সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহ | The Aristocratic Revolt in France

ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহ ফরাসি বিপ্লবকে বুর্জোয়া বিপ্লব বলা হলেও, এই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল অভিজাতদের দ্বারা। জর্জ লেফেভর অভিজাতদের বিদ্রোহ কে 'অভিজাত বিপ্লব' বলেছেন। বিপ্লবের প্রাক্কালে রাজকোষে চরম সংকট দেখা দিয়েছিল তার থেকে উত্তরনের জন্য ফরাসী সম্রাট বেশ কিছু সংস্কার প্রবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন, যেগুলো দ্বিতীয় এস্টেট বা অভিজাতদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছিল। এজন্যই অভিজাতরা রাজার বিরোধিতা করেছিলেন। তবে এর সঙ্গে ফরাসী বিপ্লবের মূল আদর্শ সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার কোন যোগ ছিল না।  ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে কালোন অভিজাত ও যাজকদের করের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিশদ পরিকল্পনা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ন্যায্য কর নীতির প্রবর্তন করা এবং পর্যায়ক্রমে এমন একটি কর ব্যবস্থা চালু করা হবে, যার ফলে সম্পদশালীদের করের অতিরিক্ত বোঝা বইতে হবে। তিনি টাইল ও গ্যাবেলের ভার লাঘব এবং বেগার প্রথা বা কার্ভির প্রচলন কমানোর কথা বলেন। কালোন সরকারি ব্যয় হ্রাস ও স্ট্যাম্পশুল্ক ব্যাপক বিস্তৃত করার কথাও বলেন। এছাড়া তিনি ফ্রান্সের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তনের কথা বলেন।...

ফরাসি বিপ্লবের পিছনে দার্শনিকদের অবদান | Activities of Philosophers on the Eve of the French Revolution

ফরাসী বিপ্লবের প্রাক্কালে দার্শনিকদের কার্যকলাপ ১৮ শতক ইউরোপে জ্ঞানদীপ্তির যুগ। ফ্রান্স ছিল জ্ঞানদীপ্তির অন্যতম কেন্দ্র। ফেনেলো থেকে ফ্রান্সে যুক্তিবাদের জয়যাত্রা সূচনা হয়েছিল। ফরাসি দারশনিকরা কেবল দর্শন চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তাঁরা সমকালীন ফরাসি রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি ও ধর্মে পরিব্যপ্ত স্বৈরাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। ফরাসি বিপ্লব সময়কার বিখ্যাত তিনজন দার্শনিক হলেন, মন্টেস্কু ভলতেয়ার ও রুশো। এই দার্শনিকদের প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি এক ছিল না কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ছিলেন যুক্তিবাদী মানবতাবাদী এবং সংস্কারে সমর্থক। মন্তেস্কু অভিজাত পরিবারের মানুষ হলেও উদারনৈতিক দর্শনের সমর্থক ছিলেন। তার পার্শিয়ান লেটার্স   গ্রন্থে তিনি সমকালীন ফ্রান্সের স্বৈরাচার, দুর্নীতি, অভিজাততন্ত্রের স্বার্থপরতা ও চার্চের গোঁড়ামি তুলে ধরেন। গ্রেটনেস এন্ড ডেকাডেন্স অব রোমানস্  গ্রন্থে দেখিয়েছেন কিভাবে ভৌগলিক পরিবেশ, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের জীবনযাত্রা, আইন, শাসন, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির উপর প্রভাব বিস্তার করে। তিনি রোমান আইনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মন্টেস্কুর শ্রেষ্ঠ রচনা দ...

জাবতি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতের মুঘল শাসনে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। মুঘল যুগে কি উপায়ে, কতটা ভূমি রাজস্ব হ আদায় করা হতো আধুনিক ইতিহাস চর্চার একটা আকর্ষণীয় বিষয়।  বাবর ও হুমায়ুন পুরানো দিনের সুলতানি আমলের রাজস্ব ব্যবস্থাই বহাল রাখেন। জায়গিরদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই ভূমি রাজস্ব আদায় হতো। বিদেশি বিবরণ থেকে জানা যায় সকল জমির মালিক ছিল মুঘল সম্রাট। তাই ভূমি রাজস্ব ছিল ভূমির খাজনা। অন্যদিকে ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন ভূমি রাজস্ব ছিল উৎপন্ন ফসলের উপর স্থাপিত কর, তাই উৎপাদন না হলে রাজস্ব দিতে হতো না। উৎপাদন ব্যাহত হলে রাজস্ব মুকুব এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যাই হোক সম্রাট আকবর‌ ই প্রথম নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে টোডরমলের সাহায্য ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করেন।  আকবরের আমলে যেসব ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি জাবতি, নকস, গাল্লাবক্সী প্রভৃতি প্রথা। এগুলির মধ্যে যাবতীয় ব্যবস্থার জন্য মুঘল রাজস্ব ব্যবস্থা ইতিহাসে অনন্য স্থানের অধিকারী হয়ে আছেন।  কতগুলি স্পষ্ট পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আকবর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা স্থির করে ১) বৃহৎ সাম্রাজ্যের সর্বত্র নির্দ...

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব সংস্কার | Murshid Quli Khan's Revenue Reforms

মুর্শিদকুলি খানের রাজস্ব সংস্কার মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময়ে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার দেওয়ান হিসেবে নিজ কৃতিত্বের সাক্ষ্য রাখেন। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ও দলাদলির সুযোগে নিজে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি একই সাথে বাংলার দেওয়ান ও সুবাদার পদে নিযুক্ত হন। তিনি কার্যত স্বাধীনভাবেই রাজত্ব চালাতেন। তার হাত ধরে বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যপক সংস্কার সাধিত হয়। এর ফলে বাংলার শক্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।  ক্ষমতা আরোহণের পরেই মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার রাজস্ব সংস্কারের কাজে হাত দেন। পূর্ববর্তী রাজস্ব ব্যবস্থায় মুঘল কর্মচারীদের জায়গীর জমি এত বেশি ছিল যে খালিশা জমি না থাকায় ভূমি রাজস্ব বাবদ আয় ছিল কিঞ্চিত মাত্র। মুর্শিদকুলি খাঁ এই অবস্থার মোকাবিলা করতে প্রথমে মুঘল কর্মচারীদের জায়গীর হিসেবে প্রাপ্ত সমস্ত জমিকে খালিশায় পরিণত করেন। এর ফলে খালিশা জমি থেকে রাষ্ট্রের আয় বাড়ে। এইসব জায়গীরহারা কর্মচারীদের উড়িষ্যার অনুন্নত ও জঙ্গল আবৃত অনুর্বর জমিতে নতুন ভাবে জায়গীর দেন। এর ফলে অনাবাদি জমি আবাদিতে পরিণত হবার প্রয়াস দেখা যায়।  ...

জায়গিরদারী সংকট | Jagirdari Crisis

জায়গিরদারী সংকট  সম্রাট আকবর সরকারি কর্মচারীদের সুসংগঠিত করার জন্য মনসবদারি ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তখন থেকেই মনসবদাররা মুঘল শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। মনসবদারদের কিছু কিছু নগদ বেতন পেতেন। আর কিছু মনসবদার জমির অধিকার পেতেন; এঁরা জায়গীরদার নামে পরিচিত হতেন। জায়গীরদাররা তাদের জায়গীর থেকে রাষ্ট্র নির্ধারিত সমস্ত কর আদায় করতেন। জায়গীর জমি বাদে থাকত সম্রাটের অধীনস্থ কিছু খালিশা জমি এবং কিছু পাইবাকি জমি অর্থাৎ যেগুলি তখনও মনসবদারের কাছে বন্টিত হয়নি এমন কিছু জমি। বেশিরভাগ জমিই ছিল জায়গীরদারী জমি হিসাবে বন্ঠিত জমি। ভূমির উপর জায়গীরদারদের কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। সম্রাটের ইচ্ছামত তাদের বদলি করা যেত। এমন জায়গির তনখা জায়গীর নামে পরিচিত ছিল। আর যে জায়গীর গুলি বংশানুক্রমিকভাবে ভোগ করা যেত তাকে ওয়াতন জায়গীর বলা হত। এগুলি সম্রাট আকবরের সময় বিশেষ শর্তে সৃষ্টি করা হয়েছিল।   তনখা জায়গির গুলির বদলির রীতি কিরূপ জটিলতার সৃষ্টি করেছিল তা দেখিয়েছেন ইরফান হাবিব। কোনো জায়গীরদার যে অঞ্চলে থাকত সেখানে সেই সময়ে ভালো উৎপাদন না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হত। বছ...

দাদাভাই নৌরজীর আর্থিক নিষ্ক্রমণ তত্ত্ব | Dadabhai Naoroji's Theory of Economic Drain

দাদাভাই নৌরজীর আর্থিক নিষ্ক্রমণ তত্ত্ব যে সমস্ত জাতীয়তাবাদী পণ্ডিত ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অর্থনীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সফল ব্যবসায়ী দাদাভাই নৌরজি। তিনি তার রচিত Proverty and Unbritish Rule in India গ্রন্থে পরিসংখ্যান সহযোগে দেখিয়েছেন কিভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশিক নীতির ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতীয় সম্পদের একটা বিরাট অংশ ব্রিটেনে প্রেরিত হচ্ছে এবং তার ফলে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর দেশে পরিণত হচ্ছে।  তার মতে ১৮৫৭-র পর থেকে ব্রিটিশ সরকার মার্কেনটাইলবাদ, লুটপাট, নজরানা আদায় ইত্যাদি শোষণের সোজাসাপ্টা ও পুরানো পথ গুলি ত্যাগ করে স্বল্প দৃশ্যমান অথচ অনেক বেশি পরিশীলিত নীতি গ্রহণ করে। ভারতকে কাঁচামাল সরবরাহকারী ও খাদ্য সরবরাহকারী এবং ব্রিটেনে তৈরি দ্রব্যাদির বাজারে পরিণত করা হয়। ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগ করে ভারতে শিল্পায়ন ঘটানোর পরিবর্তে ভারতে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে লভ্যাংশ দেশের বাইরে চলে যায়। তার উপর হোম চার্জেস, ভারতে  কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাবদ খরচ, ব্রিটেনের সাম্রাজ্য বিস্তারের খরচের একাংশ প্রভৃতি ভারতীয় সম্পদ নির্গমন কে তীব...

জাট ও সওয়ারের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি ব্যবস্থায় মনসবদারদের শ্রেণীবিভাগ এবং পদমর্যাদা একটি বিতর্কিত বিষয়। এই বিতর্কের অন্যতম উৎস জাট ও স‌ওয়ার। এই দুই শব্দ মনসবদারদের পদমর্যাদার সূচক। ব্লাকম্যান এর মতে জাট নির্দেশ করত প্রয়োজনে কত সৈন্য পাওয়া যাবে তার সংখ্যা আর স‌ওয়ার বোঝায় অশ্বারোহীর সংখ্যা। আরভিন বলেন জাট কথাটির অর্থ মনসবদারদের অধীনস্থ পদমর্যাদা অনুযায়ী মনসবদারদের অশ্বারোহী সেনা। সওয়ার ছিল পদমর্যাদার অতিরিক্ত অশ্বারোহি সেনা। ব্লকম্যান বলেন অশ্বারোহীর সংখ্যা স্থির করার জন্য আকবর স‌ওয়ার পদমর্যাদাকে জাট থেকে পৃথক করেন। ডঃ অনিল চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় বলেন আকবর মনসবদারী প্রথা চালু হওয়ার কুড়ি বছর পর স‌ওয়ার পদটি চালু হয়। তখন কেবল জাট ছিল যখন দেখা গেল মনসবদাররা সৈন্য না রেখে ধার করা সৈন্য দেখাচ্ছে তখন স‌ওয়ার পদ সংযোজন করেন এবং অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সওয়ার পদের সংখ্যা অনুযায়ী সৈন্য পোষণে বাধ্য করেন। তার মতে স‌ওয়ার ও জাঠের সংখ্যা বিচার করে মনসবদারদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যার জাট ও সওয়ার সমান তিনি প্রথম, যার সওয়ার জাঠের অর্ধেক তিনি দ্বিতীয়, যার অর্ধেকের কম তিনি তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত হতেন। শিরিন মু...

মুঘল যুগে নগরায়ন | Urbanization in the Mughal Era

মুঘল যুগে নগরায়ন নগরায়ন মধ্যযুগের আর্থ-সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মুঘল আমলের বিবরণ গুলিতে সরাসরি নগরায়ন বিষয়ে উল্লেখ না থাকলেও রাজনৈতিক ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়ের বিবরণে নগরের উৎখান পতনের ইতিহাস পাওয়া যায়। সুলতানি যুগে নগরায়নের যে সূচনা হয়েছিল ২০০ বছরের মুঘল শাসনে তা অব্যাহত ছিল। সুলতানি যুগের পুরাতন শহর যেমন দিল্লী, লাহোর প্রভৃতির পুনরুত্থান ঘটেছিল, সেইসঙ্গে নতুন কিছু শহর যেমন এহালাবাদ, ফতেপুর সিক্রি, সুরাট, আর্কট, ফারিদাবাদ প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণী ও মুঘল উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতা, উৎসাহ এবং সক্রিয় সহযোগিতা ছিল।  গ্রামবাসী কৃষিজীবীর পুরবাসীতে রুপান্তর অর্থাৎ বড় শহরে পরিবর্তন এবং বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে শহর গড়ে ওঠা, এইসব কতগুলি ধীর অথচ স্বাভাবিক সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ফলে নগরায়ন সম্ভব হয়েছিল। প্রথম্‌ মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিরতা মানুষকে অধিকতর নিরাপত্তা ও শান্তির আশ্বাস জনগণকে প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গের অভ্যন্তরে ও বাইরে বাস করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ফলে দেশে যে ম...

মনসবদারি ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত মনসবদারী প্রথার বিবর্তন গুলি চিহ্নিত কর।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামোর একটি মূল উপাদান ছিল অধীনস্থ অশ্বারোহী সংখ্যার ভিত্তিতে অভিজাত্যের স্তরবিন্যাস যাকে মনসব ব্যবস্থা বলা হয়। আইন- ই- আকবরী ও ১৭ শতকের কিছু দলিল দস্তাভেজ ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে এই ব্যবস্থার একটি রূপরেখা তৈরি করা যায়। মোরল্যান্ড ও আব্দুল আজিজ যখন মনসবদারী ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য গুলি চিহ্নিত করছিলেন। পরবর্তীকালে সেগুলি সংশোধন ও পরিমার্জিত করেছিল আতাহার আলী ও ইরফান হাবিব। মনসব বলতে দু ধরনের ব্যবস্থা বোঝায় প্রথমটি জাট যা অভিজাতদের পদাধিকারীর ব্যক্তিগত মাইনে ও ক্রমন্নত স্তর ব্যবস্থায় আর মর্যাদা নির্ধারণ করত। দ্বিতীয়টি হল সওয়ার যা ছিল অধীনস্থ ঘোড়সওরের সংখ্যার ও তার বেতন বাবদ কি পরিমান অর্থ মঞ্জুর হয়েছে তার সূচক।  মনসব ব্যবস্থা তার ধ্রুপদী রূপ লাভ করেছিল ১৬০৫ সালে। এর আগে মনসব ব্যবস্থা কিভাবে বিবর্তিত হয়েছিল তার উত্তরে মোরল্যান্ড ও আব্দুল আজিজ বলেছেন আকবরের আগে একটি মাত্র সংখ্যা ভিত্তিক পদানুক্রম চালু ছিল যার দ্বারা বোঝানো হতো পদাধিকারীর অধীনে কত ঘোড়সওয়ার থাকার সম্ভাবনা। তারপর প্রকৃত ঘোড়সওয়ার সংখ্যার সঙ্গে অসঙ্গতির জন্য পরিসংখ্যাটি অর্থ...

ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ ও পরিণাম | Causes and Consequences of Anglo-French Rivalry

ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ ও পরিণাম  ইংরেজ ও ফরাসি এই দুই ইউরোপীয় শক্তি উপনিবেশিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভারতে আসেন এবং ভারতের বাণিজ্য ও সম্পদের উপর নিজেদের একছত্র অধিপত্য স্থাপন করার চেষ্টায় একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। করমন্ডল উপকূল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্থাৎ কর্ণাটক এলাকা ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ হয়। যা পর্যায়ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ নামে পরিচিত।  মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের লগ্নে দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইংরেজ ও ফরাসিরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ পেয়েছিল। হায়দ্রাবাদের নিজাম-উল-মুল্ক আসফ ঝাঁ-এর মৃত্যুর পর সমগ্র দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তার উপর মারাঠাদের আক্রমণ দক্ষিণ ভারতকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এই অবস্থায় ইংরেজ ও ফরাসিরা পারস্পারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। করমন্ডল উপকূলে বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভারতে তাদের সাম্রাজ্যের স্থাপনের কাজ সহজ হবে। তাছাড়া ১৭৪০ নাগাদ অস্ট্রিয়ায় উত্তরাধিকার নিয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারতে এই দুই বনিক গোষ্ঠীকে প্র...

দেওয়ানী লাভ ও তার তাৎপর্য | The Diwani Right and Its Significance

দেওয়ানী লাভ ও তার তাৎপর্য  দেওয়ানী ব্যবস্থা ভারতে মুঘল শাসন পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রদেশে সরকারি ক্ষমতা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। দেওয়ানী ও নিজামত। প্রথমটির অধীনে ছিল রাজস্ব আদায় ও ভূমি সংক্রান্ত মামলা। দ্বিতীয়টির অধীনে ছিল শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও ফৌজদারি মামলা। তবে মুঘল শাসনের শেষ দিকে এই দুই ক্ষমতা একই ব্যক্তির হাতে চলে আসে। নবাব আলীবর্দী খাঁ একাই ছিলেন বাংলার দেওয়ান ও নাজিম। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি  বাংলা, অযোধ্যা ও দিল্লিকে পরাস্ত করে উত্তর ভারত পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তার করেছিল। বাংলা সম্পর্কে ব্রিটিশের পরবর্তী পদক্ষেপই ছিল দেওয়ানির অধিকার আদায়, যা সমকালীন বাংলা তথা ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।  মীরজাফর, যিনি বক্সারের যুদ্ধের পর কিছুদিনের জন্য বাংলার নবাব হয়েছিলেন তার মৃত্যু ঘটলে তার পুত্র নজমউদ্দৌলা বাংলার নবাব হন। প্রচুর অর্থ কোম্পানিকে দিয়ে নবাব ও কোম্পানির মাঝে কোম্পানি মনোনীত একজন নায়েব সুবা নিয়োগ করা হয়, যার মাধ্যমে কোম্পানি তার শাসনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি আদ...