সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পলিসের সামাজিক শ্রেনীবিভাজন | Social stratification of Polis

 পলিসের সামাজিক শ্রেনীবিভাজন

পলিসের জনতা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। নাগরিক এবং অনাগরিক এই দুই শ্রেণীর লোক বাস করত। অনাগরিক বলতে বোঝাত মেটিক, পেরিঅয়কয় এবং হেলট বা ক্রীতদাসদের। নারীদেরও নাগরিক অধিকার ছিল না।

নাগরিকের পরিবারে জন্ম গ্রহণ না করলে কারোর পক্ষে নাগরিক অধিকার পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অনাগরিকদের নাগরিক অধিকার দানের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ছিল না। তবে নাগরিক অধিকার না পেলেও এথেন্সের একলেজিয়া বিদেশিদের সামাজিক স্বীকৃতি দিত। পেরিক্লিসের শাসনের আগে দেখা যেত পিতা নাগরিক হলে এবং মাতা বিদেশিনী হলেও নাগরিক অধিকার পাওয়া যেত। কিন্তু নাগরিক অধিকারকে পেরিক্লিস আরো সংকুচিত করেন। তখন থেকে একমাত্র  পিতা এবং মাতা উভয়েই নাগরিক এবং বৈধভাবে বিবাহের ফলে যদি সেই সন্তানের জন্ম হয় তবেই সে নাগরিকত্ব পেত। পেরিক্লিসের যুগে এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল প্রায় তিন লক্ষ। কিন্তু নাগরিক ছিল প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার। অভিজাততান্ত্রিক পলিসে নাগরিক অধিকার অর্জন করা আরও কঠিন ছিল। যেমন স্পারটায় নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিক না হতে পারলে, সাধারণ ভোজনালয়ের জন্য অর্থ দিতে না পারলে এবং যৌবনে সামরিক শিক্ষা গ্রহণ না করলে নাগরিক হওয়া যেত না। স্পারটার নাগরিকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। 

নাগরিকরা পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করত। এথেন্সে সাধারণত আটজন নাগরিকের মধ্যে একজন বা তার বেশি একলেজিয়ার অধিবেশনে অংশগ্রহণ করত। তবে সকলেরই যোগ দেওয়ার অধিকার ছিল। পক্ষান্তরে অনাগরিকদের যারা ছিল সংখ্যায় অনেক বেশি তারা কোনো রাজনৈতিক অধিকার পেত না। অর্থাৎ পলিশ ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠের শাসন।

পলিশের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বিদেশীরা মেটিক নামে পরিচিত ছিল। এরা রাষ্ট্রের বিশেষ অনুগ্রহ না পেলে জমির মালিক হতে পারত না, একলেজিয়ায় ভোটও দিতে পারত না। বিচারালয়ে তাদেরকে কোনও নাগরিকের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হত। তবে বার্ষিক কর তাদেরকে দিতে হত এবং নাগরিকদের মতই সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হত। 

স্পারটার নাগরিকদের স্পারটান বলা হত। স্পারটানদের পরেই ছিল পেরিঅয়কয়দের অবস্থান। এরা ব্যাক্তিগতভাবে স্বাধীন হলেও রাজনৈতিক ভাবে পরাধীন ছিল। এদের অতিরিক্ত পরিমানে কর দিতে হত। এরা নাগরিকদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত না। এরা ছোটো শহর বা গ্রামে বাস করত, স্থানীয় বিষয় পরিচালনার দায়িত্ত্ব পালন করত। স্পারটানদের তত্ত্বাবধানে থেকে এরা সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালন করত এবং সাধারন গ্রীকদের মত জীবনযাপন করত। 

পলিসের সরবনিম্নে অবস্থান ছিল ক্রীতদাসদের । স্পারটায় ক্রীতদাসদের হেলট বলা হত। যুদ্ধবন্দী ও ঋন শোধে ব্যর্থদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। এথেন্সের জনসংখ্যার প্রায় ১/৪ অংশ ছিল ক্রীতদাস। স্পারটায় ক্রীতদাসের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ক্রীতদাস কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। এরা ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। পারিবারিক কাজ থেকে শুরু করে রাষ্টের বিভিন্ন তাদের নিয়োগ করা যেত। প্রভূর সাথে ক্রীতদাসের সম্পর্ক ছিল আনুগত্য ও স্নেহের। তবে সর্বদা এই সম্পর্ক এত মধুর হত না। শারীরিক নির্যাতন তাদের বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতে হত।  

Social Stratification in the Polis

The population of the polis was mainly divided into two groups: citizens and non-citizens. Non-citizens included metics (resident aliens), perioikoi, and helots (slaves). Women also did not have citizenship rights.

It was very difficult for someone to gain citizenship unless they were born into a citizen family. There were no specific rules for granting citizenship to non-citizens. However, even without citizenship rights, the Assembly of Athens, the Ecclesia, socially recognized foreigners. Before the rule of Pericles, one could gain citizenship if their father was a citizen, even if their mother was a foreigner. However, Pericles further restricted citizenship. From then on, citizenship could only be acquired if both the father and mother were citizens and legally married. During Pericles' era, Athens had a population of about 300,000, but only about 40,000 to 45,000 were citizens. In oligarchic polis like Sparta, gaining citizenship was even more difficult. For example, in Sparta, one could not become a citizen without owning a certain amount of property, contributing to common messes, and undergoing military training in youth. The number of Spartan citizens was very small.

Citizens enjoyed full political rights. In Athens, typically one out of every eight citizens participated in the Ecclesia’s sessions, though everyone had the right to join. On the other hand, non-citizens, who were much more numerous, had no political rights, meaning the polis was governed by a minority.

Foreigners residing permanently in the polis were known as metics. They could not own land or vote in the Ecclesia without special state favor. In the courts, they had to present their cases through a citizen. However, they had to pay an annual tax and, like citizens, fulfill military duties.

In Sparta, citizens were called Spartans. The perioikoi ranked just below the Spartans. Although personally free, they were politically dependent and had to pay additional taxes. They could not marry Spartans and lived in small towns or villages, managing local affairs. They served in various capacities in the military under Spartan supervision and lived lives similar to ordinary Greeks.

The lowest stratum in the polis was occupied by slaves. In Sparta, slaves were called helots. Prisoners of war and those who failed to repay debts were turned into slaves. About one-fourth of Athens' population consisted of slaves. Sparta had the highest number of slaves. Slaves were not personal property but owned by the state. They could be employed in various tasks, from domestic work to state duties. The relationship between master and slave was one of loyalty and affection, though this relationship was not always amicable. Physical abuse had to be endured without complaint.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...