সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গুপ্তযুগে কারিগরি উৎপাদন

Please visit our Homepage and Subscribe us.

অর্থনীতির অন্যতম অঙ্গ কারিগরি উৎপাদন। গুপ্তযুগে কৃষিকাজের পাশাপাশি কারিগরি উৎপাদন অব্যাহত ছিল। সমকালীন সাহিত্য, লেখমলা এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান থেকে এবিষয়ে জানা যায়।
দিল্লির লৌহস্তম্ভ
গুপ্ত যুগে কারিগরি শিল্পের তালিকা পাওয়া যাবে অমরসিংহের অমরকোশে। আলোচ্য পর্বে ধাতুর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছিল এবং এক্ষেত্রে লোহার কারিগর বা কামাররা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। লোহার ব্যবহার ও লৌহ শিল্পের উৎকর্ষতার সবচেয়ে বড় নজির হল দিল্লির কুতুবমিনার এর কাছে অবস্থিত বিখ্যাত লৌহস্তম্ভটি; চতুর্থ-পঞ্চম শতকে তৈরি লৌহস্তম্ভটিতে এখনো পর্যন্ত মরচের চিহ্নমাত্র নেই। বাকাটক  লেখতে 'লোহানগর' নামে একটি জায়গার নাম আছে, যেটি কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতে, কামারদের গ্রাম। তিনি 'কংসকারক' এবং 'সুবর্ণকারক' নামে দুটি গ্রামের নাম দেখিয়েছেন যেগুলি অবশ্যই কাসারি ও সোনার কারিগরদের গ্রাম।


মাটির পাত্র ছিল অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। কুম্ভকারদের অস্তিত্বের প্রমাণ কেবল লেখমালায় নয়, রাজঘাট, অহিছত্র প্রভৃতি প্রত্নক্ষেত্র থেকে মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। আরেকটি অত্যাবশকীয় পন্য নুন উৎপাদনের সাক্ষ্য বহন করছে বাকটক লেখগুলি, যেখানে লবনকর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। সূত্রধর এর প্রয়োজনীয়তা সেযুগে অনস্বীকার্য। তেল উৎপাদনের কথা আছে স্কন্দগুপ্তের সময়ের ইন্দ্রপুর তাম্রশাসনে।প্রাচীন ভারতের অন্যতম শিল্প বস্ত্রশিল্প। অমরকোষে দামি ও মোটা দুধরনের কাপড় তৈরির কথা আছে। রেশম শিল্পীদের গোষ্ঠীর বর্ণনা আছে মান্দাসোর লিপিতে। কাথিয়াবাড়ে নীল উৎপাদকদের উপর নীলের গামলা প্রতি রাজস্ব আদায় করা হতো।  592 খ্রি: একটি লেখতে কাপড় রং করার কারিগর বা ছিম্পক এবং সুরা প্রস্তুতকারক বা কল্লার এর উল্লেখ রয়েছে। রাজদরবারে বা প্রশাসনিক দপ্তরে কায়স্থদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ ভূমিদানের দলিলপত্র তাদের ছাড়া সম্ভব হত না। আলোচ্য পর্বে বৈদ্য বা চিকিৎসকের গুরুত্ব যে বাড়ছিল, তার প্রমান সুশ্রুতসংহিতা।

Thanks for reading.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...