সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পলিস উদ্ভবের কারণ | Emergence of Polis

 

পলিস বলতে কি বোঝায় 

নগররাষ্ট্র কে গ্রীকবাসী পলিস নামে অভিহিত করতো। ইংরেজি শব্দ 'Polis' এর অর্থ স্ব-শাসিত রাষ্ট্র। তবে নগর রাষ্ট্রের কোন সঠিক সংজ্ঞা ঐতিহাসিকরা দিতে পারেননি। তবে নগররাষ্ট্র বলতে শুধু নির্দিষ্ট ভূখন্ড জনসাধারণের সমষ্টি ছিল না, নাগরিক জীবনে নানান সুযোগ-সুবিধা ছিল পলিস জীবনের একান্ত শর্ত, যেখানে থাকত বড় বাড়ি, মিউজিয়াম, থিয়েটার হল, বাজার ও জলস্তম্ভ। পলিস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বিষয় যুক্ত ছিল; সেগুলি হলঃ স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা,  রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, সৌন্দর্য। তবে গ্রিসে এমন অনেক নগররাষ্ট্র ছিল যারা এই চারটি শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তাদের পলিস বলা হত।

পলিস উদ্ভবের কারণ

প্রাচীন গ্রিসে পলিস কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ঐতিহাসিকগণ পলিস সৃষ্টির জন্য কয়েকটি কারণকে উল্লেখ করেছেন যা নিম্নে আলোচনা করা হল:-

(I) ভৌগোলিক কারণ:- গ্রীস ছিল চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা আর পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটা উপত্যাকা। প্রাচীন গ্রীসের জনগণ অসংখ্য উপত্যকা, পাহাড় বেষ্টিত সমভূমি এবং দীপকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল অসংখ্য ছোট ছোট পলিস। এক পলিস থেকে অন্য পলিসে যাতায়াতের কোনো রাস্তা ছিল না। দুটি পলিস পাহাড়ের প্রাচীর দিয়ে বিভক্ত থাকতো। ফলে একেকটি শহরকে কেন্দ্র করে এক একটি পৃথক পলিস গড়ে ওঠে। স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থার এই দুর্গমতাই পলিস গঠনের সহায়ক ছিল।

(II) সামরিক কারণ:- গ্রিসের পলিস গুলির সৃষ্টির পেছনে সামরিক কারণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিক জন-জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল ডোরিয়ান আক্রমণ ও বিজয়। ডোরিয়ান আক্রমণ থেকে বাঁচার তাগিদে গ্রীকরা একটি স্থানীয় সুরক্ষিত সামরিক কেন্দ্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাই তারা পাহাড়ের চূড়ায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে, যা অ্যাক্রোপলিস নামে পরিচিত ছিল। এই অ্যাক্রপলিস গুলি ছিল সামরিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র।

(III) অর্থনৈতিক কারণ:- পলিস উদ্ভবের পেছনে অর্থনৈতিক কারণের একটি বড় ভূমিকা ছিল। পলিসের নিজ জমিতে উৎপাদিত শস্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাত এবং পলিসের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যা উৎপাদিত হতো তা দিয়েই প্রথমদিকে পলিসবাসী সন্তুষ্ট থাকলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য আমদানি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। গ্রিসের শস্য বাণিজ্যের বিকাশের পথ সুগম হয়েছিল। এইভাবে নগর ও বাজারকে কেন্দ্র করে গ্রিসে পলিসের উদ্ভবের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।

(IV) উপজাতি গোষ্ঠীর সহানুভূতি:- গ্রিসের পলিশ গুলির উদ্ভবের পেছনে অপর যে কারনটি দায়ী তা ছিল তা হল উপজাতি গোষ্ঠীর সহানুভূতি। সমসংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন একই উপজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা এক একটি পলিসে বসবাস করত। সংখ্যায় বেশি এবং উপজাতি গোষ্ঠীবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা পলিস গঠন করেছিল।

পরিশেষে বলা যায় গ্রিসের পলিস গঠনে অর্থনীতি ও ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজনে পরিবারগুলি একত্রিত হয়ে পলিস গঠনে সহায়তা করেছিল। আবার ধর্মীয় প্রবনতার গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না, আর এই সমস্ত কিছুর সাথে যুক্ত হয়েছিল গ্রিকদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক