মার্কেন্টাইলবাদ
মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের সময় ইউরোপের যে নিরঙ্কুশ রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান ঘটেছিল তার বিবিধ উপাদান গুলির মধ্যে মার্কেন্টেইলবাদ ছিল অন্যতম। মার্কেন্টেইলবাদ কথার সঠিক অর্থ বা সংজ্ঞা দিতে গেলে প্রথমে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রবক্তা এডাম স্মিথ এর কথা বলতে হয়। কারণ তিনিই প্রথম মার্কেন্টেইলবাদ কথাটি অবজ্ঞা ভরে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলায় এর আক্ষরিক অর্থ বাণিজ্যবাদ। মার্কসবাদী ভাবধারার সাথে সঙ্গতি রেখে এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলতে হবে দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার। মরিস ডব বলেছেন মার্কেন্টেইলবাদ হল বাণিজ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শোষণ।
খ্রিস্টীয় ১৭ শতকীয় ইউরোপের দেশগুলিতে যে নিরঙ্কুশ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র গড়ে উঠেছিল তারা তাদের প্রয়োজনের তাগিদে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রন আনতে চেয়েছিল। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে দেশের শুল্ক, মুদ্রা, শিল্প উৎপাদন, বাজার ব্যবস্থা, কর সংক্রান্ত আইন কানুন প্রণয়ন সবই ছিল। দেশের সম্পদকে রাজারা নিজেদের এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যই এরূপ পদ্ধতি সমূহের আশ্রয় নিত। মার্কেন্টাইলবাদের উদ্দেশ্য দেশের বৃহত্তর জনসমাজের সেবা বা তাদের মঙ্গলবিধান নয়, উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা, যারা দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত তাদের কথা ভাবা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। লক্ষ ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি জোরদার করা। সুতরাং এই নীতির শেষ কথাই হল অর্থনৈতিক দিক থেকে রাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষিত করা।
এলি হেক্সার মন্তব্য করেছেন এই সময়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমূহের মূল লক্ষ্যই ছিল জাতীয় রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে ঐক্যসাধন। তিনি দেখিয়েছেন মার্কেন্টেইল মতবাদে ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর যতটা জোর দেওয়া হয়েছে সম্পদ বৃদ্ধির উপর ততটা জোর দেওয়া হয় নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন