সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুন, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘাত | Arab-Israel Conflict

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতি যতগুলি আঞ্চলিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে তার মধ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘর্ষ সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ স্থায়ী। এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা এ পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব প্রমাণিত হয়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের দিনগুলিতে এই সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ। এ পর্যন্ত চারটি বড় মাপের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ হয়েছে, যা পশ্চিম এশিয়ার শান্তির বাতাবরণকে নষ্ট করেছে এবং সমগ্র আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে রেখেছে। একদিকে আরব জাতীয়তাবাদ যেমন সোভিয়েত সমর্থন পেয়েছিল তেমনি ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিগুলির মদত পেয়েছিল। এই সংঘর্ষগুলিতে একদিকে আরব জাতীয়তাবাদের সাথে ইহুদি জাতীয়তাবাদের সংঘাত অন্যদিকে ইজরায়েল ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ড দখল নিয়ে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আরব ইজরায়েল সংঘর্ষের মূলে ছিল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে দীর্ঘকাল প্রবাসী ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকেরা আরব রাষ্ট্র প্যালেস্টাইনে এসে স্থায

সুয়েজ সংকট | The Suez Crisis

সুয়েজ সংকট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি যেসব বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল তার মধ্যে সুয়েজ খাল সংকট অন্যতম, যা একদিকে দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল সংঘর্ষে র জন্য দায়ী এবং যাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াইয়ের রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যেও প্রবেশ করে। ১৯৫৬ খ্রি: মিশরে গামাল আব্দেল নাসের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হয়ে নাসের একদিকে সমগ্র আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর হন, তেমনি অন্যদিকে মিশরকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বেশকিছু সংস্কার ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মিশরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার উন্নয়নের জন্য নাসের কৃষি অর্থনীতি ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বার্থে ১৪০০মিলিয়ন ডলারের আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। মার্কিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স শুরুতে ওই বাঁধ নির্মাণে মিশরকে ঋণদান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী সময়ে নাসেরের কমিউনিস্ট সংসর্গ এবং ইজরায়েল বিরোধীতার কারণে তা দিতে অস্বীকার করে। এই পরিস্থিতিতে নাসের এক বিকল্প পথ অনুসন্ধানে রত হন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জুলাই নাসের এক ঐতিহাসিক ও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুয়েজ খালের জাতীয়করণ এর ক

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন | Non-Aligned Movement (NAM)

জোট নিরপেক্ষ নীতি  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন-- এই দুই পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদের ছত্রতলে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্যবাদের ছত্রতলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে পরস্পর বিরোধী জোট গঠনে অগ্রসর হয়। দ্বিমেরুতার এই রাজনীতি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও গ্রাস করতে উদ্যত হয়। এই প্রেক্ষিতে জোট রাজনীতিকে অস্বীকার করে নির্জোট আন্দোলনের (NAM) সূচনা হয়। নির্জোট আন্দোলনের রূপকার ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু। তাঁর প্রধান সহযোগী ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ, মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের, ঘানার রাষ্ট্রপ্রধান নত্রুমা এবং পরবর্তীকালে যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো, যিনি স্ট্যালিন কর্তৃক কমিনফর্ম থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন।  জোট নিরপেক্ষতার প্রধান যুক্তি ছিল, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলির সামনে যে একাধিক সমস্যা রয়েছে তার সমাধান সম্ভব একমাত্র স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহ

অশোকের ধম্ম | Dhamma of Ashoka

অশোকের ধম্মের প্রকৃতি ধম্মনীতি ও বৌদ্ধ ধর্ম কি এক? সুবৃহৎ মৌর্য সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষার জন্য একটি ভাবাদর্শের একান্ত প্রয়োজন ছিল। সম্রাট অশোকই প্রথম সেই পদক্ষেপ নিলেন ধম্মনীতি গ্রহণ করে। অশোকের অনুশাসন গুলির মুখ্য উপজীব্য হল ধম্ম বা ধর্ম। লিপিগুলি ধম্মলিপি নামেও পরিচিত। এই ধম্ম বা ধর্মের প্রকৃতি কি, ধম্ম ও বৌদ্ধধর্ম এক কি না তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক বিদ্যমান। একদিকে রাধাগোবিন্দ বসাক মনে করেন ধম্ম এবং বৌদ্ধধর্ম এক। অন্যদিকে হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী, নীলকন্ঠ শাস্ত্রী এবং রোমিলা থাপার মনে করেন ধম্ম হল সাধারন নীতিবাচক উপদেশাবলী। ধম্ম এবং বৌদ্ধ ধর্ম এক বলে যারা মনে করেন তাদের বক্তব্য হল কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা অশোকের হৃদয়ে যে অনুতাপের সৃষ্টি করে তার ফলস্বরূপ তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন, হিংসাশ্রয়ী যুদ্ধের নীতি চিরতরে পরিহার করেন এবং শান্তিকামী নীতি অবলম্বন করে শাসন চালাতে থাকেন। অর্থাৎ কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে অশোক একজন নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ হিসাবে বৌদ্ধ রীতিনীতি ও আদর্শ অনুযায়ী দেশ শাসন করতে থাকেন। আরও মনে করা হয় যে তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা প্রদান করেন। তাই বৌদ্ধ আখ্যানে তাকে 

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিনাত্য নীতি | Decan Policy of Aurangazeb

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিনাত্য নীতি ঔরঙ্গজেব তাঁর শাসনের প্রথম দিকে বেশিরভাগ সময় উত্তর ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য দক্ষিণ ভারতের দিকে বিশেষ নজর দিতে পারেননি। এই অবসরে দক্ষিণ ভারতে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের দুটি স্বাধীন রাজ্য বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এই সুযোগে মারাঠা জাতি শিবাজীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং মুঘল বিরোধিতার নজির স্থাপন করেছিল। ইতিমধ্যে শাহজাদা আকবর বিদ্রোহ করেছিলেন এবং শিবাজীর পুত্র শম্ভূজীর দরবারে গিয়ে আশ্রয় নেন। এই পরিস্থিতিতে আওরঙ্গজেব মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে; প্রথমত বিজাপুর ও গোলকুণ্ডাকে সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা এবং নবউত্থিত মরাঠা শক্তির বিলোপসাধনের জন্য দাক্ষিণাত্য অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট স্বয়ং দাক্ষিণাত্য আসেন।আহম্মদনগর থেকে অভিযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা হয়। ইতিমধ্যে শিবাজীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু শম্ভূজীর নেতৃত্বে মারাঠারা তখনও বেশ শক্তিশালী। পরপর চারটি অভিযানে আওরঙ্গজেব মারাঠাদের কতগুলি দুর্গ দখল ছাড়া কিছুই করতে পারিনি বা শাহজাদা আকবরকেও ধরা যায়নি। ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে শম্ভূজী ঔরঙ্গজেব

মুঘল ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা | Mughal Banking System

মুঘল ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা মুঘল যুগে ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল কৃষি। কিন্তু কারিগরি উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আলোচ্য পর্বে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছিল। অভ্যন্তরীণ এবং সামুদ্রিক বাণিজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। কারিগরি উৎপাদন ও বাণিজ্যের ওপর ভর করে দ্রুতগতিতে নগরায়ন হয়েছিল। বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক হয়ে উঠেছিল এই যুগের উন্নত ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ব্যাংকারদের উপস্থিতি ছিল। 'শরফ' নামে পরিচিত এক প্রকার ব্যাংকাররা কৃষক এবং কারিগরদের ঋণ দিতেন। অনেক সময় বণিকরা কৃষকদের ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য ঋণ প্রদান করতেন। রাষ্ট্রের তরফ থেকে কৃষকরা 'তাকাভি' নামক এক প্রকার ঋণ পেত। ট্যাভার্নিয়ের রচনা থেকে জানা যায় প্রতিটি গ্রামে একজন করে মহাজন থাকতেন যারা এই ঋণ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন।  ব্যাংক এবং বীমা ব্যবস্থা পরিচালিত হত 'শরফ'দের মাধ্যমে। লেটার অফ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এরা দূরে টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা করতেন। ট্যাভার্নিয়ের রচনা থেকে জানা যায় এরা এক্সচেঞ্জ এর ক্ষেত্রে বাটা আদায় করতেন। পুরাতন মুদ্রাকে নতুন মুদ্রায় বদলে দিলেও এরা বাটা আদায় কর

মুঘল- শিখ সম্পর্ক | Mughal-Sikh Relation

মুঘল- শিখ সম্পর্ক শিখ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গুরু নানক। পঞ্চদশ শতকে তারই হাত ধরে একটি পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে শিখদের আবির্ভাব ঘটে। এই ধর্মের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল কুসংস্কার ও জাতিভেদের বিরোধিতা করা এবং ধর্মের দরজা হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত করা।        শিখদের প্রথম গুরু ছিলেন নানক। নানকের মৃত্যুর পর গুরু পদে অধিষ্ঠিত হন গুরু অঙ্গদ। গুরু অঙ্গদ থেকে গুরু অর্জুন পর্যন্ত মুঘলদের সঙ্গে শিখদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। গুরু রামদাসের সময় মুঘল সম্রাট আকবর পাঁচ বিঘা জমি দান করেছিলেন, সেখানে অমৃতসর নামে একটি পুকুর খনন করে পুকুর সংলগ্ন এলাকায় হরিমন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ক্রমশ এই মন্দির এবং অমৃতসর হয়ে ওঠেছিল শিখ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক উপাসনার কেন্দ্র। গুরু রামদাসের অনুরোধে আকবর পাঞ্জাবে এক বছরের রাজস্বও মুকুব করে দিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের পারিবারিক দ্বন্দ্বে গুরু অর্জুনের নাক গলানোর ফলে মুঘলদের সঙ্গে শিখদের  এতদিন যে শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক ছিল তাতে ফাটল ধরে। জাহাঙ্গীরের পুত্র খসরু বিদ্রোহ করলে গুরু অর্জুন তাকে সহযোগিতা ও আশ্রয় প্রদান করেন। এই অপরাধে জাহাঙ্গী

বঙ্গভঙ্গের উদ্দেশ্য |

  বঙ্গভঙ্গের উদ্দেশ্য  জনবিরোধী শাসক হিসেবে লর্ড কার্জনের এমনিতেই কুখ্যাতি ছিল। কিন্তু তাঁর যে পদক্ষেপটি জনসাধারণের সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় হয়েছিল সেটি হল বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলা প্রেসিডেন্সির আয়তন বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই উনিশ শতকের প্রথম দশক থেকেই বাংলা প্রেসিডেন্সির আয়তন কমানো সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব তোলা হচ্ছিল। একবার আসাম ও সিলেটকে বাংলা থেকে আলাদা করার কথা উঠে। ১৮৯৬-৯৭ সালে আসামের মুখ্য কমিশনার উইলিয়াম ওয়ার্ড প্রস্তাব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা ও ময়মনসিংহকে অন্তর্ভুক্ত করে আসামকে সমর্থবান করা হোক। ১৯০৩ সালের মার্চ মাসে বাংলার ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজার বাংলার আঞ্চলিক পুনর্বিন্যাস' সংক্রান্ত একটি মিনিটে ওয়ার্ডের প্রস্তাবকে উত্থাপন করেন এবং বড়লাট কার্জন প্রস্তাবের সামান্য কাটছাঁট করে বঙ্গভঙ্গ-এ সম্মত হন। স্বরাষ্ট্র সচিব রিজলির একটি চিঠিতে সর্বপ্রথম ১৯০৩ সালে ৩রা ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করা হয়। অ্যান্ড্রু ফেজার, রিজলি এবং কার্জনের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা বাস্তবায়

সুরাট বিচ্ছেদ | Surat Congress

সুরাট বিচ্ছেদ জাতীয় কংগ্রেসের ভিতরেই নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠী ছিল। তাদের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ সামনে আসছিল,কার্জনের স্বৈরাচারী শাসন এবং বঙ্গভঙ্গ কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী আন্দোলনের বিষয়ে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে আরো দূরত্ব তৈরি হয়। ১৯০৬ সালে কলকাতা অধিবেশনে সংঘাত আরো তীব্র হয়। ১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে তর্কাতর্কির গণ্ডি পেরিয়ে জুতো ছোড়াছুড়ি এবং পুলিশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। চরমপন্থীরা কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত হয়। কংগ্রেসের নরমপন্থী দের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, নরমপন্থী নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ঘোষণা করে দেয় যে তাদের লক্ষ্য উপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন। অন্যদিকে চরমপন্থীরা স্বদেশী, বয়কট ও জাতীয় শিক্ষার কর্মসূচি গ্রহণ করে ফলে কংগ্রেস  দুর্বল হয়। এবং ব্রিটিশদের কাজ আরও সহজ হয়।

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা । Revenue Settlement of Murshid Quali Khan

 মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব ব্যবস্থা মুর্শিদকুলি খান  বাংলার দিওয়ান রূপে নিযুক্ত হওয়ার পর, দেখেন বাংলার তখন রাজস্ব বলতে বোঝাত বাণিজ্যিক শুল্ক। কারণ বাংলার সমস্ত অঞ্চল আমলা ও অভিজাতদের মধ্যে বন্টিত ছিল, তাই বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য মুর্শিদকুলি প্রথম বাংলার যাবতীয় অঞ্চলকে খালিসাতে রূপান্তরিত করেছিলেন।‌ সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে কিছু ব্যক্তিকে ইজারা দানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই নতুন ইজারাদারদের বলা হত মাল-জামিন। তাই এই ব্যবস্থা মাল- জামিনি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ঐতিহ্যগত জমিনদার পরিবারগুলির অধিকাংশকেই মালজামিনি এর অধীনে থাকতে হয়। মুর্শিদকুলির রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলায় এক নতুন অভিজাত শ্রেণীর বিকাশ ঘটে। মুর্শিদকুলির রাজস্ব বন্দোবস্তের কাজে সর্বাধিক সহায়তা করেছিলেন রাজশাহীর ব্রাহ্মণ রঘুনন্দন। মুর্শিদকুলি কঠোরভাবে রাজস্ব প্রশাসন চালনা করা এক নজির সৃষ্টি করেছিলেন। মুর্শিদকুলি রাজস্ব আদায়ের জন্য সরকারি ব্যয় হ্রাস করে, সেই খরচ রাজস্ব প্রদানকারী দের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মুর্শিদকুলি সমগ্র সুবাকে তেরোটি চাকলায় বিভক্ত করেছিলেন, প্র

সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ বাহিনী | Subhas Chandra Basu and Indian National Army (INA)

সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ বাহিনী বাংলা তথা ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ দশকের বঙ্গীয় রাজনীতি অসম্ভব ঘটনাবহুল। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অক্ষশক্তিপক্ষীয় জাপানের দ্রুত পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ভারতের ব্রিটিশ সরকার পোড়ামাটির নীতি অনুসরণ করে বাংলার শস্য ও সম্পদ নষ্ট করে দেয়। এই অবস্থায় কংগ্রেস ব্রিটিশের পক্ষে না বিপক্ষে অবস্থান করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, এই প্রেক্ষাপটে সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করেন ব্রিটিশ বিতারণের সুবর্ণ সুযোগ এসে গেছে। কংগ্রেসের মধ্যে বাম মনোভাবাপন্ন হিসাবে পরিচিত সুভাষের বিরোধী শক্তির অভাব ছিল না। আবার তিনি ও নেহেরুই ছিলেন তরুণ কংগ্রেসীদের আইকন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ যখন আন্তর্জাতিক পরিসরে কোণঠাসা তখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপর আঘাত এনে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা কতটা সঠিক তা নিয়ে গান্ধীর সঙ্গে সুভাষের মতবিরোধ হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দক্ষিণপন্থীদের চাপে সুভাষকে কংগ্রেস ত্যাগ করতে বাধ্য করা

মৌর্য অর্থনীতি | Maurya Economy

মৌর্য অর্থনীতি | Maurya Economy মৌর্যরা যে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল তার জন্য দরকার ছিল ব্যাপক হারে সম্পদ সংগ্রহ করা। এজন্য মৌর্য যুগের অর্থনীতির অন্যতম চরিত্র ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। মৌর্য যুগের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির পরিচয় আমরা পাব কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, সমসাময়িক গ্রিক বিবরণী এবং অশোকের অনুশাসনগুলি থেকে। কৃষি অর্থনীতি গ্রিক বিবরণী থেকে জানা যায়, মৌর্য যুগের উৎপন্ন ফসলের নানান বৈচিত্র ছিল। প্রধান ফসল ছিল ধান। ধান ছাড়াও গম, জোয়ার, বাজরা এবং আখ চাষের কথা জানা যায়। জনসংখ্যার বেশিরভাগই ছিল কৃষিজীবী। কৃষির উপর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল এক প্রকার উচ্চপদস্থ কর্মচারীর হাতে, যিনি অর্থশাস্ত্র-এ সীতাধ্যক্ষ নামে পরিচিত ছিলেন। সীতা জমি ছিল আসলে রাজার খাসজমি। তবে সীতাধ্যক্ষ কেবল সীতা জমিতেই নয়, সাম্রাজ্যের অন্যান্য জমিতেও উৎপাদনের তদারকি করতেন। অর্থশাস্ত্রে সীতা জমির উৎপাদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই প্রকার জমিতে দু'রকম কৃষি শ্রমিক নিয়োগ করা হত; একদল নিজস্ব উপকরণ দিয়ে চাষ করত, আরেকদল কেবল দৈহিক পরিশ্রম দিত। তাই প্রথম দল উৎপাদনের ১/২ অংশ এবং দ্বিতীয় দল ১/৪

স্বরাজ দল ও বাংলার রাজনীতি | Swaraj Party in Bengal Politics

 স্বরাজ দল ও বঙ্গ রাজনীতি বারদৌলি সিদ্ধান্ত (১৯২২) ও অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কংগ্রেসের ভিতরে গান্ধিপন্থী কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ প্রস্তাব দিতে থাকেন যে, ব্যবস্থাপক সভাগুলিতে কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করা উচিত। ১৯২২ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতায় কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী নীতি নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস সদস্যরা গয়া অধিবেশনে মিলিত হন। মতিলাল নেহরু ও চিত্তরঞ্জন দাস প্রস্তাব দেন যে, ব্যবস্থাপক সভা বয়কট না করে বরং সেখানে প্রতিনিধিত্ব করে কংগ্রেস সদস্যরা সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের প্রকৃত রূপ উদঘাটিত করুক। ব্যবস্থাপক সভারগুলির কার্যাবলিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ভিন্ন পন্থায় সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করার কথাই চিত্তরঞ্জন দাস এবং মতিলাল নেহেরু বলেছিলেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বল্লভ ভাই প্যাটেল রাজেন্দ্রপ্রসাদ রাজাগোপালাচারী প্রমূখরা পুরানো নীতির পক্ষেই ছিলেন। গয়া অধিবেশনে পরিবর্তনপন্থীরা ভোটে পরাজিত হন। চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহেরু কংগ্রেসের

এ. কে. ফজলুল হক ও কৃষক প্রজা পার্টি | A. K. Fazlul Haque and K.P.P.

 এ. কে. ফজলুল হক ও কৃষক প্রজা পার্টি দেশভাগ ও স্বাধীনতার সমসাময়িককালে এবং তার কিছু আগে ও পরে বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এ কে ফজলুল হক। 'শেরে বাংলা' নামে পরিচিত ফজলুল হক তার প্রাথমিক জীবনী পেশায় একজন আইন ব্যবসায়ী ছিলেন। পরবর্তীকালে সালিমুল্লাহ ও নবাব আলী চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসে তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতিতে তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য তিনি ক্রমশ মুসলমান শিক্ষিত সমাজের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি নামে একটি আধা রাজনৈতিক সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই মতানৈক্যজনিত কারণে তিনি দলবল নিয়ে ১৯৩৫ সালে কৃষক প্রজা পার্টি গঠন করেন। এই দল হকের নেতৃত্বে কৃষকদের অধিকার পুনরুদ্ধার ও জমিদারদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের মুক্তিদান এবং জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে তাদের জমির মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু করেছিল। এর ফলে কৃষক প্রজা পার্টি কৃষিজীবী নিম্নবৃত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতি মহম্মদ আল

স্বদেশী আন্দোলন | Swadeshi Movement

 স্বদেশী আন্দোলন কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাঙালি তথা ভারতবাসী মেনে নেয়নি। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালি প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল। এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন রাজপথ থেকে হেঁসেল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। আন্দোলন কেবলমাত্র রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাহিত্য,শিল্পকলা, সঙ্গীত, বিজ্ঞান-- সর্বত্র এই আন্দোলন বিস্তৃত হয়েছিল। ১৯০৩ সালে ডিসেম্বর মাসে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ওঠা থেকে শুরু করে ১৯০৫ সালে জুলাই মাসে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা পর্যন্ত আন্দোলন নরমপন্থী কার্যকলাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবাদ সভা সংগঠিত হয়েছিল। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, কৃষ্ণ কুমার মিত্র প্রমুখরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ( বেঙ্গলি, সঞ্জীবনী প্রভৃতি) প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ভারত সচিবের কাছে বঙ্গভঙ্গ রদ করার দাবি নিয়ে অসংখ্য স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এই সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছিল। যখন বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হল, ১৯০৫ সালের ৭ ই আগষ্ট, টাউনহলের এক সভায় সুরেন্দ্রনাথের প্রাথমিক আপত্তি সত্ত্বেও আন্দোলনের পরবর্তী পন্থা হিসেবে ব্রিটিশ পণ্য বয়কটের  সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এইভাবে নরমপন্থী