সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদি মধ্যযুগে ভারতের আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব আলোচনা কর।

 


আদি মধ্যযুগের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আঞ্চলিকতাবাদ। রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শিল্প, বাণিজ্য নগরায়ন, মুদ্রা প্রভৃতির ক্ষেত্রে যেমন আঞ্চলিকতা সুস্পষ্ট তেমনি ভাষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রাদেশিক ও স্থানীয় ভাষার উদ্ভব এ যুগেই হয়। যেমন বাংলা, মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু, কন্নড় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মসংস্কারগণ জনসাধারণের সুবিধার্থে সহজবদ্ধ স্থানীয় কথ্য ভাষায় বক্তব্য রাখতেন এবং গ্রন্থ রচনা করতেন। ফলে আঞ্চলিক ভাষাগুলির উন্নতি হয়। এক্ষেত্রে বৌদ্ধ, জৈন ও ভক্তিবাদী প্রচারকদের অবদান অনস্বীকার্য।


পাল ও সেন যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা। বাংলাদেশে অপভ্রংশের ব্যবহারও ছিল। এই পর্বের গোড়ার দিকে ব্যক্তি ও স্থানের নামে বাংলার ব্যবহার ছিল। চর্যাপদ হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ৪৭ টি চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা নামে এগুলি প্রকাশিত হয়। বজ্রযান সিদ্ধাচার্যগণ (22 জন) হলেন এগুলি রচয়িতা। রচনার সময়কাল হিসেবে ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ কে ধরা হয়। চর্যাপদ গুলি উচ্চস্তরের কবিতা নয় তবে এর মধ্যে আবেগ, চিত্রকলা ও বঞ্চনার অভাব নেই। গান হিসেবে এগুলি রচিত হয়েছিল। চর্যাপদ গুলির মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষার জন্ম হয় এবং এর প্রভাবে পরবর্তী যুগে বাংলার সহজিয়া গান, বাউল গান‌ ও বৈষ্ণব পদাবলীর উৎপত্তি হয়। প্রকৃতপক্ষে মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। মাগধি অপভ্রংশের স্থানীয় রূপ‌ই জনগণের মুখের ভাষা। শুধুমাত্র বঙ্গভাষা নয় মগধী প্রাকৃত অপভ্রংশ থেকে পূর্ব ভারতীয় অসমীয়া, উড়িয়া, মৈথিলী, ভোজপুরিরও উৎপত্তি ঘটেছে। 


প্রখ্যাত পন্ডিত দীনেশচন্দ্র সেনের মতে ব্রাহ্মণগণ প্রথমত বাংলা ভাষার গ্রন্থ প্রচারে বিরোধী ছিলেন। কৃত্তিবাস ও বংশীদাস কে এরা সর্বনেশে উপাধি দিয়ে প্রদান করেছিলেন। পুরান অনুবাদক গণকে বৌরব নামক নরকে স্থান নির্দিষ্ট করেছিলেন।


তুর্কি বিজয়ের শুরুতে সাহিত্যের বিশেষ কোনো বিকাশ সম্ভব হয়নি। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর শাস্ত্র আলোচনার পুনঃপ্রবর্তন ও পুনরুজ্জীবন দেখা যায়। এযুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কৃত্তিবাসের রামায়ণ রচনা, জয়দেবের গীতগোবিন্দ এর মধ্যে অপভ্রংশের মিশ্রণ ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন। গোরখনাথ ও তার অনুগামীদের লেখায় প্রাচীন বাংলার নিদর্শন পাওয়া যায়।


জৈন অপভ্রংশ সাহিত্যের ঐতিহ্য গুজরাটি ভাষার সাহিত্যের বিকাশের পথকে প্রশস্ত করেছিল। প্রাচীন গুজরাটি ভাষার প্রথম যুগের সূচনা ১০০০ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। গুজরাটি সাহিত্য প্রথম দিকে গদ্য ছিল না। মনের ভাব কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করা হতো। এরকম একটি গুজরাটি কবিতার নিদর্শন 'রসবন্ধ'। বেশিরভাগ রচনা ছিল ধর্মীয় উপদেশ মূলক। জৈন শাস্ত্র হেমচন্দ্র তার 'সিদ্ধহেম' গ্রন্থে অপভ্রংশ ও পুরানো গুজরাটির মিশ্রণের নিদর্শন রেখেছেন। এই লেখাগুলিতে মানুষের প্রেম, বীরত্ব, নৈতিকতা ইত্যাদি নিয়ে রচিত। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে রচিত হয়েছে 'বরাহমাসা' 'মাতৃকা'ও বিবাহল। এই ধরনের কবিতার শ্রেষ্ঠ কবি বিনয়চন্দ্র। যিনি নেমি ও রাজমতির প্রণয় কাহিনী নিয়ে লিখেছেন 'নেমীনাথ চতুশপদিকা'। মাতৃকাগুলিতে ধর্মীয় ও নৈতিক উপদেশ আছে। সোমমূর্তি হলেন বিবাহল শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ লেখক। কিছু রম্য কাব্য আছে যেগুলিতে জৈন মতবাদের পরিচয় পাওয়া যায়। বজ্রসেন রচিত 'ভরতেশ্বর বাহুবলি' কাব্যে রাজা ভরত ও প্রথম তীর্থঙ্কর রিষভের পুত্রদের মধ্যে যুদ্ধের কাহিনী লেখা আছে।


মারাঠি ভাষা ও সাহিত্যে শুরু হয়েছে ৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ শ্রবণবেলগোলা লেখ থেকে। মারাঠি ভাষার প্রথম উল্লেখযোগ্য লেখক শংকরাচার্যের অনুগামী মুকুন্দরাজ। তার রচিত দর্শনগ্রন্থ বিবেকসিন্ধু, (১১৯০)। এছাড়াও আরো রচনা তার আছে। গোরমনাথকে নিবেদিত কয়েকটি মারাঠি গান পাওয়া যায়। গোরক্ষ অমরনাথ সংবাদ -এ মারাঠি গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায়। নামদেব ও তার অনুগামীদের সময় থেকে মারাঠি ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছিল। যদিও চক্রধর ও তার মহানুভব গোষ্ঠী সব কটি ভাষাতেই ধর্ম প্রচার করেন এবং টিকা, শব্দকোষ, ব্যাকরণ ইত্যাদি লিখেছেন। তাঁরা জীবনী ও জীবনস্মৃতি ও লেখেছে। ভাগবত সম্প্রদায়ের প্রবক্তা নামদেব ও তার অনুগামীরা বহু গান ও কবিতা রচনা করতেন। তুকারাম এবং মহোদয়ের ও জনবা‌ঈ নামক মহিলা ছিলেন এ যুগের সেরা কবি। বারাকারি সম্প্রদায়ভুক্ত জ্ঞানদেব জ্ঞানেশ্বরী রচনা করেন, যা ভগবত গীতার টিকা হিসেবে বারকারী দের শ্রেষ্ঠ অবদান। আবার মহারাষ্ট্রের কীর্তন সম্প্রদায় নামে পরিচিত তারাও বহু গান ও কবিতা রচনা করে মারাঠি ভাষার সমোন্নতি ঘটিয়েছিলেন।

খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের গোড়ায় প্রাচীনতম তামিল সাহিত্যের সূচনা হয়। তামিল ঐতিহ্য অনুসারে মাদুরাইয়ে তিনটি সাহিত্য সঙ্গম অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় সঙ্গমে কবিগণ রচিত "অট্টাটোগাই" অর্থাৎ আটটি সংকলন রচনা করেন যা তামিল সাহিত্যের সেরা কীর্তি হিসেবে বিবেচিত। 


১০০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তামিল ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চলে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব কমতে থাকে, শৈব ও বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব বাড়ে। এ যুগে সাহিত্য ধর্মীয় চেতনার সমন্বয়ে বৃদ্ধি পায়। শৈব নায়নার সন্তদের রচিত গীতসংকলন হল তেবারম ও তিরুবাচম। বৈষ্ণব আলবার সন্তরা লেখেন নালায়িরা প্রবন্ধম। তামিল কাব্যের তিনরত্ন ছিলেন কম্বন, ওট্টাকুট্টান,ও পুগালেন্দি। কম্বন কুলাতঙ্গার এর সভাকবি ছিলেন, তিনি তামিল রামায়ণ রচনা করেন। এছাড়াও রচনা করেন সদকোপার ও এরুলুপাথু। পুগালেন্দি রচনা করেন নল ও দয়মন্তির কাহিনী নিয়ে লেখা নলবেনবা। আল্লি, আবাসনি, পলভাকোড্ডি হল তাঁর অন্যান্য জনপ্রিয় রচনা।


অন্ধ্রপ্রদেশের ভাষা তেলেগু যার যাত্রা শুরু হয়েছে শিলালিপিতে - যুদ্ধমল্ল ও সোপুর। প্রথম দিকের তেলুগু ভাষার দুটি দিক ছিল- দেশি ও মার্গ। দেশী হল সংস্কৃত প্রভাব মুক্ত। সাধারণ গ্রাম্য কবিদের রচনার ভাষা। এই ধরনের রচনায় দোলনা, প্রেম ও সষ্য সংগ্রহের মত বিষয়গুলি স্থান পেয়েছে। এই ভাষার সাথে স্থানীয় দ্রাবিড় ভাষার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। মার্গ এর উপর সংস্কৃতের প্রভাব বেশি, রাজসভা ও অভিজাতদের জন্য এই ভাষায় গান ও কবিতা লেখা হতো। তেলেগু ভাষার তিনরত্ন নান্নিয়া, ঠিক্কান্না ও এরবানা।নান্নিয়া ভেঙ্গির চালুক্য রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় মহাভারত রচনা করেন। ঠিক্কান্না নান্নিয়ার মহাভারত রচনার বাকি কাজটি সম্পূর্ণ করেন। এরবানা দুটি দুখানি গ্রন্থ হরিবংশ ও নৃসিংহ পুরাণ রচনা করেন। এই তিন কবি চম্পু কাব্য রচনা করেছেন, এতে গদ্য ও পদ্মের মিশ্রণ ঘটেছে। 


এই বিখ্যাত ত্রয়ীর পর বিশেষ মৌলিক রচনা দেখা যায় না। তবে এ যুগে পাভুলুরু ও এলুগন্ডি লেখেন গণিত শাস্ত্রের উপর প্রবন্ধ। সোমনাথ লেখেন বাসবপুরাণ ও অনুভবসার। নানচোড় লেখেন কালিদাসের অনুকরণে নিজস্ব মৌলিকতার সাথে কুমারসম্ভবমম কাব্য‌। ত্রয়োদশ শতকে রামায়ণের দুটি সংস্করণও প্রকাশিত হয়।


তামিল ছাড়া দক্ষিণ ভারতের ভাষাগুলির মধ্যে কানাড়া হল সবচেয়ে পুরানো। কানাড়া ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃত এর কাছে অবশ্যই ঋণী। জৈন, বীরশৈব ও বৈষ্ণবরা কানাড়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। কানাড়া ভাষার প্রথম দিকটায় গদ্য লেখা হলো জৈন লেখক শিবকত্যচার্যের বোদ্দা আরধনা। রাজা ও সামন্তপ্রভুরা কানাড়া ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। রাষ্ট্রকূটরাজ অমোঘবর্ষ লেখেন কবিরাজমার্গ। প্রথম নাগবর্মা লেখেন ছন্দের উপর "ছন্দমবুধি"। পম্পা লেখেন আদিপুরান ও বিক্রমার্জুন বিজয়। পোন্না লেখেন শান্তিপুরাণ। রান্না লেখেন অজিতপুরাণ। এই তিন কবি জৈন ধর্ম ও ঐতিহ্য ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে ও লিখেছেন। যেমন পম্পার বিক্রমার্জুন বিজয় এবং রন্নার মহাভারতের কাহিনী নির্ভর সাহসভিম বিজয়।


একাদশ শতকের কানাড়া রচনা খুব কম। দ্বাদশ ও ত্রয়দশ শতকে কানাড়া সাহিত্য সমৃদ্ধ হয় জৈন লেখকদের অবদানে। শৈব সম্প্রদায়ের সাধকরা নায়নার ও আলভারদের মতো গান রচনা করতেন। যেগুলিকে বচন বলা হতো এবং বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গাওয়া হতো। এ যুগের মহিলা কবি হলেন মহাদেবী। অন্যরা হলেন হরিহর। নাগচন্দ্র লেখেন মুল্লিনাথ পুরান ও রামচন্দ্রচরিত পুরান। নেমিচন্দ্র লেখেন রোমান্টিক কাব্য লীলাবতী। কন্নি ছিলেন অন্যতম মহিলা কবি।


পরিশেষে বলা যায় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে প্রাকৃত ও অপভ্রংশ থেকে বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব ঘটে। তবে সেগুলি উচ্চমানের সাহিত্য কীর্তি পরিচয় রাখার মত বিকাশ ঘটে। দরবারে সংস্কৃত ভাষারই প্রচলন ছিল। তবে রাজবৃত্তের বাইরে যে বৃহৎ জনসমাজ ছিল সেখানে কথ্য ভাষা ও সাহিত্যের বলিষ্ঠ অগ্রগতির পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যা এ সময়ের সংস্কৃতিক ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...