সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলায় ফরাজি আন্দোলন | Farazi Movement in Bengal

বাংলায় ফরাজি আন্দোলন 

'ফরাজ' শব্দটি থেকে ফরাজি শব্দের উৎপত্তি। এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আল্লাহ -এর নির্দেশ। যারা আল্লাহের নির্দেশ পালন করেন তারা আক্ষরিক অর্থে ফরাজি। 19 শতকে ব্রিটিশ সরকার এবং তার জমিদারি ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে একাধিক কৃষক বিদ্রোহ বাংলার মাটিতে সংগঠিত হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ফরাজি বিদ্রোহ। ইসলাম ধর্মকে কুসংস্কার মুক্ত করে মুসলমান সম্প্রদায়কে আল্লাহ নির্দেশিত পথে পরিচালত করার জন্য প্রথম ফরাজি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

ফরাজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন হাজি শরিয়ত উল্লাহ, যিনি দুদুমিঞা নামে বেশি পরিচিত। হজ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের করে (1820) তিনি ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন। ফরাজিরা জমিদারি শোষণের হাত থেকে মুক্তির পথ ইসলামের মধ্যেই খুঁজেছিল। ইসলাম মতে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আল্লাহ। ইসলামের প্রাথমিক কলেমার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া কোন মালিক নেই। সম্ভবত এই যুক্তিতেই ফরাজীরা জমির ওপর জমিদার বা অন্য কোনো প্রভুর মালিকানাকে অস্বীকার করলো। তারা ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে দার উল হরব বা শত্রুর দেশ হিসাবে গন্য করল এবং তারা ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতকে দার উল ইসলামের দেশে পরিণত করার সংকল্প নিলেন।

ফরাজিদের এই বক্তব্য একই সাথে জমিদার এবং গোঁড়া মৌলবাদীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফরাজিদের আন্দোলন ক্রমশ জঙ্গিরূপ ধারণ করে। তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল জমিদার, মহাজন ও নীলকর। যদিও শেষ পর্যন্ত ফরাজি বিদ্রোহ স্থিমিত আসে। দুদুমিঞার মৃত্যুর পর তারা বিশেষ করে দুর্বল হয়ে পড়েন। জমিদার, নীলকর ও পুলিশের অবিরাম অত্যাচারের ফলে বিদ্রোহ স্তব্ধ হয়ে যায়। 

ফরাজি বিদ্রোহকে অনেকেই ধর্মীয় বিদ্রোহের বাইরে কিছু ভাবেনি। তবে এ বিদ্রোহের শ্রেণী চরিত্রকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ বিদ্রোহীদের প্রায় সকলেই ছিলেন কৃষক এবং বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল আর পাঁচটা সমসাময়িক কৃষক বিদ্রোহের মত জমিদার-মহাজন-নীলকর চক্র। বিদ্রোহে যে কেবল মুসলমান কৃষক অংশগ্রহণ করেছিল এমনটাও নয়। তাই এই বিদ্রোহের সাম্প্রদায়িক চরিত্র প্রদান করলে বিদ্রোহের অবমূল্যায়ণ হয়।

The origin of the word Faraji is from the word 'Faraz'. It is an Arabic word. This means the command of Allah. Those who obey God's commands are literally Farazi. In the 19th century, several peasant revolts against the British government and its zamindari system were organized in Bengal. One of them was the Faraji Rebellion.  It was started to lead the Muslim community in the path directed by Allah by freeing Islam from superstition. But within a few days, it crossed the religious boundaries and turned into a political movement.

One of the leaders of the Faraji movement was Haji Shariat Ullah, better known as DuduminaAfter returning from Hajj, he started the Faraji movement (1820). The Fazajis sought a way out of the exploitation of zamindari in Islam. According to Islam, Allah is the owner of the entire universe. The basic premise of Islam is that there is no owner except Allah. Perhaps this is the reason why the Farajis denied ownership of the land to the zamindar or any other lord. They regarded British ruled India as Dar ul Harb or enemy country and they determined to end British rule and turn India into Dar ul Islam.

This statement of Faraji angered the zamindars and Muslim orthodox fundamentalists at the same time. The Faraji movement gradually became militant. The target of their attack was zamindars, moneylenders, and neelkars . Although in the end, the Faraji rebellion came to a halt. They became weak after Dudumina's death. The revolt came to a standstill as a result of the relentless oppression of zamindars, indigo planters, and the police. 

Many historians consider the Faraji Rebellion to be a religious rebellion. However, there is no way to deny the class character of this rebellion. Because almost all of the rebels were peasants and the target of the rebels was the zamindar-mahajan-neelkar nexus like other contemporary peasant revolts. It is not only Muslim peasants who took part in the revolt. Therefore, if the communal character of this revolt is given, then the revolt is devalued.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ