ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ: হিতবাদী আদর্শ
আঠারো শতকের শেষদিকে ইংরেজদের মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তারের বিষয়টি বেশি করে প্রাধান্য পেতে থাকে এবং এই পর্বে তারা এশিয়া ও আফ্রিকাতে তারা সাম্রাজ্য বিস্তার ঘটিয়েছিল। একই সঙ্গে এই সময়ে ব্রিটিশদের দেশানুরাগ ক্রমশ জেগে ওঠে, যা তাদের ভিতর সাম্রাজ্যিক অধিকারের গর্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা গড়ে তুলেছিল। গোঁড়ামির অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মননশীল পরিবেশে প্রাচ্যের লোকেদের সামনা সামনি ব্রিটিশরা নিজেদের আধুনিক সভ্য হিসাবে দাবী করতে থাকে। এই প্রচেষ্টা উনিশ শতকে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনাকে যথার্থতা দান করেছিল। এজন্যই তারা ভারতে একাধিক সমাজ সংস্কারমূলক কাজে হাত দিয়েছিল। সুতরাং রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে বিচার শক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ভারতবর্ষের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ।
সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শের বিভিন্ন ধারার ভিতরে উপযোগবাদী ভাবাদর্শ বেশ প্রভাবশালী ছিল। উপযোগবাদের প্রবক্তা জেরেমি বেন্থাম। তিনি প্রচার করেন যে মানব সভ্যতার আদর্শই হল মানুষের মঙ্গল সাধন করা। তিনি বলতেন যে, যথোচিত আইন ও জ্ঞানদীপ্ত শাসনই পরিবর্তন ঘটার সবচেয়ে কার্যকর পন্থা এবং উন্নয়নের পূর্বশর্তই হলো আইনের অনুশাসন। উপযোগবাদী তাত্ত্বিক জেমস মিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যালয় মুড়ি খাওয়া দরকারি যুক্ত হবার পর কোম্পানির ভারতের উদ্দেশ্যে গৃহীত নীতির গুলিতে হিতবাদী মতাদর্শে প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মিলের লেখা দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া 1817 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য সম্বন্ধে অবাস্তব ধারণাটি প্রথম ভেঙে দেন। তিনি বলেন যে, ভারতবর্ষের সংস্কৃতির দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়ে স্যার উইলিয়াম জোন্স এর মত মানুষেরা দেশটির সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির সম্বন্ধে কল্পনা করেন এবং তাকে জিইয়ে রাখেন। বেন্থামের পথ অনুসরণ করে মিল বলেন যে ভারতবর্ষে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একজন কার্যকরী শিক্ষকের অর্থাৎ জনসাধারণের উদ্দেশ্যে যথোচিত আইন প্রণয়নে বিচক্ষণ এমন সরকারের প্রয়োজন যা ভারতের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। হিতবাদী চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েই লর্ড মেকলে নেতৃত্বে 1833 খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন গঠিত হয় এবং 1835 খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড রচিত হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন