সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুলতানি আমলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি/মঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে আলোচনা কর।

 

প্রকৃতি ভারতকে এমনভাবে চারিদিকে ঘিরে রেখেছেন যে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে ভারত প্রায় নিরাপদ। কেবলমাত্র উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পথই বিদেশীদের নিকট উন্মুক্ত ছিল। প্রাচীনকালে এই উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের দুর্বলতার ফলে হুন জাতি ভারতে প্রবেশ করে গুপ্ত সাম্রাজ্যকে ছিহ্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে যুগে যুগে বিদেশীরা ভারতে প্রবেশ করেছে। আফগানিস্তান থেকে খাইবার ও বোলান গিরিপথ দিয়ে ভারতে সহজে প্রবেশ করা যায়। গজনি ও ঘুরের শাসকরা এই পথ ধরে ভারতে প্রবেশ করেছিল। এয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে মঙ্গলরা সারা পৃথিবীতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন দেশে এই ধারণা গড়ে উঠেছিল যে মঙ্গলরা হলো অজেয় ও অপ্রতিরোধ্য। এয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে মঙ্গলরা মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রাধান্য স্থাপন করেছিল। এখানকার খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য মঙ্গলদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছিল। ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও মিশরের উপর মঙ্গলরা আক্রমণ চালিয়েছিল। মঙ্গল আক্রমণের ফলে বাগদাদের খলিফা নিহত হন। ইরান ও আফগানিস্তানের উপর মঙ্গলদের অধিকার স্থাপিত হয়। এই সময় ভারতের সুলতানি রাজ্য মঙ্গলদের আক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।   

ইলতুৎমিসের শাসনকালে মঙ্গলদের দুর্ধর্ষ নেতা চেঙ্গিসখান খাওয়ারিজমের শাসক জালালউদ্দিন মঙ্গবর্ণি কে অনুসরণ করে সিন্ধুতীরে এসে হাজির হন। জালাল উদ্দিন পাঞ্জাবে পশ্চিমাঞ্চলে খোক্কর উপজাতি সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তিনি ইলতুৎমিশের সাহায্যপ্রার্থী হন। ইলতুৎমিস জালালউদ্দিন কে সাহায্য দিতে রাজি হয়নি এবং মধ্য এশিয়ার তুর্কিস্থানে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল, এইজন্য চেঙ্গিস খান ভারত ত্যাগ করে চলে যান। ইলতুৎমিস এই সময় কূটনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দেন।

ইলতুৎমিস পর থেকে ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির সুলতানগন মঙ্গলদের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। বলবনই প্রথম সুলতান যিনি মঙ্গলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক নীতি গ্রহণ করেন। সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য তিনি প্রথম আত্মরক্ষা নীতি পরিত্যাগ করে আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করে। তিনি মঙ্গল ও খোক্করদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে পশ্চিম পাঞ্জাব পর্যন্ত দিল্লি সুলতানি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কারণ তুর্কির শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আত্মপ্রকাশ করেছিল। মঙ্গলদের লুটরাজ বন্ধ করার জন্য বলবন সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি মঙ্গল নেতা হালাকুর কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন‌। হালাকু ও বলবনের কাছে দূত পাঠিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ভারত আক্রমণ না করার সিদ্ধান্ত জানান।১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে হালাকু মারা যান। সুলতান ও মঙ্গলদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। 

বলবনের আত্মীয় শেরখান দিল্লির সুলতানের হয়ে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মঙ্গল আক্রমণের প্রতিরোধের কাজ করতেন। তিনি লাহোর, সুনাম ও দিপালপুর এর ইক্তাদার ছিলেন। শের খান স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করছেন মনে করে বলবন তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। বলবন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদকে উত্তর-পশ্চিমে সীমান্তের প্রতিরক্ষার ভার দেয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য এই অঞ্চলকে দু ভাগে বিভক্ত করে সুনাম ও সামানা অঞ্চল। সেই অঞ্চলে দুর্গ ও নির্মাণ করেন। এছাড়াও মুলতান ও লাহোরের সৈন্য রেখে বিপাশা নদী বরাবর প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা হয়। তবুও বলবন মঙ্গল ভীতিকে সম্পূর্ণভাবে দূর করতে পারেননি। ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গলদের এক হঠাৎ আক্রমণে মোহাম্মদ নিহত হন এই জন্য তিনি শহীদ রাজপুত্র নামে পরিচিতি পান।   

১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মঙ্গলরা পশ্চিম পাঞ্জাবের ওপর অধিপত্য বজায় রেখেছিল। সিন্ধু ও মুলতানের উপর তারা বারবার আক্রমণ চালাত। ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে হালাকুর নাতি আবদুল্লাহ দেড় লক্ষ সৈন্য নিয়ে ভারত আক্রমণ করে‌। জালালউদ্দিন খলজি সেনাবাহিনীর কাছে মঙ্গল বাহিনী পরাস্ত হয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হয়। বহু মঙ্গল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দিল্লিতে বসবাস করা শুরু করে এরা নব মুসলমান নামে পরিচিত লাভ করে।  

আলাউদ্দিনের শাসনকালে মঙ্গলরা দিল্লি সুলতানির ওপর সবচেয়ে বেশিবার আক্রমণ চালিয়েছিল। আগে মঙ্গলরা লুটরাজের জন্য ভারতে প্রবেশ করত এই সময় তারা আক্রমণের লক্ষ্য পাল্টে ছিল। ভারতে পরাজয়ের প্রতিশোধ ছিল তাদের নতুন উদ্দেশ্য। ভারতের প্রবেশের সময় তারা উত্তর-পশ্চিম পার্বত্য উপজাতির সহায়তা নিত। লণ্ঠিত সম্পদের ভাগ পাওয়ার জন্য তারা মঙ্গলদের সহযোগীতা করতো । এছাড়াও সীমান্তে অবস্থিত সুলতানি অভিজাতরা রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশায় এরা মঙ্গলদের আক্রমণে উৎসাহ দিত।   

দিল্লী বাসিদের কাছে শুধু নয় আলাউদ্দিনের কাছেও মঙ্গল আক্রমণের ঘটনা ছিল আকস্মিত ও বিভ্রান্তিকর। তিনি মঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য অনেকগুলি ব্যবস্থা নেন। দিল্লির চারিপাশে তিনি শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণ করেন। দিল্লির সীমান্ত পর্যন্ত তিনি সমস্ত পুরাতন দুর্গ গুলো তিনি সংস্কার করেন। সামানা ও দিপালপুরে তিনি শক্তিশালী সেনাবাহিনী মোতায়ন করেন। তিনি বৈদেশিক আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হন, নতুন করে সৈন্য সংগ্রহ করেন। এইসব ব্যবস্থা নিয়ে তিনি মঙ্গলদের প্রতিরোধ করেন। 

 ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গলরা পঞ্চমবার ভারত আক্রমণ করেছিল। এবারে ভারত জয় ছিল তাদের লক্ষ্য। মঙ্গলদের সঙ্গে ছিল ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার সৈন্য । আলাউদ্দিন তার হিন্দু সেনাপতি মালিক নায়েকের নেতৃত্বে মঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য ত্রিশ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। এই যুদ্ধে মঙ্গলরা পরাস্ত হয় এবং মঙ্গলদের নেতা আলিবেগ ও তারতাগ বন্দি হন। অনুগামীদের সঙ্গে তাদেরও হত্যা করা হয়, এই পরাজয়ের ফলে মঙ্গলদের সামরিক মর্যাদা অনেকটাই ক্ষুন্ন হয়। তাদের অপরাজেয় ভাবমূর্তি আর ছিল না। ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে দবা খানের মৃত্যুর পর মঙ্গলরা ভারত সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো। তবে তারা দিল্লি জয়ের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করলেও ভারতের উপর আক্রমণ বন্ধ করেনি।

আলাউদ্দিন শুধু দিল্লি ও দোয়ার অঞ্চল মঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা করেননি তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে এমন সব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন যাতে লাহোর ও বিপাশা থেকে সুলতানি সীমান্ত সিন্ধু নদ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের শাসনের শুরুতে দুটি মঙ্গলবাহিনী সুনাম ও শামানা পৌঁছেছিল, এরা সুলতানি বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়। অনেক মঙ্গল সৈন্য নিহত হয়। ১৩২৬ -২৭ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে মঙ্গল নেতা তারমাশিরিন খান ভারত আক্রমণ করেন। মোহাম্মদ বিন তুঘলক এই আক্রমণ শুধু প্রতিহত করেননি।, তিনি পেশোয়ার ও কালানোর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এখানে ঘাঁটি বানিয়ে ভবিষ্যতের মঙ্গল আক্রমণের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন। 

ভারতে প্রায় ১০০ বছর ধরে মঙ্গল আক্রমণে আতঙ্ক ছিল। আলাউদ্দিনের শাসনকালে এই আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। মঙ্গল আক্রমণের ফলে পশ্চিম পাঞ্জাব দিল্লির সুলতানের হস্তচ্যুত হয়। দিল্লির সুলতানরা মঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে আফগানিস্তান অধিকার করে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। মুঘলরা পরবর্তীকালে এই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। এয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে মঙ্গলরা সারা পৃথিবীতে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই ধারণা হয়েছিল যে মঙ্গলদের প্রতিরোধ করে লাভ নেই এরা অপরাজেয়। দিল্লির সুলতানি, ইলতুৎমিস থেকে মোহাম্মদ বিন তুঘলক-মঙ্গল আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিল কখনো কূটনৈতিক পথে কখনো অস্ত্র বলে। সুলতানরা মঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...