Please visit our Homepage and Subscribe us.
আলোচ্য পর্বে কি কি ফসলের উৎপাদন হতো তার পরিচয় আমরা সমকালীন রচনাবলী থেকে পাই। উৎপাদিত শস্যের মধ্যে ধান ছিল সর্বপ্রধান কালিদাস বঙ্গের ধানের খ্যাতির কথা লিখেছেন। হিউ এন সাং লিখেছেন মগধের সুগন্ধি ধান সম্ভ্রান্তদের পছন্দের তালিকায় ছিল। হরিয়ানার আবহাওয়া উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল ছিল। কালিদাসের লেখায় আখ এবং 'অমরকোষে' তুলো, তিল, সর্ষে, নীল এবং দক্ষিণ ভরতে গোলমরিচ এলাচ ও সুপুরি উৎপাদনের কথা জানা যায়। বরাহমিহিরের লেখায় কাশ্মীরে জাফরান চাষের কথা রয়েছে।
জমির ধারণ এবং চাষের জন্য তা কতটা উপযোগী সে সম্পর্কে আলোচ্য পড়বে স্পষ্ট ধারণা ছিল। অমরকোষে অন্তত 12 রকম জমির কথা বলা হয়েছে। লেখমালায় অবশ্য ছয় প্রকার জমির কথা বলা হয়েছে-- ১) ক্ষেত্র বা চাষযোগ্য জমি, ২) অপ্রহত বা অনাবাদী জমি, ৩) খিলক্ষেত্র বা পতিত জমি ৪) অপ্রদ বা অবন্টিত জমি ৫) অপ্রতিকর বা রাজস্ব আদায়ের অযোগ্য জমি এবং ৬) অরণ্য।
Thanks for reading.
গুপ্ত রাজাদের শাসনকাল 319-20 খ্রিস্টাব্দে থেকে 550 বা 570 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। গুপ্তদের সময়ে দক্ষিণ ভারতে বাকাটক ও কদম্ব রাজারা রাজত্ব করত। তাই গুপ্ত যুগ বলতে আমরা চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ষষ্ঠ শতকের সমাপ্তি পর্যন্ত ধরে নেই। গুপ্ত যুগে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল সেদিকে নজর রেখে অনেক ঐতিহাসিক গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেছেন গুপ্ত যুগের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ ছিল সুস্থিত অর্থনীতি।
গুপ্ত অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অগ্রহার ব্যবস্থা। অগ্রহার হল ধর্মস্থান বা পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভূমিদান প্রথা। এই ভূমিদান গুপ্তদের আগে থেকে চালু ছিল। কিন্তু আলোচ্য পর্বে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। দান করার ক্ষেত্রে গুপ্তদের তুলনায় বাকাটকরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। অগ্রহার ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলনের ফলে জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার ঘটেছিল এবং গোষ্ঠী মালিকানা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছিল। একইসাথে এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি লাভবান হয়েছিল। একটি ধর্মীয় ভূস্বামী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। রামশরণ শর্মা ও তার অনুগামীরা মনে করেন, অগ্রহার ব্যবস্থা ফলে সমাজে ত্রিস্তরীয় (রাজা, ভূস্বামী ও কৃষক) ভূমিব্যবস্থা তথা সামন্ততন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। কৃষক কার্যত ভুমিদাসে পরিণত হয়েছিল। এর ফলে কারিগরি উৎপাদন, বাণিজ্য, মুদ্রা অর্থনীতি ও নগরায়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। যদিও তার থিসিস নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে।
আলোচ্য পর্বে কি কি ফসলের উৎপাদন হতো তার পরিচয় আমরা সমকালীন রচনাবলী থেকে পাই। উৎপাদিত শস্যের মধ্যে ধান ছিল সর্বপ্রধান কালিদাস বঙ্গের ধানের খ্যাতির কথা লিখেছেন। হিউ এন সাং লিখেছেন মগধের সুগন্ধি ধান সম্ভ্রান্তদের পছন্দের তালিকায় ছিল। হরিয়ানার আবহাওয়া উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল ছিল। কালিদাসের লেখায় আখ এবং 'অমরকোষে' তুলো, তিল, সর্ষে, নীল এবং দক্ষিণ ভরতে গোলমরিচ এলাচ ও সুপুরি উৎপাদনের কথা জানা যায়। বরাহমিহিরের লেখায় কাশ্মীরে জাফরান চাষের কথা রয়েছে।
জমির ধারণ এবং চাষের জন্য তা কতটা উপযোগী সে সম্পর্কে আলোচ্য পড়বে স্পষ্ট ধারণা ছিল। অমরকোষে অন্তত 12 রকম জমির কথা বলা হয়েছে। লেখমালায় অবশ্য ছয় প্রকার জমির কথা বলা হয়েছে-- ১) ক্ষেত্র বা চাষযোগ্য জমি, ২) অপ্রহত বা অনাবাদী জমি, ৩) খিলক্ষেত্র বা পতিত জমি ৪) অপ্রদ বা অবন্টিত জমি ৫) অপ্রতিকর বা রাজস্ব আদায়ের অযোগ্য জমি এবং ৬) অরণ্য।
জমি যেহেতু হস্তান্তরিত হত তাই জমি মাপার নির্দিষ্ট পদ্ধতি তাদের জানা ছিল। জমির আয়তন বোঝাতে তাম্রশাসনগুলিতে আঢ়বাপ, দ্রোণবাপ, কুল্যবাপ ও পাটক একক ব্যবহৃত হত। বাকাটক এলাকায় জমি মাপের একক ছিল নিবর্তন এবং মৈত্রক এলাকায় পাদাবর্ত। বাংলার তাম্রশাসনে জমি মাপার সময় দুইপ্রকার নল ব্যবহারের প্রমান আছে। ক্রয়বিক্রয় বা দানজনিত সমস্ত জমি হস্তান্তরের ঘটনা তাম্রশাসনে জারি করা হত।
কৃষি অর্থনীতি আলোচনা প্রসঙ্গে সেচ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করতেই হয়। সমকালীন তাম্রশাসনে তড়াগ বা পুকুরের উল্লেখ হামেশাই পাওয়া যায়। ছোটখাটো সেচ প্রকল্প ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত উদ্যোগে গড়ে উঠত। কিন্তু বৃহৎ প্রকল্পে রাজকীয় উদ্যোগ বিরল নয়। বাকাটক রাজা দ্বিতীয় পৃথ্বীষেন পৃথ্বীসমুদ্র নামে এক বিরাট জলাশয় খনন করে দেন। অনুরূপ উদ্যোগ নিয়েছিলেন কদম্ব শাসক কুকুস্থবর্মন। মৌর্য আমলে নির্মিত সুদর্শন হৃদ সংস্কারের কাজ করেছিলেন স্কন্দগুপ্ত। বাকাটক রাজাদের এক পদস্থ আধিকারিক মহারাষ্ট্রে একটি সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছিলেন, যেটিরও নাম সুদর্শন হৃদ।
সুতরাং গুপ্তযুগে কৃষির অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কৃষকের অবস্থার উন্নতির কোনো প্রমাণ নেই। বরং জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার এবং বর্ণব্যবস্থার কঠোরতা হেতু ধরে নেওয়া যায় যে, কৃষকরা ভুমিদাসে পরিণত না হলেও তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়েছিল।
Thanks for reading.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন