সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাবালটার্ন ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Subaltern Historiography

  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাবালটার্ন ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Subaltern Historiography স্বাধীন ভারতের বেশকিছু ঐতিহাসিক যারা মার্কসীয় তত্ত্বকে সরাসরি গ্রহণ না করলেও মার্কসীয় বিশ্লেষণ পদ্ধতিকে প্রয়োগ করে ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে জড়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। সমাজ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এরা ইতালির কমিউনিস্ট নেতা এন্টানিও গ্রামশিকে অনুসরণ করেছেন। ভারতীয় সমাজের যে মানব গোষ্ঠী গতানুগতিক ইতিহাস চিন্তার পর্দায় প্রতিফলিত হয়নি তারাই এই নতুন ধারার ইতিহাস চর্চার প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই নতুন ধারার ইতিহাস চর্চার নাম হল ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস’ বা Subaltern Studies । নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় মূল ধারার রাজনৈতিক ইতিহাসের চেয়ে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবনের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং  আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার কথা। বিংশ শতকের আট-এর দশকে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার সূচনা হয় অধ্যাপক রনজিৎ গুহ সম্পাদিত 'সাবালটার্ন স্টাডিজ' প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। অধ্যাপক গুহ জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন উপনিবেশিক ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদের উত্থানের ইতিহাসকে শুধুমাত্র বুদ্

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Marxist Historiography

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: মার্ক্সবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Marxist Historiography ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে শ্রেণী চরিত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন মার্কসীয় পণ্ডিতগণ। এ প্রসঙ্গে প্রথম যার নাম উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়। কমিনটার্ন-এ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে এন এম গোল্ডবার্গ, রজনীপাম দত্ত, এ আর দেশাই প্রমুখের রচনায় ভারতের জাতীয়তাবাদের মার্কসীয় বিশ্লেষণ লক্ষ্য করা গেছে। এম. এন. রায় দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন: 'India in Transition' ও 'What do we want', যেখানে তিনি গান্ধীবাদকে প্রতিক্রিয়ার তীব্রতম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর মতে, গান্ধীজী ভূস্বামী এবং পুঁজিপতিদের স্বার্থে জনগণের বিপ্লবী শক্তি ও চেতনাকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। রায়ের মতে ভারতীয় পুঁজিবাদ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল সুতরাং ভারতীয় পুঁজিপতিদের পক্ষে যথার্থ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করে একটি বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি করা ছিল প্রায় অসম্ভব।  এন. এম. গোল্ডবার্গ মনে করেন ভারতের পুঁজিপতি শ্

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Nationalist Historiography

  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Nationalist Historiography ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করে যাঁরা জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার সূচনা করলেন তাঁরা হলেন দাদাভাই নওরজি এবং রমেশ চন্দ্র দত্ত। দাদা ভাই নৌরোজির রচিত Poverty and Unbritish Rule in India এবং রমেশ চন্দ্র দত্ত রচিত Economic History of India গ্রন্থ দুটি উপনিবেশিক অর্থনীতির সমালোচনা করে ভারতের সম্পদ নিষ্কাশন ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় এর উপর একটি জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে আরো অনেকেই যেমন পট্টভি সীতারামাইয়া, তারাচাঁদ, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, আর এস মেহরোত্রা প্রমূখ পণ্ডিত জাতীয়তাবাদী রচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা ভারতে জাতি গঠনের প্ৰক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করতেন প্রধানত জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের শ্রেষ্ঠত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। তারা মনে করতেন, জাতীয় চেতনাই এখানে মুখ্য, বাকি সব চেতনা (জাতিগত, সম্প্রদায়গত, শ্রেণীগত) তার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে। উপনিবেশিক শাসনের প্রতি মূলগত অনীহা থেকেই এই ধরনের চেতনার জন্ম হয়। ভারতবর্ষের প্রাচীন পরম্পরা সম

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ : কেমব্রিজ ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Cambridge Historiography

কেমব্রিজ ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism : Cambridge Historiography এ বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একমত যে, ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে আধুনিক অর্থে কোন ভারতীয় রাজনৈতিক জাতির অস্তিত্ব ছিল না। এরকম কোনও ধারণা অবচেতনভাবে ভারতবর্ষের সভ্যতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল কি না এবং কালক্রমে তার উদ্ভব ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে অতীত এবং বর্তমানের জাতীয়তাবাদী নেতা এবং ঐতিহাসিকরা বিতর্কের জড়িয়ে থাকেন। তবে একটা ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই যে,  ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং ১৯৪৭ সালে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে যার জয় সূচিত হয়েছিল । এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ছিল 'উপনিবেশিকজাত আধুনিকতা প্রসূত'। উপনিবেশিক পক্ষের বক্তব্য ছিল, তারা উপনিবেশকে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্ধকার থেকে তুলে এনে আধুনিক স্তরে উন্নীত করবে। আবার উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের পক্ষেও পশ্চাদদামিতা দূর করে এ কথা প্রমাণ করে দেখানোর খানিকটা দায়ী ছিল যে আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তারাও একত্রিত হয়ে শাসন কাজ পরিচালনা করার যোগ্য। কাজেই  জাতীয়তাবাদের দুটো ধাপ: প্রথমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং তারপর আত্ম

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাম্রাজ্যবাদী ও নব্য ঐতিহ্যবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Colonial Historiography

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ: সাম্রাজ্যবাদী ও নব্য ঐতিহ্যবাদী ইতিহাসচর্চা | Indian Nationalism: Colonial Historiography ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বলতে কি বোঝায়? এ বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একমত যে, ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে আধুনিক অর্থে কোন ভারতীয় রাজনৈতিক জাতির অস্তিত্ব ছিল না। এরকম কোনও ধারণা অবচেতনভাবে ভারতবর্ষের সভ্যতার মধ্যে লুকিয়ে ছিল কি না এবং কালক্রমে তার উদ্ভব ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে অতীত এবং বর্তমানের জাতীয়তাবাদী নেতা এবং ঐতিহাসিকরা বিতর্কের জড়িয়ে থাকেন। তবে একটা ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই যে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং ১৯৪৭ সালে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে যার জয় সূচিত হয়েছিল । এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ছিল 'উপনিবেশিকজাত আধুনিকতা প্রসূত'। উপনিবেশিক পক্ষের বক্তব্য ছিল, তারা উপনিবেশকে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্ধকার থেকে তুলে এনে আধুনিক স্তরে উন্নীত করবে। আবার উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের পক্ষেও পশ্চাদদামিতা দূর করে এ কথা প্রমাণ করে দেখানোর খানিকটা দায়ী ছিল যে আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে তারাও একত্রিত হয়ে শাসন কাজ পরিচালনা করার যোগ্য। কা

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani's Declaration

মহারানী ঘোষণাপত্র | Maharani Declaration নিষ্ঠুর হাতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে দমন করার পর ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারতে তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করে এই প্রক্রিয়ারই অনিবার্য পরিণতি ছিল ১৮৫৮ সালের পয়লা নভেম্বরের রাজকীয় ঘোষণা, যা মহারানীর ঘোষণা নামে পরিচিত। কোম্পনীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে মহারানী ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং। কিন্তু ১৮৫৮-এর আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল কে ভাইসরয়-এ পরিণত করা হয়। লর্ড ক্যানিং হলেন ভারতের প্রথম ভাইসরয়। ব্রিটিশ সম্রাট বা সম্রাজ্ঞীর নামে ভারত সচিব ভারতবর্ষকে প্রত্যক্ষভাবে শাসন করতে থাকলেন। ভারত সচিব শাসনতান্ত্রিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য গঠিত হলো ১৫ জনের সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল। এবার থেকে ভারত সচিব ও ভাইসরয়ের পারস্পরিক রসায়নের উপর ভারতের শাসন নির্ভর করতে থাকল। এই ঘোষণাপত্রে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় কতগুলি নতুন নীতি ও আদর্শের কথা ঘোষণা করে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়। সেগুলি হল-- ১) ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোন ব্যাপারেই সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে

পাবনা বিদ্রোহ | Pabna Rebellion

 পাবনা বিদ্রোহ | Pabna Rebellion ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহাকুমাতে এক জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এই বিদ্রোহ পাবনা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। একসময় সিরাজগঞ্জ ছিল নাটোরের রাজ পরিবারের জমিদারির অধীনে। কিন্তু রাজস্ব সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ১৮৬০ এর দশকে এই জমিদারি নিলামে ওঠে এবং মুৎসুদ্দি শ্রেণীর হাতে চলে যায়। সিরাজগঞ্জ মহাকুমার শাসক পি. নোলান তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, সিরাজগঞ্জের জমিদাররা ছিলেন অত্যধিক সক্রিয় ও উদ্যমশীল। চাষবাসের উন্নতির কাজে এরা কোনরূপ সক্রিয়তা দেখাত না; কিন্তু অসঙ্গত ও অবৈধ উপায়ে কৃষকদের শোষণ ও জমিচ্যুত করার কাজে তারা ছিল সুকৌশলী। বিভিন্ন অবৈধ কর বা আবওয়াব, যেমন পার্বণী, তীর্থ কর, সেলামি, ডাক খরচা, বিবাহ খরচা, নজরানা ইত্যাদি আদায় করত। এমনকি জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রেও এরা কৃষকদের ঠকিয়েছিল। যে নল ব্যবহার করে তারা নাটোরের জমিদারের কাছ থেকে সিরাজগঞ্জের জমিদারি কিনেছিল তার মাপ ছিল ২৩ থেকে পৌনে ২৪ ইঞ্চি। কিন্তু কৃষকদের বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে যে নল ব্যবহার করা হয়েছিল তার মাপ ছিল মাত্র ১৮ ইঞ্চি। অর্থাৎ কৃষকের জমি কমে গেল কিন্তু খাজনার চাপ বেড

জার্মানির কৃষক সংগ্রাম | Peasant Revolt in Germany

জার্মানির কৃষক সংগ্রাম ষোড়শ শতকে মার্টিন লুথারের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব জার্মানির কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এক ব্যাপক আকারে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন টমাস মুনজার। বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল সামন্ততান্ত্রিক শোষণ। কৃষকদের প্রধান অভিযোগ গুলি নথিবদ্ধ হয়েছিল তাদের এক ইস্তাহারে, যা সাধারণভাবে টুয়েলভ আর্টিকেলস নামে পরিচিত। এখানে গত ১০০ বছর ধরে সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে কৃষকদের যে অভিযোগগুলি উঠে আসছিল, সেগুলি হল চার্চ কর্তৃক আরোপিত ধর্মকর বা টাইথ, সর্বসাধারণের ব্যবহার্য জমিতে  ভূস্বামীর দখলদারি, এছাড়া জঙ্গল, নদী এবং খোলা মাঠের উপর কৃষকদের যে চিরাচরিত অধিকার তার ক্রম অবসান। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল কৃষকদের কাঁধে আরও বেশি কর চাপানো ও তাদের বেশি করে বেগার শ্রমে নিয়োজিত করা। বাইবেলের নির্দেশকে মেনে চলা এবং পাপীর মুক্তির জন্য যীশুখ্রীষ্টের কাছে আত্মনিবেদনের যে বাণী প্রচারিত হয়েছিল তার সঙ্গে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবিগুলোর সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিল জার্মান কৃষকরা। জার্মান কৃষক বিদ্রোহ ও লুথারের সম্পর্ক অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। কৃষকরা কেন লুথার

হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা | Five Years &One Year Settlement

হেস্টিংসের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা ১৭৬৫ সালে ইংরেজি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভের পর সেখান থেকে কিভাবে রাজস্ব আদায় করা হবে সেই ছিল একটা বড় প্রশ্ন। প্রথমে নায়েব নাজিম মোহাম্মদ রেজা খাঁকে নায়েব দেবান পদে নিযুক্ত করে তার ওপর ভূমি রাজস্ব আদায়ের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রেজা খাঁ ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য আমিলদের নিযুক্ত করেন এবং যারা সবথেকে বেশি রাজস্ব দেবার প্রতিশ্রুতি দিত তারাই আমিল হিসেবে বহাল থাকার ব্যাপারে অগ্রাধিকার পেত। কোম্পানির নতুন গভর্নর ভারেলেস্ট ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য সুপারভাইজার বা কালেক্টর নিয়োগ করেন। এরা রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে জেলার বাণিজ্যের উপরে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠাতেই বিশেষ মনোযোগী ছিল, যার ফলে কালেক্টর ব্যবস্থাও অকেজো প্রমাণিত হয়। এই সময় ১৭৭২ এর দুর্ভিক্ষ ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এই পরিস্থিতিতে গভর্নর জেনারেল হিসাবে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস বাংলা শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। হেস্টিংস মুর্শিদাবাদের নায়ক দেওয়ান রেজার খাকে

কর্নওয়ালিস কোড | Cornwallis Code

Cornwallis Code / কর্নওয়ালিস কোড/কর্নওয়ালিসের বিচারবিভাগীয় সংস্কার ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন এলাকা দখলের পর কোন ধরনের প্রশাসন যন্ত্র গড়ে তুলবে তাই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্রথমদিকে ক্লাইভ সরাসরি ব্রিটিশ কর্মচারীদের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে জুড়তে চাননি। তিনি দেশীয় কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনাকে সঠিক বলে মনে করতেন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস দেশীয় এবং ইউরোপীয় শাসকদের মিলিত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু কর্নওয়ালিস উপরোক্ত দুই পরিকল্পনাকে বাতিল করে সম্পূর্ণ ইউরোপীয় রীতিতে এবং কেবল ইউরোপীয় কর্মচারীদের দ্বারাই শাসন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিলেন। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি একটি শাসন সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রস্তুত করেন, যা 'কর্নওয়ালিস কোড' নামে পরিচিত। কর্নওয়ালিস কোড-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি যুক্তি ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান যে, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ না হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত হয়। তিনি আরো দেখান বিচার ব্যবস্থার রাজনীতিকরণের জন্যই উৎপা

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব | Nawab Mir Zafar

বাংলার ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিপ্লব মুর্শিদাবাদের দরবারে সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধানতম মুখ ছিলেন মীরজাফর। মীরজাফর ছিলেন সিরাজেরই মির বকশি। সিরাজ এই ষড়যন্ত্রতে মীরজাফরের যুক্ত থাকার কথা জানতে পেরেও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকেই পলাশীর যুদ্ধের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেন। শেষমেষ মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং পূর্বপরিকল্পনামাফিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীরা মীরজাফরকে বাংলার মসনদে বসান(১৭৫৭)। মীরজাফর সিংহাসন লাভের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্লাইভকে এবং প্রতিষ্ঠানগতভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন। ক্লাইভ একাই নিয়েছিলেন প্রায় ২০ লক্ষ এর উপরে টাকা। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানি ও অন্যান্য ইংরেজ ব্যবসায়ীরা নিয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এছাড়া কোম্পানি লাভ করে কলকাতা সংলগ্ন চব্বিশটি পরগনার জমিদারি, যার আয় ছিল প্রায় ৮৮০ বর্গমাইল বছরের। শুধু অর্থ প্রদান নয় বিভিন্নভাবে মীরজাফর ইংরেজ কোম্পানির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। একদিকে রাজকোষের সংকট অন্যদিকে পরাধীনতা, উভয় সমস্যা মীরজাফরকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই প্রেক্ষা

রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত | Roytwari Settlement

 রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর থেকে কোম্পানী সরকার ভারতের অন্যান্য এলাকায় এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে এবং বম্বে প্রেসিডেন্সিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসারের ক্ষেত্রে কতগুলি সমস্যা সামনে আসে, যার ফলস্বরূপ ওই দুই প্রেসিডেন্সিতে নতুন এক ভূমি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়, যা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে প্রথমে (উনিশ শতকের প্রথম দিকে) স্থানীয় পলিগারদের জমিদার বলে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আর যেখানে পলিগারদের পাওয়া যায়নি সেখানে কয়েকটি গ্রামের এক একটি খামার গঠন করে সর্বোচ্চ নিলাম দাতাকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই কোম্পানি সরকার উপলব্ধি করে যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমি থেকে আয় বৃদ্ধির আর সম্ভাবনা থাকে না। দ্বিতীয়ত, প্রভাবশালী ও ক্ষমতালোভি পলিগারদের দমন করা দরকার,  কারণ এরা বারবার বিদ্রোহ করে। এর চেয়ে ছোট ছোট কৃষক ভূস্বামীদের বশীভূত রাখা সহজ।  তৃতীয়ত, ডেভিড রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব এই সময় ব্রিটিশ প্রশাসকদের একাংশকে প্রভাবিত করেছিল। তার মতে জমিতে শ্র

সাওতাল বিদ্রোহ | Santal Rebellion

  সাওতাল বিদ্রোহ  উপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী গণ সংগ্রামে উপজাতিদের একটি গৌরবময় ভূমিকা ছিল। উপজাতি বিদ্রোহ গুলির মধ্যে ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর বিদ্রোহের থেকে অনেক বেশি জঙ্গি ও হিংস্র রূপ ধারণ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল সাঁওতালদের উপজাতীয় সামাজিক সংহতি রক্ষা এবং বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিবাদে আঞ্চলিক চেতনার সংগ্রামী বহিঃপ্রকাশ। সাঁওতালরা স্বভাবের দিক থেকে ছিল পরিশ্রমী ও শান্ত প্রকৃতির। তাদেরই প্রচেষ্টায় সাঁওতাল পরগনা এলাকা বাসযোগ্য ও উর্বর হয়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলকে তারা নাম দিয়েছিল 'দামিন-ই- কোহ'। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বহিরাগতরা এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে এবং তাদের অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হন সাঁওতালরা। সাঁওতালরা বহিরাগতদের 'দিকু' বলত। এই 'দিকু' বলতে ইংরেজ এবং বহিরাগত বণিক ও মহাজনদেরকে বোঝানো হত। প্রথমে আসা যাক মহাজনি শোষণের কথায়। মহাজনেরা সাঁওতালদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের টাকা ঋণ দিতেন এবং অসদুপায় অবলম্বন করে তাদের জমি-জামা দখল করে নিতেন। ঐতিহাসিক কালিকিংকর দত্ত দেখিয়েছেন, সামান্য পর