সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদিমধ্য যুগে সমুদ্র বাণিজ্য | Overseas Trade in Early Medieval India

আদিমধ্য যুগে সমুদ্র বাণিজ্য

রামশরণ শর্মা ও তার অনুগামীগন মনে করেন যে, গুপ্ত যুগের শেষ দিকে রোম-ভারত বাণিজ্যের অবনতিজনিত কারণে খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় অর্থনীতিতে সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে যায়। তিনি দেখিয়েছেন পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ক্রমশ স্বর্ণমুদ্রার মান নিম্নগামী হয়। উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজবংশে নামাঙ্কিত কোনো স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায় নি। দক্ষিণ ভারতেও সাতবাহনদের পতনের পর থেকে মুদ্রার ব্যবহার কমে আসে। মুদ্রা ব্যবহারের যেটুকু প্রমান পাওয়া গেছে তা বেশিরভাগই তামার মুদ্রা, যা দিয়ে বহির্বাণিজ্য হয় না। তবে সপ্তম শতাব্দীর পর থেকে বাণিজ্যের  পুনরায় অগ্রগতি ঘটতে থাকে বলে তিনি মনে করেন। চতুর্থ থেকে সপ্তম শতকে ভারতের বহির্বাণিজ্য কতটা সজীব ছিল তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অষ্টম শতক থেকে সচল সমুদ্র বাণিজ্য সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই।

রোম ভারত বাণিজ্য অবনতি ঘটলেও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ফলে সমুদ্র বাণিজ্য কিছুটা চাঙ্গা হয়। ভারতের পশ্চিম উপকূলে পারস্য উপসাগরের মধ্য দিয়ে আরব সাগরীয় বাণিজ্যের অংশ নিত বাইজানটাইন বণিক ও ইরানের সাসানীয় বণিকেরা। এই দুই দেশের বণিকদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চলত। এই বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করত পশ্চিম উপকূলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর চাউল ও কল্যাণ। এই বাণিজ্যের উন্নতিকল্পে চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী পারস্যরাজ দ্বিতীয় খসরুর সাথে দূত বিনিময় করতেন। 

পূর্ব উপকূলে বাণিজ্য চলত মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে এবং এই বাণিজ্যে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল তাম্রলিপ্ত। চীনা পরিব্রাজক ফা হিয়েন এবং হিউয়েন সাং এই বন্দরের ভূয়সী প্রসংসা করেছেন। ফা হিয়েন চীন প্রত্যাবর্তনের সময় তাম্রলিপ্ত থেকে জাহাজে করে প্রথমে শ্রীলঙ্কা যান; তারপর সেখান থেকে চিনা বাণিজ্য জাহাজে করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে চিনে পৌঁছান। এই তথ্য প্রমান করে তাম্রলিপ্ত বন্দর বঙ্গোপসাগর এবং পূর্ব ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। হিউয়েন সাঙের রচনা থেকে জানা যায়, নোয়াখালি ও কুমিল্লা অঞ্চল যা 'সমূদ্রতট' নামে পরিচিত ছিল সমুদ্র বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আরও জানা যায় যে উৎকল দেশে চরিত্র ও কঙ্গোদ বন্দর দুটি দুরপাল্লার সমুদ্র বাণিজ্যে অংশ নিত।  সুদূর দক্ষিনে পল্লব রাজ্যের কাঞ্চিপূরম ও মহাবলিপূরম ছিল প্রধান দুটি বাণিজ্য কেন্দ্র।  

ইসলামের আবির্ভাবের ফলে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়; কারণ ইসলাম নগর ও বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। আরব বণিকরা অষ্টম শতকে হরমুজ, মোখা ও এডেন বন্দর থেকে জাহাজ নিয়ে পশ্চিম উপকূলে আসত এবং এখান থেকে মালাবার ও করমন্ডল হয়ে চীনে চলে যেত। অষ্টম শতকের পর থেকে মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভর করে পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন বন্দরে একাধিক জাহাজ আসত। ইবন বতুতা বলেছেন ধাও বা আরব জাহাজগুলি কুইলন ও কালিকট পর্যন্ত আসত এবং চীনা জাহাজ জাঙ্ক গুলি এখানে আসত এবং পণ্য বিনিময় করত। সুতরাং এক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় বন্দরগুলি মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করত। আরব লেখকদের রচনায় আমরা বিভিন্ন বন্দরের নাম জানতে পারি। গুজরাটের ক্যাম্বে, কঙ্কনের সিনদান, সোপারা, চৌল বা চাউল, গোয়ার সিন্দাবুর, মালাবারের কুইলন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আরব বিবরণ থেকে জানা যায়, কামকাম অঞ্চলে রাষ্ট্রকূট শাসকরা আরব বণিকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। আল মাসুদির লেখা থেকে জানা যায় চাউল বন্দরে প্রায় এক হাজার মুসলমান বণিকের উপস্থিতি তারা লক্ষ্য করেছেন।

অষ্টম শতকের পর থেকে পূর্ব ভারতের বন্দর তাম্রলিপ্তের অবনতি ঘটে। সমৃদ্ধ বন্দর হিসেবে উঠে আসে চট্টগ্রামের কাছে অবস্থিত সমন্দর। ইবন বতুতার রচনায় চট্টগ্রাম সুদকাওয়ান নামে পরিচিত। অল ইন্দ্রিসির লেখা থেকে জানা যায়, আরব বণিকরা এই বন্দরের মাধ্যমে কামরূপ, উড়িষ্যা, কাঞ্চি এমনকি শ্রীলংকার সাথে বাণিজ্য করতো।

দশম শতকে মিশরের ফাতেমিদ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পর থেকে পারস্য উপসাগরীয় বাণিজ্যের অবনতি ঘটে এবং লোহিত সাগরীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। এই বাণিজ্যের প্রধান ঘাঁটি ছিল আলেকজান্দ্রিয়া ও এডেন অর্থাৎ ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্য এবার ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হল। গুজরাট ও মালাবার ছিল এ বাণিজ্যের প্রধান ভারতীয় ঘাঁটি। মার্কোপোলো ও ইবন বতুতার বিবরণ থেকে মালাবারের বন্দর গুলির অধিক গুরুত্বের কথা জানা যায়। মালাবারের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি হল কুইলন, কালিকট, প্যান্ডারীণ, সিন্দাবুর ও হেনাবুর। এডেনের সাথে থানে ও ক্যাম্বের যোগাযোগ ছিল। গয়টিয়েন পারস্য উপসাগরের কিশ-এর সাথে ভারতের বাণিজ্যের উল্লেখ করেছেন।  বেঞ্জামিন মালাবারে ইহুদি বণিকদের উপস্থিতও লক্ষ্য করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সাথে বাণিজ্য করে চোল আমলে করমন্ডল উপকূল সমৃদ্ধ হয়েছিল। চোল রাজারা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে অধিক সচেতন ছিলেন এবং তাদের সামরিক অভিযানগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল তামিল বণিকদের বাণিজ্যে সুবিধা করে দেওয়া। রাজরাজর সময় মামল্লপুরম ছিল বড় বন্দর। নেগাপত্তমের উত্থানের পর থেকে মামল্লপুরমের গুরুত্ব কমে যায়। রাজরাজ চীনের সাথে বাণিজ্যিক সখ্যতা বৃদ্ধির জন্য দূত বিনিময় করেছিলেন। রাজেন্দ্র চোলের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। তিনি চীন বাণিজ্যের অন্তর্বর্তী ঘাঁটি শ্রীবিজয় রাজ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলেন। পরবর্তী চোল রাজা প্রথম কুলতুঙ্গা বিদেশী বণিকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বর্মার (পাগান) সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। চাওযুকুয়ার রচনা থেকে জানা যায়, চীন থেকে বর্মা হয়ে চোল রাজ্যে আসা যেত। তার সময় বেঙ্গি উপকূলে  গড়ে ওঠে  গুরুত্বপূর্ণ বন্দর কুলতুঙ্গা-চোল-পট্টনম (বর্তমান বিশাখাপত্তনম)।

আলোচ্য পর্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না। আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে অনুমান করা যায় ভারতীয় পণ্যের বাজার পারস্য উপসাগর ,লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরীয় উপকূলের দেশগুলিতে খুবই তেজী ছিল। তবে এই বাণিজ্য তামিল বণিকদের কথা বাদ দিলে ভারতীয় বণিকদের যোগদান ছিল খুবই কম। এই বাণিজ্য মূলত আরব ও চীনা বণিকদের করায়ত্ত ছিল। যাইহোক ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে দিয়ে আলোচ্য পর্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ দৃঢ় হয়েছিল।

Overseas Trade in Early Medieval India

R.S. Sharma and his followers believe that due to the decline of Indo-Roman trade towards the end of the Gupta period, the importance of maritime trade in the Indian economy diminished between the 4th and 7th centuries CE. He pointed out that from the late 5th century, the value of gold coins declined. Most ruling dynasties of northern India did not issue gold coins bearing their names. Even in southern India, the use of coinage declined after the fall of the Satavahanas. The little evidence of coin usage mostly consists of copper coins, which were not used in foreign trade. However, Sharma also noted that from the 7th century onwards, trade began to revive. Although there is debate over how vibrant India's foreign trade was between the 4th and 7th centuries, there is no doubt about the resurgence of maritime trade from the 8th century.

Despite the decline of Indo-Roman trade, maritime commerce received some stimulus due to the establishment of the Byzantine Empire. Byzantine merchants, along with Sassanid traders from Iran, were involved in Arab Sea trade through the Persian Gulf along India’s western coast. There was also competition between merchants of these two regions. Two major western ports—Chaul and Kalyan—played significant roles in this trade. To promote this commerce, Chalukya king Pulakesin II exchanged envoys with Persian ruler Khosrow II.

On the eastern coast, trade primarily occurred with Southeast Asia. The port of Tamralipti was an important participant in this trade. Chinese travelers Fa-Hien and Xuanzang highly praised this port. On his return to China, Fa-Hien first sailed to Sri Lanka from Tamralipti and then to China via Southeast Asia on Chinese trade ships. This indicates how important Tamralipti was in Bay of Bengal and eastern Indian Ocean trade. Xuanzang’s writings suggest that the Samudratat region (modern Noakhali and Comilla) played a significant role in maritime trade. It is also known that the ports of Charitra and Kangoda in Utkala (Odisha) were involved in long-distance maritime trade. In the far south, Kanchipuram and Mahabalipuram in the Pallava kingdom were two major commercial hubs.

With the advent of Islam in the 7th century CE, trade expanded since Islam emphasized the importance of cities and commerce. By the 8th century, Arab merchants would arrive at India's western coast from ports like Hormuz, Mocha, and Aden, and from there travel via Malabar and Coromandel coasts to China. From the 8th century onward, many ships began arriving at various western ports, relying on monsoon winds. Traveler Ibn Battuta mentioned that Arab dhows reached Quilon and Calicut, where Chinese ships, known as junks, also came and exchanged goods. Thus, western Indian ports acted as intermediaries in global trade. Arab writings mention several ports such as Cambay in Gujarat, Sindan in Konkan, Sopara, Chaul, Sindabur in Goa, and Quilon in Malabar. Arab accounts also indicate that the Rashtrakuta rulers maintained good relations with Arab merchants in the Kamkam region. According to Al-Masudi, nearly a thousand Muslim traders resided at the Chaul port.

From the 8th century, Tamralipti declined, and a prosperous port called Samandar, near Chittagong, emerged. Ibn Battuta referred to Chittagong as Sudkawan. Al-Idrisi noted that Arab traders used this port to trade with Kamarupa, Odisha, Kanchi, and even Sri Lanka.

In the 10th century, following the establishment of the Fatimid Caliphate in Egypt, Persian Gulf trade declined, while Red Sea trade flourished. The major hubs of this trade were Alexandria and Aden, linking Indian Ocean trade with Europe. The main Indian ports involved were Gujarat and Malabar. From the accounts of Marco Polo and Ibn Battuta, the importance of Malabar ports is clear. Notable ports in Malabar included Quilon, Calicut, Pandarani, Sindabur, and Henabur. There was contact between Thane and Cambay with Aden, and Goitein mentioned India’s trade with Kish in the Persian Gulf. Benjamin of Tudela also observed the presence of Jewish merchants in Malabar.

The Coromandel coast prospered through trade with Southeast Asia and China during the Chola period. The Cholas were highly conscious of commerce, and their military campaigns aimed to facilitate the trading interests of Tamil merchants. During Rajaraja’s reign, Mamallapuram was a major port, though it lost prominence after the rise of Nagapattinam. Rajaraja exchanged envoys with China to boost commercial ties. Under Rajendra Chola, trade with Southeast Asia and China intensified. He even brought Srivijaya, a key intermediary in Sino-Indian trade, under his control. Later, Kulottunga I encouraged foreign merchants by offering customs exemptions. He also established diplomatic relations with Pagan (Burma)According to Chau Ju-Kua’s writings, it was possible to travel from China to the Chola kingdom via Burma. During his reign, the port Kulottunga-Chola-Pattinam (modern Visakhapatnam) became an important trade hub on the Bengal coast.

The exact volume of trade during this period cannot be determined, as no data exists on imports and exports. However, it can be estimated that Indian goods were in high demand in the Persian Gulf, Red Sea, and Indian Ocean coastal regions. Excluding Tamil merchants, Indian participation in this trade was minimal. The trade was largely dominated by Arab and Chinese merchants. Nevertheless, through such commerce, India’s cultural connections with the outside world significantly deepened during this period.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...