সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

রাজা রামমোহন রায় এবং সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ। Rammohan and Satidah Movement

 রাজা রামমোহন রায় ও সতীদাহ আন্দোলন 19 শতকে বঙ্গীয় নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তাকে 'ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহনের জন্ম হলেও প্রাচ্য দেশীয় এবং পশ্চিমী জ্ঞান -বিজ্ঞানের উপর গভীর অধ্যায়নের পর তিনি সনাতন ভারতীয় সমাজের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তার কর্ম প্রচেষ্টা ছিল বহুমাত্রিক। একদিক থেকে তিনি যেমন হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা (মূর্তি পূজা), পুরোহিততন্ত্র এবং বহুঈশ্বরবাদের কঠোর সমালোচনা করে উপনিষদীয় একেশ্বরবাদ প্রতিষ্টায় সচেষ্ট হন।অন্যদিকে সতীদাহ এবং অন্যান্য সামাজিক কূ- প্রথার বিরুদ্ধে তিনি খড়্গহস্ত। মৃত স্বামীর চিতায় স্ত্রীর আত্মাহুতি দেওয়ান নাম হল সতীদাহ ও সহমরণ। এইভাবে একজন নারীর সতীত্ব রক্ষা হয় এবং সতীত্ব প্রমাণিত হয়। মহাভারতের মাদ্রি সহমৃতা হয়েছিলেন। সতীদাহ কোনো আবশ্যিক কর্তব্য ছিল না। বিষয়টি ছিল ঐচ্ছিক। কিন্তু কালের প্রভাবে এর সাথে বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থ যুক্ত হয়ে সতীদাহ সনাতন হিন্দু সমাজে একটি নিয়মিত আচারে পরিণত হয়। সতীদাহ একটি পারিবারিক সম্মান রক্ষারও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মধ্যযুগের বহু শ

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় ধর্মীয় সাহিত্যের অবদান | Ancient Indian Religious Texts as Historical Sources

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় ধর্মীয় সাহিত্যের অবদান প্রাচীন ভারতে প্রাচীন গ্রিসের মত হেরোডোটাস বা থুকিডিডিস ছিলেন না। প্রাচীন ভারতে কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচিত হয়নি। বেশিরভাগই রচনা ছিল সাহিত্য। সাহিত্য গুলির মধ্যে আবার বেশির ভাগই ধর্মককেন্দ্রীক। ধর্মীয় সাহিত্যসম্ভার মূলত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রচিত হলেও এগুলি থেকে ইতিহাসের বহু তথ্য সংগ্রহ করা যায়।  প্রাচীন ভারতের প্রধান ধর্মীয় সাহিত্য হল বৈদিক সাহিত্য। বেদ চারটি: ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। প্রতিটি বেদের আবার সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। এই নিয়ে মোট বৈদিক সাহিত্য সম্ভার। ঋকবেদের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 1500 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1000 অব্দ পর্যন্ত। ঋগ্বেদ থেকে এই পর্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। এই পর্বকে ঋক বৈদিক যুগ বলা হয়। পরবর্তী বেদগুলি রচিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 1000 অব্দ থেকে 500 খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে। এই সময়কালকে পরবর্তী বৈদিক যুগ বলা হয়। পরবর্তী বৈদিক যুগের ইতিহাস চর্চায় পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যগুলি অনুরূপভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। বৈদিক সাহিত্যের পরেই উল্লেখ করা যা

হেরোডোটাস ও থুকিডিডিস | Herodotus & Thukidydes

  ধ্রুপদী গ্রীসের ইতিহাসচর্চাঃ হেরোডোটাস ও থুকিডিডিস  ইতিহাস চর্চার সূচনা হয়েছিল ক্লাসিক্যাল গ্রীসে। হেরোডোটাস ও থুকিডিডিস ছিলেন এর সূচনাকারী। ইতিপূর্বে গ্রীসে গীতিকাব্য, মহাকাব্য, রাজবংশাবলী এবং ধর্মীয় গাঁথা রচনার চল ছিল, যেগুলিকে ঐতিহাসিক ট্রেভেলিয়ান  Quasi-historical রচনা বলে উল্লেখ করেছেন। হেরোডোটাস ও থুকিডিডিসের রচনার সুত্র ধরেই রোম্যান্টিক ও ধর্মীয় গাঁথা থেকে ইতিহাসের মুক্তি ঘটল এবং জ্ঞানের একটি নতুন ধারা হিসাবে ইতিহাসের জয়যাত্রা সূচিত হল। হেরোডোটাস কেবল প্রাচীন গ্রিসেই নয় সার্বিকভাবে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এবং ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পুরধা ব্যাক্তি ছিলেন হেরোডোটাস। পেরিক্লিসের শাসনকালে সাহিত্য ও দর্শন চর্চার মত ইতিহাস চর্চাও এথেন্সের বৌদ্ধিক জীবনকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল। এথেন্সের ইতিহাসচর্চার প্রথম এবং প্রধান ঐতিহাসিক ছিলেন হেরোডোটাস। হেরোডোটাস রচিত গ্রন্থের নাম 'Histories'. এই গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় হল গ্রিক ও পার্সিয়ানদের মধ্যে যুদ্ধের ইতিহাস। তার ইতিহাসের সময়কাল মোটামুটি 70 বছর। হেরোডোটাসের ইতিহাস 3 টি ভাগে বিভক্ত এবং প্রতিটি ভাগ 3 টি অংশে বিভক্ত। অনেকেই মন

ম্যারাথনের যুদ্ধ | The Marathon War

  ম্যারাথনের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে পারস্য ক্রমশ আত্মপ্রকাশ করে এবং এশিয়া মাইনরের উপকূলে অবস্থিত গ্রিক উপনিবেশগুলি তারা দখল করে গ্রীসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকে। গ্রীস উপনিবেশ আইয়োনিয়া ও লিডিয়া সম্রাট দরায়ুস দখল করে নেন এবং সেখানে একজন সম্রাটের অধীনে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেন। এরপর পারস্য মূল গ্রিসের হ্রেস ও ম্যাসিডন অধিকার করে নেয়। ইতিমধ্যে এথেন্সে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানত স্বৈরাচারী শাসক হিপিয়াস আইয়োনিয়া ও লিবিয়ার রাজধানী সার্দিসে আশ্রয় নেয়। ফলে এথেন্স ও পারস্যের মধ্যে যুদ্ধের বাতাবরণ গড়ে ওঠে। আইয়োনিয়া অঞ্চলে পারস্যের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়। এই বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেন এথেন্স ও ইরিথ্রিয়া। পারসিকরা এই বিদ্রোহ দমন করে। কিন্তু দরায়ুস এথেন্স ও ইরিথ্রিয়াকে সমুচিত শিক্ষা দেবেন বলে ঠিক করে। ইরিথ্রিয়া পারস্যের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। পারস্যের সৈন্যরা এই নগররাষ্ট্রোটিকে ধ্বংস করে, কিন্তু এথেন্স রুখে দাড়ায়। ৪৯০ খ্রিষ্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে ম্যারাথনে গ্রীক-পারসিক চুড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হ

পেরিক্লিসের সংস্কারঃ এথেনীয় গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ | Reforms under Pericles in Athance

  পেরিক্লিসের সংস্কারঃ এথেনীয় গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ পেরিক্লিস ৪৬১-৪২৯ BCE পর্যন্ত এথেন্সে শাসন করেছিলেন। পেরিক্লিস ছিলেন গণতন্ত্রপন্থী এবং তার নেতৃত্বে এথেন্সে তথা গ্রিসের সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটেছিল তাকেই এথেন্সের ইতিহাসে পেরিক্লিসিয় স্বর্ণযুগ বলা হয়। পেরিক্লিস দক্ষ ও উদার প্রশাসনিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছিল। গণপরিষদ এটি ছিল নাগরিকদের সংগঠন। এই পরিষদ আইন প্রণয়ন এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার লাভ করেছিল। গণপরিষদের অধিবেশন ১০ দিন অন্তর অনুষ্ঠিত হত। গণপরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ করেছিল। পাচ'শ সদস্যের পরিষদ পাচ'শ সদস্যের পরিষদ ছিল গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি পরিষদ, যারা আইন প্রয়োগের কাজের তদারকি করত। বিচারক মন্ডলী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হতেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মত অনুযায়ী বিচারের রায় দান করতেন। জেনারেল পরিষদ দশজন জেনারেল সমন্বয়ে গঠিত ছিল এই জেনারেলদের পরিষদ। পরিষদ এই পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করত। পেরিক্লিস দীর্ঘ ৩০ বছরেই জে

স্পার্টার শাসন ব্যবস্থা | Spartan Administration

স্পার্টার শাসন ব্যবস্থা  ঐতিহ্য অনুসারে স্পার্টার শাসনতন্ত্রের প্রবর্তক ছিলেন লাইকারগাস। কিন্তু তাঁর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রকৃতপক্ষে স্পার্টার শাসনতন্ত্র কোনো একজনের সৃষ্টি নয়। ধারাবাহিক উন্নতির মধ্যে দিয়ে এই শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছিল। স্পার্টার শাসনতন্ত্রের চারটি অংশ ছিল- (I) দুই জন রাজা (II) গেরুশিয়া (III) অ্যাপেলো এবং (IV) ইফরগণ। এর মধ্যে প্রথম তিনটি অন্যান্য পলিসের মত একই। একমাত্র ইফরগণ ছিল স্পার্টার নিজস্ব সংগঠন। স্পার্টার দুইজন রাজা থাকতেন। একজন এজিড কৌম থেকে এবং অন্যজন ইউরিপন্টিড কৌম থেকে। দুইজনের অধিকার প্রায় সমান হলেও এজিড রাজাদের স্থান ছিল একটু উচুঁতে। রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক। একজন রাজা যেহেতু অন্যজনকে নিয়ন্ত্রণ করত তাই হোমারীয় যুগের শেষ দিকে যখন রাজতন্ত্রের মৃত্যু হচ্ছিল তখনো স্পার্টার রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো হয়নি। তবে রাজার ক্ষমতা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছিল। সামরিক বিচার এবং ধর্মীয় ব্যাপারে রাজার ক্ষমতা ছিল। কয়েকটি পুরোহিতের পদ তাদের নির্দিষ্ট থাকত। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার তাদেরই ছিল। দুজনের মধ্যে যুদ্ধযাত্রা কে করবেন জনগন তা মনো

পলিসের সামাজিক শ্রেনীবিভাজন | Social stratification of Polis

 পলিসের সামাজিক শ্রেনীবিভাজন পলিসের জনতা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। নাগরিক এবং অনাগরিক এই দুই শ্রেণীর লোক বাস করত। অনাগরিক বলতে বোঝাত মেটিক, পেরিঅয়কয় এবং হেলট বা ক্রীতদাসদের। নারীদেরও নাগরিক অধিকার ছিল না। নাগরিকের পরিবারে জন্ম গ্রহণ না করলে কারোর পক্ষে নাগরিক অধিকার পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অনাগরিকদের নাগরিক অধিকার দানের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ছিল না। তবে নাগরিক অধিকার না পেলেও এথেন্সের একলেজিয়া বিদেশিদের সামাজিক স্বীকৃতি দিত। পেরিক্লিসের শাসনের আগে দেখা যেত পিতা নাগরিক হলে এবং মাতা বিদেশিনী হলেও নাগরিক অধিকার পাওয়া যেত। কিন্তু নাগরিক অধিকারকে পেরিক্লিস আরো সংকুচিত করেন। তখন থেকে একমাত্র  পিতা এবং মাতা উভয়েই নাগরিক এবং বৈধভাবে বিবাহের ফলে যদি সেই সন্তানের জন্ম হয় তবেই সে নাগরিকত্ব পেত। পেরিক্লিসের যুগে এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল প্রায় তিন লক্ষ। কিন্তু নাগরিক ছিল প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার। অভিজাততান্ত্রিক পলিসে নাগরিক অধিকার অর্জন করা আরও কঠিন ছিল। যেমন স্পারটায় নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিক না হতে পারলে, সাধারণ ভোজনালয়ের জন্য অর্থ দিতে না পারলে এবং যৌবনে সামরিক শিক্ষা গ্রহণ না করলে নাগর

পলিস উদ্ভবের কারণ | Emergence of Polis

  পলিস বলতে কি বোঝায়  নগররাষ্ট্র কে গ্রীকবাসী পলিস নামে অভিহিত করতো। ইংরেজি শব্দ 'Polis' এর অর্থ স্ব-শাসিত রাষ্ট্র। তবে নগর রাষ্ট্রের কোন সঠিক সংজ্ঞা ঐতিহাসিকরা দিতে পারেননি। তবে নগররাষ্ট্র বলতে শুধু নির্দিষ্ট ভূখন্ড জনসাধারণের সমষ্টি ছিল না, নাগরিক জীবনে নানান সুযোগ-সুবিধা ছিল পলিস জীবনের একান্ত শর্ত, যেখানে থাকত বড় বাড়ি, মিউজিয়াম, থিয়েটার হল, বাজার ও জলস্তম্ভ। পলিস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বিষয় যুক্ত ছিল; সেগুলি হলঃ স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা,  রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, সৌন্দর্য। তবে গ্রিসে এমন অনেক নগররাষ্ট্র ছিল যারা এই চারটি শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তাদের পলিস বলা হত। পলিস উদ্ভবের কারণ প্রাচীন গ্রিসে পলিস কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ঐতিহাসিকগণ পলিস সৃষ্টির জন্য কয়েকটি কারণকে উল্লেখ করেছেন যা নিম্নে আলোচনা করা হল:- (I) ভৌগোলিক কারণ:- গ্রীস ছিল চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা আর পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটা উপত্যাকা। প্রাচীন গ্রীসের জনগণ অসংখ্য উপত্যকা, পাহাড় বেষ্টিত সমভূমি এবং দীপকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল অসংখ্য ছোট ছো

পলিসের পতনের কারণ | Decline of Polis

  পলিসের পতনের কারণ  খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে সূচনালগ্নে গ্রিসে পলিস বা নগর রাষ্ট্র গুলির পতন ঘটে। 431-404 খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে ঘটে যাওয়া পেলোপনিসীয় যুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে পলিসের পতনের লক্ষনগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পেলোপনিসীয় যুদ্ধের পর পলিসের যে অস্তিত্ব ছিল তা কেবল পূর্বের ছায়া মাত্র। দীর্ঘকাল যাবৎ গ্রিসের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যে পলিস ব্যবস্থা তার পতনের কারণ অনুসন্ধানে ঐতিহাসিকগণ আগ্রহী হয়েছেন। এথেনিয় সাম্রাজ্য ও স্পার্টার নেতৃত্বাধীন দুটি রাষ্ট্র জোটের মধ্যে দীর্ঘ 27 বছর ধরে পেলোপনেসীয় যুদ্ধ চলছিল। এই গৃহযুদ্ধে এথেন্স পরাজিত হয়; কিন্তু স্পার্টার সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। থিবস -এর কাছে স্পার্টা পরাজিত হয়। থিবস-এর রাজনৈতিক কৃতিত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ গ্রীসকে পদানত করেছিলেন। পলিস তৈরি হয়েছিল একান্তভাবে অপেশাদার শখের কর্মীদের জন্য। পলিসের লক্ষ্য ছিল জীবনের সমগ্রতা এবং ঐক্যের দিকে। তাই পলিশের আদর্শ ছিল এই যে, এর প্রতিটি নাগরিক পলিসের বিভিন্ন কার্যাবলীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। এজন্য কোন একটি বিষয়ে দক্ষত

পলিশের স্বরূপ । পলিশের বৈশিষ্ঠ্য | Basic Feature of Polis in Anceint Grece

পলিশের স্বরূপ পলিশ একটি গ্রিক শব্দ। ইংরেজিতে এর অনুবাদ হয় City State এবং বাংলায় নগররাষ্ট্র । তবে এই অনুবাদ যথার্থ নয়। কারণ অনেক পলিশ ছিল যেগুলি আদৌ নগর নয়, যেমন- স্পার্টা। আবার নগর যে গ্রামকে শাসন করতো এরকম ঠিক নয়। তবে ভালো বিকল্পের অভাবের জন্য City State বা নগর রাষ্ট্র   কথাটি প্রচলিত হয়ে গেছে। মাইসিনীয় সভ্যতার পতন ঘটেছিল আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে। এরপর গ্রিসে শুরু হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকার যুগ (১২০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্ব)। এর পরবর্তী যুগটি আর্কাইক বা সুপ্রাচীন যুগ নামে পরিচিত (৮০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্ব)। এই যুগেই গ্রিক সভ্যতার নাগরিক ধাঁচটি বিকশিত হতে শুরু করে। সুপ্রাচীনকালেই যে বাহুসংখ্যক পলিশ প্রতিষ্টিত হয়েছিল, ধ্রুপদী যুগে তা পূর্ণ পরিনিতি লাভ করেছিল। পলিশ সম্পর্কে প্রথম আলোচ্য বিষয় হল এর আয়তন ও লোকসংখ্যা। প্লেটো তার রিপাবিলক -এ বলেছেন একটি আদর্শ পলিশের নাগরিক সংখ্যা হবে ৫০০০। অ্যারিস্টটল তাঁর পলিটিকস গ্রন্থে বলেছেন প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে সাক্ষাৎ পরিচয় থাকতে হবে। অ্যারিস্টটল আরো বলেছেন দশজন নাগরিক নিয়ে যেমন একটি পলিশ গড়ে তোলা যায় না, তেমনি এক লক্ষ নাগরিক নিয়েও পলিশ

Book of Dead | মৃতের বই

মৃতের বই মিশরীয়রা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করত। তারা পিরামিডের দেওয়াল , প্রস্তর ফলক বা প্যাপিরাসের পত্রে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন সম্পর্কে লিখে রাখত। এই লিখনগুলিকে সংকলিত করে কয়েকটি গ্রন্থ প্রস্তুত করা হয়েছে। এরকমই একটি গ্রন্থ হল Book of Dead বা মৃতের বই। মৃতের জীবনকে ঠিকঠাক ভাবে পরিচালিত করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্র ফর্মুলার কথাও এখানে বলা হয়েছে। মৃতের গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে , মৃত্যুর রাজ্যে মৃতের চরিত্র বিচার হয়। মৃতের যাত্রাপথ পশ্চিম দিকে , সূর্য দেব যেখানে অস্ত যান। মৃত্যুপুরীতে অসিরিস দেবগন পরিবৃত্ত হয়ে সিংহাসনে বসে থাকেন। তিনিই মৃত্যুপুরীর দেবতা। শেয়ালমুখো দেবতা আনুবিস পথ দেখিয়ে মৃত ব্যক্তিকে অসিরিসের দরবারে নিয়ে যান। সেখানে সেখানে তাকে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয় নতুবা ৪২ টি পাপের নাম করে নিজেকে নির্দোষ ঘোষনা করতে হয়। মৃতের সত্যপাঠ যাচাই করেন জ্ঞানের দেবতা ধৎ এবং ওসিরিস পুত্র হোরাস।  এবারে ন্যায়বিচারের দাড়িপাল্লায় মৃতের হৃদপিণ্ড ওজন করা হয়। পাল্লার অন্যদিকে বাটখারা হিসাবে থাকে ন্যায় বিচারের প্রতীক।মাপের ফলাফল ঘোষনা করেন জ্ঞানের দেবতা ধত। মৃতের গ্রন্থে মৃতের

প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাস | Old Kingdom: Egyptian Religious Thinking

প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাস প্রাচীন মিশরের ধর্ম বিশ্বাস বুঝতে হলে মিশরের প্রকৃতি , বিশেষ করে নীলনদের গুরুত্ব বুঝতে হবে। নীলনদ মিশরের তটভূমিকে জলসিক্ত করে জীবনের সঞ্চার করে থাকে , সেখানে শস্য জন্মায়। প্রতি বছর নীল-নদের জন্ম-মৃত্যুর আবর্তন দেখা দেয়। প্রতি বছরের বর্ষায় দুকূল ভাসিয়ে দেয় , তারপর জল যখন নেমে যায় কৃষিক্ষেত্রে পলি পড়ে উর্বর হয় এবং সেখানে সবুজ শস্য জন্মায়। এই পর্ব জীবনের পর্ব। গ্রীষ্ম এলে উপত্যকা ভূমি প্রাণহীন হয়ে যায়। মিশরীয় চিন্তা অনুযায়ী সূর্যদেবের উদয় এবং অস্ত তাঁর জীবন মরণের বিচিত্র লীলা। মিশরীয়রা যেমন নৌকায় ভ্রমণ করে , সূর্যদেব ‘ রে ’ তেমন আকাশ নামক জল ভাগে নৌকায় করে উদয় হন। এই পর্ব জীবনের পর্ব তথা আলোর পর্ব। ১২ ঘন্টা আলোর পর্ব পেরিয়ে সূর্যদেব অন্ধকার পর্বে প্রবেশ করে , যা মৃত্যুর রাজ্য। মিশরীয় ধর্মের মেরুদন্ড অসিরিস মিথ। পঞ্চম রাজবংশের রাজত্বকালের আগেই সূর্যদেব রে-এর পুত্র ফ্যারাওয়ের সঙ্গে কৃষি দেবতা অসিরিস ঐক্যের বাঁধনে বাঁধা পড়েন। ক্রমে অসিরিস পূজাই জনগণের ধর্মে পরিণত হয়। অসিরিসের পিতা পৃথিবী দেবতা গেব এবং মাতা আকাশদেবী ধৎ। অসিরিসের এক

প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরীয় সমাজের বিভিন্ন স্তর | Old Kingdom: Egyptian Economy

  প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরীয় সমাজের বিভিন্ন স্তর যেকোনো কৃষিজীবী সমাজের মতোই প্রাচীন মিশরীয় সমাজ বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত ছিল ।সমাজের সবচেয়ে উপরে ছিল রাজা বা ফ্যারাও। তিনি সাক্ষাৎ ভগবান। তার সাথে তার পরিবারের সদস্যরাও সমাজের উপরতলায় স্থান করে নিত। পরিবারের সদস্যরা অনেকে রাষ্ট্রশাসন বা মন্দির শাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। রাজার পরেই স্থান হত রাজপুরুষদের। আপাতভাবে বলা হয় যে প্রাচীন রাজতন্ত্রের যুগে শাসক আর শাসিত এই দুটি ভাগ ছিল। রাজপুরুষরা সুবিধাভোগী শাসক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতেন। এরা ছিলেন সমাজের শিক্ষিত অংশ। কর আদায়, সেচ ব্যবস্থার তদারকি প্রভৃতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কাজে এরা যুক্ত থাকতেন। রীতি ছিল যে, ফ্যারাও-এর সমাধির চারপাশে রাজপুরুষদের কবর দেওয়া; কারণ এরা রাজার মৃত্যুর পরও রাজার সহযোগী হিসেবে থেকে যাবেন। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে বোঝা যায় মিশরীয় সমাজে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। নিচুপদস্থ কর্মচারীরা এবং হস্তশিল্পীরা এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কৃষক সম্প্রদায়ের থেকে সমাজে এরা অনেক বেশি মর্যাদা পেতেন। সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে ছিল কৃষক। কৃষকদের বড় অংশ ছিল ভূমিদাস। জমির মালিক ছ

প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরের অর্থনীতি | Ancient Egypt: Economy

প্রাচীন রাজতন্ত্র: মিশরের অর্থনীতি তাম্র প্রস্তর যুগে যেসমস্ত নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল মিশরীয় সভ্যতা তার মধ্যে অন্যতম । নীল নদের তীরে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। নীলনদ আবিসিনিয়ার পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয় উত্তর দিকে ৪ হাজার মাইল পথ প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলেছেন। পিরামিডের যুগে মিশরে যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছিল , তার মূলে ছিল উদ্বৃত্ত কৃষি উৎপাদন। এবং তার উপর নির্ভর করেই শিল্প-বাণিজ্য , রাষ্ট্রশাসন প্রভৃতি গড়ে উঠেছিল মিশরের কৃষি ছিল নীলনদের ওপর নির্ভরশীল। বছরের নির্দিষ্ট সময় নীলনদের বন্যায় উপকূল প্লাবিত হয়ে মিশরের মরুভূমিকে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করেছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নীলনদে জলের উচ্চতা বেড়ে বন্যা হয়। অক্টোবর থেকে জলতল নামতে থাকে এবং সেই সময় চাষ হয়। জানুয়ারি মাসের পরে বন্যা আসার আগে পর্যন্ত সেখানে জল সেচের মাধ্যমে চাষ করতে হয়। এইভাবে কৃষিচক্রের ভিত্তিতে মিশরে তিনটি ঋতুর উদ্ভব হয়েছেঃ আখেত বা বন্যাঋতু , পেরেত বা বীজ বপনের ঋতু , সেমু/চেমু বা ফসল সংগ্রহ করার ঋতু। কোনো কারণে বন্যার জলের হেরফের হলে (সর্বনিম্ন – ৬ ফুট) চাষ বাধাপ্রা

ওল্ড কিংডমঃ রাজতন্ত্রের প্রকৃতি | Nature of Old Kingdom in Ancient Egypt

  ওল্ড কিংডমঃ রাজতন্ত্রের প্রকৃতি মিশরে তৃতীয় রাজবংশ থেকে ষষ্ঠ রাজবংশ পর্যন্ত ( খ্রিস্টপূর্ব 2980 থেকে 2475 খ্রিস্টপূর্বাব্দ)শাসন কালকে old kingdom বলা হয়। এই সময়কালকে পিরামিডের যুগও বলে। বিভিন্ন ভাবধারা বিষয়ে সহিষ্ণু হলেও মিশরীয়দের জাত্যাভিমান ছিল প্রবল। তাই বিদেশীদের তারা কখনো ভাল চোখে দেখত না। এশিয়াবাসীদের সম্পর্কে তাদের অবজ্ঞার কথা জানা যায়। মিশরীয়রা তাদের ভাষায় যে শব্দটি পৃথিবী অর্থে ব্যবহার করত তার অর্থ মিশর ভূমি। আর মিশরের যিনি অধিপতি হতেন তিনি মানুষ নন, তিনি দেবতা। মিশরের রাজাদেরকে ফ্যারাও বলা হত। ফ্যারাও কথাটির অর্থ বড় বাড়ি । সূর্য দেবতা রে তার কন্যা মিশরকে পুত্র ফ্যারাও এর হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ মিশর ভূমির সঙ্গে ফ্যারাও বিবাহবন্ধনে জড়িত। ফ্যারাও যতদিন জীবিত ততদিন তিনি সাক্ষাৎ হোরাস। তিনি মারা গেলে অসিরিস। স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে যত্ন করা আবার স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রভুত্ব বৈধ। এভাবেই ফ্যারাও যেমন মিশর ভূমির উপরে সম্পূর্ণ প্রভুত্ব করবে তেমনি তার যত্ন নেবে। তিনি প্রজাপালক, প্রজাকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন। অর্থাৎ মিশরের রাজা যেমন দেবতার প্রতিভূ তেমন রাষ্ট্রে

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি | Subsidiary Alliance

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি  ভারতে সম্রাজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে একাধিক কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (1798)। লর্ড ওয়েলেসলি প্রবর্তিত এই নীতির কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল; যেমন 1) যে সমস্ত দেশীয় রাজ্য অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হবে সেই সমস্ত রাজ্যকে ব্রিটিশ কোম্পানি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দিক থেকে নিরাপত্তা প্রদান করবে। 2) পরিবর্তে ওই রাজ্যে একদল ব্রিটিশ সৈন্য মতায়েন থাকবে, যার খরচ ওই রাজ্য কে বহন করতে হবে বা খরচের জন্য রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হবে। 3) কোম্পানির অনুমতি ছাড়া ওই রাজ্য কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বা মিত্রতা করতে পারবে না অর্থাৎ বৈদেশিক নীতি কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। 4) ওই রাজ্যে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট থাকবেন। 5) ওই রাজ্য থেকে ইংরেজ ব্যতীত সকল ইউরোপীয়কে তাড়াতে হবে।  উপরূক্ত শর্তগুলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে ওয়েলেসলি প্রবর্তিত অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির সার্বভৌমত্ব হরণের একটি কৌশল। এই চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষর করেছিল হায়দ্রাবাদের নিজাম (1798)। ওয়েলেসলি মহ

আদি মধ্য যুগে কৃষি উৎপাদন ও ভূমি সম্পর্ক। Agriculture and Land Relation in 750-1200 C.E.

আদি মধ্য যুগে কৃষি উৎপাদন ও ভূমি সম্পর্ক ভারতবর্ষ বরাবরই কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিই এদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা প্রাচীনকাল থেকেই। ভারতের মাটি উর্বর; জলবায়ু অনুকূল; এবং এখানে পর্যাপ্ত শ্রমের কখনো অভাব ছিল না। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি উৎপাদনের অগ্রগতিতে কখনো বাধা আসে নি। 600 থেকে 1200 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে সমসাময়িক ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় কৃষির অগ্রগতি অপেক্ষাকৃত দ্রুত হয়েছিল। হিউয়েন সাং সপ্তম শতকে ভারত পরিভ্রমণ করে এক স্বচ্ছল কৃষি ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন।  আলোচ্য পর্বে বহু রকমের কৃষি উৎপাদনের পরিচয় পাওয়া যায়। পদ্মপুরাণ থেকে জানা যায় যে প্রাচীন বাংলায় প্রায় পঞ্চাশ রকমের চাল উৎপাদন হতো। মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি চাষ হতো। উপকূল ভাগের প্রচুর নারকেল উৎপন্ন হতো। দাক্ষিণাত্যে সুপারি ও পানের উৎপাদন ছিল লক্ষণীয়। গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে কার্পাস ও তৈলবীজ ব্যাপকহারে উৎপাদিত হতো। মালাবার অঞ্চল মশলা উৎপাদনে বিখ্যাত ছিল। কাশ্মীরে জাফরান হত। গুজরাটে কর্পূর, হিং, জায়ফল, জৈত্রী চাষের তথ্যও পাওয়া যায়। আলোচ্য পর্বে দুটি কৃষি বিষয়ক গ্রন্থও রচিত হয়েছিল: কৃষিসুক্তি ও কৃষি পরা

রােজটা পাথর | Rosetta Stone

 রোজেটা পাথর ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে নেপোলিয়নের মিশর আক্রমনের সময় একটি পাথর পাওয়া যায়। নীলনদের রোজেটা নামক সঙ্গম মুখে এটি পাওয়া গেছিলো বলে পাথরটির নাম হয় রোজেটা পাথর। এটি একটি কালো ব্যাসল্ট পাথর যেটি ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি চওড়া ও ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা। এর ওপর তিন রকমের লিখন খোদাই করা ছিল। অধ্যাপক সাঁপোলিয়ান ( champollaion) এই লিপির পাঠদ্ধার করেছেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৫ অব্দে গ্রীক রাজা টলেমির রাজত্বকলে রোজেটা পাথরের লিপি উৎকীর্ণ করা হয়েছিলো। লিপিটি ছিল টলেমি বংশীয় কোনো রাজার উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে মিশরীয় পুরোহিতদের প্রশস্তিপত্র। সাঁপোলিয়ান এই রোজেটা পাথরের ওপর গবেষণা করে মিশরীয় ভাষায় একটি ক্ষুদ্র ব্যাকরণ এবং হায়ারোগ্লিফিক লিপির একটি অভিধান রচনা করেছিলেন। এইভাবে লুপ্ত একটি ভাষাকে পুনরাবিষ্কার করে এই ফরাসি পন্ডিত যে নতুন বিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছিল তা ইজিপ্টলজি ( Egyeptlogy) বা মিশর তত্ত্ব নামে পরিচিত।  Rosetta Stone The Rosetta Stone is an ancient artifact that played a crucial role in deciphering Egyptian hieroglyphics. In 1799, during Napoleon's invasion of Egypt, a stone was found at th

মিশরীয় লিপিঃ হায়রোগ্লাইফিক | Hieroglyphs of Egypt

মিশরীয় লিপিঃ হায়রোগ্লাইফিক মিশরে রাজবংশের উত্থানের অনেক আগে থেকেই লেখা শুরু হয়েছিল। তবে সেই লেখা প্রথম রাজবংশের সময়ে পরিণত রূপ লাভ করেছিল। সেই পরিণত রূপ হল হায়ারোগ্লিফিক। চিত্রের মাধ্যমে বিষয়বস্তু প্রকাশ করার বিশেষ নাম হল হায়ারোগ্লিফিক। হায়ারোগ্লিফিক এর তিনটি ধাপ: পিকটোগ্রাফ , আইডিওগ্রাম ও ফনোগ্রাম। পিকটোগ্রাফ হল কোন ছবিকে কোন পূর্বনির্দিষ্ট ভাব বিশেষের সঙ্গে যুক্ত করা ; যেমন সিংহের চিত্র দিয়ে প্রভুত্বকে বোঝানো। আইডিওগ্রাম হল পূর্ব পরিকল্পনা মত একটি ছবির সঙ্গে অন্য একটি ছবি জুড়ে দিয়ে যুক্ত ছবিটির কোনো বিশেষ অর্থ তৈরি করা। যেমন: মুখের চিহ্নের সঙ্গে বাষ্প ও জিহ্বা যুক্ত করলে বক্তৃতা বোঝানো যায়। আর ফনোগ্রাম হল একই শব্দ নানা অর্থে ব্যবহার করার জন্য বিশেষ নির্দেশক চিহ্নের ব্যবহার। যেমন একই শব্দের অর্থ যদি হয় নৌকা , স্থান ও বয়ন তাহলে নৌকার ছবি সঙ্গে পৃথিবীর ছবি জুড়ে দিলে তার অর্থ হয় স্থান ; নৌকার সঙ্গে রেশমের চিত্র জুড়ে দিলে তার অর্থ হয় বয়ন। পিকটোগ্রাফ ছেড়ে লেখা যখন শব্দার্থব্যঞ্জক বা ফোনেটিক হতে শুরু করল তখন প্রতিটি চিত্র হয়ে উঠল এক একটি শব্দ সমষ্টির সংকেত। এইরূপ চিত্রের

প্রাচীন মিশর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা | Pre-dynasty Period in Egypt

  প্ৰাচীন মিশর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো মিসরীয় সভ্যতা। মিসরীয় সভ্যতার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিখ্যাত নীলনদ ।নীলনদ উত্তর বাহি নদ, তাই মিশরের উত্তরদিকে মিশরের বদ্বীপ অঞ্চল অবস্থিত। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নীলনদ-এ বন্যা হতো। যার ফলে দু কূল প্লাবিত হত। এবং নির্দিষ্ট সময়েই সেই প্লাবন নেমে যেত। ফলে নীল- নদের দুপাড়ে গড়ে উঠেছিল উর্বর কৃষিজমি ।মরুভূমির বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নীলনদ ছিল মিশরীয় সভ্যতার প্রাণ। একই ভাবে নীলনদের বন্যায় অনিশ্চয়তার লেশমাত্র ছিল না বলে মিশরীয়রা ছিল আত্মনির্ভরশীল। মিশরীয় সভ্যতা নির্মাণ ও ধারনের ক্ষেত্রে নীলনদের এহেন অবদানের জন্য ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন। মিশরের উত্তর দিক ভূমধ্যসাগর ও এশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দক্ষিণাংশের সংযোগ আফ্রিকার মরু অঞ্চলের সঙ্গে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরাংশ ছিল উর্বর ও শস্যশ্যামলা। উত্তরাংশের সেমিটিক ও লিবিয়ানদের অনুপ্রবেশের ফলে একটা বিদেশী প্রভাব রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণাংশের লোকেরা একে অপরের প্রতিবেশি হলেও তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারেনি। মরু এলাকা হলেও মিশরে