সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন আলোচনা কর।

 

সুলতানি শাসনে তাদের এলাকার মধ্যে জমিকে শাসন ব্যবস্থার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করেছিল একটি খালিশা অর্থাৎ সরাসরি সুলতানের অধীনে এবং সেখান থেকে সুলতানের নিজস্ব আমলারা নির্ধারিত কর সংগ্রহ করে সুলতানের রাজকোষে জমা করে। অন্যটি হলো ইকতা যা কোন এক অভিজাতের অধীনে থাকতো ও যাকে বলা হয় মুকতি। কৃষি উৎবৃত্ত আরোহন ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে তা জন্য বন্টনের জন্য যে সরকারি যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তারই একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হল ইকতা। যা সুলতানি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর কোন ক্ষতি করে না। 


 ইকতা হল ভূমি রাজস্বের বন্দোবস্ত। দ্বাদশ শতকের একজন রাষ্ট্রনেতা আদর্শ ইকতা ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে- ইকতার মালিক মুকতি, তারই অধীনস্থ কৃষক বা রায়তদের কাছ থেকে নির্ধারিত মাল বা ভূমি রাজস্ব আদায় করবেন। কৃষকের উপর তার কোন অধিকার নেই। কৃষকরা খাজনা দিলে তাদেরও তাদের পরিবার তাদের জমি বা অন্যান্য সম্পত্তির উপর মুকতির আর কোন অধিকার নেই। এরপরও মুকতিরা যদি জোর খাটায় কৃষকরা রাজদরবারে অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুলতান তার ইক্তা অধিগ্রহণ করতে পারে, তাকে শাস্তি দিতে পারেন অর্থাৎ মুকতি হলেন সুলতান নিয়োজিত আমলা মাত্র এবং দেশ ও কৃষকরা সুলতানের অধিকারে।


মুকতি যতদিন পদে থাকবেন নির্ধারিত ভূমি রাজস্ব সংগ্রহ করে ভোগ করতে পারবেন। তার বদলে ওই অর্থ খরচ করে সে সৈন্য রাখবে এবং সুলতানের আদেশে সৈন্য নিয়ে সাহায্য করবেন। সম্ভবত এই প্রথা পূর্ণমাত্রায় চালু হওয়ার আগে সুলতানরা নগদ টাকায় সৈন্যদের বেতন দিতেন। এবং তা এর পরেও চলতে থাকে।


সুলতানি শাসনের সূচনালগ্নে প্রাক- তুর্কি আমলের ব্যবস্থাই চালু ছিল। খুৎ, মুকাদ্দামরা করে সংগ্রহ করত রাই বা রানাদের অধীনে। যাদের থেকে সুলতানের সেনা নায়করা পেশকাশ সংগ্রহ করত বা লুটরাজ করত। সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা হলে ইকতা প্রথা চালু করে মুকতিরা ঐ কর নিতে থাকে। অভিজাতদের মধ্যে এলাকা ভাগ করে দেওয়া হতো। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য কখনো কখনো ইকতাকে ওয়ালিয়ত ও মুকতিকে ওমানী বলা হয়েছে। সম্ভবত ওয়ালী ছিলেন অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। 


সুলতানি শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে ইকতার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে, ইলতুৎমিসের সময় থেকে সব সুলতানি মুকতিদের বদলি করতেন যাতে কায়েমি স্বার্থ বা বংশানুক্রমিকতা গড়ে উঠতে না পারে। তবে সুলতানের সাহায্য পাঠানোর জন্য মুকতিরা কত সৈন্য রাখবে বা সুলতানকে কত টাকা দেবে এ সম্মন্ধে কোন স্পষ্ট নীতি ছিল না। মুকতিরাও তাদের এলাকায় তাদের সংগৃহীত সৈন্যের ভরণপোষণের জন্য ছোট ছোট এলাকা ইকতা হিসেবে দিত।। 


গিয়াস উদ্দিন বলবন ইকতা ব্যবস্থার মধ্যে অনেক ত্রুটি ও দুর্নীতি লক্ষ্য করেন। ইলতুৎমিস কেন্দ্রীয় অশ্বারোহী বাহিনীর সৈনিকদের নির্বাহের জন্য যে গ্রামগুলি দিয়েছিলেন সেগুলিও একটা ইকতা নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। বলবন উৎবৃত্ত রাজস্ব রাজকোষ জমা দেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন এবং ইকতার হিসাব পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক তার ইকতার একজন করে খাজা বা হিসাব পরীক্ষক নিযুক্ত করে কিন্তু সৈনিকদের ছোট ছোট ইক্তা দেওয়ার প্রথা চলতে থাকে।


আলাউদ্দিনের সময় সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে শাসক শ্রেণীর বিস্তার ঘটে সুলতান দূরের ও প্রান্তিক এলাকা গুলি ইকতা হিসেবে দেন। এবং কাছের এলাকা গুলি খালিশার অন্তর্ভুক্ত করেন দোয়াব অঞ্চল ও রহিল খন্ড অঞ্চল খালিশার মধ্যে আনা হয়। খালিশার আয় থেকে সুলতান নিজস্ব অশ্বারোহী বাহিনীর বেতন মেটাতেন (নগদে)। মোহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বের শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চলেছিল তবে অফিসারদের ইকতাদানের ব্যবস্থা বজায় থাকে। ইকতার ভূমি রাজস্ব কতটা হবে তা স্থির করবে কেন্দ্রীয় দেওয়ান- ই- ওয়াজির বিভাগ। মুকতির অধীনস্থ সৈন্যদের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য আলাদা এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়। বাকি এলাকার আয় থেকে মুকতি তার মাইনে আর আমলার মাইনে যোগাবে এবং বাকি উৎবৃত্ত রাজকোষে জমা দেবে। 


এই অবস্থায় দুটি দ্বন্দ প্রকাশ হয একটি দেওয়ান-ই- ওয়াজির বিভাগের সঙ্গে মুকতির, অন্যটি মুক্তির সাথে আর আমলাদের সাথে কারণ ইকতার মালিক সব সময় তাদের আয় কম ও খরচ বেশি দেখানোর চেষ্টা করত। তাই হিসাব পরীক্ষার গরমিল পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো এবং আত্মসাৎ করা টাকা বের করার জন্য উৎপীড়ন করা হতো। যা করেছিল আলাউদ্দিনের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শরফ কুলি। 


গিয়াস উদ্দিন তুঘলক ইকতা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেনি। কেবল ত্রুটিগুলি দূর করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি অর্থ দপ্তরকে নির্দেশ দেন মুকতির বার্ষিক জমা কখনো ⅒ অংশের বেশি বাড়ানো যাবে না কারণ সে কর কৃষকের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে। 


মোহাম্মদের মোহাম্মদ বিন তুঘলকের সময় ইকতা ব্যবস্থা উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বেড়ে যায়। সম্ভবত রাষ্ট্রীয় আয় বাড়ানোর জন্য ইকতার কর সংগ্রহ ও সৈন্যবাহিনীর পোষণ পৃথকীকরণের কাজ শুরু করা হয়। ইবন বতুতা আমরোহা অঞ্চলের ওয়ালি অধীনস্থ ১৫০০ গ্রাম থেকে আদায় করা 6 মিলিয়ন টাকা রাজস্বের ১/২০ ভাগ বেতনের পাওয়ার কথা বলেছেন। সুতরাং সেনাদের মাইনে দিচ্ছেন না।


আয় ও ক্ষমতার এই অবলুপ্তি সেনা নায়করা মেনে নেননি তাই মোহাম্মদ তুঘলকের সঙ্গে সেনা নায়কদের যাদের আমির ই সদার নামে পরিচিত তাদের বিরোধ বাদে।

 রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে ফিরোজ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সিংহাসনে বসে তাকে অভিজাত্যের খুশি করতে হয়েছিল। অভিজাতদের ব্যক্তিগত মাইনে দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। হয়তো এর পিছনে তৎকালীন মূল্যবৃদ্ধি কাজ করে থাকতে পারে তবে তার রাজত্বের শেষ দিকে কমে গেলেও মাইনে কমানো হয়নি। যাইহোক বেতন বাড়ার ফলে ইকতার পরিমানও বাড়ে। খালিসা জমি থেকে ইকতা দেওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচের ঘাটতি বাড়ে। তখন বাধ্য হয়ে সুলতান কেন্দ্রীয় সৈন্যদের নগদ মেনে দেবার পরিবর্তে ওয়াঝ কখনো বা বরাতে দিত।


লোদীদের সময় মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। কেবল ইকতা এই নামের পরিবর্তে সরকার ও পরগনার স্থান নিয়েছিল কতগুলি পর্বের কতগুলি পরগনার সমষ্টিতে একটি সরকার হয়। এবং সরকার থাকে একটি অভিজাত্যের অধীনে।

সুলতানরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় ঞ্জানী ব্যক্তিদের খরচ চালানোর জন্য নানা ধরনের দান করতেন, সাধারণত জমির খাজনা দান করা হতো। ব্যক্তিকে দান করলে এই দান মিল্ক, ইদবার,ইনাম ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। ধর্মীয় সংস্থা মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল ইত্যাদিতে যে দান করা হতো তাকে বলা হতো ওয়াকফ। এই দান গ্রহীতার জীবিত কালের জন্য হলেও কখনো কখনো সাধারণত চাষযোগ্য ও অনাবাদি জমিতে দেওয়া হতো সুলতান এই দান বাতিলও করতে পারতেন তবে তা কদাচিৎ হতো।


সুতরাং ইক্তা ব্যবস্থার তিনটি পর্যায়ে পড়ে। প্রথম তেরো শতক থেকে রাজস্ব সংগ্রাহক প্রশাসকদের নিয়ে সাম্রাজ্য গঠিত ছিল। তারপর চৌদ্দ শতক থেকে ইক্তা গুলির উপর রাজকীয় চূড়ান্ত নিয়ম কায়েম করা হয়, তৃতীয় পর্যায়ে চৌদ্দ শতকের মাঝখান থেকে ষোলো শতকের মাঝখান পর্যন্ত পূর্বের সরলতম রূপটি আবার ফিরিয়ে আনা হয়। 


ইক্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই পূর্বাতন শাসক শ্রেণীর সামাজিক মর্যাদা কমিয়েছিল তারা উৎখাত হননি কিন্তু বশীভূত হয়েছিলেন। আলাউদ্দিনের ভূমি রাজস্ব সম্পর্কিত পদক্ষেপ গুলির সঙ্গে খুৎ, মুকাদ্দামের উপর শাসক শ্রেণীর কর্তৃত্ব বাড়তে থাকে। গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের সময় এদের রেহাই দিলেও মোহাম্মদ বিন তুঘলক সে রেহাই তুলে দেন তাই দোয়াব অঞ্চলে বিদ্রোহ হয়। ইরফান হাবিবের মতে এই ব্যবস্থা কোন সামাজিক বিপ্লব নয় একে কৃষির ক্ষেত্রে শোষণ ব্যবস্থার এক নতুন রূপ বলা যেতে পারে ।


মুঘলরা ভূমি রাজত্ব আদায়ের জন্য যে জায়গিরদারী ব্যবস্থা প্রচলন করেছিলেন তাকে ঐতিহাসিকরা ইকতা ব্যবস্থারই বিস্তারিত ও জটিল রূপ বলে মনে করে। জায়গীরদাররা ইকতাদারদের মতোই রাজস্ব সংগ্রহ করত এবং সম্রাটের জন্য সেনাবাহিনী তৈরি করত। তবে তারা সম্রাটের প্রয়োজন অসামরিক দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হত। জায়গীর গুলিতে বিচার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার যথাক্রমে কাজী ও মুফতি এবং ফৌজাদারদের অধীনে ছিল অর্থাৎ জায়গীর ব্যবস্থা ছিল ইক্তা ব্যবস্থার একটি উন্নত রূপ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...