সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘাত | Arab-Israel Conflict

মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘাত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতি যতগুলি আঞ্চলিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে তার মধ্যে আরব-ইজরায়েল সংঘর্ষ সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ স্থায়ী। এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা এ পর্যন্ত প্রায় অসম্ভব প্রমাণিত হয়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের দিনগুলিতে এই সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ। এ পর্যন্ত চারটি বড় মাপের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ হয়েছে, যা পশ্চিম এশিয়ার শান্তির বাতাবরণকে নষ্ট করেছে এবং সমগ্র আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে রেখেছে। একদিকে আরব জাতীয়তাবাদ যেমন সোভিয়েত সমর্থন পেয়েছিল তেমনি ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তিগুলির মদত পেয়েছিল। এই সংঘর্ষগুলিতে একদিকে আরব জাতীয়তাবাদের সাথে ইহুদি জাতীয়তাবাদের সংঘাত অন্যদিকে ইজরায়েল ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ড দখল নিয়ে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

আরব ইজরায়েল সংঘর্ষের মূলে ছিল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে দীর্ঘকাল প্রবাসী ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকেরা আরব রাষ্ট্র প্যালেস্টাইনে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। এ বিষয়ে ইংল্যান্ডের সমর্থন ছিল। এই ঘটনার ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। ইহুদীরা একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী করতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ  ম্যান্ডেটের অবসান ঘটলে প্যালেস্টাইন ভূখণ্ডে স্থানীয় আরব ও বহিরাগত ইহুদীদের পরস্পর বিরোধী দাবীর ভিত্তিতে প্যালেস্টাইন বিভাজনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১১ সদস্যের কমিটির (UNSCOP) সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যালেস্টাইন বিভাজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্যালেস্টাইনের অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর অংশটিতে আরবরা বসবাস করবে এবং অপর অংশটিতে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। জেরুজালেম নগরী রাষ্ট্রসঙ্ঘের অছি পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকবে। যদিও ভারত, ইরান এবং সাবেক যুগোস্লোভিয়া এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল।

এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি আরবদের সাথে ইহুদিদের দাঙ্গা বেধে যায়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে ইংল্যান্ড প্যালেস্টাইন ত্যাগ করলে ইহুদীরা প্যালেস্টাইনের একটা বড় অংশ দখল করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে (১৯৪৮, মে )। নবগঠিত রাষ্ট্রের রাজধানী হয় জেরুজালেম। সোভিয়েত, আমেরিকা এবং পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি নতুন রাষ্ট্রকে সমর্থন জানায়।

প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ

স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মিশর, সিরিয়া, লেবানন, ট্রান্সজর্ডান ও ইরাকের সেনাবাহিনী একজোট হয়ে ইজরায়েল আক্রমণ করে। শুরু হয় প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধ। আরবদের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তির কাছে ইজরায়েলের পরাজয়-ই স্বাভাবিক বলে প্রাথমিক ধারণা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্বকে অবাক করে ইজরায়েল আক্রমনকারী আরব রাষ্ট্রজোটকে পরাজিত করে এবং প্যালেস্টাইনের একটি অংশ দখল করে নেয়। জাতিপুঞ্জের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। কিন্তু আরব লিগ ইজরায়েলের সাথে কোনও শক্তিচুক্তি স্থাপন করেনি।

প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ইজরায়েল বেশ কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহন করে। নিজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বিদেশ থেকে আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম আমদানি করতে থাকে। পশ্চিম শিবিরে কূটনৈতিক প্রভাব ফেলে সমসাময়িক ঠান্ডা লড়াইয়ের পূর্ন মদত নেবার চেষ্টা চালায়।

দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ

দ্বিতীয় আরব ইজরাইল যুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয়েছিল সুয়েজ সংকট-কে কেন্দ্র করে। জাতীয়তাবাদী এবং নির্জোট আন্দোলনের একজন প্রথম সারির নেতা হিসেবে মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন জানান। ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্বে সৃষ্ট বাগদাদ প্যাক্ট-এর বিরোধিতা করেন। মিশরের সিনাই মরুভূমির গাঁজা ভূখণ্ডের প্যালেস্টিনিও এলাকাগুলির উপর ইজরায়েল সৈনিক হামলা আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি থেকে না পেয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে তুলো রপ্তানির বিনিময়ে মিগ বিমান, ট্যাংক প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মার্কিন প্রশাসন নীল নদের উপর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি মতো সাহায্য দিতে অস্বীকার করলে নাসের সোভিয়েত সহায়তায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে্ন। এই পরিস্থিতিতে নাসের এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সুয়েজ খাল কোম্পানির জাতীয়করণের ঘোষণা করে। ২৬ শে জুলাই ১৯৫৬ এ ঘোষণা করা হয়, সুয়েজ জলপথ মিশরের জাতীয় সম্পত্ত, তাই ওই জলপথ থেকে ব্রিটিশ ও ফরাসি কোম্পানিগুলি মুনাফা করতে আর পারবে না। সুয়েজ খাল থেকে অর্জিত রাজস্ব ব্যয় করে আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ হবে। সঙ্গে সঙ্গে পূর্বতন ফরাসি অংশীদার কোম্পানিগুলির বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ইতিপূর্বেই ইহুদি জাহাজের জন্য সুয়েজ খাল বন্ধ করা হয়েছিল।

সুয়েজ খাল জাতীয়করণ এর দ্বারা পশ্চিমি শক্তিগুলি, বিশেষ করে ইংল্যান্ড বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ সুয়েজখাল কোম্পানির শতকরা ৮৮ ভাগ শেয়ার ছিল ইংল্যান্ডের। তাই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স গোপনে ইজরায়েলকে প্ররোচিত করতে থাকে যুদ্ধ বাধাতে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে অক্টোবর ইজরায়েল মিলিতভাবে মিশর আক্রমণ করে। ইঙ্গ-ফরাসি বিমান বাহিনী পোর্ট সঈদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করলে দ্বিতীয় আরব ইজরায়েল সংঘর্ষের সূচনা হয়। ত্রিশক্তি আক্রমণের কাছে মিশর পর্যদুস্ত হয় এবং প্রায় সুয়েজ খাল হারাতে বসে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেও তার সমর্থন পশ্চিমী শক্তিগুলির দিকে ছিল।

ইঙ্গ-ফরাসী নগ্ন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সোচ্চার হয়। ইরাক থেকে ইউরোপে যেত যে তেলের পাইপগুলি সিরিয়ার উপর দিয়ে সেগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যুদ্ধ বন্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণকারীর উপর ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দেয়। আমেরিকাও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় আক্রমণকারীরা পিছু হটে, মিশর থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়। জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী ইজরায়েল-মিশর সীমান্তে নিয়োগ করা হয়।

তৃতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ 

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমাগত রাজনৈতিক জটিলতা আরো একটি আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করে। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা কর্তৃক আইজেনহাওয়ার নীতি ঘোষিত হওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ইজরায়েল মার্কিন জোটের হাতের পুতুলে পরিণত হয়। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আরব রাষ্ট্রগুলি, বিশেষত মিশর ও সিরিয়াকে সমর্থন করতে থাকে। এদিকে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ইরাকে এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়াতে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। বাথ পার্টি  জাগ্রত আরব জাতীয়তাবাদের প্রতীক নাসেরের পাশে এসে দাঁড়ায়। ইরাকের বাথ পার্টির প্রধান আরেফ ঘোষণা করেন- Our gaol is clear-to wipe israel out off the map.  সিরিয়ার বাথ পার্টি আল ফাতাহ নামক ফিলিস্তিনি গেরিলা বাহিনীকে মদত দিতে থাকে। এদিকে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের বিশিষ্ট আরব রাষ্ট্রের নেতারা প্যালেস্টাইনে ইসরাইল বিরোধী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) গঠন করেন।

গোলযোগ শুরু হয় ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জর্ডন নদীর জল একটি কৃত্রিম খালে প্রবাহিত করার ইজরায়েলি প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে। এর ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং সিনাই এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফিদায়ে নিয়মিত ভাবে ইসরাইল দখলকৃত এলাকায় হানা দিতে থাকে। মিশর ছাড়াও সিরিয়া, জর্ডন এবং লেবাননের মত আরব রাষ্ট্রগুলি এই উত্তেজক পরিস্থিতিতে ইজরায়েল সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ সেনা মোতায়ন করতে থাকে। সিরিয়ার গোলান হাইট-এর ইহুদি উপনিবেশগুলির উপর বোমা বর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েল বিমান বাহিনী সিরিয় বিমান ক্ষেত্রগুলি উপর বোমাবর্ষণ করে ৬ টি মিগ বিমান ধ্বংস করে দেয়। এরপর নাসের কর্তৃক তিরান প্রণালীর মধ্য দিয়ে ইজরায়েলি জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করে। এই ঘোষণা কার্যকর হওয়ার আগেই অতর্কিত আক্রমণে (৫ই জুন) ইজরায়েল বিমান বাহিনী মিশরের বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয় এবং সেনাবাহিনী গাজা ভূখণ্ড সহ সমস্ত সিনাই উপত্যকা দখল করে নেয়। ওয়েস্ট ব্যাংক এবং জর্ডনের অন্তর্গত বাকি জেরুজালেম ও গোলান হাইট দখল করে নেয়। ইরাকের যুদ্ধবিমানগুলিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইজরায়েল এই সাফল্য মাত্র ৬ দিনের মধ্য অর্জন করেছিল বলে এই যুদ্ধ ছয় দিনের যুদ্ধ নামেও পরিচিত। 

পরিশেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সিদ্ধান্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। কিন্তু আরব-ইসরাইল সমস্যার আসল প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যায়। আরবদের মধ্যে ইজরাইলের বিরুদ্ধে জেহাদী মনোভাব গড়ে উঠতে থাকে। পরাজিত আরব রাষ্ট্রগুলি মিশরের খার্টুমে মিলিত হয়ে শপথ গ্রহণ করে- no negotiation, no recognition, no peace.

চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ

প্রথাগত যুদ্ধে ইসরাইলকে পর্যদুস্থ করা যে প্রায় অসম্ভব তার প্যালেস্তিনিওরা বুঝে গেছিল। তাই আরব রাষ্ট্র গুলির ওপর ভরসা রাখতে তারা আর পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ইয়াসের আরাফাতের নেতৃত্বে PLO শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আরাফাতের নেতৃত্বে এই সংগঠন প্রথাগত যুদ্ধ এড়িয়ে ইজরায়েলের উপর লাগাতার সন্ত্রাসবাদী হামলা চালাতে থাকে। ফলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের দায় অনেকটাই ছিল মিশরের নতুন রাষ্ট্রপতি য়ানোয়ার সাদাতের। ইজরায়েল বিরোধী যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি একদিকে সেনাবাহিনীকে সুসজ্জিত করেন। অন্যদিকে ইজরায়েল অধিকৃত অঞ্চল ফিরে পেতে ইজরায়েলের সাথে শান্তি স্থাপনের জন্য আমেরিকার উপর চাপ দিতে থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য তিনি এই কাজে সোভিয়েত সাহায্যের প্রত্যাশা করেন নি। আমেরিকা মধ্যস্থতা করতে অস্বীকার করলে আনোয়ার সাদাত সিরিয়াকে পাশে পেয়ে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ৬ অক্টোবর ইহুদিদের 'ইয়ম কিপু' উৎসব উদযাপনের দিনে আকস্মিকভাবে মিশরীয় বাহিনী ইজরায়েল অধিকৃত সিনাই উপত্যকায় আক্রমণ হানে। এভাবে চতুর্থ যুদ্ধের সূচনা হয়। ইতিহাসে এই ইয়ম কিপুর যুদ্ধ বা রামাদানের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

মিশর যুদ্ধের শুরুতে প্রাথমিক সাফল্য পেলেও ইজরায়েল অচিরেই তাদের দূরাবস্থা কাটিয়ে ওঠে এবং সিনাই উপত্যকায় পূনরায় দখল করে নিতে সক্ষম হয়। যুদ্ধের সময় আরব জাতীয়তাবাদ আবার অনেকটাই জেগে ওঠে। আরবদেশগুলো ইজরায়েলকে মদত দানকারী পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলিকে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় এবং তেলের দাম সত্তর শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পশ্চিমা শক্তিগুলো আতঙ্কিত হয়। ব্রিটিশ ইজরায়েলকে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করে। ইজরায়েলও এই সময় বড় যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে চাইনি।মার্কিন হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব স্বীকৃত হয়। ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তি ডেভিড ক্যাম্পের চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুযায়ী ইজরায়েল মিশরকে সিনাই উপত্যকা ছেড়ে দেয়। মিশর অন্ধ ইসরাইল বিরোধিতা ত্যাগ করে। যদিও এর ফলে মিশর মধ্যপ্রাচ্যে নিঃসঙ্গ শক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু আসল সমস্যার সমাধান হলো না। আরব ভূখণ্ড থেকে ইজরাইলি সেনা অপসারণ বা পি এল এর সাথে কোন রকম আলোচনা ইজরায়েল আগ্রহ দেখালো না। সুতরাং আরব সমস্যা যে অন্ধকারে ছিল সেখানেই থেকে গেল। আজও এই সমস্যার জেরে শত শত মানুষের প্রানঘাতী হিংসার প্রকাশ ঘটে চলেছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক