রাজা রামমোহন রায় ও সতীদাহ আন্দোলন
19 শতকে বঙ্গীয় নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তাকে 'ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহনের জন্ম হলেও প্রাচ্য দেশীয় এবং পশ্চিমী জ্ঞান -বিজ্ঞানের উপর গভীর অধ্যায়নের পর তিনি সনাতন ভারতীয় সমাজের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার কর্ম প্রচেষ্টা ছিল বহুমাত্রিক। একদিক থেকে তিনি যেমন হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা (মূর্তি পূজা), পুরোহিততন্ত্র এবং বহুঈশ্বরবাদের কঠোর সমালোচনা করে উপনিষদীয় একেশ্বরবাদ প্রতিষ্টায় সচেষ্ট হন।অন্যদিকে সতীদাহ এবং অন্যান্য সামাজিক কূ- প্রথার বিরুদ্ধে তিনি খড়্গহস্ত।
মৃত স্বামীর চিতায় স্ত্রীর আত্মাহুতি দেওয়ান নাম হল সতীদাহ ও সহমরণ। এইভাবে একজন নারীর সতীত্ব রক্ষা হয় এবং সতীত্ব প্রমাণিত হয়। মহাভারতের মাদ্রি সহমৃতা হয়েছিলেন। সতীদাহ কোনো আবশ্যিক কর্তব্য ছিল না। বিষয়টি ছিল ঐচ্ছিক। কিন্তু কালের প্রভাবে এর সাথে বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থ যুক্ত হয়ে সতীদাহ সনাতন হিন্দু সমাজে একটি নিয়মিত আচারে পরিণত হয়। সতীদাহ একটি পারিবারিক সম্মান রক্ষারও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
মধ্যযুগের বহু শাসক যেমন আলাউদ্দিন খলজি, আকবর প্রমুখ সতীদাহ প্রথা নিবারণে সচেষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু সে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সতীদাহ প্রথার মতো বিভিন্ন সামাজিক কু-প্রথা নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কিন্তু ভারতীয়দের পক্ষ থেকে বিদ্রোহের ভয়ে সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, উইলিয়াম কেরি প্রমুখ পন্ডিত সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদনও রেখেছিলেন।
একথা ঠিক যে সমাজের একটা অংশ দীর্ঘদিন ধরেই সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বলে আসছিল। কিন্তু রামমোহনের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তা আইন করে নিষিদ্ধ হয়। রামমোহন রায় তার সম্পাদিত সংবাদ কৌমুদি পত্রিকায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। সরকারের কাছে তার আবেদনের ভিত্তিতে 1829 সালে তদানীন্তন বড়লাট লর্ড বেন্টিং আইন জারি করে (রেগুলেশন নং: 17) সতীদাহ প্রথাকে বেআইনি ও ফৌজদারি আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেন।
রামমোহনের লড়াই কেবল সতীদাহ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি নারীর অধিকার রক্ষার ব্যাপারেও সোচ্চার হয়েছিলেন। পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার, নারী শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি ব্যাপারে তিনি জনমত গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেন। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের মত কূ-প্রথার বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদ করেন।
রামমোহনের সমালোচকগণ সমাজ সংস্কার মূলক কার্যাবলীর ক্ষেত্রে তাঁর সামাজিক কুপ্রথা গুলি শাস্ত্রীয় না অশাস্ত্রীয় এই বিতর্কে যাওয়াটা সঠিক পন্থা ছিল না। তাদের মতে রামমোহন যদি মানুষের যুক্তি ও বিবেকের কাছে আবেদন রাখতেন তাহলে সেই প্রচেষ্টায় অনেক বেশি আধুনিকতার ছাপ থাকত। তবে উনিশ শতকীয় সমাজ কতটা মানবতাবাদী আবেদনে তার চিরাচরিত বিশ্বাস ত্যাগ করত তাই নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই এই দিক থেকে বিচার করলে রামমোহনের পন্থায় অধিক যুগোপযোগী বলেই মনে হয়।
Very nice 👌
উত্তরমুছুনধন্যবাদ স্যার
উত্তরমুছুন