সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পলিস উদ্ভবের কারণ | Emergence of Polis

 

পলিস বলতে কি বোঝায় 

নগররাষ্ট্র কে গ্রীকবাসী পলিস নামে অভিহিত করতো। ইংরেজি শব্দ 'Polis' এর অর্থ স্ব-শাসিত রাষ্ট্র। তবে নগর রাষ্ট্রের কোন সঠিক সংজ্ঞা ঐতিহাসিকরা দিতে পারেননি। তবে নগররাষ্ট্র বলতে শুধু নির্দিষ্ট ভূখন্ড জনসাধারণের সমষ্টি ছিল না, নাগরিক জীবনে নানান সুযোগ-সুবিধা ছিল পলিস জীবনের একান্ত শর্ত, যেখানে থাকত বড় বাড়ি, মিউজিয়াম, থিয়েটার হল, বাজার ও জলস্তম্ভ। পলিস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বিষয় যুক্ত ছিল; সেগুলি হলঃ স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা,  রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, সৌন্দর্য। তবে গ্রিসে এমন অনেক নগররাষ্ট্র ছিল যারা এই চারটি শর্ত পূরণ করতে না পারলেও তাদের পলিস বলা হত। গ্রিস ও এশিয়া মাইনরের মূল ভূখন্ডে এবং ইজিয়ান সাগরের দ্বীপগুলিতে অপেক্ষাকৃত উন্নত অঞ্চলগুলিতে পলিসের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।

পলিস উদ্ভব

খ্রিঃ পূঃ ১২০০ অব্দ থেকে খ্রিঃ পূঃ ৮০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে গ্রিসের ইতিহাসে অন্ধকার যুগ বলা হয়। এই সময়ে মাইসিনীয়, হিট্টাইট ইত্যাদি বৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির পতন ঘটেছিল। এই সময়ের ইতিহাস চর্চা যথেষ্ট তথ্যের অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অন্ধকার যুগের প্রথম পর্বে গ্রিসের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। অনেকেই দেশ ছেড়ে আনাতোলিয়ার দিকে চলে যায়। ফলে গ্রিসে একটা সাংস্কৃতিক অবণতি দেখা দেয়। কিন্তু এই পর্বের অন্তিম লগ্ন থেকে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে থাকে। আদিম গোষ্ঠী ও কৌমগুলি ক্রমশ ভেঙে পড়ে এবং Oikos নামে একধরনের সামাজিক একক লক্ষ করা যায়। এগুলি কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ভাবে গড়ে উঠেছিল। পরিবার, পরিবারের কর্মী ও ভৃত্যরা এর সদস্য ছিল এবং কর্মী ও ভৃত্যরা প্রাথমিক ভাবে পরিবারের প্রতি অনুগত থাকত। ওইকস গুলি কেবল সামাজিক একক হিসাবে নয় স্বনির্ভর অর্থনৈতিক একক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। অন্ধকার যুগে এভাবে বহু বৃহৎ ওইকস গড়ে উঠেছিল। বৃহৎ ওইকস গুলি প্রয়োজনে দাস ও খেতমজুর নিয়োগ করত। এরাও ওইকসের সদস্য ছিল। সেই সময় ভূমিহীনরা থেটেস (Thetes) নামে পরিচিত ছিল। এরা ওইকসের সদস্য ছিল না।  

অন্ধকার যুগের সমাপ্তির পর গ্রিসে আদি পর্বের (Archaic Age) সূচনা হয় (৮০০ খ্রিঃ পূঃ থেকে ৫০০ খ্রিঃ পূঃ)। এই পর্বকে প্রাচীন গ্রিসে সন্ধিক্ষনের পর্ব বলা হয়। পলিসের উতপত্তির সঠিক সময় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন এই পর্বেই গ্রিসে পলিসের উদ্ভব। খ্রিঃ পূঃ অষ্টম শতকের কবি হেসিয়াসে রচনায় পলিসের আবির্ভাবের আভাষ পাওয়া যায়। এই পর্বে গ্রিকদের সাথে ফিনিশিয়দের সাথে যোগাযোগের সূত্র ধরে গ্রিকরা বহির্বাণিজ্যে উন্নতি করে। সমুদ্র পথ উন্মুক্ত হয়। এই অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে গ্রিসের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে (প্রায় চার গুণ হারে) এবং নগরায়ন ঘটতে থাকে। বানিজ্যিক কর্মকাণ্ডের আত্মাস্বরূপ নগরগুলিকে কেন্দ্র করে গ্রিসে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিকাশ ঘটতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গ্রিকরা তাদের প্রয়োজন চরিতার্থ করার জন্য পুরানো পরিবারতন্ত্র ভেঙে নতুন প্রতিষ্ঠান পলিস গড়ে তোলে এবং ধ্রুপদী যুগে (৫০০ খ্রিঃ থেকে ৩৯৮ খ্রিঃ পূঃ) তা পরিপূর্ণ রূপে বিকশিত হয়।  

পলিসের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার যে অনন্য ধরন তা কোনো বিশেষ ভোগলিক পরিবেশ এবং আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ছাড়া সম্ভব নয়। ঠিক কোন কোন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ শক্তি পলিস গঠনকে অবশ্যম্ভাবী করল তা নিয়ে ওইতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক বিতর্কসমূহ থেকে পলিস গড়ে ওঠার মোটামুটি কয়েকটি কারন নির্ণয় করা যেতে পারে। 

(I) ভৌগোলিক কারণ:- গ্রীস ছিল চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা আর পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটা উপত্যাকা। প্রাচীন গ্রীসের জনগণ অসংখ্য উপত্যকা, পাহাড় বেষ্টিত সমভূমি এবং দীপকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল অসংখ্য ছোট ছোট পলিস। এক পলিস থেকে অন্য পলিসে যাতায়াতের কোনো রাস্তা ছিল না। দুটি পলিস পাহাড়ের প্রাচীর দিয়ে বিভক্ত থাকতো। ফলে একেকটি শহরকে কেন্দ্র করে এক একটি পৃথক পলিস গড়ে ওঠে। স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থার এই দুর্গমতাই পলিস গঠনের সহায়ক ছিল।

(II) সামরিক কারণ:- গ্রিসের পলিস গুলির সৃষ্টির পেছনে সামরিক কারণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিক জন-জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল ডোরিয়ান আক্রমণ ও বিজয়। ডোরিয়ান আক্রমণ থেকে বাঁচার তাগিদে গ্রীকরা একটি স্থানীয় সুরক্ষিত সামরিক কেন্দ্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাই তারা পাহাড়ের চূড়ায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে, যা অ্যাক্রোপলিস নামে পরিচিত ছিল। এই অ্যাক্রোপলিস  গুলি ছিল সামরিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র।

(III) অর্থনৈতিক কারণ:- পলিস উদ্ভবের পেছনে অর্থনৈতিক কারণের একটি বড় ভূমিকা ছিল। পলিসের নিজ জমিতে উৎপাদিত শস্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাত এবং পলিসের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যা উৎপাদিত হতো তা দিয়েই প্রথমদিকে পলিসবাসী সন্তুষ্ট থাকলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য আমদানি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। গ্রিসের শস্য বাণিজ্যের বিকাশের পথ সুগম হয়েছিল। এইভাবে নগর ও বাজারকে কেন্দ্র করে গ্রিসে পলিসের উদ্ভবের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।

(IV) উপজাতি গোষ্ঠীর সহানুভূতি:- গ্রিসের পলিশ গুলির উদ্ভবের পেছনে অপর যে কারনটি দায়ী তা ছিল তা হল উপজাতি গোষ্ঠীর সহানুভূতি, যা গড়ে উঠেছিল ওইকসগুলির মধ্য দিয়ে। সমসংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন একই উপজাতি গোষ্ঠীর লোকেরা এক একটি পলিসে বসবাস করত। সংখ্যায় বেশি এবং উপজাতি গোষ্ঠীবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা পলিস গঠন করেছিল।

পরিশেষে বলা যায় গ্রিসের পলিস গঠনে অর্থনীতি ও ভূগোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজনে পরিবারগুলি একত্রিত হয়ে পলিস গঠনে সহায়তা করেছিল। আবার ধর্মীয় প্রবনতার গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না, আর এই সমস্ত কিছুর সাথে যুক্ত হয়েছিল গ্রিকদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা।

Reason Behind the Emergence of Polis

What is Meant by Polis?

The Greeks referred to a city-state as a polis. The English word 'Polis' means an autonomous state. However, historians have not been able to provide a precise definition of a city-state. A city-state was not just a defined territory and a collection of people; it was also a community that offered various civic amenities. The essence of life in a polis included large houses, museums, theaters, markets, and water fountains. Four essential factors were necessary for the formation of a polis: health, defense, a suitable environment for political activities, and beauty. However, in Greece, many city-states were referred to as polises even if they did not meet all these criteria. Polises were primarily found in the mainlands of Greece and Asia Minor, as well as the islands of the Aegean Sea.

The Emergence of Polis

The period from 1200 BCE to 800 BCE in Greek history is known as the Dark Age. During this time, the great empires such as Mycenaeans and Hittites fell down. The history of this period remains uncertain due to a lack of sufficient evidence. In the early phase of the Dark Age, the population of Greece significantly decreased, with many leaving for Anatolia. As a result, a cultural decline was observed in Greece. However, by the end of this period, some changes began to occur. Primitive tribes and clans gradually broke down, and a social unit called 'Oikos' emerged. These were family-based units centering on agricultural land, consisting of family members, workers, and servants who were loyal to the family. These Oikos were not only social units but also self-sufficient economic units. During the Dark Era, many large Oikos emerged, employing slaves and agricultural laborers as needed. Those without land were known as Thetes and were not members of the Oikos.

After the Dark Age, the Archaic Age (800 BCE to 500 BCE) began in Greece, also known as the transitional period of ancient Greece. Although there is a debate among historians about the exact time of the emergence of the polis, most agree that it occurred during this period. References to the emergence of polis can be found in the works of Hesiod, an eighth-century BCE poet. During this period, the Greeks improved their foreign trade through contact with the Phoenicians, opening up sea routes. With this economic prosperity, the population of Greece increased (by almost four times) and urbanization took place. As commercial activities thrived, cities became centers of cultural and religious development. In this context, the Greeks dismantled the old patriarchal system and established new institutions called polises, which fully developed during the Classical Age (500 BCE to 338 BCE).

The unique structure of the state and society of the polis was possible due to specific geographical and socio-economic conditions. There is debate among historians about which external and internal forces made the formation of polis inevitable. However, from these debates, a few reasons for the emergence of polis can be identified:

Geographical Reasons

Greece was surrounded by mountains with small valleys in between. The ancient Greeks developed many small polises around numerous valleys, mountain-surrounded plains, and islands. There were no roads connecting one polis to another. Two polises were separated by mountain walls, resulting in each city developing as an independent polis. The difficult land transportation facilitated the formation of the polis.

Military Reasons

Military reasons were crucial in the creation of the Greek Polis. The Doric invasion and conquest destroyed Greek public life. To protect themselves from Doric attacks, the Greeks realized the need to form a local protected military center. Hence, they built a fortress on hilltops, known as Acropolis. These Acropolis served as military and religious centers.

Economic Reasons

Economic reasons played a significant role in the emergence of polis. Initially, the polises met their internal needs with the grains produced on their land and were content with the locally produced goods. However, as the population grew, food imports became necessary. The development of Greece’s grain trade paved the way for the emergence of a polis centered around cities and markets.

Tribal Sympathy

Another reason behind the emergence of Greek polises was the tribal sympathy developed through the Oikoi. People of the same cultural mentality lived in each polis. Driven by their larger numbers and tribal solidarity, they formed a polis.

In conclusion, geography and economy played important roles in the formation of polises in Greece. Families united for economic and military needs, aiding in the creation of polises. The importance of religious inclination cannot be ignored, and this was coupled with the Greeks’ desire for colonial dominance.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...