সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কৈবর্ত বিদ্রোহ

Please visit our Homepage and Subscribe us.

দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালে বরেন্দ্রভূমিতে এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী দিব্যর নেতৃত্বে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয় যাতে দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন এবং  বরেন্দ্রভূমি দিব্যর শাসনে চলে যায়। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় এছাড়া কুমারপালের কমৌলি তাম্রশাসন, মদনপালের মনহলি তাম্রশাসন এবং ভোজবর্মার বেলোয়া তাম্রশাসন উল্লেখযোগ্য।
রামচরিত থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় মহীপালের সময় 14 জন সামন্তরাজা মিলিতভাবে বিদ্রোহ করলে যুদ্ধে মহিপাল পরাস্ত ও নিহত হন। যুদ্ধের প্রথমদিকে দিব্য রাজার পক্ষেই ছিলেন। রাজার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী দেখে তিনি বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন। সন্ধ্যাকর নন্দী তাই দিব্যকে দস্যু ও উপাধি ব্রতী বলেছেন এবং তার এই বিস্বাসঘাতকতাকে অপবিত্র ধর্মবিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।

কৈবর্ত বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। অধ্যাপক রামশরণ শর্মা কৈবর্তদের কৃষক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে কৈবর্ত বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের দৃষ্টান্ত। রামচরিতের পান্ডুলিপির আবিষ্কর্তা অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, কৈবর্তরা মহীপালের রাজত্বকালে অত্যাচারিত ছিল ।কৈবর্ত বিদ্রোহ ছিল এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ।অন্যদিকে রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করে, এই বিদ্রোহ হল আর পাঁচটা সামন্ত বিদ্রোহের মত। রাজ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে যেমন সামন্তরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে বিদ্রোহ করে, তেমনই। এখানে মহীপালের অত্যাচারের কোনো ব্যাপার ছিল না। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় মনে করেন, কৈবর্ত ছিলেন জেলে বা মৎস্যজীবী। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজারা তাদের জীবিকায় হস্তক্ষেপ করত বলে কৈবর্ত বিদ্রোহ করেছিল-- এই মত অনেকেই পোষণ করেন। তবে আব্দুল মতিন চৌধুরী দেখেছেন, সেই সময় বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য ছিল না।

পরিশেষে বলা যায়, কৈবর্ত বিদ্রোহ প্রমাণ করেছিল যে, সামন্তশক্তি ক্রমশ রাজতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। এবং সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ প্রতিবাদী চরিত্র ধারণ করছিল সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে। দিব্যর সমর্থন ছিল মূলত নিম্ন স্তরের মানুষের মধ্যেই এবং প্রকৃত  জনসমর্থন ছিল বলেই দিব্যরা তিন প্রজন্ম ধরে রাজত্ব করেছিল।

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য

আরবদের সিন্ধু অভিযান | কারণ ও তাৎপর্য Please visit our Homepage and subscribe us. Suggested Topics || Ghajnavid Invasion || গজনী আক্রমণ || || মামুদের সোমনাথ মন্দির লুণ্ঠন || Somnath Temple Plunder || || তরাইনের যুদ্ধ ও তার গুরুত্ত্ব || মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমন ও তার চরিত্র || সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...