সুলতান ও খলিফার সম্পর্ক
সুলতানি যুগে সুলতান ও খলিফার সঙ্গে সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খলিফা হলেন বিশ্বাসীদের নেতা। যিনি মুসলমানদের সভা জামায়াতের কাছে দায়বদ্ধ। তিনি ইসলামী দুনিয়ার শাসক আবার ইমাম অর্থাৎ বিধানদাতা। সুলতান বলতে কোরআনে সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী কে বোঝায়। কিন্তু মিশরে এর অর্থ প্রাদেশিক শাসক। ভারতের সুলতানরা খলিফার অনুমোদন নিতেন। তিনি যেমন খলিফার মুসলিম দুনিয়ার একটি প্রদেশের শাসনকর্তা তেমনি ভারত ভূমির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। যা আবার ইসলামে বৈধ নয়।
ইলতুৎমিস থেকে দিল্লির প্রায় সব সুলতানই খলিফার অনুমোদন নিয়েছেন অর্থাৎ মতাদর্শগত দিক থেকে সুলতানি রাজ্য ছিল খলিফা সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ। যদিও চার খলিফার যুগের পরে খলিফা তন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সুলতানদের নিজেদের খলিফার প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করার পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে, প্রথমত ইসলামী বিশ্বের মান্যতা প্রাপ্তি, দ্বিতীয়তঃ নিজ রাজ্যে উলেমা সহ বিশ্বাসীদের কাছে নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা, তৃতীয়ত ইসলামী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে পরস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত থাকা।
ইলতুৎমিসের খলিফা আল মুস্তানসির কাছ থেকে অনুমোদন আদায় থেকে শুরু করে খলজিদের আগে পর্যন্ত খলিফার প্রতি অগাধ সম্মান প্রদর্শন চলেছিল। আলাউদ্দিন খলজী কিন্তু আনুগত্য প্রদর্শন করেননি। মুহম্মদ বিন তুঘলকও বেসুরে চলেন। তবে বিদ্রোহ দেখা দিলে তড়িঘড়ি খলিফার প্রতি আনুগত্য দেখান। ফিরোজ শাহ তুঘলক কিন্তু খলিফার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানাতেন। তবে সৈয়দ ও লোদী আমলে খলিফার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
বস্তুত খলিফার অনুমোদন ছিল প্রতীকি কুরআনে বর্ণিত খলিফা শাহীর সঙ্গে দিল্লির সুলতানের কোন মিল ছিল না। খলিফার অনুমোদন লাভ ছিল মূলতই প্রয়োজন ভিত্তিক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন