যেসব জাতীয়তাবাদীগণ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অর্থনীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী দাদাভাই নৌরজি। তিনি তার রচিত Proverty and unbritish rule in India গ্রন্থে পরিসংখ্যান সহযোগে দেখিয়েছেন কিভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশিক নীতির ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতীয় সম্পদের একটা বিরাট অংশ বৃটেনে প্রেরিত হচ্ছে। এবং তার ফলে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর দেশে পরিণত হচ্ছে।
তার মতে ১৮৫৭র পর থেকে ব্রিটিশ সরকার মার্কেনটাইল বাদ, লুটপাট, নজরানা আদায় ইত্যাদি শোষণের সোজাসাপ্টা ও পুরানো পথ গুলি ত্যাগ করে স্বল্প দৃশ্যমান অথচ অনেক বেশি পরিশীলিত নীতি গ্রহণ করে। ভারতকে কাঁচামাল সরবরাহকারী ও খাদ্য সরবরাহকারী এবং ব্রিটেনে তৈরি দ্রব্যাদির বাজারে পরিণত করা হয়। ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগ করে ভারতে শিল্পায়ন ঘটানোর পরিবর্তে ভারতে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। ফলে লভ্যাংস দেশের বাইরে চলে যায়। তার উপর হোম চার্জেস, ভারতে তে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাবদ খরচ, ব্রিটেনের সাম্রাজ্য বিস্তারের খরচের একাংশ প্রভৃতি ভারতীয় সম্পদ নির্গমন কে তীব্র করে তোলে। রেল কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের চুক্তি মাফিক ৫% সুদ ভারতীয় ভারতীয় অর্থই মেটানো হতো। এছাড়াও ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বাইরে ঋণের টাকাও ভারতীয় অর্থের মেটানো হতো।
এভাবে বহুল সম্পদ দেশের বাইরে নির্গত হওয়ায় ভারত সরাসরি নিঃস্ব হয়ে যায়। নৌরজীর হিসাব মত ভারত থেকে নির্গত সম্পত্তি বছরে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড এর উপর। উচ্চহারে রাজস্ব আদায় এবং পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় হস্তশিল্প গুলি ধ্বংসের ফলে দেশের দরিদ্র আরো বাড়ে, নৌরজীর হিসাবে ভারতীয়দের মাথাপিছু আয় কুড়ি টাকা, যদিও নৌরজীর এই হিসাব সরকার মেনে নেন। নৌরজী ভারতে ব্রিটিশ অর্থনীতির মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলেছেন ভারতীয়দের কাছে ব্রিটিশ শাসন, মিস্ত্রির ছুরির মতন কোন পীড়া ছিল না সবটাই মসৃণ ও সুমিষ্ট তবুও তা ছিলো ছুরি।
নৌরজী সম্পদ নিষ্কাশন তত্ত্ব কতটা চরমপন্থী ছিল তা বিতর্ক কারণ বইটির নামের মধ্যেই অত্যন্ত মধ্যপন্থী অর্থাৎ নরমপন্থী একটা দিক লুকিয়ে ছিল। দারিদ্র্য ও ভারতে অব্রিটিশ সুলভ রাজনীতি এই নামের দ্বারা বোঝা যায় যে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতির প্রতি চরম আস্থাশীল ছিলেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসন, ব্রিটেনে ব্রিটিশ শাসনের যথার্থ অনুকরণ নয় বলে তিনি মনে করতেন।
পরিশেষে বলা যায় নরমপন্থী হলেও নৌরজীর সম্পদ নিষ্কাশন তথ্য পরবর্তী ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চালিত করে। এই তথ্য ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে অভিভাবক মূলক ধারণার ত্যাগ করে ব্রিটিশ বিরোধী ক্রোধের সঞ্চার করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন