সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পলিশের স্বরূপ । পলিশের বৈশিষ্ঠ্য | Basic Feature of Polis in Anceint Grece

পলিশের স্বরূপ

পলিশ একটি গ্রিক শব্দ। ইংরেজিতে এর অনুবাদ হয় City State এবং বাংলায় নগররাষ্ট্র। তবে এই অনুবাদ যথার্থ নয়। কারণ অনেক পলিশ ছিল যেগুলি আদৌ নগর নয়, যেমন- স্পার্টা। আবার নগর যে গ্রামকে শাসন করতো এরকম ঠিক নয়। তবে ভালো বিকল্পের অভাবের জন্য City State বা নগর রাষ্ট্র  কথাটি প্রচলিত হয়ে গেছে।

মাইসিনীয় সভ্যতার পতন ঘটেছিল আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে। এরপর গ্রিসে শুরু হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকার যুগ (১২০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্ব)। এর পরবর্তী যুগটি আর্কাইক বা সুপ্রাচীন যুগ নামে পরিচিত (৮০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্ব)। এই যুগেই গ্রিক সভ্যতার নাগরিক ধাঁচটি বিকশিত হতে শুরু করে। সুপ্রাচীনকালেই যে বাহুসংখ্যক পলিশ প্রতিষ্টিত হয়েছিল, ধ্রুপদী যুগে তা পূর্ণ পরিনিতি লাভ করেছিল।

পলিশ সম্পর্কে প্রথম আলোচ্য বিষয় হল এর আয়তন ও লোকসংখ্যা। প্লেটো তার রিপাবিলক-এ বলেছেন একটি আদর্শ পলিশের নাগরিক সংখ্যা হবে ৫০০০। অ্যারিস্টটল তাঁর পলিটিকস গ্রন্থে বলেছেন প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে সাক্ষাৎ পরিচয় থাকতে হবে। অ্যারিস্টটল আরো বলেছেন দশজন নাগরিক নিয়ে যেমন একটি পলিশ গড়ে তোলা যায় না, তেমনি এক লক্ষ নাগরিক নিয়েও পলিশ গঠিত হতে পারে না। পলিশ ভূখন্ড অধিকার করে থাকলেও পলিশ বলতে একটি স্থান বোঝায় না। পলিশ বলতে মিলিতভাবে কর্মরত একটি জনসমষ্টিকে বোঝাত। সবচেয়ে বড় পলিশ ছিল স্পার্টা। এর আয়তন ছিল ৩০২০০ বর্গমাইল। অপেক্ষাকৃত ছোট এথেন্সের আয়তন ছিল ১০৬০ বর্গমাইল। বেশিরভাগ পলিশ ছিল ৩০ বর্গমাইল থেকে শুরু করে ৫০০ বর্গমাইলের মধ্যে। পলিশের এই ক্ষুদ্র আয়তন ও জনসংখ্যা কোনও ঐতিহাসিক বা ভৌগলিক দুর্বিপাকের ফসল নয়। গ্রীকরা এই ক্ষুদ্রত্বকে তাদের নগররাষ্ট্রের অন্যতম গুণ বলে মনে করত।

পলিশে বসবাসকারী সকল মানুষ কিন্তু পলিশের নাগরিক হতে পারতেন না। নাগরিকভিন্ন বিদেশি ও ক্রীতদাসরা পলিসে বাস করত। নাগরিক অধিকার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তা লাভ করা সহজ ছিল না। জন্মসূত্রে নাগরিক হতে না পারলে অন্যভাবে এই অধিকার লাভ করা সম্ভব হত না। এথেন্সে বিদেশিদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হলেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। অনাগরিকদের তালিকায় ছিল বিদেশি, ক্রীতদাস এবং মহিলারা। নাগরিকদের তুলনায় এরা কিছু অসুবিধা ভোগ করত। তবে রাষ্ট্রের কর্তাদের কাছে নাগরিক বা অনাগরিক সকলেই ছিল সমান।

ডোরিয়ান বিজয়ের পরে যে পলিশগুলি দেখা যায় সেগুলি মোটামুটি একই ধরনের ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। অভিজাত পরিবারগুলি এই ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। নীতি নির্ধারণ, যুদ্ধ এবং বিচারের একচেটিয়া অধিকার তাদের হাতেই ছিল। খ্রি‍ঃ‍‍ পূঃ ৫০০ অব্দ থেকে অভিজাততান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পলিশ গুলির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে পলিশের মর্যাদার ক্ষেত্রে সরকারের চরিত্র বা কাঠামো নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। অভিজাততান্ত্রিক স্পার্টা যেমন একটি পলিশ ছিল, তেমনি ছিল স্বৈরতান্ত্রিক সিরাকিউসও ছিল পলিশ।

পলিশের ভিতরে সকলের সুখ-স্বাচ্ছন্দ সমান ছিল না। কেবল নাগরিকদের জন্য রাজনৈতিক পদ ও অধিকার লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সাম্যা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ধনসম্পদ ও জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে বৈষম্য মেনে নেওয়া হয়েছিল। এমনকি গনতান্ত্রিক পলিশেও এমন বৈষম্য ছিল। অর্থাৎ বলাই যায় পলিশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই ছিল সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী আর ছিল মুষ্টিমেয় সংখ্যক পরজীবী সুবিধাভোগী সম্প্রদায়। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক