সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুপ্তযুগের অর্থনীতি | Gupta Economy

গুপ্ত অর্থনীতি

গুপ্ত রাজাদের শাসনকাল ৩১৯-৩২০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ৫৫০ বা ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল। গুপ্তদের সময়ে দক্ষিণ ভারতে বাকাটক ও কদম্ব রাজারা রাজত্ব করত। তাই গুপ্ত যুগ বলতে আমরা চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ষষ্ঠ শতকের সমাপ্তি পর্যন্ত ধরে নেই। গুপ্ত যুগে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল সেদিকে নজর রেখে অনেক ঐতিহাসিক গুপ্ত যুগকে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করেছেন গুপ্ত যুগের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ ছিল সুস্থিত অর্থনীতি।

কৃষি অর্থনীতি 

গুপ্ত অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অগ্রহার ব্যবস্থা। অগ্রহার হল ধর্মস্থান বা পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভূমিদান প্রথা। এই ভূমিদান গুপ্তদের আগে থেকে চালু ছিল। কিন্তু আলোচ্য পর্বে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। দান করার ক্ষেত্রে গুপ্তদের তুলনায় বাকাটকরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। অগ্রহার ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলনের ফলে জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার ঘটেছিল এবং গোষ্ঠী মালিকানা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছিল। একইসাথে এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি লাভবান হয়েছিল। একটি ধর্মীয় ভূস্বামী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। রামশরণ শর্মা ও তার অনুগামীরা মনে করেন, অগ্রহার ব্যবস্থা ফলে সমাজে ত্রিস্তরীয় (রাজা, ভূস্বামী ও কৃষক) ভূমিব্যবস্থা  তথা সামন্ততন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। কৃষক কার্যত ভুমিদাসে পরিণত হয়েছিল। এর ফলে কারিগরি উৎপাদন, বাণিজ্য, মুদ্রা অর্থনীতি ও নগরায়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। যদিও তার থিসিস নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে।

আলোচ্য পর্বে কি কি ফসলের উৎপাদন হতো তার পরিচয় আমরা সমকালীন রচনাবলী থেকে পাই। উৎপাদিত শস্যের মধ্যে ধান ছিল সর্বপ্রধান কালিদাস বঙ্গের ধানের খ্যাতির কথা  লিখেছেন। হিউ এন সাং লিখেছেন মগধের সুগন্ধি ধান সম্ভ্রান্তদের পছন্দের তালিকায় ছিল। হরিয়ানার আবহাওয়া উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল ছিল। কালিদাসের লেখায় আখ এবং 'অমরকোষে' তুলো, তিল, সর্ষে, নীল এবং দক্ষিণ ভরতে গোলমরিচ এলাচ ও সুপুরি উৎপাদনের কথা জানা যায়। বরাহমিহিরের লেখায় কাশ্মীরে জাফরান চাষের কথা রয়েছে।

জমির ধারণ এবং চাষের জন্য তা কতটা উপযোগী সে সম্পর্কে আলোচ্য পড়বে স্পষ্ট ধারণা ছিল। অমরকোষে অন্তত 12 রকম জমির কথা বলা হয়েছে। লেখমালায় অবশ্য ছয় প্রকার জমির কথা বলা হয়েছে-- ১) ক্ষেত্র বা চাষযোগ্য জমি, ২) অপ্রহত বা অনাবাদী জমি, ৩) খিলক্ষেত্র বা পতিত জমি ৪) অপ্রদ বা অবন্টিত জমি ৫) অপ্রতিকর বা রাজস্ব আদায়ের অযোগ্য জমি এবং  ৬) অরণ্য।

জমি যেহেতু হস্তান্তরিত হত তাই জমি মাপার নির্দিষ্ট পদ্ধতি তাদের জানা ছিল। জমির আয়তন বোঝাতে তাম্রশাসনগুলিতে আঢ়বাপ, দ্রোণবাপ, কুল্যবাপ ও পাটক একক ব্যবহৃত হত। বাকাটক এলাকায় জমি মাপের একক ছিল নিবর্তন এবং মৈত্রক এলাকায় পাদাবর্ত। বাংলার তাম্রশাসনে জমি মাপার সময় দুইপ্রকার নল ব্যবহারের প্রমান আছে। ক্রয়বিক্রয় বা দানজনিত সমস্ত জমি হস্তান্তরের ঘটনা তাম্রশাসনে জারি করা হত।

কৃষি অর্থনীতি আলোচনা প্রসঙ্গে সেচ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করতেই হয়। সমকালীন তাম্রশাসনে তড়াগ বা পুকুরের উল্লেখ হামেশাই পাওয়া যায়। ছোটখাটো সেচ প্রকল্প ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত উদ্যোগে গড়ে উঠত। কিন্তু বৃহৎ প্রকল্পে রাজকীয় উদ্যোগ বিরল নয়। বাকাটক রাজা দ্বিতীয় পৃথ্বীষেন পৃথ্বীসমুদ্র নামে এক বিরাট জলাশয় খনন করে দেন।  অনুরূপ উদ্যোগ নিয়েছিলেন কদম্ব শাসক কুকুস্থবর্মন। মৌর্য আমলে নির্মিত সুদর্শন হৃদ সংস্কারের কাজ করেছিলেন স্কন্দগুপ্ত। বাকাটক রাজাদের এক পদস্থ আধিকারিক মহারাষ্ট্রে একটি সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছিলেন, যেটিরও নাম সুদর্শন হৃদ।

সুতরাং গুপ্তযুগে কৃষির অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কৃষকের অবস্থার উন্নতির কোনো প্রমাণ নেই। বরং জমিতে ব্যক্তিমালিকানার প্রসার এবং বর্ণব্যবস্থার কঠোরতা হেতু ধরে নেওয়া যায় যে, কৃষকরা ভুমিদাসে পরিণত না হলেও তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়েছিল।

কারিগরি উৎপাদন 

অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ কারিগরি উৎপাদন। গুপ্তযুগে কৃষিকাজের পাশাপাশি কারিগরি উৎপাদন অব্যাহত ছিল। সমকালীন সাহিত্য, লেখমলা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান থেকে এবিষয়ে জানা যায়।
দিল্লির লৌহস্তম্ভ
গুপ্ত যুগে কারিগরি শিল্পের তালিকা পাওয়া যাবে অমরসিংহের অমরকোশে। আলোচ্য পর্বে ধাতুর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছিল এবং এক্ষেত্রে লোহার কারিগর বা কামাররা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। লোহার ব্যবহার ও লৌহ শিল্পের উৎকর্ষতার সবচেয়ে বড় নজির হল দিল্লির কুতুবমিনার এর কাছে অবস্থিত বিখ্যাত লৌহস্তম্ভটি; চতুর্থ-পঞ্চম শতকে তৈরি লৌহস্তম্ভটিতে এখনো পর্যন্ত মরচের চিহ্নমাত্র নেই। বাকাটক  লেখতে 'লোহানগর' নামে একটি জায়গার নাম আছে, যেটি কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতে, কামারদের গ্রাম। তিনি 'কংসকারক' এবং 'সুবর্ণকারক' নামে দুটি গ্রামের নাম দেখিয়েছেন যেগুলি অবশ্যই কাসারি ও সোনার কারিগরদের গ্রাম।

মাটির পাত্র ছিল অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কুম্ভকারদের অস্তিত্বের প্রমাণ কেবল লেখমালায় নয়, রাজঘাট, অহিছত্র প্রভৃতি প্রত্নক্ষেত্র থেকে মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। আরেকটি অত্যাবশকীয় পন্য নুন উৎপাদনের সাক্ষ্য বহন করছে বাকটক লেখগুলি, যেখানে লবনকর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। সূত্রধর এর প্রয়োজনীয়তা সেযুগে অনস্বীকার্য। তেল উৎপাদনের কথা আছে স্কন্দগুপ্তের সময়ের ইন্দ্রপুর তাম্রশাসনে।প্রাচীন ভারতের অন্যতম শিল্প বস্ত্রশিল্প। অমরকোষে দামি ও মোটা দুধরনের কাপড় তৈরির কথা আছে। রেশম শিল্পীদের গোষ্ঠীর বর্ণনা আছে মান্দাসোর লিপিতে। কাথিয়াবাড়ে নীল উৎপাদকদের উপর নীলের গামলা প্রতি রাজস্ব আদায় করা হতো।  ৫৯২ খ্রি: একটি লেখতে কাপড় রং করার কারিগর বা ছিম্পক এবং সুরা প্রস্তুতকারক বা কল্লার এর উল্লেখ রয়েছে। রাজদরবারে বা প্রশাসনিক দপ্তরে কায়স্থদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ ভূমিদানের দলিলপত্র তাদের ছাড়া সম্ভব হত না। আলোচ্য পর্বে বৈদ্য বা চিকিৎসকের গুরুত্ব যে বাড়ছিল, তার প্রমান সুশ্রুতসংহিতা।

ব্যবসা বাণিজ্য 

কালিদাসে রচনায় বিপনি বা দোকান এবং আপণমার্গ অর্থাৎ দুপাশে দোকান সহ রাস্তার উল্লেখ রয়েছে। অমরকোশে কেনাবেচার উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ রয়েছে শ্রেষ্ঠী ও সার্থবাহ বণিকদের কথা। সার্থবাহ বণিকদের কাফেলা নিয়ে দূরদেশে পাড়ি দেওয়ার উল্লেখও পাওয়া যায়। গুপ্তকালীন লেখমালায় নগরশ্রেষ্ঠী এবং সার্থবাহদের প্রশাসনিক ক্রিয়াকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহনের কথাও উল্লিখিত। এই সমস্ত তথ্যপ্রমান গুপ্তযুগে এক সজীব অভ্যন্তরীণ বানিজ্যের উপস্থিতির চিত্র তুলে ধরে। এই পর্বে এসে দেখা যায় জাতপাতের বেড়া ভেঙে ব্রাহ্মন ও ক্ষত্রিয়রাও বাণিজ্যে অংশ নিচ্ছে। মৃচ্ছকটিক নাটকের নায়ক চারুদত্ত জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও কর্মসূত্রে বণিক (বিপ্রসার্থ)। তাঁর পিতা-পিতামহও একই কাজ করতেন।  ৪৬৬ খ্রিঃ ইন্দ্রপুরের সূর্য মন্দিরে যে দুই ভাই নগদ আর্থ দান করেছিলেন তারা ক্ষত্রিয়-বণিক বলেই অভিহিত। 

খ্রিঃ তৃতীয় শতকে বৈদেশিক বাণিজ্যের যে জোয়ার ছিল তা আর এই পর্বে লক্ষ্য করা যায় না। এই পর্বে বাণিজ্যিক অবণতির পিছনে বোধহয় হূন আক্রমণজনিত বিঘ্নতা এবং রোম সাম্রাজ্যের পতনের ফলে রোমের বাজারে বিলাস দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বহির্বাণিজ্য একেবারে বন্ধ হয়ে যায় নি। পশ্চিম এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য যে তখনও চলত তার প্রমান পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের বাইজানটাইন মুদ্রাগুলি। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমুদ্র বাণিজ্য চলত। পূর্ব উপকূলের তাম্রলিপ্ত বন্দর এবং তামিল নাড়ুর কাবেরীপত্তমন বন্দরে ব্যপক বাণিজ্যের বিবরণ সমকালীন রচনায় পাওয়া যায়। 

কারিগর ও বণিক সংগঠন

আগের মতই কারিগর, পেশাদার ও বণিকদের সংগঠিত হওয়ার প্রবণতা ছিল। এই পর্বে বোধহয় শ্রেনীগুলির গুরুত্ব আগের তুলনায় বেড়েছিল; কারণ স্মৃতি গ্রন্থগুলিতে শ্রেনীর উল্লেখ ক্রমশ বেড়েছিল।সমকালীন লেখমালায় বিভিন্ন প্রকার শ্রেণীর উল্লেখ রয়েছে। চতুর্থ শতকে নাসিক অঞ্চলে কুম্ভকার, বুলন্দশহরের কাছে ইন্দ্রপুরে তৈলিক, পঞ্চম শতকে মান্দাসোরে রেশম শিল্পীদের শ্রেণীর উল্লেখ রয়েছে। বৈশালীতে প্রাপ্ত সীলমোহরে কুলিক নিগম কথাটির উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন বাংলার তাম্রশাসনে প্রথম কায়স্থ কথাটি বারবার এসেছে, যার অর্থ সম্ভবত পেশাদারি করণিকদের প্রতিনিধি। 

শ্রেণীর সংগঠনে আগের মতই জ্যেষ্ঠক বা প্রমূখ, মধ্যস্থ ' র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকৃত। তবে নতুন করে কার্যচিন্তক-দের  কথাও জানা যায় যারা সম্ভবত সংগঠনের প্রশাসনিক কাজকর্মের তদারকি করতেন। শাস্ত্রাকাররা বারবার শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ এবং সামূহিক চরিত্রের উপর জোর দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তির বিশেষ উদ্ভাবনের ফলে যদি শ্রেনীর উৎপাদনের গুণ বা মান বৃদ্ধি পায় তাহলে তার সুফল সকলের মধ্যে বন্টিত হওয়ার শাস্ত্রীয় নির্দেশ ছিল। আর যদি কারোর জন্য শ্রেনীর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকেই বহন করতে হত। 

এই পর্বে কারিগর ও পেশাদারি গোষ্ঠীগুলির মত বণিকদেও সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। দুটি লেখতে বণিক সংগঠনের উল্লেখ রয়েছে। বণিকদের সংগঠন বণিকগ্রাম নামে পরিচিত। এখানে গ্রাম বলতে কোনো বসতি নয়, সমুহের সমার্থক। ডি. ডি. কোশাম্বী প্রথম সার্থক ভাবে প্রমান করেছেন যে বণিকগ্রাম পেশাদারি বণিকদের সংগঠন। বণিকগ্রামে কেবল স্থানীয় বণিকরাই অন্তর্ভুক্ত থাকতেন তা নয়, দেশান্তরের ব্যবসায়ীরাও এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ৫৯২ খ্রিস্টাব্দে কাথিয়াবাড়ের স্থানীয় শাসক এইরকমই একটি বণিকগ্রামকে লোহাটগ্রামে বসতি গড়ে তোলার জন্য নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলেন। 

গুপ্ত যুগে মুদ্রা

বাণিজ্য অর্থনীতির অপরিহার্য অঙ্গ হল মুদ্রা। প্রাচীন ভারতে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। কুষানদের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির ফলে মুদ্রার ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং গুপ্তযুগে তা অব্যাহত ছিল। 

সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা

বিভিন্ন অঞ্চলে গুপ্ত রাজাদের মুদ্রা ভান্ডার বা হোর্ড পাওয়া গেছে। গুপ্ত রাজাদের স্বর্ণমুদ্রার মান যথেষ্ট উচ্চ ছিল। তবে স্কন্দগুপ্তের আমল থেকে গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রা ওজন ১২৪ গ্রেন থেকে ১৪৪ গ্রেন করা হয়। কিন্তু মুদ্রায় খাদ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ানো হয়, যার ফলে সাম্রাজ্যের শেষকালের স্বর্ণমুদ্রা গুলির স্বর্ণ মোট ওজনের অর্ধেক হয়ে যায়। গুপ্ত রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত রৌপ্য মুদ্রা চালু করেছিলেন পশ্চিম ভারতের শক-ক্ষত্রপদের আদলে। মূলত গুজরাট উপকূলে এগুলির ব্যবহার ছিল। 

তবে গুপ্ত রাজারা তাম্রমুদ্রা নির্মাণে সেভাবে গুরুত্ব দেন নি। বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ব্যবহৃত হলেও দৈনন্দিন লেনদেনে তাম্র মুদ্রার গুরুত্ব কে অস্বীকার করার উপায় নেই। রামশরণ শর্মা দেখিয়েছেন যে দৈনন্দিন জীবনে মুদ্রার ব্যবহার আলোচ্য পর্বে কমে গিয়েছিল। তিনি আরো দেখিয়েছেন (ফা-হিয়েন এর বিবরণ থেকে) যে নিত্যকার লেনদেন কড়ির মাধ্যমে চলত। গুপ্তদের সমসাময়িক দাক্ষিণাত্যের বাকাটক রাজ্যে এখনো পর্যন্ত কোন মুদ্রার সন্ধান পাওয়া যায়নি অথচ বাকাটক দের প্রতিবেশী বিষ্ণুকুন্ডিন ও শক-ক্ষত্রপরা নিয়মিত মুদ্রা ব্যবহার করতেন। মুদ্রাশূন্যতার এই পরিস্থিতিকে রামশরণ শর্মা বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের ফলাফল হিসেবেই দেখেছেন। কৃষ্ণমোহন শ্রীমলি দেখিয়েছেন, বাকাটক লেখাগুলি থেকে একজন মাত্র ব্যবসায়ী 'চন্দ্র'র নাম পাওয়া যায়, যা বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের চিত্রকেই তুলে ধরে।

Gupta Economy

The Gupta dynasty ruled from 319-320 CE to around 550 or 570 CE. During this time, the Vakataka and Kadamba rulers reigned in South India. Hence, the Gupta period generally spans from the early 4th century to the late 6th century. Due to remarkable cultural advancements, many historians have referred to the Gupta era as a "Golden Age." One of the primary reasons for this cultural progress was a stable economy.

Agricultural Economy

A key feature of the Gupta economy was the agrahara system, a land grant practice where land was donated to religious institutions or priestly communities. Although this practice existed before the Guptas, it became more widespread during their rule. Compared to the Guptas, the Vakatakas were even more extensive in granting lands. The widespread practice of land grants led to an increase in private land ownership and a decline in communal land holdings. As a result, Brahmins and religious institutions benefited significantly, leading to the emergence of a religious landlord class.

Historian R.S. Sharma and his followers argue that the agrahara system contributed to the development of a three-tiered land ownership structure consisting of kings, landlords, and peasants, thereby laying the foundation for feudalism. Peasants, in effect, became serfs, which hindered technological production, trade, currency economy, and urbanization. However, this thesis has faced criticism from various scholars.

The crops cultivated during this period can be identified from contemporary texts. Rice was the principal crop, and Kalidasa mentioned the fame of Bengal's rice. Chinese traveler Xuanzang (Hiuen Tsang) recorded that the aromatic rice of Magadha was highly favored by the elite. The climate of Haryana was also suitable for agricultural production. Other sources mention crops such as sugarcane (as per Kalidasa), cotton, sesame, mustard, indigo (as per Amarakosha), and spices like black pepper, cardamom, and betel nut in South India. Varahamihira mentioned saffron cultivation in Kashmir.

Land classification was well understood in this period. The Amarakosha mentions at least 12 types of land, whereas inscriptions list six categories:

  1. Kshetra – Cultivable land
  2. Aprahata – Uncultivated land
  3. Khila-Kshetra – Fallow land
  4. Aprada – Undistributed land
  5. Apratikara – Revenue-free land
  6. Aranya – Forest land

Since land was transferable, proper measurement systems were in place. Copper plate inscriptions mention measurement units such as adhavapa, dronavapa, kulyavapa, and pataka. In the Vakataka region, nivartana was a land measurement unit, while in the Maitraka region, padavarta was used. In Bengal, two types of reeds were used for measuring land. All land transactions, whether through purchase or donation, were recorded in copper plate grants.

Irrigation

Irrigation was an essential aspect of Gupta agriculture. Contemporary inscriptions frequently mention tadaga (ponds). Small-scale irrigation projects were initiated by individuals or communities, while large-scale projects were sometimes state-sponsored.

  • Vakataka king Prithivisena II built a massive reservoir called Prithivisamudra.
  • Kadamba ruler Kakusthavarman also took similar initiatives.
  • Skandagupta renovated the Sudarsana Lake, originally built during the Mauryan period.
  • A high-ranking Vakataka official constructed another Sudarsana Lake in Maharashtra.

Thus, while agriculture flourished, there is no evidence of improvement in the peasants’ conditions. On the contrary, the expansion of private land ownership and rigid caste structure likely worsened their situation.

Craft Production

Alongside agriculture, craft production continued in the Gupta era. Contemporary literature, inscriptions, and archaeological findings provide insights into this sector.

Delhi Iron Pillar

One of the finest examples of Gupta craftsmanship is the Delhi Iron Pillar, located near the Qutub Minar. Built in the 4th-5th century CE, this iron pillar has not rusted, showcasing the advanced metallurgical skills of the period.

Gupta-era texts also mention settlements of metalworkers. The Vakataka inscriptions refer to a place called Lohanagara, which historian Krishnamohan Shrimali identifies as a blacksmiths’ village. Other inscriptions mention villages named Kamsakaraka (for bronze workers) and Suvarnakaraka (for goldsmiths).

Pottery and Other Industries

Pottery was an essential industry. Evidence of potters (kumbhakaras) comes from both inscriptions and excavations at sites like Rajghat and Ahichhatra. The Vakataka inscriptions also mention salt production, with references to salt tax exemptions. The importance of carpenters (sutradharas) and oil producers (tailikas) is evident in inscriptions from the reign of Skandagupta.

The textile industry was another major sector. Amarakosha mentions both fine and coarse fabrics. Mandasor inscriptions describe silk-weaving communities. In Kathiyavad, indigo producers were taxed per vat. A 592 CE inscription refers to dyers (chhipaka) and wine-makers (kallara).

The presence of scribes (kayasthas) in administrative offices was crucial, as they were responsible for drafting land grants. The Sushruta Samhita also indicates the increasing importance of physicians (vaidyas).

Trade and Commerce

Kalidasa’s works mention bipani (shops) and apanamarga (market streets lined with shops). Amarakosha refers to buying and selling activities, and inscriptions mention merchant guilds (shreshthis and sarthavaha traders) who traveled in caravans for long-distance trade. These sources indicate a thriving internal trade network.

Interestingly, by this period, caste restrictions on trade were breaking down. Even Brahmins and Kshatriyas engaged in commerce. The protagonist of Mrichhakatika, Charudatta, was born a Brahmin but became a merchant (viprasartha). Similarly, a 466 CE inscription records that two brothers who donated to a Surya temple in Indrapura were labeled as Kshatriya-merchants.

However, external trade, which had flourished in the 3rd century CE, declined during this period. The fall of the Roman Empire reduced demand for luxury goods, and Huna invasions disrupted trade routes. Nevertheless, international trade did not completely cease.

  • Byzantine coins from the 5th-6th century CE indicate ongoing trade with West Asia and the Middle East.
  • Trade with Southeast Asia and Sri Lanka continued via Tamralipti and Kaveripattinam ports.

Merchant and Artisan Guilds

Like in earlier times, merchants and artisans formed guilds (shrenis), whose importance seems to have increased during the Gupta period. Legal texts mention guilds more frequently, and inscriptions reference various guilds:

  • Potters’ guild in Nasik (4th century CE)
  • Oil producers’ guild near Bulandshahr (Indrapura, 5th century CE)
  • Silk weavers’ guild in Mandasor (5th century CE)
  • Merchants’ organization in Vaisali

Guilds were led by elders (jyeshthaka, pramukha) and mediators (madhyastha). A new term, karyachintaka, suggests that some guilds had officials to oversee administrative matters. Religious texts emphasize the collective responsibility of guilds, ensuring that the benefits of innovation were shared among members and that any losses caused by individuals were personally compensated.

Gupta Coinage

Coins were an integral part of the commercial economy. The use of currency, which had expanded under the Kushanas, continued under the Guptas.

Gold and Silver Coins

  • Gupta rulers issued high-quality gold coins. However, from Skandagupta’s reign, their weight was reduced from 124 grains to 144 grains, and eventually, impurities increased.
  • Chandragupta II introduced silver coins in western India, influenced by the Shaka-Kshatrapa coinage. These were mainly used in Gujarat.

Decline of Currency

The Guptas did not emphasize copper coins, which were crucial for daily transactions. R.S. Sharma suggests that coin circulation declined, as noted by Faxian (Fa-Hien), who recorded that daily transactions used cowrie shells instead of coins.

Thus, despite economic growth in certain areas, a decline in monetary circulation and trade disruptions signaled the onset of feudal structures.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...