Guild | Early Medieval India | আদি মধ্যযুগে গিল্ড
শিল্পী ও কারিগরদের সংগঠন কে গিল্ড বলা হয়। ভারতে এগুলিকে শ্রেণি বা সংঘ বলা হত। সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতে শ্রেণী বা সংঘ গুলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গুপ্ত যুগ থেকে ভারতে আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল তার প্রভাব গিল্ড গুলির উপরেও পড়েছিল। তাই আদি মধ্যযুগের গিল্ড গুলির চরিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছিল।
আদি মধ্যযুগের গিল্ডের গুরুত্ব কিছুটা কমে ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। লালন গোপাল মনে করেন যে, গিল্ড এই সময়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে মেনে নিয়েছিল। তাই যৌথ স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদার দেখিয়েছিলেন যে, কর ফাঁকি, জুয়া খেলা ও বারাঙ্গনার উপস্থিতি ঘটলে রাজা গিল্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন-- এরকম আগে দেখা যায়নি।
12-13 শতকের সাহিত্যে শ্রেণীকরণের উল্লেখ আছে। শ্রেণিকরণ হলো প্রশাসনিক দপ্তর যা গিল্ডের তত্ত্বাবধান করত। বৃহৎ ধর্ম ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ শ্রেণীকে সংকর জাতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এগুলিকে শাস্ত্রকাররা ভালো চোখে দেখেননি। কুম্ভকার, তাঁতি, স্বর্ণকার, রজক প্রভৃতি হলো শুদ্ধ জাতি। চর্মকার, তেলি, ইক্ষু প্রেরণকারী, রঙ্গকার, কাসারি প্রভৃতি হল অশুদ্ধ জাতি। জিনসেন সুরীর চোখে স্বর্ণকার, কুম্ভকার ,কর্মকার প্রভৃতি সামাজিক গোষ্ঠীর লোক হল নিম্নমানের এবং অধর্ম পর্যায়ভুক্ত।
সে যুগের শ্রেণি গুলির উল্লেখ আমরা সমকালীন লেখমালায় পাই। গোয়ালিয়র লেখতে অন্তত কুড়িজন তৈলিক প্রধান ও 14 জন মালাকার প্রধানের নাম পাওয়া যায়। এছাড়া সূরা প্রস্তুতকারীদের ও পাথরকাটা কারিগরদের সংগঠন ছিল। বণিকদের দুটি সংগঠনের কথা জানা যায়, যথা- মনিগ্রাম ও নানা দেশি।
সপ্তম শতকের আগে একটি বৃত্তি কে ঘিরে একজন প্রধানের নেতৃত্বে একটি শ্রেণী গড়ে উঠত। আদিমধ্য পর্বে দেখা যাচ্ছে যে, একটি বৃত্তের মধ্যে একাধিক শ্রেণীর উত্থান ঘটেছিল। শ্রেণীর যে দৃঢ়বদ্ধ রুপটি আগে দেখা গিয়েছিল, সেটির এই পর্বের অবক্ষয় ঘটেছিল। এক একটি পরিবারকে আশ্রয় করে একেকটি শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। এভাবে একই পেশায় অনেক সংগঠন এবং অনেক নেতার আবির্ভাব ঘটে। শ্রেনীর সংগঠন এ অবশ্যই ভাঙ্গন দেখা যায়। আগে গিল্ড গুলি নির্ভরযোগ্য ব্যাংকের ভূমিকা পালন করত। এই পর্বে সেই ভূমিকা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে যে অর্থ আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা হচ্ছে শ্রেণীর কাছে নয়, শ্রেণীর প্রধানের কাছে।
সুতরাং রাজকীয় হস্তক্ষেপ, শ্রেণিগুলির জাতিতে রূপান্তর, শ্রেণি গুলির পারিবারিক সংগঠনে পরিণত হওয়া, এবং অর্থলগ্নি ঘটনার বিরলতা প্রমাণ করে যে আদি মধ্যযুগের শ্রেণি গুলির অবনমন ঘটেছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন