সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংস্থাসমূহ | Organizations Associated with Cultural Heritage Management.

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংস্থাসমূহ

১. Archaeological Survey of India (ASI) – ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ

  • প্রতিষ্ঠা: ১৮৬১ সালে, স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের নেতৃত্বে।

  • অধীনস্থ মন্ত্রণালয়: ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রক (Ministry of Culture)।

  • মূল দায়িত্ব:

    • জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ, ধ্বংসাবশেষ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।

    • দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা পরিচালনা।

    • "Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains Act, 1958" বাস্তবায়ন।

    • প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা ও জাদুঘর পরিচালনা।

  • উল্লেখযোগ্য কাজ:

    • নালন্দা, মহাবলিপুরম, হাম্পি, খাজুরাহো প্রভৃতি স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের জন্য উন্নতর ব্যবস্থাপনা।

    • জাতীয় স্তরের সংরক্ষিত ৩,৬০০+ স্মৃতিস্তম্ভের তত্ত্বাবধান

২. Indian National Trust for Art and Cultural Heritage (INTACH)

  • প্রতিষ্ঠা: ২৭ জানুয়ারি, ১৯৮৪।

  • প্রকৃতি: অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

  • প্রধান উদ্দেশ্য:

    • ভারতের স্থাপত্য, শিল্প, কারুশিল্প ও জীবনযাত্রাভিত্তিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ।

    • স্থানীয় জনগণকে ঐতিহ্য সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করা।

    • হেরিটেজ ক্লাব ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা।

  • প্রধান কাজ:

    • ঐতিহ্যবাহী ভবন পুনঃসংরক্ষণ (heritage restoration)।

    • হেরিটেজ ওয়ার্কশপ, ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

    • স্থানীয় পর্যায়ে হেরিটেজ ম্যাপিং ও ডকুমেন্টেশন।

  • উপস্থিতি: দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে ২০০+ শাখা

৩. National Monument Authority (NMA)

  • প্রতিষ্ঠা: ২০১০ সালে, AMASR (Amendment and Validation) Act অনুসারে।

  • অধীনস্থ মন্ত্রণালয়: সংস্কৃতি মন্ত্রক।

  • মূল দায়িত্ব:

    • সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভের ১০০ মিটার সংরক্ষিত ও ২০০ মিটার নিয়ন্ত্রিত এলাকা ব্যবস্থাপনা।

    • নির্মাণ কার্যক্রমে অনুমোদন প্রদান এবং হেরিটেজ ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (HIA) সম্পাদন।

    • ঐতিহাসিক স্থানসমূহের “Heritage Bye-Laws” প্রণয়ন।

  • বিশেষ ভূমিকা: নালন্দা, কুতুব মিনার, হাম্পি ইত্যাদির আশেপাশের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

৪. Ministry of Culture, Government of India

  • মুখ্য ভূমিকা:

    • ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নীতিমালা নির্ধারণ, প্রকল্প পরিচালনা ও অর্থ বরাদ্দ।

    • ASI, NMA, IGNCA, Lalit Kala Akademi, Sahitya Akademi ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা ও সমন্বয়।

  • উল্লেখযোগ্য প্রকল্প:

    • “Adopt a Heritage” প্রকল্প।

    • “Ek Bharat Shreshtha Bharat” – সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি।

    • জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রদর্শনী আয়োজন।

৫. Indira Gandhi National Centre for the Arts (IGNCA)

  • প্রতিষ্ঠা: ১৯৮৭, দিল্লিতে।

  • লক্ষ্য: ভারতীয় শিল্প, সংস্কৃতি ও মানববিদ্যার গবেষণা ও সংরক্ষণ।

  • প্রধান বিভাগসমূহ:

    • কল্পনা (চিত্র ও ভিজ্যুয়াল আর্ট)

    • কলা (সংগীত, নৃত্য, নাটক)

    • জীবনচর্চা (লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী ঐতিহ্য)

    • গণমাধ্যম (ডকুমেন্টেশন ও ডিজিটাল সংরক্ষণ)

  • বিশেষ ভূমিকা:

    • সংস্কৃতির ডিজিটাল আর্কাইভ।

    • পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ, রেকর্ডিং, অনুবাদ ও প্রকাশনা।

৬. National Museum, New Delhi

  • স্থাপনা: ১৯৪৯ সালে।

  • ভূমিকা:

    • ভারতের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শিল্প, ঐতিহাসিক সামগ্রী ও হস্তলিপি সংরক্ষণ।

    • শিক্ষামূলক প্রদর্শনী ও গবেষণা কার্যক্রম।

  • সংগ্রহ: ২ লক্ষেরও বেশি নিদর্শন – মূর্তি, মুদ্রা, চিত্রকলা, অস্ত্রশস্ত্র, হস্তলিপি ইত্যাদি।

৭. State Archaeology Departments (রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ)

  • ভূমিকা:

    • প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব প্রত্নতত্ত্ব দপ্তর রাজ্য পর্যায়ে সংরক্ষিত নিদর্শন, মন্দির, প্রাসাদ ইত্যাদি সংরক্ষণ করে।

    • স্থানীয় জাদুঘর পরিচালনা।

    • রাজ্য আইন অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ।

  • উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, মহারাষ্ট্রের Directorate of Archaeology and Museums

৮. UNESCO New Delhi Cluster Office

  • অবস্থান: নয়াদিল্লি।

  • উদ্দেশ্য:

    • বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত স্থানগুলোর সংরক্ষণে ভারত সরকারকে সহযোগিতা।

    • হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়ন।

  • বিশেষ প্রকল্প:

    • World Heritage Sites যেমন: হাম্পি, নালন্দা, সুন টেম্পল (কোনার্ক) ইত্যাদির টেকনিক্যাল সহায়তা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...