সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুন, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন | The English Reformation Movement

ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন: জিওফ্রে এলটনের রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ তত্ত্বের যথার্থতা বিশ্লেষণ পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের নবজাগরণের অন্যতম ফল ছিল ষোড়শ শতকের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন। জার্মানিতে শুরু হয়ে অল্পকালের মধ্যেই ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সর্বত্রই একই রকম ছিল না, বিশেষত ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারের তাৎক্ষণিক কারণ ও পরিচালকদের সাথে অবশিষ্ট ইউরোপের আন্দোলনের কিছু প্রভেদ লক্ষণীয়। ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারের কর্মসূচি রূপায়ণের প্রধান ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি ও তাঁর চ্যান্সেলর টমাস ক্রমওয়েল। অন্যদিকে অবশিষ্ট ইউরোপের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোক্তা ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিশেষত মানবতাবাদী সংস্কারকগণ। ইংল্যান্ডে রাজার নেতৃত্বে ১৬শ শতকে ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মচর্চার সূচনা হয়। এই কারণে ইতিহাসবিদ জিওফ্রে আর. এলটন (Geoffrey R. Elton) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Tudor Revolution in Government” (1953)-এ ইংল্যান্ডের ধর্ম সংস্কারকে "একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ" বলে অভিহ...

প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা | Architecture Sculpture and Painting in Ancient Greece

প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা ধ্রুপদী  গ্রীস স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলার আঙিনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। যেহেতু প্রতিটি পলিশ তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বতন্ত্র বজায় রাখতো তাই শিল্পচর্চার ক্ষেত্রেও এই নিজস্বতা ও স্বতন্ত্রতার প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে।  প্রথমে আমরা স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারি। প্রথমদিকে স্থপতিরা মূলত বৃহৎ মন্দির ও ছোট ছোট সৌধ নির্মাণ করত। ছোট ছোট সৌদ গুলিকে বলা হত ট্রেজারি । মন্দির ও সৌধ নির্মাণে  গ্রীকরা মিশরীয়দের কাছ থেকে পাথর ও মার্বেলের ব্যবহার শিখেছিল। সাধারণত পলিশ গুলির প্রধান সভা স্থল বা অ্যাগোরার সন্নিকটে এই সৌধ ও প্রাসাদ গুলি নির্মিত হত। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের প্রথমার্ধ থেকে গ্রিসের বিভিন্ন প্রকার স্থাপত্য রীতির মধ্যে একটি ঐক্য সূত্র গড়ে তোলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এই প্রচেষ্টার অন্যতম উদাহরণ হল এথেন্সের পার্থেনন মন্দির। দেবী অ্যাথেনার উদ্দেশ্যে নির্মিত এই মন্দির ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রকে গৌরবান্বিত করার একটি সচেতন প্রয়াস। এর প্রধান স্থপতি ছিলেন ইকটিনস ও ক্যালিক্র্যটিস। প্রায় একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল প্রপিলিয়া...

ওয়াজদারি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

সুলতানি আমলে ইক্তা ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের বিবর্তনের মধ্যেই ওয়াজদারি ব্যবস্থার অনুপ্রবেশ ঘটে। ইলতুৎমিস প্রথম ইক্তা ব্যবস্থা কে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে প্রবর্তন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীনকাল থেকে যে সামন্ত প্রথা চলে আসছিল তা বিলুপ্ত করা এবং কেন্দ্রীয় শাসনের সঙ্গে দূরবর্তী অঞ্চলের যোগসূত্র স্থাপন করা। বলবন ও আলাউদ্দিন খলজি ইকতার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ইক্তা ব্যবস্থায় তেমন পরিবর্তন ঘটাননি। আবার মোহাম্মদ বিন তুঘলক ইক্তাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু ফিরোজ শাহ তুঘলক ইক্তা ব্যবস্থাকে অকার্যকারি করে তোলেন। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ইক্তার উপর ইজারাদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর ফলে ইক্তার মৌল বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু রাজস্ব আদায়কারী ইজারাদারদের সৈন্য ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হতো না। ইজারাদার শর্ত অনুযায়ী সুলতানের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু আমিরের সেনারা তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য অন্যায় ভাবে চাপ সৃষ্টি করত। কারণ আমিররা সেনা পোষণ দায়িত্ব ছিলেন। এমনকি তথ্যে পাওয়া যায় অনেক ইজারাদার সুলতানের কাছে আমিরের ...

জাপানে সমরবাদের উত্থান: কুরাই তানিমা | Kurai Tanima: The Dark Age in Japan

জাপানে সমরবাদের উত্থান: কুরাই তানিমা ১৯৩১ থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে জাপানের ইতিহাসে কুরাই তানিমা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এর অর্থ হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন উপত্যকা। আলোচ্য করবে দেখা যাবে যে, ১৯২০-র দশকে জাপানে যে গণতন্ত্র ও উদারনীতিবাদের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল সেগুলিকে সমূলে উৎপাদিত করে জঙ্গি জাতীয়তাবাদ এবং সমরবাদের প্রসার ঘটেছিল। এবং এর ফলে জাপান ক্রমশ ফ্যাসিবাদের পথে এগিয়েছিল। অমানবিক হিংসা এবং রাজনৈতিক হত্যালীলা জাপানের রাজনীতিতে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়। দেশের অভ্যন্তরে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যা সংঘটিত করার ষড়যন্ত্র এবং বিদেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপ্রতিহত আগ্রাসন ছিল এই পর্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা জাপানকে ক্রমশ এক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।  জাপানে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের পিছনে একাধিক কারণ ছিল। প্রথমত, বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দা জাপানের অর্থনীতিকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। জাপানি পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার ফলে কৃষক শ্রেণীর অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল। এই সময় জঙ্গি জাতীয়তাবাদী ও সামরিক কর্তৃত্বের সমর্থকরা...

বাহমনি রাজ্যের চরম হিতৈষী হিসাবে মাহমুদ গাওয়ানের ভূমিকা আলোচনা কর।

মাহমুদ গাওয়ান মাহমুদ গাওয়ান ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম তীক্ষ্ণবুদ্ধির সম্পন্ন দূরদর্শী রাজনৈতিক। তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন ইরানের এক গ্রামের অধিবাসী। ৪৫ বছর বয়সে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে আসেন এবং সুলতান দ্বিতীয় আলাউদ্দিন এই পরদেশীর গুনে আকৃষ্ট হয়ে তাকে রাজসভায় আমির পদে অভিষিক্ত করেন। সুলতান হুমায়ুন গাওয়ানকে Malik-ut-Tajjar উপাধিতে ভূষিত করেন। খাজা মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের তিনজন সুলতানের অধীনে কাজ করেন এবং তৃতীয় মুহাম্মদ এর রাজত্বকালে তিনি রাজ্যের প্রকৃত শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি শাসনকার্যে ও সমর ক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রজাদের প্রীতি ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহন করেছিলেন কিন্তু কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।  ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হুমায়ূনের মৃত্যু হলে তার পুত্র নিজাম শাহ মাত্র ৮ বছর বয়সের সিংহাসন আরোহন করেন। এই নিজাম শাহের অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন মাহমুদ গাওয়ান। যখন অভিভাবক নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন বাহমনী রাজ্যের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুন। রুশ ভ্র...

বাংলায় হুসেন শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর

 ইলিয়াস শাহী বংশের পতনের পর হাবসি শাসন ছিল বঙ্গদেশের এক অন্ধকারময় যুগ। বঙ্গদেশের জনসাধারণ এই হাবসি শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিজামুদ্দিনের মতে মোজাফফর শাহের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান উজির সৈয়দ হুসেন বাংলাদেশকে এই সংকট থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ হুসেন মোজাফফর কে হত্যা করে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা । আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কুশাসন থেকে বঙ্গদেশ কে মুক্ত করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করেছেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি হাবসি প্রাসাদ রক্ষী সেনাদলের ক্ষমতা সংকুচিত করে এবং তাদের বঙ্গদেশ থেকে বিতাড়িত করে, মুঘল ও আফগানদের উচ্চ পদে নিয়োগ করেন। পুরাতন আমলের কর্মচারীদের বরখাস্ত করে, তিনি সদর দপ্তরে নতুন ও নিজের অনুগত লোকদের নিয়োগ করে। দেশের সর্বত্র অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা কঠোর হাতে দমন করেন। বহু ধন সম্পত্তি উদ্ধার করে। ফিরিস্তার মতে তখন ধনী ব্যক্তিরা উৎসবে সোনার থালা ব্যবহার করতেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এরকম প্রায় ১৩০০ সোনার থালা উদ্ধার করেন। তাঁর সিংহাসন আরোহণের সময় সমগ্র উত্তর ভারতে ব...

মধ্যযুগে অকৃষি উৎপাদন ও নাগরিক অর্থনীতি সম্পর্কে একটি নিবন্ধন লেখ।

  দিল্লির সুলতানি যুগের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ভারতবর্ষে নতুন নতুন নগরের সূচনা। স্বভাবতই শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়নের সূচনা খুবই ইঙ্গিতবাহী। টুকরো টুকরো খবর ছাড়া অর্থনৈতিক জীবনের বিশদ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে সে যুগের অকৃষি তথা শিল্প উৎপাদনের একটা মোটামুটি বিবরণ দেওয়া যায়।  ধাতু উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সমকালীন সাহিত্যে Salt Range এর কথা পাওয়া যায় গেলেও প্রধান নুনের উৎস ছিল সম্ভর হ্রদ। লোহার আকর উত্তোলনের ক্ষেত্রে গভীর খনি খোঁড়ার প্রয়োগবিদ্যা সে যুগে জানা ছিল না। গোয়ালিয়রের পাহাড় থেকে দক্ষিণ ভারতের শেষ পর্যন্ত অনেক লোহা খনি ছিল। কচ্ছের লোহা থেকে তলোয়ার তৈরি হতো। রাজস্থান থেকে তামা পাওয়া যেত। তখন সোনা রুপার উৎপাদন কমেছিল। মনে হয় কর্নাটকের সোনার খনি নিঃশেষ হয়ে আসছিল। হিমালয় থেকে আসা কয়েকটি নদীর পাড়ে বালিতে সোনা পাওয়া যেত। মার্কো পোলো দাক্ষিণাত্য হীরার খনির কথা বলেছেন। তিনি তুতিকোরিনে মুক্তা পাওয়ার কথা বলেছেন  সে যুগের প্রধান শিল্প ছিল বস্ত্র শিল্প। ঐতিহাসিক Lean White দেখলেন এ যুগে চরকার সাহায্যে প্রয়োগব...

বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের অবদান আলোচনা কর।

 সুলতানি যুগ ধরে বঙ্গদেশ প্রায় স্বাধীন বা আধা স্বাধীন রাজ্য বলা চলে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বক্তিয়ার খলজির দ্বারা বঙ্গদেশ তুর্কি অধিকারে আসলেও পরবর্তী বছরগুলিতে কখনোই দিল্লির সুলতানি শাসন বাংলার উপর সম্পূর্ণ অধিপত্য বিস্তার করতে পারিনি। সাময়িকভাবে বাংলার শাসকগণ দিল্লির অধীনতা স্বীকার করত, আবার দিল্লির আক্রমণের গরম কেটে গেলেই বিদ্রোহ করতো। সুতরাং আর যাই হোক বাংলাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল সুলতানি যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মোহাম্মদ বিন তুঘলক এর রাজত্বকালের শেষ দিকে অরাজকতা ও বিদ্রোহের সুযোগে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় স্বাধীন ইলিয়াস শাহী শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে। এই রাজবংশের আরো দুজন শ্রেষ্ঠ শাসক হলেন সিকান্দার শাহ ও গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ। যদিও পরবর্তী ইলিয়াসাহি শাসকদের হটিয়ে দিনাজ পুরের রাজা গণেশ ও তার পুত্ররা কিছুকালের জন্য শাসন করেছিল কিন্তু ইলিয়াস শাহ এর বংশধরেরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।  আলাউদ্দিন আলিশাহ কে সিংহাসন চুত্য করে ইলিয়াস শাহ ক্ষমতায় আসেন তিনি বঙ্গদেশের রাজনৈতিক সংহতি স্থাপন করেন এবং বাংলার বাইরে ও বিজয়াভিযানকে সম্প্রসারিত করেন। তিনি ত্রিহূত...

আলাউদ্দিন খলজি কৃষি সংস্কার সমূহ আলোচনা কর।

  আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থায় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার অর্থনৈতিক সংস্কার সমূহ। আলাউদ্দিনই দিল্লির সার্বভৌম সুলতানদের মধ্যে প্রথম যিনি একই সাথে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ এবং মঙ্গল আক্রমণ এবং ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের মোকাবেলা চালিয়ে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বভাবত এজন্য এক বিশাল সেনাবাহিনী পোষণ করতে হয়েছিল। যাদের ব্যয়বহুদ ব্যয় বাবদ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল বলা হয় এজন্যই আলাউদ্দিন অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজে হাত লাগান। তার প্রধান দুটি পদক্ষেপ ছিল রাজস্ব সংস্কার ও বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। আলাউদ্দিন‌ই হলো প্রথম সুলতান যিনি রাজস্ব সংস্কারের কাজে হাত দেন। তার রাজস্ব সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমকালীন ও পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক তার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে রাজকোষ পূর্ণ করা। এর সাথে একটি রাজনৈতিক স্বার্থও ছিল অভিজাত, জমিদার, খুৎ মুকাদ্দাম দের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দিয়ে আলাউদ্দিন বিদ্রোহের সম্ভাবনা নির্মূল করতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল হিন্দু তাই হিন্দুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বারনি ব...

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন |

ইকতা ব্যবস্থা বিবর্তন সুলতানি শাসনে তাদের এলাকার মধ্যে জমিকে শাসন ব্যবস্থার জন্য দুটি ভাগে ভাগ করেছিল একটি খালিসা অর্থাৎ সরাসরি সুলতানের অধীনে এবং সেখান থেকে সুলতানের নিজস্ব আমলারা নির্ধারিত কর সংগ্রহ করে সুলতানের রাজকোষে জমা করে। অন্যটি হলো ইকতা, যা কোনো এক অভিজাতের অধীনে থাকত, যাকে বলা হয় মুকতি। কৃষি উৎবৃত্ত আরোহন ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে তা জন্য বন্টনের জন্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোর কোন ক্ষতি না করে যে সরকারি যন্ত্রের প্রয়োজন হয় তারই একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হল ইকতা। ইকতা হল ভূমি রাজস্বের বন্দোবস্ত। দ্বাদশ শতকের একজন রাষ্ট্রনেতা আদর্শ ইকতা ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে- ইকতার মালিক মুকতি, তারাই অধীনস্থ কৃষক বা রায়তদের কাছ থেকে নির্ধারিত মাল বা ভূমি রাজস্ব আদায় করবেন। কৃষকের উপর তার কোন অধিকার নেই। কৃষকরা খাজনা দিলে তার ও তাদের পরিবার, তাদের জমি বা অন্যান্য সম্পত্তির উপর মুকতির আর কোন অধিকার নেই। এরপরও মুকতিরা যদি জোর খাটায় কৃষকরা রাজদরবারে অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুলতান তার ইক্তা অধিগ্রহণ করতে পারে, তাকে শাস্তি দিতে পারেন অর্থাৎ মুকতি হলেন সুলতান নিয়োজিত আমলা মাত্র এব...

বিজয়নগর এবং বাহমনীর মধ্যে সংঘাত কি ধর্মীয়? | Was the Conflict Between Vijayanagar and Bahmani a Religious One?

বিজয়নগর এবং বাহমনীর মধ্যে সংঘাত কি ধর্মীয়?  সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এই দুটি প্রক্রিয়া যখন একই সাথে এগোচ্ছে তখন দক্ষিণ ভারতে দুটি পরস্পর বিদ্যমান শক্তি বিজয়নগর ও বাহমনী উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। প্রায় দুই শতধিক বছর জুড়ে এই দুটি সাম্রাজ্যের বিবাদকে অনেক ঐতিহাসিক ধর্মনৈতিক চরিত্র দান করার চেষ্টা করেছেন। কারণ বাহমনী ছিল মুসলিম শাসিত আর বিজয়নগর ছিল হিন্দু শাসিত। কিন্তু আধুনিক ইতিহাস ধর্মীয় কারনের তুলনায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তুঘলক বংশের পতনের পর দক্ষিণ ভারতে প্রায় একই সময়ে বাহমনী ও বিজয়নগর এই দুই সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। আলাউদ্দিন বহমান শাহ প্রথমটির প্রতিষ্ঠাতা, যার রাজধানী ছিল গুলবর্গা এবং পরে বিদর। দ্বিতীয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছিল হরিহর ও বুক্কা, যার রাজধানী ছিল তুঙ্গাভদ্রা তীরস্ত বিজয়নগর শহর। বিজয়নগর ও বাহামনির সংঘাত নির্বিচ্ছিন্ন ছিল না, মাঝে মাঝে শান্তি স্থাপিত হত। তবে বিরোধের মীমাংসা হত না।  কিংবদন্তি অনুসারে হরিহর ও বুক্কা কাম্পিলি রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলকের কম্পিলি অভিযানে তারা ধ...

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক পরীক্ষা নিরীক্ষা গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তার য্যেষ্ঠ পুত্র জৌনা খান মহম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসন আরোহন করেন। পিতার মত মহম্মদ বিন তুঘলকও সৈনিক হিসেবে জীবন আরম্ভ করেছিলেন এবং সৈনিক হিসেবে অল্প বয়সেই যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেন। বলা হয়, মহাম্মদ বিন তুঘলকের সাহায্য ছাড়া গিয়াস উদ্দিনের সিংহাসন দখল এত মসৃণ হত না। মধ্যযুগের নরপতিদের মধ্যে মহাম্মদ বিন তুঘলক যে সবচেয়ে সুদক্ষ ও মৌলিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন সে কথা ঈসামি, ইবন বতুতা, জিয়াউদ্দিন বারনীর মত সমকালীন মৌলবাদী লেখকও স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের মতে তর্কবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, অংকশাস্ত্র, বিজ্ঞান, দর্শনে তার অসাধারণ জ্ঞান ছিল। পারসিক বিখ্যাত কবিতা সমূহ তার কণ্ঠস্থ ছিল। এমনকি চিকিৎসা বিদ্যাও তার অজানা ছিল না।  মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক ধ্যানধারণা বিচার করতে গেলে আমাদের তার ধর্মনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে বিচার করতে হবে। মধ্যযুগের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে মহম্মদ বিন তুঘলকের ধর্মনৈতিক ধ্যানধারণা আমাদের পরবর্তীকালে মহান মুঘল সম্রাট আকবরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি ধর্মপ্...

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি | Welfare Policies of Firoz Shah Tughlaq

ফিরোজ শাহ তুঘলকের জনকল্যাণকর কর্মসূচি  ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের সামরিক অভিযানের সময় মোহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যু হলে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য এক চরম দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। নেতৃত্বহীন সেনাবাহিনী চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সময় অভিজতগণ সমন্বিতভাবে গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের ছোট ভাই রজবের ৪৬ বছর বয়স্ক পুত্র ফিরোজ শাহ তুঘলককে সিংহাসনে বসান। তার দীর্ঘ ৩৭ বছরের রাজত্বকাল দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। ফিরোজ শাহ তুঘলকের রাজত্বকাল আকবরের পূর্ব পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান অধিকার করেছে। প্রধানত জনকল্যাণ ও প্রজাবর্গের উন্নতির জন্য তিনি যা করেছিলেন, দিল্লির কোনো সুলতানই জনসাধারণের এরকম সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিতে সক্ষম হননি। আফিক তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে বলেছেন যে জনসাধারণের ঘরবাড়ি, শস্য, সম্পদ, ঘোড়া, আসবাবপত্র ও প্রত্যেক বাড়ি স্বর্ণ ও রৌপ্যে পরিপূর্ণ ছিল এবং প্রত্যেকে সুখ শান্তিতে বাস করত। সিংহাসন আরোহন করেই তার প্রধান লক্ষ্য হয় জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা। স্বভাবতই তিনি কতকগুলি গুরু...