি, কলম ও ছবিকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাদের কালজয়ী সৃষ্টিগুলি কেবল স্থাপত্য নির্মাণে সীমাবদ্ধ ছিল না। চিত্রশিল্পেও ভারত মুঘল আমলে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছিল। মুঘল চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আকবরের রাজত্বকালে এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কালে তা বিকাশের শীর্ষে পৌঁছে গেছিলো।

আকবরের পূর্বপুরুষ বাবর ও হুমায়ূন চিত্রশিল্পে স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারেননি। তবে তাঁরা যথেষ্ট সৌন্দর্য পিপাসু ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মুঘলদের সৌন্দর্য পিপাসা আকবরের মধ্যেও বহমান ছিল। হুমায়ুন পারস্য থেকে মীর সৈয়দ আলী ও আবদুস সামাদকে কাবুলে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিলেন। আকবর এই আবদুস সামাদের নেতৃত্বে একটি কলাভবন নির্মান করেছিলেন। তাঁর সময়ে আঁকা ছবিগুলির বিষবস্তু যেমন ছিল প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতিকৃতি, তেমনি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের প্রতিকৃতি আঁকার চলনও ছিল। তাঁর দরবারে চিত্রকরদের মধ্যে বসাওয়ান ছিলেন প্রতিকৃতি অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। আবুল ফজলের লেখা থেকে জানা যায় পটভূমি চিত্রণ ও মুখাবয়বের রেখাঙ্কন, রঙের বিস্তার এবং প্রতিকৃতি অঙ্কনে বসাওয়ান ছিলেন সব থেকে দক্ষ শিল্পী। আকবরের দরবারে গুণী শিল্পী দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুস সামাদ, সৈয়দ আলী, ফারুক বেগ, দময়ন্ত, কানহা, মিসকিন, নানহা প্রমুখ।  প্রসঙ্গত উল্লেখ্যযোগ্য আবুল ফজল যে ১৭ জন  চিত্রশিল্পীর নাম উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে ১৩ জনই হিন্দু। 

আকবরের নির্দেশে যে বিখ্যাত চিত্রগুলি অঙ্কিত হয়েছিল তার মধ্যে ফতেপুর সিক্রিতে আঁকা চিত্রগুলি বিশেষ উল্লখযোগ্য। হুমায়ুননামা-র চিত্রগুলিও আকবরের উদ্যোগেই অঙ্কিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। তাঁর সময় রামায়ণের ঘটনাবলীও চিত্রিত হয়েছিল। ছবিগুলি বর্তমানে ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। 

মুঘল চিত্র কলার চরিত্র বিচারে একে কোনো ভাবেই শুধু পারসিক চিত্রকলা বলা যাবে না। আকবরের চিত্রকলায় পারসিক প্রভাব সুস্পষ্ট ছিল, যেমন হামজানামার চিত্রাবলি। কিন্তু দেশীয় চিত্রকর এবং দেশীয় বিষয়বস্তুর জন্য চিত্রগুলিতে ভারতবর্ষের প্রভাব সর্বাত্মক। তাই আকবরের চিত্রকলাকে ইন্দো-পারসিক মিনিয়েচারধর্মী চিত্রকলা বলাই শ্রেয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক