সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি | Welfare Policies of Firoz Shah Tughlaq

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি 

১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের সামরিক অভিযানের সময় মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু হলে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য এক চরম দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। নেতৃত্বহীন সেনাবাহিনী চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সময় অভিজতগণ সমন্বিতভাবে গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের ছোট ভাই রজবের ৪৬ বছর বয়স্ক পুত্র ফিরোজ শাহ তুঘলককে সিংহাসনে বসান। তার দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজত্বকাল দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।

ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল আকবরের পূর্ব পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান অধিকার করেছে। প্রধানত জনকল্যাণ ও প্রজাবর্গের উন্নতির জন্য তিনি যা করেছিলেন, দিল্লির কোনো সুলতানই জনসাধারণের এরকম সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিতে সক্ষম হননি। আফিক তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে বলেছেন যে জনসাধারণের ঘরবাড়ি, শস্য, সম্পদ, ঘোড়া, আসবাবপত্র ও প্রত্যেক বাড়ি স্বর্ণ ও রৌপ্যে পরিপূর্ণ ছিল এবং প্রত্যেকে সুখ শান্তিতে বাস করত।

সিংহাসন আরোহন করেই তার প্রধান লক্ষ্য হয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা। স্বভাবতই তিনি কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটাতে চাইলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে জনসাধারণের সরকারি ঋণ মুকুব করার আদেশ দেন। যাতে জিনিসপত্রের মূল্য হ্রাস পায় সেদিকে তীক্ষ নজর দেন। পূর্বাতন অভিজাত ও উলেমাদের সমর্থন আদায়ের জন্য জায়গীর প্রথার পুনঃ প্রবর্তন করেন।

ফিরোজ যুদ্ধক্ষেত্রে কতৃত্ব দেখাতে পারেন নি সত্য, কিন্তু প্রজাবর্গের উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জনকল্যাণ ও প্রজাহিতৈষণাকেই তার শাসন সংস্কারের মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজতন্ত্রকে Welfare Monarchy পরিণত করার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার পূর্বাতন শাসকের আমলে নানা কারণে দেশে যে অর্থনীতির সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করতে বদ্ধপরিকর হন‌। তিনি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে খাজা হিসামউদ্দিন নামে আমিরকে ফসলের উৎপাদনের ভিত্তিতে ভূমি রাজস্ব স্থির করার দায়িত্ব দেন। প্রায় ৬ বছর কঠিন পরিশ্রম করে তিনি সরকারের বছরে প্রাপ্য ছয় কোটি‌ ৭৫ লক্ষ তঙ্কা ভূমি রাজস্ব স্থির করেন।

তাছাড়া তিনি দেশের প্রচলিত ২৪ রকমের কর তুলে দিয়ে শরীয়ত অনুযায়ী চার রকমের কর নির্ধারণ করেন। প্রথমত, খরাজঃ চাষের জমির উপর ধার্য এক-দশমাংশ কর। দ্বিতীয়ত, জিজিয়াঃ অমুসলমানদের উপর ধার্য কর; সতীশচন্দ্র দেখিয়েছেন এই কর হল সামরিক কাজের বিনিময়ে কর, যা থেকে মহিলা, বৃদ্ধ এবং শিশুরা অব্যাহতি পেতেন, কেবলমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালনে বিরত অথচ সমর্থবান পুরুষের উপরই জিজিয়া অর্পিত হত। তৃতীয়ত, খামসঃ লুন্ঠিত দ্রব্য এবং খানিজ দ্রব্যের উপর ধার্য এক-পঞ্চমাংশ কর এবং চতুর্থত, যাকাৎঃ মুসলমানদের উপর তাদের সঞ্চিত সম্পত্তির শতকরা আড়াই শতাংশ ধার্যকর। এছাড়াও তিনি সেচ কর আদায় করতেন। ফসলের এক-দশমাংশ সেচকর আদায় করতেন। এই কর আদায় থেকেই ফিরোজ জনহিতকর কাজ ও সরকারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। ফিরোজ সাধারন সরকারি কর্মচারী ও সেনাদের বেতনের পরিবর্তে জমি বিলি করার ব্যবস্থা করেছিলেন। 

ভারত বরাবরই কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি হল মানুষের জীবিকার উৎস। এই জন্য তিনি কৃষির উন্নতির জন্য সেচযুক্ত নয় এমন জমিগুলিকে সেচের আওতায় আনার জন্য এক বিরাট সেচ পরিকল্পনা করেন। ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে ফিরোজ স্বয়ং দীপালপুরে যান এবং শতদ্রু থেকে ঘর্ঘরা পর্যন্ত ৯৬ মাইল লম্বা খালটি খনন করার কাজে হাত দেন। পরের বছর যমুনা থেকে হিসার পর্যন্ত ১৫০ মাইল বড় খালটি খনন করা হয়। এই খালের সাথে আরও ৬টি ছোট ছোট খান খাল যোগ করা হয়। এইসব খালের তত্ত্বাবধানে জন্য উপযুক্ত ইঞ্জিনিয়ার নিযুক্ত করা হয়। বহু পতিত জমি সংস্কার করা হয়। উলসি হেগ সবকিছু বিবেচনা করে ফিরোজ তুঘলক কে ভারতবর্ষে সেচ ব্যবস্থার জনক বলে অভিহিত করেছেন। 

কৃষির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে সারা দেশে বহু নগর নির্মাণ করেন। কেউ কেউ বলেছেন তিনি ৩০০ টি নগর নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এটা অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়। তার মধ্যে ফাতেহাবাদ, ফিরোজাবাদ, হিসার, জৌনপুর এবং ফিরোজপুর বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শহরের নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ফিরোজ কয়েকটি সরাইখানা, স্মৃতিস্তম্ভ, জলাশয়, হাসপাতাল ও কূপ খনন করেন। ফিরোজাবাদ নগরটি যমুনা নদীর তীরে নির্মাণ করেছিলেন। এই শহরটি পরে তার অত্যন্ত প্রিয় বাসস্থানে পরিণত হয়। তৈমুর লঙের আক্রমণের শহরটি ধ্বংস হয়। এছাড়াও বাগান তৈরি তার নেশা ছিল। দিল্লির উপকণ্ঠে ১২০০ নতুন বাগান তৈরি করেন। পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট লক্ষ্য ছিল। অসংখ্য পুরাতন প্রাসাদ ও স্মৃতিসৌধের সংস্কার করেন এর মধ্যে কুতুবমিনার, আলাউদ্দিনের সমাধি, শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়ার স্মৃতি সৌধ সংস্কার করেন। তার আদেশেই অশোক নির্মিত দুটি স্তম্ভ একটা মিরাট ও একটা খিজিরাবাদ থেকে দিল্লিতে আনা হয়। 

জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে ফিরোজ বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও আইনবিধির সরলীকরণ করেন তার পূর্বতন শাসকদের প্রচলিত কঠোর দন্ডবিধি দূর করেন। তার পূর্বতনদের শাসনকালে অপরাধীর পা, নাক, কান ইত্যাদি কেটে দেওয়া হতো, এমনকি চোখ উপড়ে নেওয়া হত, জীবন্ত অবস্থায় দগ্ধ করা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের শিরা কাটা বা করাত দিয়ে ছিন্ন করা হত। ফিরোজ‌ তুঘলক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে এই নিষ্ঠুর শাস্তির প্রথাগুলি রহিত করেন। একমাত্র কঠিন অপরাধ ছাড়া জনকল্যাণের স্বার্থেই তিনি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত রোধ করেন। 

ফিরোজের প্রজাহিতৈষীণার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল রাজধানীতে বিনা ব্যায়ে জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য দাতব্য হাসপাতাল নির্মাণ করা। এই হাসপাতালগুলি সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের গ্রন্থে দার-উল-সাফা, বিমারিস্থান, শিকাখানা নামে উল্লেখ করা আছে। তাছাড়াও কোন ব্যক্তি হঠাৎ মারা গেলে সরকারি তরফ থেকে তার অন্ত্যেষ্ঠীর ব্যবস্থা করা হত। তিনি গরীব মেয়েদের সরকারি খরচে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অর্থের অভাবে যে সমস্ত মেয়ের বাবা বিয়ে দিতে পারত না তাদের সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেওয়ান-ই-খয়রাত নামে একটা বিভাগের হাতে। এমনকি অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য দিওয়ান-ই-ইস্তিকাত নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল।

মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মত সুপন্ডিত না হলেও ফিরোজ স্বয়ং বিদ্বান ও বিদ্বানুরাগী ছিলেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সে যুগে ইতিহাস সচেতনতা। তিনি স্বয়ং ফুতুহাত-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও ফিরোজ বহু সংখ্যা স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফিরোজের জনকল্যাণের পরিচয় দিতে গিয়ে তার সমসাময়িক ঐতিহাসিক আফিফ বিবরণ দিয়েছেন, ফিরোজ সেচের জন্য ৫০টি বাঁধ, ৪০ টি মসজিদ, ৩০ টি কলেজ, ২০ টি প্রাসাদ, ১০০ সরাইখানা, ২০০ টি শহর, ৩০ টি সেচের জন্য বড় বড় জলাশয়, ১০০ হাসপাতাল ১০ টি সাধারণের জন্য কূপ এবং ১৫০ ব্রিজ নির্মাণ করেছিলেন এবং এগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জমি দান করেছিলেন।

ফিরোজ শাহ মধ্যযুগের ইতিহাসে একটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন যে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র শাস্তি প্রদান ও কর সংগ্রহই নয়, রাষ্ট্র একটা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। তিনি প্রথম দেখিয়েছিলেন সুলতানি যুগের রাষ্ট্রনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাসে প্রজাদের সুখ স্বাচ্ছন্দের বিধান করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। 

আধুনিক কালের জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায় সেই অর্থেই ফিরোজের রাষ্ট্রকে জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বলা যাবে না; কিন্তু মধ্যযুগীয় পরিস্থিতিতে জনকল্যাণের সূচনা করে নিঃসন্দেহে তিনি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়েছিলেন- এ কথা বলাই যায়।

Welfare Policies of Firoz Shah Tughlaq

In 1351 CE, during a military expedition in Sindh province, Sultan Muhammad bin Tughlaq died, plunging the Delhi Sultanate into a severe crisis. The leaderless army fell into chaos. At this critical moment, the nobles unanimously enthroned Firoz Shah Tughlaq, the 46-year-old son of Rajab, younger brother of Ghiyasuddin Tughlaq. His long reign of 37 years marked a significant chapter in the history of the Delhi Sultanate.

Firoz Shah Tughlaq’s reign held a glorious place in the history of the Sultanate until the time of Akbar. Mainly focused on public welfare and the betterment of his subjects, no other Sultan of Delhi had succeeded in providing such peace, happiness, and prosperity to the people. In his Tarikh-i-Firozshahi, historian Afif wrote that during Firoz’s rule, every household was filled with wealth, crops, horses, and furniture, and people lived peacefully and prosperously.

Immediately after ascending the throne, his main goal was to gain public confidence. Accordingly, he initiated several important administrative reforms. He first ordered the cancellation of all public debts to the state. He monitored market prices closely to ensure stability. To gain the support of the old nobles and Ulema, he reintroduced the system of land grants (jagir).

Although Firoz was not very competent on the battlefield, he proved himself highly capable in the domain of public welfare. He adopted welfare and the well-being of his subjects as the central objectives of his administrative reforms. In fact, he attempted to turn the Sultanate monarchy into a "Welfare Monarchy." With this aim, he addressed the economic crisis inherited from previous rulers. He appointed Amir Khwaja Hisamuddin to reform the land revenue system based on crop production. After six years of hard work, the annual land revenue was fixed at six crore and seventy-five lakh tankas.

Moreover, he abolished 24 types of taxes and implemented four types of taxes in accordance with Shariah law:

  1. Kharaj – a one-tenth tax on cultivated land.

  2. Jizya – a tax on non-Muslims. Historian Satish Chandra noted that this tax functioned as compensation for exemption from military service and was imposed only on able-bodied adult males.

  3. Khums – a one-fifth tax on looted and mined goods.

  4. Zakat – a 2.5% wealth tax on Muslim savings.

He also levied an irrigation tax amounting to one-tenth of the crop yield. The revenue from this tax funded welfare activities and government expenditure. Salaries of government officials and soldiers were often given in land grants.

India has traditionally been an agrarian country, and Firoz focused on agricultural development. To bring uncultivated lands under irrigation, he launched large-scale irrigation projects. In 1353 CE, he personally went to Dipalpur and initiated the digging of a 96-mile canal from the Sutlej to the Ghaggar river. The following year, he ordered the excavation of a 150-mile canal from the Yamuna to Hissar, connecting it with six smaller canals. Qualified engineers were appointed to manage these canals, and vast barren lands were reclaimed. Scholar Wolseley Haig regarded Firoz as the "Father of Irrigation in India."

Alongside agricultural development, he founded numerous towns across various regions. Some claimed he built 300 towns, though this appears exaggerated. Notable among them were Fatehabad, Firozabad, Hissar, Jaunpur, and Firozpur. Along with town-building, Firoz constructed inns, monuments, reservoirs, hospitals, and wells. Firozabad, built on the banks of the Yamuna, became his favorite residence and was destroyed during Timur’s invasion. Gardening was his passion; he planted 1,200 new gardens near Delhi. He also took steps to preserve antiquities, restoring many ancient palaces and monuments such as the Qutub Minar, the tomb of Alauddin Khalji, and the shrine of Sheikh Nizamuddin Auliya. Under his orders, two Ashokan pillars were brought from Meerut and Khizrabad to Delhi.

In pursuit of public welfare, Firoz reformed the judicial system and simplified the legal code. He abolished the harsh penal practices of his predecessors, who used to amputate body parts or even execute people by brutal means. Firoz, with a humanitarian approach, abolished such inhumane punishments. Except in severe crimes, he even restricted the death penalty.

Another major welfare initiative was the establishment of charitable hospitals in the capital, providing free treatment to the public. These were referred to as Dar-ul-Shafa, Bimaristan, and Shifakhana by contemporary chroniclers. Additionally, if anyone died suddenly, the government arranged for the person’s funeral. He arranged for the marriage of poor girls at state expense. The responsibility for identifying such cases was entrusted to a separate department called Diwan-i-Khairat. He also set up a department called Diwan-i-Istiqaqat to provide financial assistance to the needy.

Though not a great scholar like Muhammad bin Tughlaq, Firoz was himself educated and a patron of learning. His most notable trait was his historical consciousness, rare in that era. He authored Futuhat-i-Firozshahi and established many schools and colleges. Chronicler Afif mentioned that during his reign, Firoz built 50 dams for irrigation, 40 mosques, 30 colleges, 20 palaces, 100 inns, 200 cities, 30 large reservoirs, 100 hospitals, 10 public wells, and 150 bridges—and provided land endowments for their maintenance.

Firoz Shah emphasized an important idea in medieval Indian history: that the purpose of the state was not only to punish and collect taxes but to serve as a welfare institution. He was the first to demonstrate that it was the moral duty of a ruler to ensure the well-being of his subjects.

While Firoz’s state may not fully match the modern idea of a welfare state, his pioneering steps toward public welfare undoubtedly earned him a place as a pathfinder in the history of medieval Indian polity.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...