সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আদি মধ্যযুগে ভারতের আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব আলোচনা কর।

  আদি মধ্যযুগের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আঞ্চলিকতাবাদ। রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শিল্প, বাণিজ্য নগরায়ন, মুদ্রা প্রভৃতির ক্ষেত্রে যেমন আঞ্চলিকতা সুস্পষ্ট তেমনি ভাষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রাদেশিক ও স্থানীয় ভাষার উদ্ভব এ যুগেই হয়। যেমন বাংলা, মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু, কন্নড় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মসংস্কারগণ জনসাধারণের সুবিধার্থে সহজবদ্ধ স্থানীয় কথ্য ভাষায় বক্তব্য রাখতেন এবং গ্রন্থ রচনা করতেন। ফলে আঞ্চলিক ভাষাগুলির উন্নতি হয়। এক্ষেত্রে বৌদ্ধ, জৈন ও ভক্তিবাদী প্রচারকদের অবদান অনস্বীকার্য। পাল ও সেন যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা। বাংলাদেশে অপভ্রংশের ব্যবহারও ছিল। এই পর্বের গোড়ার দিকে ব্যক্তি ও স্থানের নামে বাংলার ব্যবহার ছিল। চর্যাপদ হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ৪৭ টি চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা নামে এগুলি প্রকাশিত হয়। বজ্রযান সিদ্ধাচার্যগণ (22 জন) হলেন এগুলি রচয়িতা। রচনার সময়কাল হিসেবে ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ কে ধরা হয়। চর্যাপদ গুলি উচ্চস্তরের কবিতা নয় তবে এর মধ্যে আবেগ, চি...

আদি মধ্যযুগের কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখো।

  ভারতবর্ষ বরাবর কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি এদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা। তবে আদি মধ্যযুগের কৃষি ও কৃষকের অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য পর্যাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্যের তথ্যের অভাব রয়েছে। দুটি কৃষি বিষয়ক গ্রন্থ যথা কৃষিসুক্তি ও কৃষি পরাশর এ প্রসঙ্গে বিশেষ সহায়ক। এছাড়া পুরান এবং লিপি সমূহ থেকে পরোক্ষভাবে কৃষি ব্যবস্থা নানা তথ্য পাওয়া যায়। চীনা পর্যটক মা হুয়ান এবং চৌ ডুকুমার রচনা উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সমকালীন কৃষি ব্যবস্থার তিনটি দিক উঠে আসে। এক- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, দুই- কৃষি প্রযুক্তির উন্নতি, তিন- ভূমি ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন।  হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতাব্দীতে ভারত পরিক্রমা করে এক সচ্ছল চিত্র তুলে ধরেছেন। কৃষিসুক্তি ও কৃষিপরাশর গ্রন্থ দুটির রচনা কৃষির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। সমকালীন শাস্ত্র গুলিতে কৃষিকে উৎকৃষ্ট জীবিকা হিসেবে দেখা হয়েছে। পদ্ম পুরান থেকে জানা যায় প্রাচীন বাংলায় ষাট রকম ধান উৎপন্ন হতো। মধ্যপ্রদেশে বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি চাষ হতো। উপকূল ভাগে প্রচুর নারকেল হতো। দক্ষিণ ভারত সুপারি ও পানের জন্য বিখ্যাত ছিল। গুজরাট ও দাক্ষিণাত্যে কার্পাস ও তৈল বিজ ব্যাপক...

আদি মধ্যযুগের অন্তবাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা কর।

আদি মধ্যযুগের অর্থনৈতিক ইতিহাসে দেশীয় বাণিজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও ডঃ শর্মা ও যাদব এযুগের অর্থনৈতিক অবক্ষয় ও বদ্ধ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির তথ্য তুলে ধরে বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের কথা বলেছেন। ৫০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে অর্থনৈতিক চরিত্রে এক বিরাট পরিবর্তন এসেছিল ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিক অবক্ষয় ঘটেনি। অন্ত বাণিজ্য বেশ ভালই চলত যা ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় ও চম্পকলক্ষ্মী প্রমাণ করেছেন।  আদি মধ্যযুগে মানুষ কৃষিতে আত্মনিয়োগ করলেও বাণিজ্য কখনোই অবহেলিত হয়নি। প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে বাণিজ্য সমাদার পেত। যা শতপথ ব্রাহ্মণ, পেরিপ্লাস প্রভৃতি গ্রন্থগুলি প্রমাণ দেয়। অন্তবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ছোট, বড়, মাঝারি হট্টিকার কথা বলা হয়েছে যা আজকের দিনের হাটের সমর্থক (সপ্তাহে দুইবার বা তিনবার বসে)। প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ ক্ষুদ্র বাজার ছিল হট্ট বা হটি্কা। দক্ষিণ ভারতে তেলেগু লেখতে এগুলিকে অড্ড বলা হয়েছে। ডঃ রনবীর চক্রবর্তী সংস্কৃতে বর্ণিত যাত্রা শব্দটির অর্থ মেলা বা মেলা চলাকালীন বাজার অর্থে বুঝিয়েছেন। উত্তর ভারতে একে যাত্রা বলা হত। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে বলা হত মন্থে। এই যাত্রা রোজ বসত না কোন নির্দিষ্ট ...

চোল রাজাদের বাণিজ্য নীতি আলোচনা কর।

   দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যে চোল রাজারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। দুই মহান চোল রাজা রাজরাজ ও রাজেন্দ্র চোলের যোগ্য তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ ভারত ভারতমহাসাগরীয় বাণিজ্যে আরব বণিকদের প্রভাব ক্ষুন্ন করে নিজেদেরকে খানিক উন্নত করতে সক্ষম হয়।  রাজরাজের সময় করমন্ডল উপকূল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সাথে বাণিজ্যের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত হয়। প্রথমদিকে মামুল্যপুর বন্দরের গুরুত্ব ছিল। নেগপত্তনমের উত্থান মামুল্যপুরের গুরুত্ব হ্রাস পায়। চোল রাজা রাজরাজ চীনে দূত পাঠান। চোলরা রাজারা নৌ-বাণিজ্যে আরবদের প্রভাব ক্ষুন্ন করতে উদ্যোগী হন। রোমিল থাপারের মতে এজন্যই পান্ড্য ও কেরল রাজ্য আক্রমণ করেন। কেরল জয় করে সেখানে আরব বণিকদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করেন। তিনি মালদ্বীপ দখল করেন। লাক্ষাদ্বীপ দখল করেন, সিংহল আক্রমণ করে অর্ধেকটা জয় করেন। এগুলি সবই ছিল আরব বণিকদের বাণিজ্যের ঘাঁটি।  রাজরাজের পুত্র রাজেন্দ্র চোলও ওই একই নীতি গ্রহণ করেন। সিংহল জয়ের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রীবিজয় নামক স্বাধীন রাজ্যটি দক্ষিণ ভারত ও চীনের একটি অন্তবর্তী ঘাঁটি। শ্রীবিজয় এর সাথে প্রথম দিকে চোলদে...

বিদেশি পরিব্রাজকদের রচনায় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আর্থ সামাজিক জীবনের কি ছবি পাওয়া যায়?

  বিজয়নগর সাম্রাজ্য সুলতানি আমলে দাক্ষিণাত্যের একটি স্বাধীন সাম্রাজ্য। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যটক বিজয়নগর রাজ্যে এসেছিলেন। এদের লেখায় বিজয়নগরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চালচিত্রের ছবি ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে এসব বিদেশি বিবরণ গুলি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। 1420 খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় পর্যটক নিকোলো কন্টি বিজয়নগর পরিভ্রমণ করেন। তিনি লিখেছেন বিজয়নগর শহরটি 60 মাইল পরিধি ছিল। পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত প্রাচীর বেষ্টিত ছিল। শহরে অস্ত্র ধারণ করার মতো 90 হাজার লোক ছিল। এবং রাজা ছিলেন ভারতের অন্য যেকোনো নরপতির থেকে শক্তিশালী। পারসিক দূত আবদুর রাজ্জাক লিখেছেন ধনি, দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক অধিবাসী অলংকার পড়তেন (রত্ন খচিত)। পায়েস নামক পর্তুগিজ পর্যটক বিজয়নগরের বৈভবের কথা বলেছেন। বিজয়নগরের নরপতির অগণিত ধন রত্ন সৈন্য ও হাতি ছিল। তিনি বহিঃবাণিজ্যের উন্নতির কথা ও বলেছেন। প্রচুর উৎপাদন ও দ্রব্যমূল্য কম একথাও বলেছেন। বারবারোসা বিজয়নগরকে এক জনসমৃদ্ধ শহর এবং হীরে, মুক্তা, সিল্ক, কর্পূর, মৃগনাভি, চন্দন কাঠ প্রভৃতি পণ্য দ্রব্যের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং ...

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের চরিত্র | Nature of Sultanate State

দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র কি ধর্মাশ্রয়ী/ ধরমনিরপেক্ষ/ জনকল্যানকামী? প্রায় ৩০০ বছর ধরে স্থায়ী দিল্লি সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুব‌‌উদ্দিন আইবকের সিংহাসন আরোহণ থেকে দিল্লি সুলতানি শাসনের সূচনা। তারপর থেকে দিল্লির রাজশক্তির আদর্শ বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। দিল্লি সুলতানির রাজশক্তির তত্ত্ব বিষয়ে তিনটি দিক উঠে এসেছে। প্রথমত, দিল্লির সুলতানি ধর্মাশ্রয়ী না ধর্মনিরপেক্ষ, দ্বিতীয়ত, জনকল্যাণমুখী, নাকি কেবল স্বৈরাচারী, তৃতীয়ত, সার্বভৌম না খলিফা শাহীর অংশবিশেষ। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই বিষয়গুলি একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে এদের আলাদাভাবে আলোচোনা করা যায় না। ডঃ শ্রীবাস্তব, ডঃ ঈশ্বরীপ্রসাদ, শ্রীরাম শর্মা প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ধর্মাশ্রয়ী বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সমকালীন ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনি সুলতানি শাসনকে জাহান্দারী বা পার্থিব বলে উল্লেখ করেছেন। আধুনিক ঐতিহাসিক  কুরেশীও সুলতানি রাষ্ট্রকে‌ ধর্মাশ্রয়ী আখ্যা দিতে নারাজ।  সুলতান শব্দটির অর্থ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। এখানেই সুলতানি শাসনের স...

ইতালিতে, বিশেষ করে ফ্লোরেন্সে, কেন প্রথম নবজাগরন হয়? Why Did the Renaissance Begin First in Italy, Especially in Florence?

ইতালিতে, বিশেষ করে ফ্লোরেন্সে, কেন প্রথম নবজাগরন হয়?   আধুনিক যুগের আবির্ভাবের সাথে ইউরোপের রেনেসাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ১৪ শতকে প্রথম ইতালিতে এবং পরে ১৬ শতকে পশ্চিম ইউরোপে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে যে ব্যাপক রূপান্তর শুরু হয়েছিল সেটাই ছিল আধুনিকতার প্রথম পদক্ষেপ। এই ৩০০ বছরে ইউরোপের মানবিক জীবন ও মানবিক সত্তা সম্পর্কে নতুন চেতনার প্রসার ঘটেছিল। মানুষকে দৈবের অধীন এক অসহায় জীব হিসাবে না দেখে তাকে কি সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে প্রয়াস আমরা চিন্তার ক্ষেত্রে দেখতে পাই তাকে সাধারণ অর্থে 'মানবতাবাদ' বলা হয়। এই নব জাগৃতির উত্থান ইতালিতে এবং বিশেষভাবে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। ইউরোপের অন্যত্র না হয়ে কেন ইতালিতেই নবজাগরণের সূচনা হলো তার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। ১৪ শতকে ইউরোপের বৃহত্তম অংশ ছিল সামন্ততান্ত্রিক, কেবল উত্তর ইটালির বাণিজ্যিক শহর গুলিতে পৌর শাসন চালু ছিল; কারণ বাণিজ্য বিপ্লবের হাত ধরে ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই এলাকায় নগরায়নের প্রভাব পড়েছিল। ধর্মযুদ্ধের সময় ইতালির বন্দর ও নগর গুলি উত্তর ইউরোপ ও পবিত্র ভূমির মধ্যে পণ্য সরবরাহ ও লেনদেনের ফলে এই নগরায়ন তীব্র...

দিল্লির সুলতানরা কিভাবে খলিফার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন।

সুলতান ও খলিফার সম্পর্ক  সুলতানি যুগে সুলতান ও খলিফার সঙ্গে সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খলিফা হলেন বিশ্বাসীদের নেতা। যিনি মুসলমানদের সভা জামায়াতের কাছে দায়বদ্ধ। তিনি ইসলামী দুনিয়ার শাসক আবার ইমাম অর্থাৎ বিধানদাতা। সুলতান বলতে কোরআনে সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী কে বোঝায়। কিন্তু মিশরে এর অর্থ প্রাদেশিক শাসক। ভারতের সুলতানরা খলিফার অনুমোদন নিতেন। তিনি যেমন খলিফার মুসলিম দুনিয়ার একটি প্রদেশের শাসনকর্তা তেমনি ভারত ভূমির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। যা আবার ইসলামে বৈধ নয়।  ইলতুৎমিস থেকে দিল্লির প্রায় সব সুলতানই খলিফার অনুমোদন নিয়েছেন অর্থাৎ মতাদর্শগত দিক থেকে সুলতানি রাজ্য ছিল খলিফা সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ। যদিও চার খলিফার যুগের পরে খলিফা তন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সুলতানদের নিজেদের খলিফার প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করার পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে, প্রথমত ইসলামী বিশ্বের মান্যতা প্রাপ্তি, দ্বিতীয়তঃ নিজ রাজ্যে উলেমা সহ বিশ্বাসীদের কাছে নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা, তৃতীয়ত ইসলামী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে পরস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত থাকা। ইলতুৎমিসের খলিফা আল মুস্তানসির ...

দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য সুলতান ও অভিজাতদের সম্পর্ক আলোচনা করো।

 দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রাথমিক পর্বে অভিজাত শ্রেণীর স্থান ছিল ঠিক সুলতানের পরেই। অভিজাতরা ছিল সুলতানের সবথেকে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন।সুলতানি শাসন ব্যবস্থায় অভিজাত সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য ভাবে অংশগ্রহণ করত। অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তুর্কি উমরা গন‌ই ছিল অধিক সংখ্যক। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দ্বারা এই অভিজাত শ্রেণী গঠিত ছিল বলে তাদের মধ্যে কোন এক জাতীয় ভাব-ধারা গড়ে ওঠেনি। অভিজাতদের মধ্যে খান খেতাব ধারিরাই ছিল সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তবে প্রাথমিক পর্বে সুলতান ও অভিজাতরা একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলস্বরূপ দিল্লি সুলতানি যুগে অভিজাত বনাম রাজতন্ত্রের দীর্ঘদিন সংগ্রাম চলেছিল।   কুতুব উদ্দিন এর মৃত্যুর পর দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারত। কিন্তু দিল্লির শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অভিজাত সম্প্রদায় ইলতুৎমিসকে মনোনীত করে দিকে যেমন দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যের ভাগ্য ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছিলেন অপরদিকে তেমনি নিজেদের মর্যাদার অভাবনীয় রূপে বৃদ্ধি করেছিলেন। ইলতুৎমিস সিংহাসন আরোহন করে অভিজাতদের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। অভিজাতগণ এই মর্যাদা অটুট রাখার উদ্দেশ...

সুলতানি আমলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি/মঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে আলোচনা কর।

  প্রকৃতি ভারতকে এমনভাবে চারিদিকে ঘিরে রেখেছেন যে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে ভারত প্রায় নিরাপদ। কেবলমাত্র উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথই বিদেশীদের নিকট উন্মুক্ত ছিল। প্রাচীনকালে এই উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দুর্বলতার ফলে হুন জাতি ভারতে প্রবেশ করে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে ছিহ্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে যুগে যুগে বিদেশীরা ভারতে প্রবেশ করেছে। আফগানিস্তান থেকে খাইবার ও বোলান গিরিপথ দিয়ে ভারতে সহজে প্রবেশ করা যায়। গজনি ও ঘুরের শাসকরা এই পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করেছিল। এয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে মঙ্গলরা সারা পৃথিবীতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন দেশে এই ধারণা গড়ে উঠেছিল যে মঙ্গলরা হলো অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য। এয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে মঙ্গলরা মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রাধান্য স্থাপন করেছিল। এখানকার খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য মঙ্গলদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছিল। ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও মিশরের উপর মঙ্গলরা আক্রমণ চালিয়েছিল। মঙ্গল আক্রমণের ফলে বাগদাদের খলিফা নিহত হন। ইরান ও আফগানিস্তানের উপর মঙ্গলদের অধিকার স্থাপিত হয়। এই সময় ভারতের সুলতানি রাজ্য মঙ্গলদের আক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।   ...

মার্কেন্টাইলবাদ | Marcantile Theory of Economy

মার্কেন্টাইলবাদ মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের সময় ইউরোপের যে নিরঙ্কুশ রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান ঘটেছিল তার বিবিধ উপাদান গুলির মধ্যে মার্কেন্টেইলবাদ ছিল অন্যতম। মার্কেন্টেইলবাদ কথার সঠিক অর্থ বা সংজ্ঞা দিতে গেলে প্রথমে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রবক্তা  এডাম স্মিথ এর কথা বলতে হয়। কারণ তিনিই প্রথম মার্কেন্টেইলবাদ কথাটি অবজ্ঞা ভরে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলায় এর আক্ষরিক অর্থ বাণিজ্যবাদ। মার্কসবাদী ভাবধারার সাথে সঙ্গতি রেখে এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলতে হবে দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার। মরিস ডব বলেছেন মার্কেন্টেইলবাদ হল বাণিজ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শোষণ।  খ্রিস্টীয় ১৭ শতকীয় ইউরোপের দেশগুলিতে যে নিরঙ্কুশ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল তারা তাদের প্রয়োজনের তাগিদে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রন আনতে চেয়েছিল। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে দেশের শুল্ক, মুদ্রা, শিল্প উৎপাদন, বাজার ব্যবস্থা, কর সংক্রান্ত আইন কানুন প্রণয়ন সবই ছিল। দেশের সম্পদকে রাজারা নিজেদের এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যই এরূপ পদ্ধতি স...

অষ্টাদশ শতকীয় ইউরোপে জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচার | Enlightened Despotism in 18th-Century Europe

অষ্টাদশ শতকীয় ইউরোপে জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচার সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিজ্ঞানচিন্তার প্রসার, যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাভাবনার বিকাশ ইউরোপে যে নতুন পরিবেশ গড়ে উঠেছিল তার প্রধান দিক ছিল জ্ঞানদীপ্তি। জ্ঞানদীপ্তির মূল বিষয় ছিল জনজীবনে যুক্তি ও দর্শনের প্রয়োগ, যা কেবল সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে সীমাদ্ধ ছিল না, রাষ্ট্রতত্ত্ব ও রাজনীতিতেও এর প্রতিফলন ঘটেছিল। স্বৈরশাসন অবলুপ্ত হল না, কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকগন তাঁদের স্বৈরশাসনকে একটা জ্ঞানদীপ্তির আবরন দিলেন অর্থাৎ প্রজাস্বার্থে বেশ কিছু সংস্কার সাধনে ব্রতী হলেন।  এঁদের মধ্যে অন্যতম হলে প্রাশিয়ার শাসক ফ্রেডেরিখ, রাশিয়ার দ্বীতিয় ক্যাথরিন এবং অস্টিয়ার দ্বিতীয় জোসেফ। এঁদের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্র ও প্রজার কল্যাণ এবং একই সাথে শাসনতন্ত্রে আধুনিকতার স্পর্শ এনে রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। ঐতিহাসিক লর্ড অ্যাক্টন এই প্রচেষ্টাকে 'রাজতন্ত্রের অনুশোচনা' (Repentance Monarchy) বলে উল্লেখ করেছেন।   প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফেডরিখ ৪৬ বছর (১৭৪০-১৭৮৬) খ্রিঃ  ধরে প্রাশিয়া শাসন করেছিলেন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেছিলে...

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংস্থাসমূহ | Organizations Associated with Cultural Heritage Management.

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংস্থাসমূহ ১. Archaeological Survey of India (ASI) – ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ প্রতিষ্ঠা: ১৮৬১ সালে, স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের নেতৃত্বে। অধীনস্থ মন্ত্রণালয়: ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রক (Ministry of Culture)। মূল দায়িত্ব: জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ, ধ্বংসাবশেষ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা পরিচালনা। "Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains Act, 1958" বাস্তবায়ন। প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা ও জাদুঘর পরিচালনা। উল্লেখযোগ্য কাজ: নালন্দা, মহাবলিপুরম, হাম্পি, খাজুরাহো প্রভৃতি স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের জন্য উন্নতর ব্যবস্থাপনা। জাতীয় স্তরের সংরক্ষিত ৩,৬০০+ স্মৃতিস্তম্ভের তত্ত্বাবধান ২. Indian National Trust for Art and Cultural Heritage (INTACH) প্রতিষ্ঠা: ২৭ জানুয়ারি, ১৯৮৪। প্রকৃতি: অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রধান উদ্দেশ্য: ভারতের স্থাপত্য, শিল্প, কারুশিল্প ও জীবনয...