সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুবরো রাজতন্ত্র কতখানি দায়ী??

 ফরাসি বিপ্লবের সমকালীন ও আধুনিক কালের ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই বিপ্লবের কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে এর পিছনে আর্থসামাজিক, অনেকে অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে। তবে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক দুর্গতি ও বুবরো রাজবংশের রাজাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা এই বিপ্লবের জন্য দায়ী ছিল তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। অষ্টাদশ শতকে প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির মত কেন্দ্রভুত নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ছিল।বুবরো রাজারা দৈব স্বত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা ছিলেন চতুর্দশ লুই। তিনিই ঘোষণা করেছিলেন 'I am the state '। তিনি অভিজাত সম্প্রদায় ও চার্চের ক্ষমতা ক্ষুন্ন করে সুদক্ষ আমলাতন্ত্রের গঠনের মাধ্যমে ফ্রান্সে এক সমৃদ্ধশালি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তবে তার শাসনকালে ব্যভিচার বেড়ে যাওয়ায় রাজকোষের উপর চাপ পড়ে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক ক্ষেত্রে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছিলেন তা পূরণ করতে বা অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনে তিনি ব্যার্থ হন। চতুর্দশ লুই এর মৃত্যুর পর পঞ্চদশ লুই এর সময়ে ফ্রান্সের রাজতন্ত্...

ফরাসি বিপ্লবের পিছনে দার্শনিকদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর।

 অষ্টাদশ শতক ইউরোপ জ্ঞানদীপ্তির যুগ। এই জ্ঞান দীপ্তির সূচনা হয়েছিল ষষ্ঠ শতকে হিউম কান্ট ও প্রমুখ দার্শনিকদের হাতে ধরে। ফ্রান্স ছিল জ্ঞান দীপ্তির অন্যতম একটি কেন্দ্র। ফ্রান্সের জ্ঞান দীপ্তির ধারকদের বলা হয় ফিলজফ। তবে এরা কেবল দর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এদের পরিধি ছিল আরো ব্যাপক সমকালীন ফরাসি সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি বর্তমান ছিল সে সম্পর্কে ফরাসি দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে। তবে এই দার্শনিকদের প্রত্যেক প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি এক ছিল না। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ছিলেন যুক্তিবাদী মানবতাবাদী এবং সংস্কারের সমার্থক।  ফেনেলো থেকে ফ্রান্সের যুক্তিবাদের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রাক বিপ্লব ফ্রান্সের সর্বপেক্ষা খ্যাতনামা দার্শনিক ছিলেন মন্তেস্কু। তিনি নিয়ম তান্ত্রিক রাজতান্ত্রে বিশ্বাসী এবং সমসাময়িক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আস্থাহীন। তিনি তার রচিত "পার্শিয়ান লেটার" গ্রন্থে তিনি সমকালীন ফ্রান্সের স্বৈরাচার, দুর্নীতি, অভিজাতন্ত্রের স্বার্থপরতা ও চার্চের গোড়ামী প্রকাশ করে দেয়। "গ্রেডনেস এন্ড ভেকাভেস...

জাবতি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের মুঘল শাসনে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। মুঘল যুগে কি উপায়ে, কতটা ভূমি রাজস্ব হ আদায় করা হতো আধুনিক ইতিহাস চর্চার একটা আকর্ষণীয় বিষয়।  বাবর ও হুমায়ুন পুরানো দিনের সুলতানি আমলের রাজস্ব ব্যবস্থাই বহাল রাখেন। জায়গিরদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই ভূমি রাজস্ব আদায় হতো। বিদেশি বিবরণ থেকে জানা যায় সকল জমির মালিক ছিল মুঘল সম্রাট। তাই ভূমি রাজস্ব ছিল ভূমির খাজনা। অন্যদিকে ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন ভূমি রাজস্ব ছিল উৎপন্ন ফসলের উপর স্থাপিত কর, তাই উৎপাদন না হলে রাজস্ব দিতে হতো না। উৎপাদন ব্যাহত হলে রাজস্ব মুকুব এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যাই হোক সম্রাট আকবর‌ ই প্রথম নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে টোডরমলের সাহায্য ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করেন।  আকবরের আমলে যেসব ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি জাবতি, নকস, গাল্লাবক্সী প্রভৃতি প্রথা। এগুলির মধ্যে যাবতীয় ব্যবস্থার জন্য মুঘল রাজস্ব ব্যবস্থা ইতিহাসে অনন্য স্থানের অধিকারী হয়ে আছেন।  কতগুলি স্পষ্ট পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আকবর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা স্থির করে ১) বৃহৎ সাম্রাজ্যের সর্বত্র নির্দ...

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব সংস্কারের বিবরণ দাও।

 মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময়ে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার দেওয়ান হিসেবে নিজ কর্তৃত্বের সাক্ষ্য রাখেন। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ও দলাদলির সুযোগে নিজে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই সাথে বাংলার দেওয়ান ও সুবাদার পদে নিযুক্ত হন। তিনি কার্যত স্বাধীনভাবেই রাজস্ব চালাতেন। তার ফলে বাংলার ভূমি রাজস্বের ক্ষেত্রে সংস্কার সাধিত হয়। বাংলার শক্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এ কথা বলা যায়।  ক্ষমতা আরোহণের পরেই মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার রাজস্ব সংস্কারের কাজে হাত দেন। পূর্ববর্তী রাজস্ব ব্যবস্থায় মুঘল কর্মচারীদের জায়গীর জমি এত বেশি ছিল যে খালিশা জমি না থাকায় ভূমি রাজস্ব বাবদ আয় ছিল কিঞ্চিত মাত্র। মুর্শিদকুলি খাঁ এই অবস্থার মোকাবিলা করতে প্রথমে মুঘল কর্মচারীদের জায়গীর হিসেবে প্রাপ্ত সমস্ত জমি কে খালিশায় পরিণত করেন। এর ফলে খালিশা জমি থেকে রাষ্ট্রের আয় বাড়ে। এইসব জায়গীর হারা কর্মচারীদের উড়িষ্যার অনুন্নত ও জঙ্গল আবৃত অনুর্বর জমিতে নতুন ভাবে জায়গীর দেন। এর ফলে অনাবাদি জমি আবাদিতে পরিণত হবার প্রয়াস দেখা যায়।  রাজস্ব সংস্কারের দ্বিতীয় পদক্ষেপটি ব্যা...

জায়গিরদারী সংকট বলতে কী বোঝো? মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে এর ভূমিকা কি ছিল।

 সম্রাট আকবর সরকারি কর্মচারীদের সুসংগঠিত করার জন্য মনসবদারি ব্যবস্থা চালু করে। তখন থেকেই মনসবদাররা মুঘল শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। মনসবদারদের কিছু নগদ বেতন পেত। আর কিছু মনসবদার জমির অধিকার পেতো এরা জায়গীরদার নামে পরিচিত। জায়গীরদার রা তাদের জায়গীর থেকে রাষ্ট্র নির্ধারিত সমস্ত কর আদায় করতো। জায়গীর বাদে সম্রাটের অধীনস্থ কিছু খালিশা জমি ও কিছু পাইবাকি জমি অর্থাৎ যেগুলি তখনও মনসবদারের কাছে বণ্ঠিত হয়নি এমন কিছু জমি ছিল সাম্রাজ্যের। বেশিরভাগ জমি ই ছিল জায়গীরদারী জমি বন্ঠিত। ভূমির উপর জায়গীরদারদের কোন ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। সম্রাটের ইচ্ছামত তাদের বদলি করা যেত এমন জায়গির তনখা জায়গীর নামে পরিচিত। আর যে জায়গীর গুলি বংশানুক্রমিকভাবে ভোগ করা যেত তাকে ওয়াতন জায়গীর বলা হত।   তনখা জায়গির গুলির বদলির রীতি কিরূপ জটিলতার সৃষ্টি করেছিল তা দেখিয়েছেন ইরফান হাবিব। কোন জায়গীরদার যে অঞ্চলে থাকতো সেখানে সেই সময়ে ভালো উৎপাদন না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বছরে যেকোনো সময়ই জায়গীরদারদের বদলি করা হতো। তখন একই অঞ্চলে নতুন ও পুরানো দুই জায়গীরদারদের রাজস্ব আদাই...

দাদাভাই নৌরজীর আর্থিক নিষ্ক্রমণ তথ্য ব্যাখ্যা কর।

 যেসব জাতীয়তাবাদীগণ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অর্থনীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী দাদাভাই নৌরজি। তিনি তার রচিত Proverty and unbritish rule in India গ্রন্থে পরিসংখ্যান সহযোগে দেখিয়েছেন কিভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশিক নীতির ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতীয় সম্পদের একটা বিরাট অংশ বৃটেনে প্রেরিত হচ্ছে। এবং তার ফলে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর দেশে পরিণত হচ্ছে।  তার মতে ১৮৫৭র পর থেকে ব্রিটিশ সরকার মার্কেনটাইল বাদ, লুটপাট, নজরানা আদায় ইত্যাদি শোষণের সোজাসাপ্টা ও পুরানো পথ গুলি ত্যাগ করে স্বল্প দৃশ্যমান অথচ অনেক বেশি পরিশীলিত নীতি গ্রহণ করে। ভারতকে কাঁচামাল সরবরাহকারী ও খাদ্য সরবরাহকারী এবং ব্রিটেনে তৈরি দ্রব্যাদির বাজারে পরিণত করা হয়। ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগ করে ভারতে শিল্পায়ন ঘটানোর পরিবর্তে ভারতে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। ফলে লভ্যাংস দেশের বাইরে চলে যায়। তার উপর হোম চার্জেস, ভারতে তে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাবদ খরচ, ব্রিটেনের সাম্রাজ্য বিস্তারের খরচের একাংশ প্রভৃতি ভারতীয় সম্পদ নির্গমন কে তীব্র করে তোলে। রেল কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের চুক্তি মাফিক...

জাট ও সওয়ারের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি ব্যবস্থায় মনসবদারদের শ্রেণীবিভাগ এবং পদমর্যাদা একটি বিতর্কিত বিষয়। এই বিতর্কের অন্যতম উৎস জাট ও স‌ওয়ার। এই দুই শব্দ মনসবদারদের পদমর্যাদার সূচক। ব্লাকম্যান এর মতে জাট নির্দেশ করত প্রয়োজনে কত সৈন্য পাওয়া যাবে তার সংখ্যা আর স‌ওয়ার বোঝায় অশ্বারোহীর সংখ্যা। আরভিন বলেন জাট কথাটির অর্থ মনসবদারদের অধীনস্থ পদমর্যাদা অনুযায়ী মনসবদারদের অশ্বারোহী সেনা। সওয়ার ছিল পদমর্যাদার অতিরিক্ত অশ্বারোহি সেনা। ব্লকম্যান বলেন অশ্বারোহীর সংখ্যা স্থির করার জন্য আকবর স‌ওয়ার পদমর্যাদাকে জাট থেকে পৃথক করেন। ডঃ অনিল চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় বলেন আকবর মনসবদারী প্রথা চালু হওয়ার কুড়ি বছর পর স‌ওয়ার পদটি চালু হয়। তখন কেবল জাট ছিল যখন দেখা গেল মনসবদাররা সৈন্য না রেখে ধার করা সৈন্য দেখাচ্ছে তখন স‌ওয়ার পদ সংযোজন করেন এবং অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সওয়ার পদের সংখ্যা অনুযায়ী সৈন্য পোষণে বাধ্য করেন। তার মতে স‌ওয়ার ও জাঠের সংখ্যা বিচার করে মনসবদারদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যার জাট ও সওয়ার সমান তিনি প্রথম, যার সওয়ার জাঠের অর্ধেক তিনি দ্বিতীয়, যার অর্ধেকের কম তিনি তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত হতেন। শিরিন মু...

মুঘল যুগে নগরায়নের বর্ণনা দাও।

নগরায়ন মধ্যযুগের আর্থসামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মুঘল আমলে বিবরণ গুলিতে সরাসরি নগরায়ন বিষয়ে উল্লেখ না থাকলেও রাজনৈতিক ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়ের বিবরণের নগরের উৎখান পতনের ইতিহাস পাওয়া যায়। সুলতানি যুগে নগরায়নের যে সূচনা হয়েছিল ২০০ বছরের মুঘল শাসনে তা অব্যাহত ছিল। সুলতানি যুগের পুরাতন শহর যেমন দিল্লী, লাহোর প্রভৃতির পুনরুত্থান ঘটেছিল, সেইসঙ্গে নতুন কিছু শহর যেমন এহালাবাদ, ফতেপুর সিক্রি, গুজরাট আর্কট ফারিদাবাদ প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণী ও মুঘল উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা, উৎসাহ এবং সক্রিয় সহযোগিতা ছিল।  গ্রামবাসী কৃষিজীবীর, পুরবাসীতে রুপান্তর অর্থাৎ বড় শহরে পরিবর্তন এবং বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে শহর গড়ে ওঠা, এইসব কতগুলি ধীর অথচ স্বাভাবিক সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ফলে নগরায়ন সম্ভব হয়েছিল। প্রথমত মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিরতা মানুষকে অধিকতর নিরাপত্তা ও শান্তির আশ্বাস জনগণকে প্রাচীর বেষ্টিত দুর্গের অভ্যন্তরে ও বাইরে বাস করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ফলে দেশে যে মুদ্রার ওজনের তারতম্য...

মনসবদারি ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত মনসবদারী প্রথার বিবর্তন গুলি চিহ্নিত কর।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামোর একটি মূল উপাদান ছিল অধীনস্থ অশ্বারোহী সংখ্যার ভিত্তিতে অভিজাত্যের স্তরবিন্যাস যাকে মনসব ব্যবস্থা বলা হয়। আইন- ই- আকবরী ও ১৭ শতকের কিছু দলিল দস্তাভেজ ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে এই ব্যবস্থার একটি রূপরেখা তৈরি করা যায়। মোরল্যান্ড ও আব্দুল আজিজ যখন মনসবদারী ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি চিহ্নিত করছিলেন। পরবর্তীকালে সেগুলি সংশোধন ও পরিমার্জিত করেছিল আতাহার আলী ও ইরফান হাবিব। মনসব বলতে দু ধরনের ব্যবস্থা বোঝায় প্রথমটি জাট যা অভিজাতদের পদাধিকারীর ব্যক্তিগত মাইনে ও ক্রমন্নত স্তর ব্যবস্থায় আর মর্যাদা নির্ধারণ করত। দ্বিতীয়টি হল সওয়ার যা ছিল অধীনস্থ ঘোড়সওরের সংখ্যার ও তার বেতন বাবদ কি পরিমান অর্থ মঞ্জুর হয়েছে তার সূচক।  মনসব ব্যবস্থা তার ধ্রুপদী রূপ লাভ করেছিল ১৬০৫ সালে। এর আগে মনসব ব্যবস্থা কিভাবে বিবর্তিত হয়েছিল তার উত্তরে মোরল্যান্ড ও আব্দুল আজিজ বলেছেন আকবরের আগে একটি মাত্র সংখ্যা ভিত্তিক পদানুক্রম চালু ছিল যার দ্বারা বোঝানো হতো পদাধিকারীর অধীনে কত ঘোড়সওয়ার থাকার সম্ভাবনা। তারপর প্রকৃত ঘোড়সওয়ার সংখ্যার সঙ্গে অসঙ্গতির জন্য পরিসংখ্যাটি অর্থ...

ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ ও পরিণাম সংক্ষেপে আলোচনা কর।

ইংরেজ ও ফরাসি এই দুই ইউরোপীয় শক্তি উপনিবেশিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতে আসেন এবং ভারতের বাণিজ্য ও সম্পদের উপর নিজেদের একছত্র অধিপত্য স্থাপন করার চেষ্টায় একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। করমন্ডল উপকূল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্থাৎ কর্ণাটক এলাকা ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়। যা পর্যায়ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ নামে পরিচিত।  মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে, দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইংরেজ ও ফরাসিরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ পেয়েছিল। হায়দ্রাবাদী নিজাম উল মুল্ক আসফ ঝাঁ এর মৃত্যুর পর সমগ্র দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তার উপর মারাঠাদের আক্রমণকে ব্যতিব্যস্ত করে। এই অবস্থায় ইংরেজ ও ফরাসিরা পারস্পারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। যাতে করে করমন্ডল উপকূলে বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভারতে সাম্রাজ্যের স্থাপনের কাজ সহজ হবে। তাছাড়া ১৭৪০ নাগাদ অস্ট্রিয়ায় উত্তরাধিকার নিয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারতে এই দুই বনিক গোষ্ঠীকে প্ররোচিত করেছিল।  অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব শুরু হলেও ফরাসি কিংবা ইস্ট ইন্ডি...

দেওয়ানী লাভের পর্যায় গুলি চিহ্নিত কর। এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য আলোচনা কর।

দেওয়ানী ব্যবস্থা ভারতে মুসলমান শাসন পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রদেশে সরকারি ক্ষমতা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। দেওয়ানী ও নাজিম। প্রথমটির অধীনে ছিল রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানির মামলা। দ্বিতীয়টির অধীনে ছিল শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও ফৌজদারি মামলা। তবে মুঘল শাসনের শেষ দিকে এই দুই ক্ষমতা একই ব্যক্তির হাতে চলে আসে। নবাব আলীবর্দী খাঁ একাই ছিলেন বাংলার দেওয়ান ও নাজিম। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একরকম বাংলা, অযোধ্যা ও দিল্লি কে পরাস্ত করে উত্তর ভারত পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তার করেছিল। বাংলা সম্পর্কে পদক্ষেপই ছিল দেওয়ানির অধিকার আদায় যা সমকালীন বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।  মীরজাফর যিনি বক্সারের যুদ্ধের পর কিছুদিনের জন্য বাংলার নবাব হয়েছিলেন তার মৃত্যু ঘটলে তার পুত্র নিজামউদ্দৌলা বাংলার নবাব হন। প্রচুর অর্থ কোম্পানিকে দিয়ে নবাব ও কোম্পানির মাঝে কোম্পানি মনোনীত একজন নায়েব সুবা নিয়োগ করা হয়। যার মাধ্যমে কোম্পানি তার শাসনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি আদায় করে নেবে।  বক্সারের যুদ্ধের কিছুকাল পর রবার্ট ...

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত | Permanent Settlement in Bengal

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানী লাভের অধিকার পাওয়ার পর থেকে একের পর এক ভূমি রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দেয়। হেস্টিংস প্রবর্তিত ইজরাদারি ব্যবস্থায় নানা ত্রুটি থাকায় কর্নওয়ালিস জমিদারদের সাথে চিরস্থায়ী ভাবে একটি বন্দোবস্ত করেন। বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে এই বন্দোবস্তের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। হেস্টিংস প্রবর্তিত ইজারাদারী ব্যবস্থায় জমি প্রতিবছর নিলামের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হত। প্রতিবছর ইজারাদার বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ইজারাদাররা কৃষির উন্নতিতে নজর দিত না। তারা যত বেশি সম্ভব আয়ের জন্য কৃষকদের উপর জুলুম করত। কৃষকরা তাই অনেক সময় জমি ছেড়ে পালিয়ে যেত। এর ফলে কৃষি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। প্রতিবছর জমির নিলাম হওয়ায় কোম্পানির আয়ের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। কখনো কখনো ইজারাদারা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ঠিকঠাক মেটাতে পারত না।  উপরোক্ত কারণে কর্নওয়ালিসকে ভূমি বন্দোবস্ত সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হয়। জমিদার বংশের সন্তান কর্নওয়ালিস ইংল্যান্ডের অনুকরণে জমিদারদের সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চাইতেন। কর্নওয়ালিসের ভারতে আসার আগেই, বস্তুত...

শিবাজীর অধীনে মারাঠা শক্তির উত্থান | Rise of the Maratha under Shivaji

শিবাজীর অধীনে মারাঠা শক্তির উত্থান  মহারাষ্ট্রে মারাঠা জাতির উত্থান ভারতের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। যদুনাথ সরকার শিবাজীকে মারাঠা জাতির শ্রষ্ঠা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে মারাঠাদের উত্থান শিবাজীর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। মারাঠা জাতির উত্থানের পিছনে একটা অনুকূল পরিস্থিতি কার্যকর ছিল। শিবাজীর নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব এর সাথে যুক্ত হয়ে উত্থানকে সম্ভব করেছিল।  মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মারাঠা জাতির উত্থান ও চরিত্র গঠনে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। মহারাষ্ট্র পাহাড়-পর্বত দ্বারা বেষ্টিত এবং নর্মদা ও তাপ্তি নদী একে ঘিরে রাখায় প্রাকৃতিক নিরাপত্তা পেয়েছে। অন্যদিকে অনুর্বর জমি মারাঠাদের কষ্টসহিষ্ণু ও সংগ্রামী করে তুলেছিল। মারাঠার ভৌগলিক পরিস্থিতি গেরিলা যুদ্ধের পক্ষে অনুকূল ছিল। ১৫-১৬ শতকের ধর্মীয় আন্দোলন মারাঠাদের মধ্যে জাগরণের পটভূমি তৈরি করেছিল। মারাঠা জাতির সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক অভিজ্ঞতাও ছিল। ইতিপূর্বে বাহমনি, আহম্মদ নগর ও বিজাপুর সুলতানদের অধীনে সামরিক বিভাগে বহুদিন কাজ করে তারা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল।  এই পটভূমিতে শিবাজীর উত্থান। শিবাজীর পিতা সাহু...

তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ | The Third Battle of Panipat

তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ  মারাঠা জাতি তথা ভারতের ইতিহাসে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ একটি নির্ণায়ক ঘটনা। পেশোয়া বালাজি বাজিরাও পাঞ্জাব দখল করলে আফগান বীর আহমদ শাহ আবদালির সঙ্গে মারাঠাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। আবদালি ১৭৫৮-তে পাঞ্জাব পুনর্দখল করে দিল্লির দিকে এগিয়ে যান। পথে বালাজি বাজিরাও তাঁর পুত্র বিশ্বাসরাও ও ভাই সদাশিবরাও-এর নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী আহমদ শাহ আবদালিকে বাধা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন। মারাঠা সেনাপতি উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের সাহায্য চেয়েছিলেন কিন্তু সাড়া পাননি। মারাঠারা দিল্লি দখল করলে আবদালিও দিল্লির দিকে অগ্রসর হন। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত পানিপথের যুদ্ধে নিঃসঙ্গ মারাঠা বাহিনী পরাজিত হয়। বিপান চন্দ্রের মতে, যুদ্ধে ২৪ হাজার মারাঠা সেনা ও ২২ জন প্রধান সেনাপতি মারা যান। বিশ্বাসরাও এবং সদাশিবরাও-এর মৃত্যু ঘটে। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বালাজি বাজিরাও ওই বছরেই মারা যান। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকরা তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছেন। মারাঠা ঐতিহাসিকরা এই যুদ্ধকে গুরুত্বহীন ঘটনা হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। তাঁদের মতে, কয়েকজন প্রথম সারির মারাঠা সামরিক নেতা ছাড...

খানুয়ার যুদ্ধ

খানুয়ার যুদ্ধ ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রধান কৃতিত্ব বাবরের। যে তিনটি যুদ্ধ ছাড়া মুঘলদের ভারতে আধিপত্য কায়েম সম্ভব ছিল না সেগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ খানুয়া যুদ্ধ বলে ঐতিহাসিকগন মনে করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী পরাজিত হলেও আফগানরা নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাঁর ভ্রাতা মামুদ লোদী আফগানদের সঙ্ঘবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। পানিপথের যুদ্ধের পর রাজপুত নেতা রানা সঙ্গ দিল্লি দখলের পরিকল্পনা করেন। তিনি ভেবেছিলেন বাবর, তৈমুরের মতো লুণ্ঠন করে ফিরে যাবে। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন বাবর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তখন তিনি আফগানদের সঙ্গে আঁতাত করে বাবরকে ভারত ছেড়ে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করেন। আবার অন্যদিকে বাবরও ভেবেছিলেন যে, রাজপুতদের পরাস্ত করতে না পারলে তার ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তাই উভয়পক্ষই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।  ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে ১৭ ই মার্চ উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। আগ্রার অদূরে খানুয়ার প্রান্তরে প্রাথমিক পর্বে নির্ভীক দুঃসাহসী রাজপুতরা মুঘল বাহিনীকে চাপে ফেলে দেয়। কিন্তু বাবর এই প্রাথমিক ধাক্কা কাটি...

মুঘল আফগান সংঘর্ষ এবং মুঘলদের সাফল্যের কারণ

মুঘল আফগান সংঘর্ষ এবং মুঘলদের সাফল্যের কারণ   ষোড়শ শতক ভারতের রাজনৈতিক পালাবদল এর কাল। গতানুগতিক ইতিহাসচর্চায় যে দীর্ঘ সময়কালকে ইসলামিক যুগ বলে আখ্যা দেওয়া হয় তারই অন্তর্গত এই পর্ব। ধর্মীয় দিক থেকে মুঘল ও আফগানরা ইসলাম ধর্মালম্বী ছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উভয় গোষ্ঠী যথেষ্ট শত্রুভাবাপন্ন, কারণ এখানে ধর্ম নয়, ক্ষমতার দ্বন্দই ছিল বড়। ১৫ শতকের শেষ দিক থেকে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। লোদি সম্রাট ইব্রাহিম লোদির সময়ে কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আফগান সর্দাররা ইব্রাহিম লোদির প্রতি রুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। রাজপুতরাও পিছিয়ে ছিল না। এই পরিস্থিতি মধ্য এশিয়া থেকে বিতাড়িত বাবরের কাছে ভাগ্যের সন্ধানের নতুন দরজা খুলে দেয়।  মোঙ্গল ও তৈমুর বংশের মিশ্র বংশজাত বাবার নাবালক অবস্থায় তারই আত্মীয়-শত্রুদের দ্বারা পিতৃ রাজ্য ফারঘানা থেকে বিতাড়িত হন। তার পক্ষে মধ্য এশিয়ার অটোমান, সাফাবিদ ও উজবেগদের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি। যদিও তিনি সমরখন্দ দখলের স্বপ্ন বহুদিন বহন করেছিলেন। সামরখন্দ দখলের শেষ দুটি চ...