সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Harshabardhana | হর্ষবর্ধন এর রাজনৈতিক অবদান

হর্ষবর্ধন এর রাজনৈতিক অবদান


গুপ্ত পরবর্তী উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হর্ষবর্ধন ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের ইতিহাস জানা যায় বানভট্টের হর্ষচরিত, হিউ এন সাং এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত বাঁশঘেরা লেখ, চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল লিপি প্রভৃতি উপাদান থেকে।

হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশের শাসক । গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের হাতে থানেশ্বরের রাজা রাজ্যবর্ধন মারা যান। কনৌজরাজ গ্রহবর্মন ছিলেন হর্ষবর্ধনের ভগিনীপতি নিঃসন্তান গ্রহবর্মনের মৃত্যু এবং ভগিনী রাজ্যশ্রী অপহরণের পর কনৌজের সিংহাসন শূন্য হয়ে যায় । এই প্রেক্ষিতে হর্ষবর্ধন একইসাথে থানেশ্বর ও কনৌজের রাজত্ব ভার গ্রহণ করেন। কনৌজ তার রাজধানী স্থাপন করেন ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দ।
সিংহাসন আরোহন এরপর হর্ষবর্ধন শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। এই অভিযানে তিনি কামরূপরাজ ভাস্করবর্মন এর মিত্রতা লাভ করেছিলেন। রাজা হর্ষ প্রথমে বিন্ধ্যারণ্যে থেকে ভগিনী রাজ্য স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। শশাঙ্কের সঙ্গে তার যুদ্ধের ফল কি হয়েছিল তাই নিয়ে বিতর্ক আছে। রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে শশাঙ্ক যতদিন জীবিত ছিলেন হর্ষবর্ধন গৌড়ের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন মগধ ও গঞ্জাম দখল করে।


হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক দক্ষিণ ভারতের চালুক্য রাজা ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী। মালব, গুজরাট ও গুর্জরদের  এলাকাকে কেন্দ্র করে হর্ষ ও পুলকেশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আইহোল লিপি থেকে জানা যায় এই যুদ্ধে হর্ষবর্ধন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। হর্ষের দক্ষিণ ভারত জয়ের আশা অসমাপ্ত থেকে যায়।


শশাঙ্কের বিরুদ্ধে একাধিক সামরিক অভিযান চালিয়ে হর্ষবর্ধন উত্তর ভারতে ক্রমশ শক্তিশালী রাজায় পরিণত হন। পশ্চিম দিকে শক্তিশালী বলভীর রাজা দ্বিতীয় ধ্রুবসেন বালাদিত্যর  সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বালভীর রাজাকে পরাস্ত করতে না পারলেও নিজ কন্যার সঙ্গে বালভীর  রাজার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বৈবাহিকসম্পর্কে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয় পুলকেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর হর্ষ সিন্ধু অভিযান করেন। সিন্ধুদেশ লুণ্ঠন করেন। কিন্তু অধিকার করতে পারেননি। পূর্বদিকেও তার একাধিক অভিযান চলেছিল। ইনি মগধ অধিকার করেছিলেন এবং উড়িষ্যার কঙ্গোদ দখল করে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত  করেছিলেন। হর্ষচরিত থেকে আরো জানা যায় যে, তিনি কোনো এক তুষারাবৃত দেশ অভিযান করেছিলেন। এটি সম্ভবত হিমালয় সন্নিহিত তুখার নামে ছোট্ট একটি রাজ্য।

আইহোল লিপিতে রবিকীর্তি হর্ষবর্ধনকে 'সকলোত্তরপথনাথ' বলে উল্লেখ করেছেন। এর অর্থ হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারতের  অধীশ্বর হয়েছিলেন। এই মন্তব্য নিয়ে সন্দেহ আছে। হিউ এন সাং এর লেখা থেকে জানা যায়, উত্তর ভারতের এমন অনেক রাজ্য ছিল যেখানে হর্ষের কোন আধিপত্য ছিল না। হিউ এন সাং হর্ষকে পঞ্চভারতের অধীশ্বর বলেছেন। আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে,  এই পঞ্চভারত  হল পূর্ব পাঞ্জাব, কনৌজ, মিথিলা, গৌড় ও উৎকল। সুতরাং বলা যায়, সম্ভবত বিজয়ী রাজা দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্বকে গৌরবান্বিত করার জন্যই আইহোল লিপিতে এরকম অতিরঞ্জন করা হয়েছে। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগার:-   কোনো ব্যাক্তিগত বা অলাভজনক

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল তা জনজীবনে তীব্রভ